উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশগুলি ও গুরুত্ব আলোচনা

শিক্ষার, ইতিহাস প্রসিদ্ধ সুদীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ একটি  দলিল হল –উডের ডেসপ্যাচ (wood’s despatch 1854) । B.A Education-এর আজকের পর্বে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি ।

Class 11 Education/  B.A Education Honours/ B.A Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছ তাদের জন্য  এই পোস্টগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন।Education -এর প্রয়োজনীয় সব Notes তোমরা এই পেজে পাবে । ছাত্রছাত্রীদের জন্য উডের ডেসপ্যাচ কি | এর সুপারিশগুলি কি কি ও গুরুত্ব আলোচনা করবো । আমরা সহজ ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বরূপ বিষয় গুলি উপস্থাপন করে থাকি । যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক হবে ,বলেই আশা রাখি ।

আলোচনার এই পর্বের আলোচ্য বিষয়ঃ উডের ডেসপ্যাচ কি | এর সুপারিশগুলি কি কি ও গুরুত্ব আলোচনা করো | 

উডের ডেসপ্যাচ কি এর সুপারিশগুলি কি কি ও গুরুত্ব আলোচনা করো |
উডের ডেসপ্যাচ কি এর সুপারিশগুলি কি কি ও গুরুত্ব আলোচনা করো |

 

উডের ডেসপ্যাচ কি | এর সুপারিশগুলি ও গুরুত্ব আলোচনা করো | 

উডের ডেসপ্যাচ কিঃ 

প্রতি 20 বছর অন্তর চার্টার আইন পুনর্নবীকরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই জন্য 1853 খ্রীঃ তা পুনরায় প্রবর্তিত করা হয় শিক্ষার অগ্রগতির অনুসন্ধানের জন্য। এর ফলে 1854 সালে একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ সুদীর্ঘ শিক্ষার দলিল প্রকাশিত হয়। সম্ভবত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চার্লস উডের পরামর্শ মতো শিক্ষার এই মূল্যবান দলিল রচনা করা হয়েছিল বলেই এটি উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।

উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ ও গুরুত্বঃ 

উডের ডেসপ্যাচের উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলির বর্ণণা নীচে দেওয়া হল –

(i) শিক্ষা নীতির উদ্দেশ্যঃ 

এই ডেসপ্যাচের প্রথমেই বলা হয়েছে যে ভারতে সাধ্যমতো শিক্ষা বিস্তার করা হল ইংল্যান্ডের একটি প্রবৃত্ত কর্তব্য। ভারতে ইংরেজদের শিক্ষা নীতির উদ্দেশ্য হল ইংল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে ভারতবাসীরা যাতে কার্যকর শিক্ষা লাভ করে এবং তাদের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন করাও একটি বড় লক্ষ্য। তাছাড়া এই শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতবাসীদের শ্রম ও পুঁজির বিনিয়োগ করতে শেখাবে, যাতে বাণিজ্যের প্রসার হয়।

(ii) বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনঃ 

ডেসপ্যাচের দ্বিতীয় মূল্যবান প্রস্তাবটি হল ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। এই ডেসপ্যাচে বলা হয়েছে যে ভারতবর্ষে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ ইত্যাদি স্থানে যেখানে, যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে সেখানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।

সরকার মনোনীত একজন আচার্য, একজন উপাচার্য এবং কয়েকজন আচার্য, একজন উপাচার্য এবং কয়েকজন সদস্য (ফেলো) নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে সেনেট গঠিত হবে। পরীক্ষাগ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণ এবং আর্থিক তহবিল পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে সেনেটের উপর।

(iii) শিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠাঃ  

ডেসপ্যাচের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ হল বাংলা, মাদ্রাজ বোম্বাই উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাব এই পাঁচটি স্থানে একটি করে পৃথক শিক্ষা বিভাগ স্থাপন করা হবে এবং জনশিক্ষা আধিকারিক বা সংক্ষেপে DPI (Director of Public Instruction) নামে একজন দায়িত্বশীল কর্মচারী এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হবেন। এই DPI কে সাহায্য করার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক পরিদর্শক থাকবেন। এই শিক্ষণ বিভাগকে প্রতিবৎসর সরকারের নিকট বার্ষিক বিবরণী দাখিল করতে হবে।

(iv) ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাঃ 

এই ডেসপ্যাচে ইংরাজী ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও বলা হয়েছে যে ভারতে সুষম শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত করতে হলে ইংরাজী ভাষা ও মাতৃভাষার সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

(v) নারী শিক্ষাঃ

ডেসপ্যাচে নারী শিক্ষার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারি অনুদান প্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির মধ্যে নারীদের শিক্ষার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

(vi) গ্র্যান্ড – ইন – এড  প্রথার প্রবর্তনঃ 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য ডেসপ্যাচ সরকারি গ্র্যান্ড-ইন-এড প্রথা প্রবর্তনের নির্দেশ দেন। এই অনুদান সেইসব বিদ্যালয়গুলিকে দেওয়া হবে সেগুলিতে- (ক) ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা দান করবেন, (খ) যে বিদ্যালয়গুলি সুষ্ঠভাবে পরিচালিত, (গ) সরকারী পরিদর্শকের শর্ত মেনে চলবে এবং (ঘ) ছাত্রদের কাছ থেকে অল্প পরিমাণ বেতন গ্রহণ করবেন।

(vii) শিক্ষক শিক্ষণঃ 

ডেসপ্যাচের বলা হয়েছে যে প্রতিটি প্রদেশে লন্ডনের মতো শিক্ষক, শিক্ষণের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং প্রশিক্ষণ চলাকালীন শিক্ষকদের বৃত্তি দেওয়া হবে।

(viii) বৃত্তি শিক্ষাঃ 

ডেসপ্যাচে বৃত্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তার সঙ্গে শিল্পের জন্য স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় তার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় শিক্ষা স্তরে ব্যবহারিক কৃষি প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে।

উডের ডেসপ্যাচে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল। ভারতীয় শিক্ষার যে সংগঠন পরবর্তী যুগে আমরা দেখতে পাই তার ভিত্তি স্বরূপ হল উডের ডেসপ্যাচ। ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে উডের ডেসপ্যাচ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করায় জেমস একে “The Magna Carta of English Education In India” নামে আখ্যা দিয়েছেন।


প্রশ্ন উত্তরঃ  

১. উডের ডেসপ্যাচ কি ?

উত্তরঃ 1854 সালে একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ সুদীর্ঘ শিক্ষার দলিল প্রকাশিত হয়। সম্ভবত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চার্লস উডের পরামর্শ মতো শিক্ষার এই মূল্যবান দলিল রচনা করা হয়েছিল বলেই এটি উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।

২. উড ডেসপাচকে ম্যাগনা কার্টা বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ   উডের ডেসপ্যাচে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল। ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে উডের ডেসপ্যাচ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করায় জেমস একে “The Magna Carta of English Education In India” নামে আখ্যা দিয়েছেন।

৩. উডের ডেসপ্যাচ সুপারিশ গুলি কী কী ?

উত্তরঃ উডের ডেসপ্যাচ সুপারিশ গুলি হলঃ-

i) ভারতবাসীরা যাতে কার্যকর শিক্ষা লাভ করে এবং তাদের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন করাও একটি বড় লক্ষ্য।

ii)  ডেসপ্যাচের দ্বিতীয় মূল্যবান প্রস্তাবটি হল ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন।

iii) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য ডেসপ্যাচ সরকারি গ্র্যান্ত– ইন – এড প্রথা প্রবর্তনের নির্দেশ দেন।

৪. উডের নির্দেশনামা কবে প্রকাশিত হয় ?

উত্তরঃ উডের নির্দেশনামা 1854 সালে প্রকাশিত হয় ।

৫. উডের ডেসপ্যাচ কে প্রবর্তন করেন ?

উত্তরঃ  তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চার্লস উডের পরামর্শে শিক্ষার এই মূল্যবান দলিল রচনা করা হয়েছিল বলেই এটি উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত।


আরো পড়ুনঃ 


 

 

Leave a comment