ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বাদ কাকে বলে

আধুনিক পাশ্চত্য দর্শনের জনক ফরাসী দার্শনিক রেনে ডেকার্ত । ডেকার্তের দর্শন থেকে  আমরা একটি গুরুত্ব প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি সেটি হল –দেহ মনের সম্বন্ধ সম্পর্কে ডেকার্তের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াবাদ আলোচনা করো। স্পিনোজা কী এই মত সমর্থন করেন ? । এই প্রশ্নটির উত্তর ba philosophy notes আকারে লেখা হয়েছে।

ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বাদ কাকে বলে
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বাদ কাকে বলে

দেহ মনের সম্বন্ধ সম্পর্কে ডেকার্তের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াবাদ আলোচনা করো। স্পিনোজা কী এই মত সমর্থন করেন ? 

 

দেহ মনের সম্বন্ধ সম্পর্কে ডেকার্তের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াবাদ

ডেকার্তের দেহ মন সংক্রান্ত দার্শনিক মতবাদ অধিবিদ্যাক দ্বৈতবাদ বা  মন জাগতিক দ্বৈতবাদ নামে পরিচিত। কারণ ডেকার্ত তাঁর তত্ত্বে প্রধানত দুই প্রকার দ্রব্যের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। একটি হল, বিস্তারযুক্ত জড়দ্রব্য এবং অপরটি হল মন ও আত্ম দ্রব্য।

প্রথমটি দৈহিক অবস্থা এবং দ্বিতীয়টি মানসিক অবস্থা। ডেকার্তের মতে, চেতনার আশ্রয় হল মন না মুখ অজড় দ্রব্য। অর্থাৎ দেহ ও মন সম্পূর্ন স্বনির্ভর স্বতন্ত্র সত্ত্বা। দেহের ধর্ম মনে থাকেনা, মনের ধর্ম দেহে থাকেনা। দেহের ধর্ম স্বরূপত, নিক্রিয় ও বিস্তার এবং মনের ধর্ম চিন্তন ও সক্রিয়।

ডেকার্তের মতে মানুষ দেহ মনের যুগ্মসত্ত্বা হলেও মানুষের দেহের সঙ্গে মনের কোন মিশ্রন হতে পারে না, মন স্বতন্ত্র দ্রব্য রূপে দেহে অবস্থান করে। এই অবস্থা সমূহের জন্যই মানুষ তার ইচ্ছা মতো দেহের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এইজন্য মনের সঙ্গে সঙ্গে দেহের সম্বন্ধ চালক চালিদের সম্পর্কে অনুরূপ এবং মনের সঙ্গে দেহের সম্বন্ধ যন্ত্র -যন্ত্রীর সম্পর্কের অনুরূপ।

তবে ডেকার্ত যন্ত্র -যন্ত্রীর উপমা ব্যবহার করলেও দেহ মনের সম্বন্ধ জাহাজ ও জাহাজ চালকের সম্পর্কের মতো অতটা শীথিল নয়, দেহ মনের সম্বন্ধ অতি ঘনিষ্ঠ। জাহাজের কোন অংশে আঘাত লাগলে নাবিকের বেদনা অনুভব হয় না। কিন্তু দেহের কোন স্থানে আঘাত লাগলে মনের মধ্যে বেদনা জাগ্রত হয়। এখানে মনরূপ চালক যন্ত্ররূপ চালককে চালিত করে এবং উভয়ের সম্পর্ক অতি জটিল।

ডেকার্ত বলেন যে, দেহ মনের সম্পর্ক কার্য -কারণ সম্পর্ক, পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা প্রায়শ্চই দেখি যে, কখনও মন দেহকে, আবার দেহ মনকে প্রভাবিত করে। মন বিষন্ন হলে দৈহিক শক্তি কমে যায় এবং মন পুলকিত হলে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার দেহ অসুস্থ হলে মনের শক্তি হ্রাস পায় দেহ সুস্থ হলে মনের শক্তি বৃদ্ধি পায়।

কিন্তু প্রশ্ন হল দেহ ও মন দুটি স্বতন্ত্র ও বিরুদ্ধধর্মী সত্ত্বা হওয়ার তাদের মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সম্বন্ধ কীভাবে সম্ভব? এর উত্তরে ডেকার্ত বলেন –

প্রথমত,

দেহ ও মনের সম্পর্ক ‘সহাবস্থানের সম্পর্ক’ (relation of co existance ), স্বভাবগতভাবে মিশ্রন হয় (Unity of nature)। অর্থাৎ দেহ মনের মধ্যে সাংগঠনিক ঐক্য দেখা দিলেও তাদের প্রকৃতি ও স্বভাবের মধ্যে মিলন হয় না, দুটি দ্রব্য স্বতন্ত্র রূপেই অক্ষুন্ন থাকে।

দ্বিতীয়ত,

‘The passions of the soul’- গ্রন্থে ডেকার্ত বলেছেন – দেহের সঙ্গে মনের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তা সমগ্র দেহের সঙ্গে নয়, তা মস্তিষ্কের অন্তর্গত পিনিয়েল গ্রন্থি বা পিটুইটারি গ্রন্থির সঙ্গে। দৈহিক পরিবর্তন পিটুইটারি গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে এবং সেই উত্তেজনা মানসিক চাঞ্চল্যের কারণ হয়।

আবার মানসিক পরিবর্তন পিটুইটারি গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে এবং সেই উত্তেজনা দৈহিক পরিবর্তনের কারণ হয়। এ প্রসঙ্গে, ‘History of modern philosophy’ গ্রন্থে Falckenbery বলেছেন, – ‘Here the soul exercises a direct influence on the body and is directly effected by it.’

এইভাবে ডেকার্ত পিনিয়েল গ্রন্থির উল্লেখ করে দেহ ও মনের সম্বন্ধের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াবাদ নামে পরিচিত।

সমালোচনা –

প্রথমত,

প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে কারণতা নিয়ম অনুসারে বিরুদ্ধ ধর্ম দেহ ও মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সম্বন্ধ থাকেতে পারেনা। নিয়ম হল কার্য ও কারনের মধ্যে সাদৃশ্য ও পরিমাণগত সমতা থাকতে হবে। মানসিক ব্যাপারমাত্রই অদৈশিক এবং এক মানসিক ধারণা অন্য এক মানসিক ধারণার কার্য বা কারণ হতে পারে। কিন্তু গুণগত সাদৃশ্য না থাকার জন্য দৈহিক উত্তেজনা মানসিক চাঞ্চল্যের অথবা মানসিক চাঞ্চল্য দৈহিক উত্তেউনার কারণ বা কার্য হতে পারেনা।

দ্বিতীয়ত,

ডেকার্ত ঈশ্বর, মন ও জড় এই ৩টি দ্রব্য স্বীকার করেছেন। কিন্তু দ্রব্যের লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন দ্রব্য হল স্বয় ও স্বয়ংম্ভূ। কিন্তু একথা মেনে নিলে তার মন ও জড়ের দ্বৈতবাদ স্বীকার করা যায় না। স্পিনোজা দ্রব্য বলতে বুঝিয়েছেন, ঈশ্বরকে। তাই তিনি ডেকার্তের সমালোচনা করে বলেন দেহ ও মন দুটি ভিন্ন দ্রব্য নয়, ঈশ্বরের অনন্ত গুণের মধ্যে দুটি বিরুদ্ধ পরস্পর নিরপেক্ষ গুণের প্রকাশমাত্র।

স্পিনোজা আরও বলেছেন, মানসিক ঘটনার কারণ মানসিক ঘটনা, দৈহিক ঘটনার কারণ দৈহিক ঘটনা। যখন কোন দৈহিক পরিবর্তন ঘটে তখন সহ পরিবর্তন সম্বন্ধের মতো মানসিক ঘটনার ও পরিবর্তন ঘটে।

পরিশেষে বলা যায়, দেহ মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াবাদ কে সহজে অগ্রাহ্য করা যায় না। আমাদের প্রতিদিন অভিজ্ঞতায় আমরা এটা অনুভব করি যে দেহ ও মনের মধ্যে এক প্রকার কার্য কারণ সম্পর্ক।

Thanks for Reading:- ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বাদ কাকে বলে 


প্রশ্ন উত্তরঃ

১.‘History of modern philosophy’ গ্রন্থে Falckenbery কি বলেছেন?

Ans. History of modern philosophy’ গ্রন্থে Falkenbury বলেছেন, – ‘Here the soul exercises a direct influence on the body and is directly effected by it.’

২.‘The passions of the soul’-গ্রন্থটির লেখক কে?

Ans.The passions of the soul’-গ্রন্থটির লেখক হলেন-ডেকার্ত ।

৩.সমান্তরাল বাদের প্রবক্তা কে?


আরো পড়ুন –

আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি উক্তিটি ব্যাখ্যা করো

অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব

জৈনদের অনেকান্তবাদ সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো

চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?

ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ

প্রশ্ন উত্তরে চার্বাক দর্শন

জৈন স্যাদবাদ ব্যাখ্যা করো | সপ্তভঙ্গিনয়

আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি উক্তিটি ব্যাখ্যা করো

Leave a comment