প্রিয় পাঠক আজকের বাংলা রচনা পর্বে যে রচনাটি আমরা উপস্থাপন করতে চলেছি তা হল –বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা। এই রচনাটি যে সব ছাত্র ছত্রীদের পরীক্ষার জন্য উপযোগী তা হল –বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা মাধ্যমিক।বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা class 8/9। বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা class 10.
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা সহজ ভাষায় লেখার প্রয়াস করা হয়েছে। তোমরা এই রচনাটিকে সংক্ষিপ্ত করে এই ভাবে লিখতে পারো- বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা 400 শব্দে।
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা । বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা class 10
“যে জাতি জীবন হারা অচল আসার,
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ন লোকাচার “
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা :
রহস্যময়তার প্রতি কৌতূহল এবং সেই রহস্যের কারণ অনুসন্ধান করা মানুষের এই স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যই ,মানবসভ্যতার ভিত্তি। রহস্যের অন্তরালে কোন সত্য লুকিয়ে আছে, কীভাবে সেই সত্যে পৌঁছানো যায়, জানার এই সুতীব্র ইচ্ছা থেকেই সৃষ্টি হল বিজ্ঞানের। মানুষ জগতের শ্রেষ্ঠ জীব। সেই মানুষ জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে সভ্য হয়েছে, বহু কিছু আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে মানুষ বর্তমানে রকেট, রোবট ও ইলেকট্রনিকসের যুগে পৌঁচেছে। কিন্তু কুসংস্কার থেকে মানুষ আজও সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি।
কুসংস্কার কীঃ
কুসংস্কার কথার অর্থ হল যে সংস্কার বা সামাজিক নিয়ম খারাপ। অর্থাৎ মানুষ যেসব সংস্কার অহেতুক , যুক্তিহীন ও অবৈঞ্জানিক ভাবে মেনে চলে তাদের কুসংস্কার বলে। তবে সমস্ত সংস্কার কুসংস্কার নয়, যেসব সংস্কার যুক্তিহীন সেগুলি কুসংস্কার । যেমন- বাড়ি থেকে বেরনোর সময় পিছন থেকে ডাকলে অশুভ যাত্রা হয় – এমন মনে করাটা কুসংস্কার। পরীক্ষার দিনে ডিম খেলে নাকী পরীক্ষা ভালো হয় না – এমন মনে করাটা কুসংস্কার।
কুসংস্কারের উৎসঃ
কুসংস্কারের উৎস প্রাচীন কাল থেকে। যেদিন থেকে মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন রহস্য উতঘাটন করতে গিয়ে অতি প্রকৃত শক্তির প্রতি বিশ্বাস রাখতে শুরু করল সে দিন থেকেই মানুষের মনে কুসংস্কার এসে হাজির হতে শুরু করল। অতি প্রকৃত শক্তির হাত থেকে বাঁচার তাগিদে মানুষ বিভিন্ন সংস্কার মানতে শুরু করল, সেই সব সংস্কারের মধ্যে কিছু সংস্কার শুভ ফল দিল এবং কিছু সংস্কার অশুভ ফল দিল যা কুসংস্কার রুপে মানুষের মনে বাসা বাঁধল।
আরো পড়ুনঃ
বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা :
‘ বিজ্ঞান ’ কথাটির অর্থ বিশেষ রকম জ্ঞান। অজানাকে জানার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। যে তার জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে সব কিছুকে বিশ্লেষণ করে দেখতে চায়। তার ফলে অন্ধকার দূর হয়, সত্যের উন্মোচন হয়। নানা রকম ভুল ধারণা , অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার তা দূর করতে পারে বিজ্ঞন। বিজ্ঞান মানুষের মনের অন্ধকুসংস্কার দূর করে মানুষের মনে আলোর দিশা জাগায়, মানুষকে কর্মমুখর করে তোলে, সুতরাং জ্ঞান – বুদ্ধির বিকাশ ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবন, যাপনের জন্য বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার :
বর্তমান মানুষ যতই সভ্য হোক, উন্নত, আধুনিক হোক না কেন অনেক ভ্রান্ত সংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অলৌকিকতা, কদাচারে বিশ্বাস করে রয়েছে। হাঁচি, টিকটিকির বাধায় অনেকের শুভযাত্রা আজও মাটি হয়। এই সব অন্ধকুসংস্কার সমাজদেহে দুষ্ট ক্ষতের মতো ছড়িয়ে আছে।
এগুলির বিজ্ঞানসম্মত বাস্তব সভ্যতা নেই। সমাজ এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে না। নতুন নতুন চিন্তাধারা কর্মপ্রবাহে সমাজজীবনও সদাচঞ্চল। যে সমাজে চলনধর্মিতা আছে, আছে নতুনকে গ্রহণের মানসিকতা, সেই সমাজই এগিয়ে চলে। বৈজ্ঞানিক বোধের বিকাশেই তা সম্ভব। তথাকথিত শিক্ষা মানুষের মনের অন্ধত্ব ঘোচাতে পারে না , দূর করতে পারেনা মনের কালিমা । একমাত্র বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশেই মানুষের ভ্রান্ত ধারণার অবসান হয়।
বিজ্ঞান মনস্কতা:
যুক্তিতর্কের মাধ্যমে কার্যকারণ সম্পর্কে স্থাপিত প্রমাণিত সত্য হল বিজ্ঞন। এই সত্যে যাঁরা আস্থা রাখেন, এই সত্যকে যাঁরা চিরন্তন বলে দ্বিধাহীনভাবে গ্রহণ করেন, তাঁরা হলেন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তবে আমরা অনেকেই বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারিনি।
বিজ্ঞান শিক্ষার্থী হলেই বিজ্ঞানবোধ জন্মাবে এমন কথা ভাবা ঠিক নয়। অলৌকিক বা অলীক কল্পনায় আস্থা না রেখে প্রত্যক্ষ দর্শন। বাস্তব অভিজ্ঞতা, কার্যকারণ যোগ সূত্রের জ্ঞান, সত্য মিথ্যা যাচাই করার প্রবণতার নাম হল বিজ্ঞানমনস্কতা বা বিজ্ঞানচেতনা। বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানের বোধ জন্মায়।
বিজ্ঞান মনস্কতার বিকাশ :
বিজ্ঞান মনস্কতা এক বিশেষ মানস প্রক্রিয়া । সব কিছুকেই যাচাই করে নেওয়ার প্রবণতা এবং যা সত্য তা গ্রহণ করার মানসিকতা।সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বোধের প্রসারণ প্রয়োজন। অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে প্রশ্রয় না দেওয়া, ভ্রান্ত ধারণাগুলিকে যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা, কুসংস্কারের ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে বিজ্ঞান মনস্কতা গড়ে তোলা সম্ভব।
তাই জনগণকে বিজ্ঞান মনস্ক করার জন্যে আজ সারা দেশব্যাপী চলছে জনবিজ্ঞান আন্দোলন। সারাদেশ ছাব্বিশটি জনবিজ্ঞান সংগঠনকে নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি জাতীয় কমিটি।
ভারতের বিজ্ঞান চেতনা :
“ The greatest enemy of know ledge is not ignorance ,
it is the illusion of know ledge. ” – Stephen Hawking
ভারতের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশই নিরক্ষর এখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি, বর্নভেদ, মানসিক সংকীর্নতা , অলৌকিকতা, কু – প্রথা ভারতীয় সমাজ জীবনকে অষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। আমাদের দেশে বিজ্ঞান দেতনার বিশেষ প্রসার ঘটেনি।
রোগ নিরাময় ও সমস্যা সমাধানে কবচ – মাদুলি, পাথর, তেলপোড়া, জলপড়া, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। শিক্ষিতরাও নানারকম কুসংস্কার ও সংকীর্নতার ধারক ও বাহক। তথাকথিত শিক্ষা তাদের মনের সংকীর্নতার অন্ধকার দূর করতে পারেনি।
বিজ্ঞান চেতনার প্রসার এবং কুসংস্কার দূর করার জন্য নানা চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান এবং ক্লাবগুলির অগ্রনী হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জনবিজ্ঞান জাঠা, যা সারা দেশ জুড়ে বিজ্ঞান আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে, তা নিঃসন্দেহে আশাপ্রদ। বিজ্ঞানকে জনমানসে পৌঁছে দেওয়া জনবিজ্ঞান জাঠার অন্যতম লক্ষ্য।
উপসংহার :
সবরকম সংকীর্ণতা , ক্ষুদ্রতা, গতানুগতিকতা বিসর্জন দিয়ে সবকিছুকে যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমরা কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারব-
“বিজ্ঞানই বর্তমান জগতে উন্নতির মাপকাঠি,
বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেই সভ্যতার অগ্রগতি।”
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
Thanks For Reading: প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা
আন্যান্য রচনা পড়ুনঃ
১.তোমার প্রিয় কবি রচনা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা
৩.মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রবন্ধ রচনা
৫.পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
৬.আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান- প্রবন্ধ রচনা
৭.একটি নদীর আত্মকথা- বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮.বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা
৯.প্রতিবেদন রচনা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
১০. দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় MCQ
MCQ MOCK TEST SET 2 are great