উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ

পাশ্চাত্য  নীতিবিদ্যার আজ্কের বিষয় হল-উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ এবং এদের মধ্যে নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কোনটি , সেটি আমরা এই পর্বে আলোচনা করব এটি পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।

উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ |
উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ |

 

উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ  এবং এদের মধ্যে নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু কোনটি ? 

উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্যঃ

(Difference Between Motive and Intention): 

প্রতিটি কাজের পিছনে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় থাকে। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়কে একই অর্থে প্রয়োগ করে থাকি। কিন্তু নীতিবিদ্যায় এই দুটি বাক্যকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়।

উদ্দেশ্য হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যা ব্যক্তিকে বিশেষ একটি কাজ করতে বাধ্য করে , এবং এই কাজের পিছনে একটি মানসিক আবেগ কাজ করে। উদ্দেশ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে দার্শনিকদের মধ্যে মত পার্থক্য আছে।

অধ্যাপক লিলি বলেছেন – “ উদ্দেশ্য হল একটি সচেতন মানসিক ক্রিয়া, যা একজন মানুষকে বিশেষ ভাবে একটি কাজ করতে এগিয়ে দেয়।” তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন আমার খাবার ইচ্ছা হলে তবেই আমি রেস্তরায় গিয়ে খবার সন্ধান করি, খাদ্যের প্রতি বাসনাটি হল উদ্দেশ্য। হিউম, বেন্থাম, মিল প্রমুখ দার্শনিকগণ বলেছেন উদ্দেশ্য হল দুঃখ, সুখের একধরনের অনুভূতি যা আমাদের কাজে প্রেরণা জোগায়।

অধ্যাপক গ্রিন বলেছেন কোনো কাজের উদ্দেশ্য হল কাম্যবস্তু সম্পর্কে ধারণা। আবার অধ্যাপক হেনরি স্টিফেন  উপরিউক্ত মতগুলি সমন্বয় করে  বলেছেন উদ্দেশ্য হল একটি জটিল মানসিক স্তর যার মধ্যে আছে আবেগ, কাম্যবস্তুর ধারণা এবং ওই কাম্য বস্তুকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

    অপরদিকে অভিপ্রায় হল উদ্দেশ্য অপেক্ষা অধিকতর মানসিক স্তর। উদ্দেশ্য হল অভিপ্রায়ের একটি উপাদান। কোনো কাজ করতে হলে শুধুমাত্র কাজের উদ্দেশ্য থাকাটাই যথেষ্ঠ নয় । কী উপায় অবলম্বন করে উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে এবং ওই উপায় অবলম্বনের ফলে কী পরিণাম ঘটতে পারে তার ধারণা থাকা চাই।

অর্থাৎ অভিপ্রায়ের মধ্যে উদ্দেশ্য , কাম্যবস্তু ও পরিণাম হয়ে থাকে। যেমন ছেলের কল্যাণের জন্য পিতা ছেলেকে শাস্তি দেয়। এখানে পিতার উদ্দেশ্য হল ছেলের কল্যাণ করা এবং অভিপ্রায় হল ছেলের কল্যাণ ও শাস্তি দেওয়া।

নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু কোনটিঃ

What is the object of moral judgment ? 

এখন প্রশ্ন হল একটি কাজের বিচার করার সময় আমরা কোন দিকে দৃষ্টি দেবো কাজের উদ্দেশ্যের দিকে নাকি কাজের অভিপ্রায়ের দিকে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নীতিবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

একদল নীতিবিদ মনে করেন উদ্দেশ্যই হল নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু। কান্টের মতে কাজের ফল নয়, কাজটি কী উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তাই হল নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু উদ্দেশ্য , যদি ভালো হয় তাহলে কাজটি ভালো হবে, আর উদ্দেশ্য যদি মন্দ হয় তাহলে কাজটি মন্দ হবে। যেমন – কোনো অসাধু ব্যক্তি যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে, সেই কাজ মন্দ হতে বাধ্য,আর একজন সাধু ব্যক্তি যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে তা সম্ভবতই ভালো হবে। তবে অনেকই সর্বক্ষেত্রে এই উক্তি মেনে নেননি।

কোনো কাজের ফল ভালো হলেও উদ্দেশ্য মন্দ হলে কাজটি অসৎ বলেই বিবেচিত হবে। যেমন – একজন ভিক্ষারির প্রতি বিরক্ত হয়ে তার মাথায় আঘাত করার উদ্দেশ্য একটি মুদ্রা ছুঁড়ে মারা হল কিন্তু মুদ্রাটি লক্ষ ভ্রষ্ঠ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। এবং ভিক্ষারিটি মুদ্রাটি কুড়িয়ে নিয়ে খাবার কিনলো। এখানে বাহ্যিক ফল ভালো হলেও উদ্দেশ্য মন্দ হওয়ার কাজটি মন্দ বলে বিবেচিত হবে।

অপরদিকে অন্য আরও একদল নীতিবিদ বলেন অভিপ্রায়ই হল নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু। মিল, বেন্থাম প্রমুখ উপযোগিতাবাদী দার্শনিকগণ এই মতবাদের সমর্থক। একজন গরীব মানুষ তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য কোনো ধনী ব্যক্তিকে খুন করে,  তার সম্পত্তি নিয়ে তার দারিদ্র তার অবসান ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যকে বিচার করে তার কাজকে খারাপ বলা যায় না। কিন্তু তার কাজের ফল সে এড়িয়ে যেতে পারে না। অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও উপায় এক্ষেত্রে অভিপ্রায় গঠন করে। তাই অভিপ্রায়ই হল নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয়বস্তু।


আরো পড়ুনঃ 


প্রশ্ন উত্তরঃ

১. উদ্দেশ্য কি ?

 উত্তরঃ উদ্দেশ্য হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যা ব্যক্তিকে বিশেষ একটি কাজ করতে বাধ্য করে ।

২. অভিপ্রায় কি ?

 উত্তরঃ  অভিপ্রায় হল উদ্দেশ্য অপেক্ষা অধিকতর মানসিক স্তর। উদ্দেশ্য হল অভিপ্রায়ের একটি উপাদান।

৩. নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু কোনটি ?

 উত্তরঃ  একদল নীতিবিদ মনে করেন উদ্দেশ্যই হল নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু। অপরদিকে অন্য আরও একদল নীতিবিদ বলেন অভিপ্রায়ই হল নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু। কিন্তু তার কাজের ফল সে এড়িয়ে যেতে পারে না। অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও উপায় এক্ষেত্রে অভিপ্রায় গঠন করে। তাই অভিপ্রায়ই হল নৈতিক বিচারের প্রকৃত বিষয়বস্তু।

৪. কান্টের মতে নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কি ?

 উত্তরঃ কান্টের মতে কাজের ফল নয় । কাজটি কী উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তাই হল নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু উদ্দেশ্য ।


 

Leave a comment