ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা

এই পর্বে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরবো ছাত্রজীবনে খেলাধূলার গুরুত্ব Class 10 এই রচনাটি অর্থাৎ ছাত্রজীবনে খেলাধূলার গুরুত্ব  ৪০০ শব্দের প্রবন্ধ যা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা
ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা

 

ছাত্রজীবনে খেলাধূলার গুরুত্ব Class 10/12

ভুমিকা:    

 “খেলা মোদের লড়াই করা

খেলা মোদের বাঁচা মরা ;

খেলা ছাড়া কিছুই কোথাও নাই। ”

প্রাচীন কাল থেকেই খেলাধূলা মানুষের শারীরিক গঠন ও মানসিক প্রধান উৎস। দেহ ও মনের পরিপূর্ন বিকাশের মধ্য দিয়ে মানুষের সম্পূর্ন চরিত্র গঠন সম্ভব হয়। মনের বিকাশের জন্য যেমন জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন, তেমনি দৈহিক বিকাশের জন্য খেলাধূলার প্রয়োজন। বস্তুত,  খেলাধূলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় অফুরন্ত আনন্দের ভান্ডার।

খেলাধূলা ও অভিযোজন :

জন্ম লগ্ন থেকে শিশুর খেলাধূলার প্রতি এক সহজাত গঠনের সূত্রপাত আকর্ষন থাকে। জন্মের পরমূহুর্তেই হাত পা ছুড়ে একটি শিশু খেলা করে এবং এইভাবে খেলার মধ্য দিয়ে সে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে বয়স বৃদ্ধির সাথে গৃহের পরিধি পেরিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এই ভাবে শিশুর মনের সংকীর্নতা দূর হয়।

খেলাধুলার গুরুত্ব  :

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন , ‘যে শক্তি কর্মের উদ্যোগ আপনাকে সর্বদা প্রবাহিত করিতেছে সেই শক্তিই খেলার চাঞ্চল্যে আপনাকে তরঙ্গায়িত করিতেছে। শক্তির এই প্রাচুর্যকে বিজ্ঞের মতে অবজ্ঞা করতে পারি না। ’

সুস্থ জীবন লাভের জন্য চাই খেলাধুলা । শরীর ঠিক রাখার জন্য চাই শরীর চর্চা। উন্নত দেশে (জাপানে) কলকারখানা কাজ শুরুর আগে এই ব্যায়াম চর্চা করে থাকে। এর দ্বারা কর্মশক্তির বিকাশ হয়, কাজে মন আসে। সেইজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিফিনের সময় বা অন্য সময় খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। সবাই জানে স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যবান দেহ সুখ – সম্পদের অধিকারী। যারা অসুস্থ, দুর্বল, রুগন্‌ তারা জীবন যুদ্ধে পদে পদে পরাভূত হয়।

পাশ্চাত্য দেশের খেলাধূলা :

পাশ্চাত্য দেশে খেলাধুলা জাতীয় জীবনের সঙ্গে অঙ্গীভূত। পূর্ব জার্মানি সমাজতন্ত্রী দেশ। সব বয়সের মানুষের মধ্যে সেখানে খেলাধুলা আবশ্যিক, কেননা তারা মনে করে খেলাধুলা লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্লান্তিনাশ, আমোদ উপভোগ ও মানসিক পরিতৃপ্তির উৎস। জার্মান গণতান্ত্রিক দেশ, খেলাধুলাকে জাতির চরিত্র গঠনের অন্যতম প্রধান উপায় হিসাবে তারা গুরুত্ব দিয়েছে।

জাতি গঠনে খেলাধুলা :

সুস্থ সবল জাতিগঠনে খেলাধুলা বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই জীবনের উষাকাল থেকে প্রতিটি মানুষের শরীর চর্চার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। খেলাধুলা মানে সমবেত ব্যায়াম। শরীর চর্চা ও শরীর গঠন যেমন তাতে হয়, তেমনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রবণতাও শিক্ষা লাভ করা যায়। একের সংকল্প তখন মিশে যায় দলগত সংকল্পে। ব্যক্তিক দুর্বলতা সকলের সঙ্গে মিশে নিঃশেষ হয়ে যায়, দৃঢ় প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে সফলতার জন্য মানুষ আত্মনিয়োগ করে এবং নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা অর্জন করে। জাতির উন্নতি জন্য এই গুণগুলি অর্জন করা অপরিহার্য। সেজন্য প্রয়োজন জাতীয় জীবনে খেলাধুলা।

জাতীয় জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব :

জাতীয় জীবনে  খেলাধুলার বিশিষ্ট প্রভাব আছে ঠিকই, কিন্তু সে প্রভাব যদি উপকারের পথে না চালিত হয়ে ভিন্ন পথে চালিত হয় তখন তার ক্ষতির পরিমাণও হয় ভয়াবহ। যেমন খেলাধুলায় রাজনীতির অনুপ্রবেশ। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন খেলাধুলাকেও করেছে কলঙ্কিত। ক্রিকেটে কোনো খেলোয়াড় খেলবে সেখানেও রাজনীতি প্রবেশ করেছে। দল গঠনে গোষ্ঠীবাজিও চোখে পড়েছে – যা মোটেও কাম্য নয়।

আধুনিক জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব :

আধুনিক যুগ যান্ত্রিকতার যুগ। প্রাচীনকালে মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হত। কিন্তু এখন জীবনের সর্বক্ষেত্রে যন্ত্রের আধিপত্য। যন্ত্রই কাজ করে, মানুষ দাঁড়িয়ে বা বসে তা চালনা করে। ফলে কায়িক পরিশ্রম হয় নিতান্তই অল্প। অনেক সময় শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক পরিশ্রম বেশি হয়। মানসিক পরিশ্রমের সঙ্গে সমতা রেখে শরীর চালনা না হলে বিভিন্ন ধরনের অসুখে পড়তে হয়। অনিদ্রা, ক্ষুধামান্দ্য প্রভৃতি লক্ষণ শারীরিক পরিশ্রমের অভাবজনিত। তাই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে গেলে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা একান্ত জরুরি।

খেলাধূলা ও শৃঙ্খলাবোধ:

নিয়মিত খেলাধূলা ও শরীর চর্চার মধ্যদিয়ে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে এক শৃঙ্খলাবোধ।   খেলার মাঠে নিয়মিত শৃঙ্খলাবোধের অনুশীলনে দেহ ও মন সুস্থ ও সবল হয়ে ওঠে।

শৃঙ্খলাবোধের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ মন থেকে বিলুপ্ত হয়ে দলগত ঐক্য প্রধান লক্ষ্য  হয়ে দাঁড়ায়। আর এই দলগত শৃঙ্খলাবোধ – ই একটি জাতীর উন্নতির সোপান।

খেলাধূলা ও চরিত্র গঠন:

খেলাধূলা মানুষের চরিত্র গঠনে সাহায্যে করে। নিয়মিত শৃঙ্খলা ও সংযম মেনে খেলাধূলার মধ্য দিয়ে চারিত্রিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার একঘেয়েমি দূর হয় খেলাধূলার মাধ্যমে।

তাছাড়া জীবন একটা খেলাছাড়া আর কিছুই নয়, যেখানে খেলাধূলার মাধ্যমে এক উদার মনভাব বা স্পোর্সম্যান স্প্রিরিট গোড়ে ওঠে যা আমাদের জীবনকে সৌন্দর্যময় করে তোলে। তাই ওয়েলিংটন বলেছেন – “The battle of waterloo was alone on the playing field of Eton . ”

আমাদের জীবনে মূল্যবোধের যে অভাব তার মূলে আছে খেলাধূলার অভাব তাই খেলাধূলা চারিত্রিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করে।

খেলাধূলা ও বিশ্ব ভাতৃত্ববোধ:

নিয়মিত খেলাধূলার অভ্যাস ভৌগলিক ব্যাড়া জাল, জাতিগত ও ধর্মগত বিভিন্নতাকে মুছে দিয়ে মানুষ মানুষের আরও নিকটে আসার সুযোগ পায়। অলিম্পিকের মতো , বিশ্বকাপের মতো,ক্রিয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহু দেশের মানুষ এক জায়গায় মিলিত হয়ে পারস্পরিক ভাবের আদান প্রদান করে, যার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে বিশ্ব ভাতৃত্ব বোধ।

উৎসংহার:  

শিক্ষা লাভের সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীরা খেলাধূলার সুযোগ সুবিধা পেলেই পাঠ্য বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে ফলত অপসংস্কৃতির দিকে তাদের প্রবণতা কমবে, বাড়বে দৃঢ় চরিত্র।

মানুষের মধ্যে জেগে উঠবে বাধা বিপত্তিকে সরিয়ে জীবনকে উপভোগ করার প্রবণতা। কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে পারবো –

“চাই, বল, চাই স্বাথ্য , আনন্দ উজ্বল পরম আয়ু, সাহস বৃস্তিত্ব বক্ষ পটে ”

তাই কবির ভাষায় শুর মিলিয়ে আমরা বলি-

“খেলা মোদের লড়াই করা,   খেলা মোদের বাঁচা মরা,
খেলা ছাড়া কিছুই কোথাও নাই।
খেলতে খেলতে ফুটেছে ফুল,  খেলতে খেলতে ফল যে ফলে—
খেলারই ঢেউ জলে স্থলে।” – গীতবিতান

ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা – আনুসারে যে রচনাগুলো লেখা যাবে তা হল-

১.চরিত্র গঠনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা।

২. ছাত্রজীবনে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা।

৩. ছাত্র জীবনে চরিত্র গঠন। 

৪. জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব |

Thanks For Reading: ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা


আন্যান্য রচনা পড়ুনঃ 

১.তোমার প্রিয় কবি রচনা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২. বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা ৪০০ শব্দের 

৩.মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রবন্ধ রচনা

৪.একটি গাছ একটি প্রাণ রচনা

৫.পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

৬.আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান- প্রবন্ধ রচনা

৭.একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা


 

 

Leave a comment