পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাসে জন লক একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক।আজকে আমরা জন লকের দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আলচনা করব- প্রতিরূপি বস্তুবাদ কাকে বলে? লকের প্রতিরূপি বস্তুবাদ বিচার পূর্বে আলোচনা করো।এই প্রশ্নটির উত্তর BA philosophy notes আকারে লেখা হয়েছে।
প্রতিরূপি বস্তুবাদ কাকে বলে? লকের প্রতিরূপি বস্তুবাদ বিচার পূর্বে আলোচনা করো।
যে মতবাদে বস্তুর মননিরোপেক্ষ বা জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় এবং বস্তুর জ্ঞানকে প্রত্যক্ষ জ্ঞান বা সোজাসুজিভাবে পাওয়া না গিয়ে মনে বাহ্য বস্তুর ধারণা বা প্রতিরূপের মাধ্যমে পরোক্ষ ভাবে পাওয়া যায়। তাকে প্রতিরূপি বস্তুবাদ বা বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বলা হয়।
প্রতিরূপী বস্তুবাদের মূলবক্তব্য –
- যে জগতে আমরা বাস করি সেই জগতে অসংখ্য বস্তু আছে যেমন – গাছপালা, পাহাড় পর্বত ইত্যাদি।
- এইসব বস্তুর অস্তিত্ব আমাদের প্রত্যক্ষের ওপর নির্ভর করে না। আমরা প্রত্যক্ষ না করলেও তারা অস্তিত্বশীল থাকে।
- জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বস্তুর সম্পর্ক বাহ্যিক এবং সেই কারণে জ্ঞাতাকে বাদ দিয়ে জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব থাকে।
- বাহ্য বস্তুর প্রত্যক্ষ জ্ঞান হয় না, পরোক্ষ জ্ঞান হয়।
- ইন্দ্রিয় অনুভবে সাক্ষাৎ ভাবে আমরা যা পাই তা বস্তু হয় তা হল বস্তু ধর্মের প্রতিরূপ।
- প্রতিরূপের সঙ্গে বস্তু ধর্মের সাদৃশ্য থাকলে জ্ঞান সত্য হয় এবং প্রতিরূপের সঙ্গে বস্তু ধর্মের বৈসাদৃশ্য থাকলে জ্ঞান মিথ্যা হয়।
স্পষ্টতই, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বক্তব্যের ক্ষেত্রে সরল বস্তুবাদের সঙ্গে প্রতিরূপী বস্তুবাদের কোন অসঙ্গতি নেই। কিন্তু বাকি ৩ টির ক্ষেত্রে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সরল বস্তুবাদের ভুল ত্রুটি থেকেই বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের উদ্ভব হয়েছে। এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন বিট্রিশ দার্শনিক জন লক্। তাঁর মতে, বাহ্য জগতের বিভিন্ন বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে।
কিন্তু যেভাবে বস্তুগুলি আমাদের মনে ধরা দেয় সেগুলো বস্তুর আসলরূপ নয়। লকের মতে, কোন বস্তু যেসব গুণ নিয়ে আমাদের জ্ঞানে ধরা দেয়, সেগুলির সবই এক প্রকারের নয়। লক্ বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা অনুসরণ করে বস্তুর গুণকে দু-ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা – মুখ্যগুন ও গৌণগুণ। প্রতিরূপী বস্তুবাদ আলোচনা প্রসঙ্গে জন লক্ মুখ্যগুণ ও গৌনগুণের পার্থক্য নিরুপণ করেছেন।
যে গুণগুলি বস্তুর একান্ত নিজস্ব গুণ, আমরা প্রত্যক্ষ করি বা না করি তাতে যেসব গুণের কিছু যায় আসে না, যে গুলি বস্তুগত ধর্মরূপে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব গুণকে বলে মুখ্যগুণ। কিন্তু আর এক প্রকার গুণ আছে যেগুলো বস্তুর স্বরূপগত ধর্ম ব্যক্তিভেদে ও অবস্থাভেদে আলাদা আলাদা হয়, যেসব গুণের অস্তিত্ব ও স্বরূপ সবই আমাদের ইন্দ্রিয় অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল সেইসব গুণকে লক্ গৌনগুণ বলেছেন। যেমন – গন্ধ, বর্ন, উষ্ণতা, শীতলতা, তিক্ততা ইত্যাদি।
লকের মতে গৌনগুণ মুখ্য গুণের মতো বস্তুগত না হলেও এদের একটি বস্তুগত ভিত্তি আছে। বর্ন, গন্ধ, উষ্ণতা ইত্যাদির ধারণা থাকে আমাদের মনে, বস্তুতে নয়। বস্তুতে থাকে গুণের ধারণা উৎপাদনকারি ক্ষমতা বা শক্তি। গুণের ধারণা উৎপাদনকারি শক্তির ভিত্তি হিসাবে বস্তুকে ওইসব গুণের অধিকারী বলা হয়। বস্তুগত শক্তির সঙ্গে গৌনগুণের ধারণার কোন সাদৃশ্য নেই। তবে গৌনগুণের ধারণার সাথে বস্তুগত শক্তির অনুরূপতা আছে।
লক্ বলেছেন, বাস্তব জগতে অবস্থিত বস্তুগত গুণ থেকে মুখ্য গুণের ধারণা জন্মায়। লকের মতে, বস্তুর জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা মুখ্য বা গৌন কোন গুনকেই প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারি না, ধারণার মাধ্যমে পারোক্ষভাবে জানি।
এখানে প্রশ্ন ওঠে এই যে, লকের মতে বস্তুর গুণের জ্ঞান পরোক্ষভাবে লাভ করা যায়, কিন্তু বস্তুর জ্ঞান কীভাবে লাভ কার সম্ভব? এর উত্তরে লক্ বলেন, বস্তুকে সাক্ষাৎ ভাবে বা পরোক্ষ কোন ভাবেই জানা যায়না, কারণ বস্তু কতকগুলি গুণের সমষ্টি নয়, বস্তু হল গুণের আধার বা আশ্রয় অর্থাৎ গুণ যাতে আশ্রিত থাকে তাই হল বস্তু।
কিন্তু এই গুণের আশ্রয়কে প্রত্যক্ষ করা যায়না। তাই লক্ দ্রব্য বা বস্তু সম্পর্কে বলেছেন, ‘দ্রব্য হল এমন কিছু যা আমি জানিনা।’ লকের বস্তুবাদে তাই ২টি বিষয় স্বীকৃত আছে প্রত্যক্ষগোচর গুনাবলি ও অপ্রত্যক্ষগোচর জড় দ্রব্য। তাই লকের প্রতিরূপি বস্তুবাদ ‘জ্ঞানতাত্ত্বিক দ্বৈতবাদ’ নামে পরিচিত। জ্ঞানের সত্যতা নির্নয় প্রসঙ্গে লক্ বলেছেন, প্রত্যক্ষগোচর গুণের ধারণার সঙ্গে যখন বস্তুর মিল হয় তখন জ্ঞান সত্য হয়, আর যখন মিল হয়না তখন আমাদের জ্ঞানমিথ্যা হয়।
Thanks for Reading:-লকের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ কাকে বলে
প্রশ্ন উত্তরঃ-
১.লকের বস্তুবাদে কটি বিষয় স্বীকৃত আছে ও কি কি?
Ans. লকের বস্তুবাদে ২টি বিষয় স্বীকৃত আছে প্রত্যক্ষগোচর গুনাবলি ও অপ্রত্যক্ষগোচর জড় দ্রব্য।
২.লকের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা অনুসারে মুখ্যগুন কাকে বলে ?
Ans.যে গুণগুলি বস্তুর একান্ত নিজস্ব গুণ, আমরা প্রত্যক্ষ করি বা না করি তাতে যেসব গুণের কিছু যায় আসে না, যে গুলি বস্তুগত ধর্মরূপে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব গুণকে বলে মুখ্যগুণ।
৩.লকের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা অনুসারে গৌনগুণ কাকে বলে ?
যেগুলো বস্তুর স্বরূপগত ধর্ম ব্যক্তিভেদে ও অবস্থাভেদে আলাদা আলাদা হয়, যেসব গুণের অস্তিত্ব ও স্বরূপ সবই আমাদের ইন্দ্রিয় অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল সেইসব গুণকে লক্ গৌনগুণ বলেছেন। যেমন – গন্ধ, বর্ন, উষ্ণতা, শীতলতা, তিক্ততা ইত্যাদি।
আরো পড়ুন –
আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি উক্তিটি ব্যাখ্যা করো
অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব
জৈনদের অনেকান্তবাদ সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো
চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?
ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ