প্রিয় পাঠক আজকের বাংলা রচনা পর্বে যে রচনাটি আমরা উপস্থাপন করতে চলেছি তা হল-দেশ ভ্রমণের উপযোগিতা প্রবন্ধ রচনা। প্রথমে এই রচনাটি একটু বড়ো করে লেখা হয়েছে দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ রচনা class 9/10। পরে রচনাটি সংক্ষিপ্ত করে লেখা হয়েছে যা দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ রচনা class 7/8 ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
দেশ ভ্রমণের উপযোগিতা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকাঃ
আমরা সুদূরের পিয়াসী। বৈচিত্র্যের স্বাদ গ্রহণের অকাঙ্খা আমাদের বক্ষ জুড়ে। ইঙ্গিতে সুদূর আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাইতো আমরা বেরিয়ে পড়ি সুদূরের আহ্বানে। দিনযাপনের, প্রাণধারণের ক্লান্তিকর একঘেয়েমি থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমাদের – ‘পথ চলতেই আনন্দ।“ চলার নাম জীবন, থেমে যাওয়ার নাম মৃত্যু। তাই উপনিষদ বলছে- “চরৈবেতি–চরৈবেতি–চরৈবেতি।“
“শুধু কি আনন্দ! শিক্ষাও যে আছে।
কবি বলেন–বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
কবি দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী।
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু।
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তবু।
রয়ে গেল অগোচরে।“
দেশভ্রমণের আবশ্যিকতাঃ
পুঁথিগত বিদ্যাকে যাচাই করার অন্যতম উপায় হলো বাস্তবজীবনে তাকে প্রয়োগ করা। বই পড়ে যা জানা যায়, তাকে বাস্তব জীবনে মিলিয়ে নেওয়া – এই ভেবে যে, কতখানি জীবন-সম্ভব সেই বিদ্যা। আমরা অনেক কিছুর সূত্র মুখস্থ করি, জীবনে তার প্রয়োগ কতখানি , তা ভেবে দেখি না; এজন্য শিক্ষার অনেকখানি বাদ পড়ে যায়। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সেজন্য দেশভ্রমণকে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, কতকগুলি বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য ঘরে বসে থাকলে চলে না। শিক্ষামূলক দেশভ্রমণ ছাত্রজীবনে অমূল্য সহায়ক।
দেশভ্রমণ জীবনের শিক্ষকঃ
তবে দেশভ্রমণকে শুধু শিক্ষালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেখা ঠিক হবে না। স্কুল- কলেজে পড়ার সময়ে দেশভ্রমণ আমাদের শিক্ষাগ্রহণে সহায়ক, তা ছাড়া অন্য সময়ে নয়- একথা অসত্য। বরং আমাদের জীবনের প্রকৃত শিক্ষা আরম্ভ হয় স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি ছাড়াবার পর। সারা জীবন ধরে মানুষ শিক্ষার্থী, শিক্ষার কোন শেষ নেই। সমগ্র জগৎ এবং জীবন এক বিরাট শিক্ষালয়। ঘুরে বেড়ালে কত দেখা যায়, শেখা যায়।
যে-কোন ভাব, যে-কোন জ্ঞান, এমন কি চরিত্র-প্রত্যক্ষ বস্তুর সংস্রব ছাড়া নির্জীব ও নিষ্ফল হতে বাধ্য। তাইতো ইতিহাস-ভূগোলের বিবরণ ছাত্রদের কাছে বর্ণহীন। ভূস্বর্গ কাশ্মীর, অনন্যা দার্জিলিং, অপরূপা অজন্তা-ইলোরা-তাজমহল, দিল্লীর লালকেল্লা, নালন্দা- সারনাথের শিল্প-ভাস্কর্য, সুন্দরবনের গহন অরণ্য আর নদীর পর নদীর অন্তহীন বিস্তার অনায়াসে পুঁথির সীমার বাইরে নিয়ে গিয়ে আমাদের অধীত বিদ্যাকে প্রাণময় করে তোলে।
দেশভ্রমণের শিক্ষাঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,
“সব ঠাঁই মোর ঘর আছে আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।
দেশে দেশে মোর দেশ আছে আমি সেই দেশে লব যুঝিয়া।“
চার দেওয়ালের মধ্যে আমাদের বসবাস। এই পরিচিত বেষ্টনী থেকে বাইরে বেরিয়ে না পড়লে বিচিত্র প্রকৃতি-জগৎকে দেখা হয় না, মানব-জগৎকেও না। কত কম জানি আামরা, কতটুকু বা দেখেছিঃ –‘বিশাল বিশ্বের আয়োজন, মন মোর জুড়ে থাকে অতি দেশভ্রমণের শিক্ষা ক্ষুদ্র তারি এক কোণ।’ আর এই ক্ষোভ যার মনে জাগে তারআর সংসারে তৃপ্তি নেই। ঘুরে বেড়াবার নেশা একবার যাকে পেয়ে বসেছে, হাতে কিছু টাকা আর কয়েকদিনের ছুটি পেলে সে দেশভ্রমণে বেরিয়ে পড়বেই। মানুষ হোক আর প্রকৃতি হোক, দুচোখ ভরে দেখা অথবা মনপ্রাণ দিয়ে শেখা,এই দুটোই সম্ভব হয় দেশভ্রমণের কল্যাণে, শুধু দেশভ্রমণেরই কল্যাণে।
ভ্রমণের আনন্দঃ
প্রাত্যহিকতার গ্লানি দূর জন্য আমরা বারবার সমুদ্রে, পর্বতে, অরণ্যে ছুটে যাই। আমাদের তনু-মন চির চেনার মধ্যে চির অচেনাকে ও চির অচেনার মধ্যে চির চেনাকে অনুভব করতে পারে পরমানন্দে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- “ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু” দেখে বিস্ময়ে অবাক হয়ে যান।
ভ্রমণ এখন অর্থকরী দিকঃ
দেশভ্রমণ অর্থাগমের পথকে করেছে সুগম। পর্যটন এখন বিশিষ্ট অর্থকরী শিল্প। বিদেশি পর্যটকদের পরিভ্রমণের ফলে অর্জিত হয় বৈদেশিক মুদ্রা। দেশি-বিদেশি পরিব্রাজকের ভিড়ে দর্শনীয় স্থানগুলিতে হোটেল শিল্পের শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে।
উপসংহারঃ
ঘরকুনো মানুষ জীবনের সত্যকার আস্বাদ থেকে বঞ্চিত। সেও যে বিশ্ব মানবের অংশ, এই বোধ দেশভ্রমণ ছাড়া তার মনে জাগতে পারে না। সে নিজেকে কেবল বিচ্ছিন্ন করে দেখে, নিজের সংকীর্ণ দৃষ্টি দিয়ে সে সবকিছু বিচার করে। সব দেশের সব জাতের মানুষই যে বিশ্বমানবতার অন্তর্গত। বহির্বিশ্বের উপসংহার বিচিত্র মানবগোষ্ঠীর সঙ্গে যে তার নাড়ির যোগ আছে, দেশ ঘুরলে তা বোঝা যায় না। দেশভ্রমণ না করলে দেশের ইতিহাস-ভূগোলও সঠিক জানা যায় না। দেশভ্রমণ এই কারণেই শিক্ষার এক বিশিষ্ট অঙ্গ। গবেষণাগার ছাড়া জ্ঞান-শিক্ষা যথাযথ হয় না, তাই দেশভ্রমণকে বলা চলে শিক্ষার গবেষণাগার।
অনুরূপ প্রবন্ধ:
১. দেশভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ
২. দেশভ্রমণের বিবিধ উপযোগিতা
দেশ ভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ রচনা class 7/8
ভূমিকাঃ
আমরা সুদূরের পিয়াসী। বৈচিত্র্যের স্বাদ গ্রহণের অকাঙ্খা আমাদের বক্ষ জুড়ে। ইঙ্গিতে সুদূর আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাইতো আমরা বেরিয়ে পড়ি সুদূরের আহ্বানে। দিনযাপনের, প্রাণধারণের ক্লান্তিকর একঘেয়েমি থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমাদের – ‘পথ চলতেই আনন্দ।“ চলার নাম জীবন, থেমে যাওয়ার নাম মৃত্যু। তাই উপনিষদ বলছে- “চরৈবেতি–চরৈবেতি–চরৈবেতি।“
দেশভ্রমণের আবশ্যিকতাঃ
পুঁথিগত বিদ্যাকে যাচাই করার অন্যতম উপায় হলো বাস্তবজীবনে তাকে প্রয়োগ করা। বই পড়ে যা জানা যায়, তাকে বাস্তব জীবনে মিলিয়ে নেওয়া – এই ভেবে যে, কতখানি জীবন-সম্ভব সেই বিদ্যা। আমরা অনেক কিছুর সূত্র মুখস্থ করি, জীবনে তার প্রয়োগ কতখানি , তা ভেবে দেখি না; এজন্য শিক্ষার অনেকখানি বাদ পড়ে যায়। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সেজন্য দেশভ্রমণকে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দেশভ্রমণের শিক্ষাঃ
দেশে দেশে ঘুরে আমরা বিচিত্র মানুষের সংস্পর্শে আসি। তাদের জীবন ও সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে পরিচিত হই। মানবতার উদার ক্ষেত্রে সকলের সঙ্গে আত্মিক যোগস্থাপনের ফলে আমাদের মনের সংকীর্ণতা দূর হয়, ফলে আমরা বিশ্বঘরের বাসিন্দা হয়ে যাই। ঘরে ঘরে খুঁজে পাই পরমাত্মীয়। ভ্রমণে ইতিহাস যেন কথা বলে ওঠে। ভ্রমণ থেকে আমরা যে শিক্ষালাভ করি তা সবচেয়ে বাস্তব। তাইতো বলা হয়– “To see is to believe.”
সংস্কৃতি বিনিময় ও বিশ্বশান্তির পক্ষে সহায়কঃ
ভ্রমণকারীদের থাকা-খাওয়া, আরাম-আয়াসের জন্যে দেশে দেশে গড়ে উঠেছে বড়ো বড়ো হোটেল, লজ, রেস্তোরাঁ। দেশবিদেশের পর্যটনকারী মানুষ যত কাছাকাছি আসছে, ততই শিক্ষাসংস্কৃতির বিনিময়দ্বার যাচ্ছে খুলে। পারস্পরিক সম্প্রীতি-সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার পথ হচ্ছে প্রশস্ত। হিংসা-দ্বেষ-গ্লানির অবসান হয়ে বিশ্বশান্তির বাতাবরণ হচ্ছে রচিত।
ভ্রমণের আনন্দঃ
প্রাত্যহিকতার গ্লানি দূর জন্য আমরা বারবার সমুদ্রে, পর্বতে, অরণ্যে ছুটে যাই। আমাদের তনু-মন চির চেনার মধ্যে চির অচেনাকে ও চির অচেনার মধ্যে চির চেনাকে অনুভব করতে পারে পরমানন্দে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– “ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু” দেখে বিস্ময়ে অবাক হয়ে যান।
ভ্রমণ এখন অর্থকরী দিকঃ
দেশভ্রমণ অর্থাগমের পথকে করেছে সুগম। পর্যটন এখন বিশিষ্ট অর্থকরী শিল্প। বিদেশি পর্যটকদের পরিভ্রমণের ফলে অর্জিত হয় বৈদেশিক মুদ্রা। দেশি-বিদেশি পরিব্রাজকের ভিড়ে দর্শনীয় স্থানগুলিতে হোটেল শিল্পের শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে।
উপসংহারঃ
ভ্রমণ হল শান্তির ছাড়পত্র। আমরা শাস্তি চাই। অতীশ দীপঙ্কর, ফা- হিয়েন, হিউয়েন সাঙ প্রমুখ পরিব্রাজক দেশে-দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন শান্তির খোঁজে। ভ্রমণে আমরা খুঁজে পাব শান্তির ঠিকানা। ঘরকুনো মানুষ জীবনের সত্যকার আস্বাদ থেকে বঞ্চিত। সেও যে বিশ্ব মানবের অংশ, এই বোধ দেশভ্রমণ ছাড়া তার মনে জাগতে পারে না। দেশভ্রমণ এই কারণেই শিক্ষার এক বিশিষ্ট অঙ্গ।
অন্যান্য রচনা পড়ুনঃ
১.তোমার প্রিয় কবি রচনা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা
৩. মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রবন্ধ রচনা
৫.পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
৬.আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান- প্রবন্ধ রচনা
৭.একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮.বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা
৯.প্রতিবেদন রচনা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
১১.সাহিত্য পাঠের প্রয়োজনীয়তা রচনা
১২.পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা
১৩. ছাত্রদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা।