বর্ষাকাল রচনা । আমার প্রিয় ঋতু বর্ষাকাল

প্রিয় পাঠক আজকের বাংলা রচনা পর্বে যে রচনাটি আমরা উপস্থাপন করতে চলেছি তা হল বর্ষাকাল রচনা । আমার প্রিয় ঋতু বর্ষাকাল। প্রথমে এই রচনাটি একটু বড়ো করে লেখা হয়েছে যাতে বর্ষাকাল রচনা ক্লাস 10। বর্ষাকাল রচনা ক্লাস 9 এর শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী হয়। তার পরে সংক্ষিপ্ত করে লেখা হয়েছে।

বর্ষাকাল রচনা ক্লাস
বর্ষাকাল রচনা 

 

বর্ষাকাল রচনা । আমার প্রিয় ঋতু বর্ষাকাল

আষাঢ়ের ভোর-রাতে ভেঙে গেল ঘুম,—
বাদল নূপুর শুনি, ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্!
আধো-আলো আঁধিয়ারে
চেয়ে দেখি বারে বারে—
জল-ভরা বাদলের নাচনের ধুম;
                           জলের ঘুঙুর বাজে রুম্ ঝুম্ ঝুম্।            – সুনির্মল বসু

ভূমিকাঃ-

ঋতুরঙ্গমঞ্চে রুদ্র ভয়াল গ্রীষ্মের তিরোভাবের পর শ্যামগম্ভীর বর্ষার আবির্ভাব। ঋতুপর্যায়ের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। পঞ্জিকানির্দিষ্ট কালবিভাগ অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল বলে গণ্য। তাহলেও বর্ষার কালসীমা আশ্বিনের প্রায় শেষ অবধি বিস্তৃত। মহাকবি কালী দাসের অমোঘ বাণী আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে নবমেঘোদয়ের মধ্যদিয়ে তার শুভযাত্রার সূচনা হয়। শ্রাবণে ঘন ঘন গর্জনে ও অশ্রান্ত বর্ষণে তার পূর্ণতা । ভাদ্রে তার গতিমন্থরতা। শেষ আশ্বিনে উত্তুরে হিমেল বাতাসে তার বিদায়।

বর্ষার রূপ মাধুরীঃ

 ‘মেঘেতে দিন জড়ায়ে থাকে মিলায়ে থাক মাঠে

 পড়িয়া থাকে তরুর শিরে

কাঁপিতে থাকে নদীর নীড়ে

                       দাঁড়ায়ে থাকে দীর্ঘ ছায়া মেলিয়া ঘাটে বাটে।’-    রবীন্দ্রনাথ_ঠাকুর      

গ্রীষ্মের আগুনে গাছপালা পুড়ছে। মাঠের বুকে আর্ত হাহাকার। তৃষ্ণার ছটফটানি। বাতাস তপ্ত, নিরুদ্ধ-নিশ্বাস। তখনই নব মেঘের আবির্ভাব। মুছে যায় ধূলিমলিন বিবর্ণতা। দগ্ধ প্রান্তরে বেঁচে ওঠার অঙ্গীকার। গাছে গাছে নবজীবনের আশ্বাস। বর্ষার ছোঁয়াতেই রুক্ষ, ঊষর ভূমি হয় শস্যবতী। বাঙালীর আর্থ-জীবনে বর্ষার প্রভাব গভীর ও ব্যাপক। বাঙালীর সংস্কৃতি, ভাবগত জীবনেও রয়েছে এর এক অনন্য ভূমিকা। বর্ষা শুধু গ্রীষ্মের ফুটিফাটা প্রান্তরের তৃষ্ণাই দূর করে না, মানুষের মনকেও করে বিচিত্র ভাবরসে সঞ্জীবিত।

বর্ষার পুষ্পসম্ভারঃ

বঙ্গা-প্রকৃতি পুষ্পাভরণা। কদম্ব, কেতকী, কুমুদ-কলহার, জুঁই-হাস্নাহানা, দোপাটি-অপরাজিতা প্রভৃতি পুষ্পসম্পদে বর্ষা-প্রকৃতির ডালি পূর্ণ হয়। বর্ষা বর্ষণের ঋতু। বৃষ্টির পরিমাণের উপর কৃষির সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা নির্ভর করে। কৃষিনির্ভর আর্থিক অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির ফলে শস্যহানি হয়। পরিমিত বৃষ্টি হলে জীবনে বর্ষার শ্যামাসুন্দরী শস্যপ্রাচুর্যে কৃষকের গোলা ভরে ওঠে। বাঙালির আর্থিক জীবনে বর্ষার প্রভাব তাই সুদূরপ্রসারী।

সুন্দর ও ভয়ংকরের সমন্বয়ঃ

বাংলার বর্ষার  সৌন্দর্য অনুপম। এমন অনিন্দ্যসুন্দরী বর্ষাও সময় বিশেষে হয় নিষ্ঠুরা ভয়ংকরী। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ভয়াবহ প্লাবনের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা গ্রাস করে সবুজ তাজা ফসল, ধন-জন- সম্পদ, এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু।

ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, আমাশয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। বজ্রপতন, নৌকাডুবি প্রভৃতি দুর্ঘটনায় বহু লোকের জীবনাবসান হয়। গ্রামের পথগুলি হয় কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল। জলে-ডোবা গ্রামগুলি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এক-একটি দ্বীপের মতো অবস্থান করে।

শহরজীবনে বর্ষাঃ

শুধু গ্রামের আকাশে নয়, শহরের আকাশেও মেঘ জমে। বর্ষা নামে। তবে গ্রাম বাংলায় বর্ষার যে ব্যাপ্তি, যে অপরূপ শ্যামশ্রী, শহরে তার একান্ত অভাব। শহরজীবনে বর্ষার আবির্ভাব কী দুঃসহ ও পীড়াদায়ক! বিশেষত বস্তিবাসীদের দুর্দশার শেষ থাকে না। নর্দমার দূষিত জল আর ময়লা সমগ্র বস্তি অঞ্চলকে নরককুন্ডে পরিণত করে। সামান্য বৃষ্টিপাতেই শহরের পথে-ঘাটে জল জমে। বাস-ট্রাম থমকে দাঁড়ায়। শহরে তরুলতার সমারোহ নেই। নেই অরণ্যভূমি। পুষ্প প্রাচুর্যেরও এখানে অভাব। বর্ষা এখানে কলে-পড়া জন্তুর মতন স্যাঁতসেঁতে, নির্জীব।

বর্ষা ও বাংলার আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনঃ

বাঙালী ছড়িয়ে দিয়েছে তার কল্পনার ডানা। রথযাত্রা, ঝুলন, বীজবোনা, মনসাপূজো ইত্যাদি উৎসব-আয়োজন বর্ষা-ঋতুরই উপযুক্ত পটভূমি। এই বর্ষাকালই বাংলার নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতিপর্ব। বর্ষার স্নিগ্ধ সজল পটভূমিতেই হয় বর্ষামঙ্গল, বৃক্ষ রোপণ ইত্যাদি অনুষ্ঠান। বর্ষা বাঙালীর জীবনে এনেছে নতুন ছন্দ সুষমা।

 বর্ষা ও বাংলা সাহিত্যঃ

বর্ষা কবিহৃদয়কে উদ্বেল করেছে। বর্ষার ডাকে সে যাত্রা করেছে চিরসৌন্দর্যের অলকাপুরীতে। মঙ্গলকাব্যের কবি এঁকেছেন বর্ষার দুঃখের ছবি- বৃষ্টি হইলে কুঁড়্যায় ভাসিয়া যায় ধান।  বর্ষা মানুষের মনোলোকে সঞ্চারিত করে নতুন ভাব আর উদ্দীপনা। যুগে যুগে বর্ষার কত অপূর্ব ছবি এঁকেছেন কবি ও শিল্পী। শ্রীরাধার অভিসার পর্যায়ে বৈশ্বব কবির বর্ষা-বর্ণনা-

তহি অতি দূরতর বাদর দোল।

বারি কি বারই নীল নিচোল।

বিশ্বকবির লেখনীতে বর্ষার জলসিঞ্চিত শ্যামগম্ভীর রূপ  বর্ণীত হয়েছে –

ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে-

জলসিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ-রভসে

ঘন গৌরবে নবযৌবনা বরষা

শ্যামগম্ভীর সরসা।

বর্ষার চিত্রশালে যুগে যুগে সঞ্চিত হয়েছে সঙ্গীত-কবিতার অজস্র বর্ণাঢ্য সম্ভার। এ যুগের কবি-সাহিত্যিকও বর্ষা-বন্দনার বিচিত্র মালা গেঁথেছেন।

উপসংহারঃ

বর্ষা হলো অবকাশের ঋতু, নিষ্প্রয়োজনের ঋতু। বর্ষা আমাদের কাছে এক বিপুল পৃথিবীর খবর নিয়ে আসে। বর্ষা আমাদের কাছে চির আদরের ঋতু, অনন্ত বেদনার ঋতু। এক চোখে অশ্রু, অন্য চোখে হাসি।এই আনন্দ ও বেদনা নিয়েই হল বঙ্গের বর্ষা।

 ‘আমার পরানে আজি যে বাণী উঠিছে বাজি,

অবিরাম বর্ষণধারে

কারণ শুধায়ো না, অর্থ নাহি তার ,

                         সুরের সঙ্কেত জাগে পুঞ্জিত বেদনার।’  – রবীন্দ্রনাথ_ঠাকুর

 

বর্ষাকাল রচনা অনুসরণে লেখা যায়:

১. তোমার প্রিয় ঋতু

২. বর্ষাকালে গ্রাম ও শহর

৩. বাঙালীর জীবন-ভাবনায় বর্ষা


বর্ষাকাল রচনা ক্লাস ৬/৭

 

“হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে।”রবীন্দ্রনাথ_ঠাকুর      

 ভূমিকাঃ

বাংলার ঋতুপর্যায়ের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা।  গ্রীষ্মের ভয়াল রূপ থেকে প্রকৃতি ও মানুষকে নব প্রাণ দিতে আবির্ভাব হয় বর্ষা। আষাঢ়ের  প্রথম দিনে নব মেঘের মধ্যদিয়ে তার শুভযাত্রার সূচনা হয়। শ্রাবণে , তার পূর্ণতা এবং ভাদ্রে তার গতিমন্থরতা এবং  শেষ আশ্বিনে হিমেল বাতাসে তার বিদায়।

বর্ষার অপূর্ব রূপঃ

বাংলায় বর্ষার অপূর্ব শোভা দেখা যায়। মাঠ ঘাট জলাশয় বর্ষার জলে ভরে ওঠে। গ্রীষ্মের তাপে যেসব গাছপালা সতেজতা হারিয়ে ফেলে তারা আবার সবুজ-সতেজ হয়ে ওঠে। আকাশে কালো মেঘে, খেত ভরা ধান , মেঘের গর্জন ব্যাঙের ডাক নদীর জলের শব্দ বাংলার প্রকৃটিকে অপূর্ব শোভায় ভড়িয়ে তোলে।

পুষ্পরাশিঃ

বঙ্গা-প্রকৃতি পুষ্পাভরণা। প্রত্যেক ঋতুতে বঙ্গ প্রকৃতি পুষ্পরাশিতে ভরে ওঠে।  কদম্ব, কেতকী, কুমুদ-কলহার, জুঁই-হাস্নাহানা, দোপাটি-অপরাজিতা প্রভৃতি পুষ্পসম্পদে বর্ষা-প্রকৃতির ডালি পূর্ণ হয়।

সুন্দর ও ভয়ংকরের সমন্বয়ঃ

বর্ষায় বঙ্গ প্রকৃতি যেমন ফুল ফল ও ফসলে ভরে ওঠে , তেমনই বন্যার মতো অভিশাপও নেমে আসে। তাছাড়া  ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, আমাশয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে মানুষের জীবনে অনেক ক্ষতি করে।

সাহিত্য ও উৎসবে বর্ষাঃ

যুগ যুগ ধরে বর্ষা কাল কবিদের মনকে আবেগে জড়িয়ে রেখেছে। মহাকবি কালদাস , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  প্রমুখ্যের লেখণীতে বর্ষা আরো নবরূপ ধারণ করে। বর্ষায় সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালীর অনেক উৎসব। যেমন- রথযাত্রা, ঝুলন, বীজবোনা, মনসাপূজো ইত্যাদি।

উপসংহারঃ

ভালমন্দ সব কিছু মিশিয়ে বর্ষা ভগবানের এক অপূর্ব দান।  আমাদের কাছে চির আদরের ঋতু, অনন্ত বেদনার ঋতু। তাই বাংলার বর্ষা ঋতুরাণী।

 


আন্যান্য রচনা পড়ুনঃ 

১.তোমার প্রিয় কবি রচনা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২. ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা

৩.মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রবন্ধ রচনা

৪.একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা

৫.পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

৬.আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান- প্রবন্ধ রচনা

৭.একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৮.বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা

৯.প্রতিবেদন রচনা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

১০. দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় MCQ

১১.বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা

১২.সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা

১৩.পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা


 

Leave a comment