মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।বিশৃঙ্খলার কারণ

প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে  BA Education / Class 11 Education এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।বিশৃঙ্খলার কারণ । Class 11 Education/  BA Education honours/   BA Education General এর যেসব ছাত্র ছাত্রী, যারা  BA Education Semester-1 এর notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী রয়েছ তাদের উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।

মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।বিশৃঙ্খলার কারণ
মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।বিশৃঙ্খলার কারণ|

 

মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ। বিশৃঙ্খলার কারণ।What is meant by free order | Cause chaos

মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝঃ

মুক্ত শৃঙ্খলা ‘ শব্দটির মূল কথা হল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেবেন। পরিপূর্ণ স্বাধীনতার সুযোগ দিয়ে ব্যক্তি সত্ত্বার নিজস্ব ধারায় বিকাশে সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরণের কর্তব্য পালন করবে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে কর্তব্য পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ভালোমন্দের তফাত করে ভালোকে গ্রহণ করতে শিখবে। এইভাবে যে নিয়ামানুবর্তিতার সম্মুখীন শিক্ষার্থীরা হবে তা তাদের কাছে বোঝ স্বরূপ হবে না, বরং এই শৃঙ্খলা সমাজ জীবনে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

 বিশৃঙ্খলার কারণগুলি হলঃ 

স্বাধীনতা ছাড়া শৃঙ্খলার কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না। স্বাধীনতা যে শৃঙ্খলায় নেই, তার থেকে আমরা ঋণাত্মক শৃঙ্খলা পেতে পারি, যার কোনো চিরস্থায়ী প্রভাব ব্যক্তি জীবনে নেই। এ প্রসঙ্গে একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বলেছেন – “Negative Discipline is powerless ” এই কারণে আধুনিক শিক্ষাবিদরা ঋণাত্মক শৃঙ্খলা বা মুক্ত শৃঙ্খলার কথা বলেছেন।

যে শৃঙ্খলার প্রভাব ব্যক্তিজীবনে চিরস্থায়ী। শিক্ষাবিদ অ্যাডামস বলেছেন – “The freedom of the pupil is to be positive not merely negative.” সুতরাং মুক্ত শৃঙ্খলার মূল কথা হল – শৃঙ্খলা আসে  শিশুর আত্মচেতনার মধ্য দিয়ে।   তা যতই প্রয়োজনীয় হোক না কেন, আমরা জোড় করে তাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারিনা, মুক্ত শৃঙ্খলাকে আমরা আদর্শ হিসাবে মেনে নিয়েছি। তবুও আমাদের দেশে, বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপনের নানারকম অসুবিধা আছে। এই অসুবিধা গুলি হল –

(i) পরিবেশগত বাধাঃ  

পরিবেশ সংক্রান্ত বাধাগুলি হল –

(a) শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ , শৃঙ্খলা স্থাপনের পথে অন্তরায় শিক্ষার্থী যে ঘরে বসে পাঠ গ্রহণ করে সেই কক্ষটি অপরিষ্কার , অস্বাস্থ্যকর হয় তাহলে শিক্ষার্থীর মনে এক বিরক্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে এবং এর ফলে শ্রেণীকক্ষে শৃঙ্খলা বজায় রাখা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

(b) বিদ্যালয় পরিচালন প্রদ্ধতি যদি মনোবৈজ্ঞানীক ভিত্তিতে রচিত না হয় তাহলে তা বিশৃঙ্খলার কারণ হয়। যেমন- কোনো কঠিন বিষয়ে দিনের শেষে ক্লাস থাকলে শিক্ষার্থীদের কাছে তা অস্বত্ত্বির কারণ হতে পারে।

(c) পাঠক্রম রচনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মানসিক ক্ষমতার উপর গুরুত্ব না দিলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

(d) শিক্ষকের প্রয়োজনীয় মানসিক ও দৈহিক গুণাবলী না থাকলে ছাত্রদের মধ্যে অনেক সময় বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।

(ii) ব্যক্তিগত বাধাঃ

শৃঙ্খলা স্থাপনের ব্যক্তিগত বাধাগুলি হল –

(a) বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা অনেক সময় শিক্ষার্থীর দৈহিক অসামর্থ্য থেকে আসে। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিগত অসুস্থতা বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা ঘটায়।

(b) শিক্ষার্থীর মানসিক অসুস্থতা অনেক সময় বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা স্থাপনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক অসুস্থতা মানসিক সংগঠনের জন্য হয়ে থাকে যেমন – কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে বসে সবসময় কলম মুখে দেয়।

(c) শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব শিক্ষার্থীর অসামাজিক আচারণে ক্ষেত্রে কাজ করে।

(d) সহযোগীতামূলক মনোভাবের অভাব বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা স্থাপনের অন্তরায়।

(e) বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অভাবের উপর অনেকটা নির্ভরশীল।

উপরিউক্ত কারণে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নানারকম উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখা যায় এবং বিদ্যালয়ের পক্ষেও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয় না।

অধ্যাপক অনাথ নাথ বসু এবং জ্ঞান চন্দ্র দাশগুপ্ত , এক গবেষণামূলক প্রবন্ধে ৩৫ রকমের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কথা বলেছেন। বিদ্যালয়ে এই সব আচারনকে সুষ্টভাবে পরিচালনা করতে না পারলে উচ্ছৃঙ্খলতা ক্রমশই বাড়বে।

বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপনের উপায়ঃ 

আধুনিক কালে বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপনের সমস্যা শিক্ষাক্ষেত্রে বোধহয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপনে বিদ্যালয়ের নিজস্ব যেটুকু দায়িত্ব থাকে তা এখানে আলোচনা করা হল –

(i) শিক্ষকের ব্যক্তিত্বের প্রভাবঃ 

বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হলে শিক্ষককে আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। শিক্ষক যদি আদর্শ চরিত্রের অধিকারী না হয় তাহলে তিনি শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে পারেন না এবং এর ফলে শ্রেণীকক্ষে শৃঙ্খলা স্থাপন করতে পারেননা।

(ii) শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাঃ 

বিশ্বকবির ভাষায় ‘ ছাত্রদের ভক্তি না করলে তাদের নিকট হতে ভক্তি কেউ সহজে পায়না।‘ অর্থাৎ শিক্ষকেরা ছাত্রদের ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা শীল হলে তবে ছাত্রদের মধ্যে আত্মমর্যদাবোধ জাগ্রত হয়। এবং তারাই স্বতস্ফূর্তভাবে  রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

(iii) কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের প্রচলনঃ 

শিক্ষালয়ে কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশে সাধনের সহায়তা করে। কারণ কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে কর্মে নিযুক্ত করে এবং একই সাথে শৃঙ্খলা স্থাপনের কাজকেও সহজ করে দেয়।

(iv) শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্কঃ 

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরস্পর সহযোগিতামূলক মনোভাব যাতে রক্ষিত হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।

(v) শাস্তি ও পুরস্কারঃ 

বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শাস্তি ও পুরস্কার একান্ত প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য যে , শাস্তি বলতে মনোবিজ্ঞান সম্মত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

(vi) অন্যান্য সংস্থার সাথে সংযোগঃ 

বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপন করতে গেলে বিদ্যালয়ের সাথে অন্যান্য সংস্থার। যেমন – পরিবার, রাষ্ট্র , ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখতে হবে।

উপসংহার 

বর্তমান পৃথিবীর সমস্ত দেশের চিন্তা বিদরা শিক্ষাক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল আচরণ সম্পর্কে চিন্তিত। বহু গবেষণার ফলাফল থেকে আমর বলতে পারি যে , শিক্ষার্থী যে জীবন পরিবেশের মধ্যে বাস করে, সেই জীবন পরিবেশের মধ্যে সে সাংগঠনিক অবস্থা রয়েছে তার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

Thanks for Reading–মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।বিশৃঙ্খলার কারণ|


আরো পড়ুন


  প্রশ্ন উত্তর

১। মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।

 উত্তরঃ মুক্ত শৃঙ্খলা ‘ শব্দটির মূল কথা হল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেবেন। পরিপূর্ণ স্বাধীনতার সুযোগ দিয়ে ব্যক্তি সত্ত্বার নিজস্ব ধারায় বিকাশে সহায়তা করবে।

২। মুক্ত শৃঙ্খলা অপর নাম কি ?

 উত্তরঃ মুক্ত শৃঙ্খলা অপর নাম-স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলা ।

৩। শৃঙ্খলার আধুনিক ধারণার প্রবর্তক কে?

 উত্তরঃ শৃঙ্খলার আধুনিক ধারণার প্রবর্তক   রুশো ।

৪। বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার কারণগুলি কি কি ?

 উত্তরঃ বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার কারণগুলি-(i) পাঠক্রম রচনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মানসিক ক্ষমতার উপর গুরুত্ব না দিলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। (ii)শিক্ষার্থীর মানসিক অসুস্থতা  (iii) শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অভাবের , iv) শিক্ষকের প্রয়োজনীয় মানসিক ও দৈহিক গুণাবলী না থাকলে।

৫। বিশৃঙ্খলার অর্থ কি ?

 উত্তরঃ বিশৃঙ্খলার অর্থ হল -নিয়মশূন্য ।

৬। বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপনের উপায় গুলি লেখ ।

 উত্তরঃ বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা স্থাপনের উপায় -i)বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হলে শিক্ষককে আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। ii)শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরস্পর সহযোগিতামূলক মনোভাব থাকতে হবে ।

 


 

 

 

 

 

Leave a comment