পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস থেকে একটি গুরুতবপূর্ন প্রশ্ন হল –অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব (Theory of Cause Aristotle)। এই অংশে আমরা আলোচনা করবো অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্বের চারটি কারন এবং জাগতিক কোনো বিষয়ের উৎপত্তিতে এই চারটি কারণের ভূমিকা ।
অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব | Theory of Cause Aristotle
কার্যকারন ধারণা পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অ্যারিস্টটল কার্য কারনের ধারণাকে আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের তুলনায় ব্যাপক অর্থের প্রয়োগ করেছেন। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেন জগতে কোনো ঘটনা কেন ঘটল তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে। কিন্তু দার্শনিকদের প্রয়াস হল কেবলমাত্র কোনো ঘটনার কারনিক ব্যাখ্যা দেওয়া নয়, কোনো বস্তু বা ঘটনা জগতে কেন আছে তার ব্যাখ্যা দেওয়া। অর্থাৎ দার্শনিকেরা কারণ ও হেতু উভয়েরই ব্যাখ্যা দেন।
বিজ্ঞানীদের কাজ হল মৃত্যুর কারণ হিসাবে বিষপান, দূঘর্টনা ইত্যাদি বিশেষ কারণ গুলিকে উল্লেখ করা। কিন্তু দার্শনিকদের কাজ হল জগতে মৃত্যু কেন আছে তার ব্যাখ্যা দেওয়া। বিজ্ঞানীদের কারণতা হল সংকীর্ন অর্থে , আর দার্শনিকদের কারণতা হল ব্যাপক অর্থে। অ্যারিস্টটল একজন দার্শনিক হিসাবে কারণকে ব্যাপকার্থে গ্রহণ করে চার প্রকার কারনের উল্লেখ করেছেন। যথা –
i বস্তুগত কারণ (aterial Cause)
ii নিমিত্ত কারণ (Efficient Cause)
iii আকারগত কারণ (Formal Cause)
iv উদ্দেশ্য কারণ ( Final Cause)
Download Cu Philosophy All Semester Question paper Pdf
১. বস্তুগত / উপাদানকারণ
কোন বস্তু বা বিষয়ের উপাদান যে বস্তু থেকে উৎপন্ন হয় এবং বস্তু বা বিষয়ের ধ্বংসের পর পুনরায় সেই উৎপত্তিস্থলে ফিরে আসে, তাকে উপাদান কারণ বলা হয়। যেমন – ব্রোঞ্জ থেকে কোনো ব্রোঞ্জের মৃর্তি তৈরি করা যায় এবং মূর্তির বিনাশ হলে তা আবার ব্রোঞ্জে পরিণত হয় । তাই ব্রোঞ্জ হল ব্রোঞ্জমূর্তির উপাদান কারণ।
২. নিমিত্ত কারণ
নিমিত্ত কারণ হল বস্তুর পরিবর্তন (change) গতি (movement) ও শক্তির (energy) উৎস। মৃত্তিকা থেকে ঘট তৈরির সময় শক্তি ও পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, এখানে শক্তি প্রদানকারী ও পরিবর্তনকারী হলেন নিমিত্ত কারণ। তবে মনে রাখতে হবে যে, গতি ও পরিবর্তন বলতে অ্যারিস্টটল কেবল স্থান পরিবর্তনকে বোঝাননি। তাঁর মতে সবুজ পাতা যেমন হ্লুদ হয়ে যায় তেমনি পরিবর্তন, ঠিক যেমন ইটের টুকরোকে উপরে ছুঁড়লে গতির সৃষ্টি হয় তেমনি গতির কথা বলেছেন।
৩. আকারগত কারণ
অ্যারিস্টটল উৎপাদিত বস্তুর সারধর্মকে আকারগত কারণ বলেছেন। Plato যাকে ‘Idea’ বলেছেন তারই প্রতিশব্দ হল আকারগত কারণ। এটি নিমিত্ত কারনের মধ্যে থাকে এবং নিমিত্ত কারনের মধ্যে নিহিত আকারগত কারণ, অন্তিম কারণ বা উদ্দেশ্য কারনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যেমন – ভাস্কর যে আকারে ব্রোঞ্জকে আকরিক করে মূর্তি তৈরি করে। সেই আকার মূর্তিটির আকারগত কারণ।
৪. উদ্দেশ্য কারণ / Final Cause
অন্তিম কারণ বা উদ্দেশ্য কারণ হল এমন কারণ যা নিমিত্ত কারণকে প্রভাবিত করে। যেমন কোন মৃৎশিল্পী যখন কোন মূর্তি তৈরি করে তখন সে কোন উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েই করে। শেষে মৃৎশিল্পীর মনের ধারণা বা আকার মূর্তির মাধ্যমে অন্তিম কারন বা উদ্দেশ্য কারণে পরিণত হয়।
সুতরাং দেখা যায় যে, জাগতিক কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব বা উৎপত্তি জানতে গেলে চারটি কারণ যুগপদ ক্রিয়াশীল থাকে। আমরা অজানা কোন, বস্তুকে যখন দেখি আর বলি ‘What is this’- তখন বস্তুটির আকারগত কারন জানতে চাওয়া হয়। আর যখন বলি ‘From which is made’- তখন বস্তুটির বস্তুগত কারণ জানতে চাওয়া হয়। আবার যখন আমরা বলি ‘Form where it’s Come?’- তখন এর উদ্দেশ্যকারণ জানতে চাওয়া হয় এবং যখন আমরা বলি ‘what it’s aim’- তখন বস্তুটির অন্তিমকারণ জানতে চাওয়া হয়।
নিমিত্ত কারনের যখন উপাদান কারনের উপর শক্তি প্রয়োগ করে উদ্দেশ্য কারণ বা অন্তিমকারণ উৎপন্ন করে তখনই আকারগত কারণ প্রকাশিত হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে এক প্রান্তে থাকে নিমিত্ত কারণ এবং উপাদান কারণ এবং অপর প্রান্তে থাকে উদ্দেশ্য কারণ, এবং নিমিত্ত কারনের মনে নিহিত থাকে আকারগত কারণ। Plato -এর মতে ‘Idea ’ যা উদ্দেশ্য কারনের শেষে কার্যকরী হয়।
Thanks For Reading : অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব | Theory of Cause Aristotle
আরো পড়ুন –
জৈনদের অনেকান্তবাদ সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো
চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?
ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ
জৈন স্যাদবাদ ব্যাখ্যা করো | সপ্তভঙ্গিনয়