শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য

প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে  BA Education / Class 11 Education এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য আলোচনা করো | 

Class 11 Education/  B.A Education Honours/ BA Education General এর যেসব ছাত্র ছাত্রী, যারা  B.A Education Semester-1 এর notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী রয়েছ তাদের উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য আলোচনা করো | 
শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য আলোচনা করো |

 

Contents hide

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য আলোচনা করো |

Characteristics and Significance Of Child Centrism In Education |

 

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বলতে কি বোঝঃ 

(Child Centrism In Education):

বিংশ শতাব্দীকে শিক্ষাজগতে শিশু জাগরণের যুগ বলা হয়।গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার প্রকৄতি, বিষয়বস্তু ,ও প্দ্ধতি প্রভৃতি, সবদিক থেকেই শিশুকে বঞ্চিত করা হত, এগুলি নির্ধারিত হত পিতা,মাতা, সমাজনায়ক, শিক্ষক ,সামাজিক রীতিনীতি ইত্যাদির দ্বারা ।

কিন্তু আধুনিক এই শিক্ষায়, শিক্ষার মূল কেন্দ্রবিন্দু শিশু,যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার অন্যান্য অঙ্গ পরিচালিত হয়ে থাকে । অর্থাৎ শিশুর আগ্রহ,চাহিদা ক্ষমতা ,প্রয়োজন ইত্যাদির কথা বিবেচনা করে তার জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা রচিত হয়। সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা বলে ।

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যঃ 

(The Characteristics Of Child Centrism In Education):

প্রাচীন গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থাকে বর্জন করে শিশুকেন্দ্রিকতার উপর ভিত্তি করে মনোবৈজ্ঞানিক প্দ্ধতিতে এক নতুন প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে গড়ে উঠেছে। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলঃ-

(i) স্বাধীনতা (Freedom):   

আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বাধীনতা , শিক্ষার্থীরা নিজেদের  ইচ্ছামত চলাফেরা, পছন্দমত  দলগঠন করা, নির্ধারণ করা, সমবায় সমিতি গঠন করা । স্কুলের শাসনতন্ত্রে  সক্রিয় অংশগ্রহন করা ইত্যাদি বহু কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রচুর স্বাধীনতা ভোগ করে।

(ii) সক্রিয়তা (Activity): 

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল সক্রিয়তা ।সক্রিয়তার নীতির মূল কথা হল- শিশুকে নিস্ক্রিয় প্রকৃত শিক্ষা হয় না । শিক্ষার্থী হাতে কলমে, কাজের মধ্য দিয়ে নিজে যা শিখবে, তাই হবে প্রকৃ্ত শিক্ষা, এই জন্য আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার সক্রিয়তা ভিত্তিক বিভিন্ন শিখন প্দ্ধতির প্রয়োগ করা হয়।

 (iii) অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা (Experience centered education):

শিশু যে সমাজে জন্মেছে,যে সমাজে সে বড় হয়, যে সমাজে সে নিজেদের স্থান করে নেয়, সেই সমাজের বিশেষ বিশেষ  অভিজ্ঞতাগুলি শিশুর পাঠক্রমের বিষয়বস্তু হবে । অর্থাৎ শিশুকে সমাজের উপযোগী করে তোলা বা সমাজিকীকরণ হল বর্তমান শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য।

(iv)সৃজনশীলতা (Creativity):

বাঁধাধরা সুনির্দিষ্ট কর্ম ধারার মধ্যে শিশুর প্রচেষ্টাকে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন কর্মপ্রয়োগের মাধ্যমে শিশু যাতে তার অভ্যন্তরীন সৃজনস্পৃহা অভিব্যক্ত করতে পারে,তার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য।

(V) ব্যক্তিসত্তার পুর্নবিকাশ(Complete development of personality):

মানসিক, শাররীক,প্রাক্ষোভিক,সামাজিক ও নৈতিক প্রভৃতি নানা দিক থেকে পরিণত শিশুকে সম্পূর্ন মানব রুপে গড়ে তোলা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য।

(Vi) উন্নত শিখন প্দ্ধতি (Improved methodology ):

শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রয়োজন,সামর্থ্য, আগ্রহ ও বিভিন্ন মানসিক প্রক্রিয়াগুলির স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন আধুনিক শিক্ষণ প্রদ্ধতির পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। যেমন-  প্রজেক্ট পদ্ধতি, বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনা , ডাল্টন পরিকল্পনা প্রভৃতি।

(vii) ঘনিষ্ঠ শিক্ষক – শিক্ষার্থীর সম্পর্ক(Close Teacher pupil- relation): 

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষক- শিক্ষার্থীর সম্পর্ক সহজ ও স্বছন্দময়, এখানে শিক্ষক –শিক্ষার্থীর সহায়ক , সহকর্মী ও পথপ্রদর্শক মাত্র।

(viii) ঘনিষ্ঠ বিদ্যালয়- পরিবার সম্পর্ক (Intimate school home relation):

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় বিদ্যালয় ও শিশুর পরিবারের মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকে। শিশুর যে কোনো সমস্যার ব্যাপারে বিদ্যালয় শিশুর অভিভাবকের অভিমত ও পরামর্শ গ্রহণ করে।

(ix) শৃঙ্খলা(Discipline):

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় মুক্ত শৃঙ্খলার উপর গুরত্ব দেওয়া হয়েছে । অর্থাৎ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিশুর শৃঙ্খলা স্বতঃস্ফুর্তভাবে স্বাধীন কাজের মাধ্যেমে প্রকাশিত হয়।

(x) প্রয়োজন – আগ্রহ-সামর্থ্য ভিত্তিক (Bared on need interest and ability):

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিশুর তিনটি দিক হল- প্রয়োজন, আগ্রহ ও সামর্থ্য। এই শিক্ষা পরিকল্পনার প্রাণ হল শিশুর প্রয়োজন। তার অবয়ব হল শিশুর সক্রিয়তা, অভিজ্ঞতা এবং সংগঠনিক শক্তি হল শিশুর আগ্রহ ও সামর্থ্য।

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে , এই শিক্ষাব্যবস্থায় মনো- বৈজ্ঞানিক, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক ধারার সমন্বয় ঘটেছে । এই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার জনক হলেন জন রুসো

শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্যঃ 

(Significance Of Child Centrism In Education):  

কিন্তু আধুনিক শিক্ষা হল শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা। শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার মূল বক্তব্য হল – শিশুই হবে শিক্ষার মূল কেন্দ্রবিন্দু,যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার অন্যান্য অঙ্গ পরিচালিত হবে। অর্থাৎ শিশুর আগ্রহ,চাহিদা ক্ষমতা ,প্রয়োজন ইত্যাদির কথা বিবেচনা করে , তার জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করতে হবে। শিশুর গ্রহণ ক্ষমতা ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে পাঠদানের পদ্ধতি নির্বাচন করতে হবে।

পাঠ্যক্রম হবে শিশুদের জন্য,বিদ্যালয় হবে শিশুর জন্য এককথায় সমগ্র শিক্ষাই হবে শিশুর জন্য। এখানে শিক্ষক,পিতামাতা,সমাজনায়ক , ঐতিহ্য হবে সহায়ক মাত্র অর্থাৎ গৌণ। তাই  আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।


আরো পড়ুনঃ 

 


  প্রশ্ন উত্তরঃ

১. শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা কাকে বলে ?

উত্তরঃ  যে শিক্ষার মূল কেন্দ্রবিন্দু শিশু,যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার অন্যান্য অঙ্গ পরিচালিত হবে। অর্থাৎ শিশুর আগ্রহ,চাহিদা ক্ষমতা ,প্রয়োজন ইত্যাদির কথা বিবেচিত হবে। তার জন্যা শিক্ষা পরিকল্পনা রচিত হবে। সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা বলে ।

২. শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ ।

উত্তরঃ শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার দুটি বৈশিষ্ট্য হলঃ –

i) আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বাধীনতা , শিক্ষার্থীরা নিজেদের  ইচ্ছামত চলাফেরা, পছন্দমত  দলগঠন করা, নির্ধারণ করা, সমবায় সমিতি গঠন করা ।

ii) শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় বিদ্যালয় ও শিশুর পরিবারের মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক  স্থাপিত হয়ে থাকে।

৩. শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার জনক কে ?

উত্তরঃ শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার জনক হলেন- জন রুসো ।

 


 

 

Leave a comment