প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে BA Education এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল- ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব । BA Education honours /BA Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী BA Education Semester-2 তে Psychological Foundation Of Education CC-2 Notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী রয়েছ তাদের উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।
ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব। Freud’s theory of personality development
ব্যক্তিত্ব কীঃ
ব্যক্তির আচার আচরণের ধরণ বা ভঙ্গি তার মনোভাব, দৈহিক ও মানসিক স্বার্থ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য নিয়েই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব। অর্থাৎ ব্যক্তির সমগ্র ব্যক্তিসত্ত্বাই তার ব্যক্তিত্ব। তবে মনোবিদ্যায় ‘ব্যক্তিত্ব’ শব্দটির অর্থ ভিন্ন। মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য সমূহের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
মনোবিদ গর্ডন অলপোর্ট তাঁর Personality গ্রন্থে বলেছেন – “ ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গতিশীল দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য গুলিকে সংগঠিত করে যা ব্যক্তিকে তার পরিবেশের সাথে বিশেষভাবে উপযোজিত হতে সাহায্য করে তাই হল ব্যক্তিত্ব।”
ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্বঃ
সিগমুড ফ্রয়েড হলেন মনোসমীক্ষণবাদের প্রতিষ্ঠাতা। তাই ব্যক্তিসত্ত্বার স্বরূপ নির্ণয়ের তত্ত্বে ফ্রয়েড একজন ব্যতিক্রমী মনোবিদ নয়। মনোবিদ ফ্রয়েড তাঁর ব্যক্তিসত্ত্বার স্বরূপ সংক্রান্ত তত্ত্বে ব্যক্তিসত্ত্বাকে দুটি দিক থেকে বিচার করেছেন। প্রথমত, তিনি ব্যক্তিসত্ত্বার সাংগঠনিক রূপের ব্যাখা দিয়েছেন এবং
দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি সত্ত্বার গতিশীলতাকে ব্যাখা করেছেন।
প্রথমটি হল – ‘মনোসংগঠনের আচরণ নির্ণয়ের নীতি’ এবং অপরটি হল ‘মানসিক দ্বন্দ্ব।’
(i) ব্যক্তিসত্ত্বার সংগঠনঃ
ফ্রয়েড তাঁর তত্ত্বে মানুষের মনের ব্যাপ্তিকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন। চেতন স্তর, প্রাক্ চেতন স্তর এবং অবচেতন স্তর। মনের যে অংশের সঙ্গে বাস্তব জগতের সম্পর্ক বর্তমান তাকে চেতন স্তর বলে। চেতনের পরবর্তী স্তর হল প্রাক্ চেতন স্তর। যেসব ঘটনা সম্পর্কে আমরা বর্তমানে সচেতন নই কিন্তু চেষ্টা করলে তাদের চেতন মনে স্থান দিতে পারি সেটি হল প্রাক্ চেতন স্তর। এর পরের স্তর হল অবচেতন স্তর। এটি হল মনের বৃহত্তম অংশ অবচেতন,মনে থাকা সমস্ত রকমের অতৃপ্ত কামনা বাসনা।
ফ্রয়েডের মতে , মানুষের মন সর্বদাই সক্রিয় থাকে। আর এই সক্রিয়তাই ব্যক্তি সত্ত্বার সাংগঠনিক রূপ নির্ধারণ করে। মনের স্তর গুলির সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে, ফ্রয়েড তাঁর তত্ত্বে সক্রিয়তাভিত্তিক তিনটি স্তরের উল্লেখ করেছেন – অদস্(Id), অহম্ (Ego), এবং অধিসত্তা (Super Ego)। অদস্ হল পরিপূর্ণ ভাবে অবচেতন। এর কাজ হল মানুষের সমস্ত রকমের প্রবৃত্তির চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করা। এই কারণে ফ্রয়েড অদস্কে সুখ ভোগের নীতি বলেছেন।
কিন্তু অদসের বিভিন্ন কামনাকে চারিতার্থ করার জন্য বাইরের জগতের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রয়োজন। এর জন্য ব্যক্তি মনের একটি উচ্চতর স্তরের প্রয়োজন তা হল অহম বা Ego। ব্যক্তির অবচেতন ও বাস্তব অবস্থার মধ্যে সম্বন্ধ গড়ে তোলে অহম্। এইজন্য অহম্ বাস্তব নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়।
ফ্রয়েড মনের সক্রিয় আর একটি স্তরের কথা বলেছেন তা হল অধিসত্তা বা Super Ego. এটি হল মনের সমাজ প্রভাবিত দিক। সাধারণভাবে একে আমরা বিবেক বলি। এই অধিসত্তা অহমের কাজের সমালোচনা করে ও নিয়ন্ত্রণ করে।
(ii) ব্যক্তিসত্ত্বার গতিশীলতাঃ
ফ্রয়েড ব্যক্তিসত্ত্বার সাংগঠনিক রূপের ব্যাখা দেওয়ার পর মনের গতিশীলতা ব্যাখা দিয়েছেন। ব্যক্তির অদস্, অহম্ ও অধিসত্তা পরস্পর ক্রিয়াশীল হলেও এরা পরস্পর বিপরীতধর্মী। তাই এদের সক্রিয়তা ব্যক্তির মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। কারণ অদস্ যদি তাঁর কোনো অসামাজিক ইচ্ছাকে চারিতার্থ করতে চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে অধিসত্তা বাধা দেয় কারণ অধিসত্তা হল সামাজিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণ। ফলে অদস্ ও অধিসত্তা মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তখন অহম্ বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করে তাদের মধ্যে সম্বোধন স্থাপন করে।
উপসংহারঃ
আবার যে ব্যক্তির ব্যক্তিসত্ত্বার সংগঠনে অহম্ অদসে্র থেকে দুর্বল থাকে তখন সেই ব্যক্তিসত্ত্বা অসামাজিক বা অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়ে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ফ্রয়েডের মতে ব্যক্তি সত্ত্বার গতিশীলতা ও প্রকৃতি উভয়েই এই তিনটি সত্ত্বার সক্রিয়তার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
আরো পড়ুন
- প্রকল্প প্রদ্ধতি কাকে বলে ও ধাপ গুলি কি কি
- শিশুর বিকাশে পরিবেশ বংশগতির প্রভাব আলোচনা
- সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার পার্থক্য
- শিক্ষা শব্দের অর্থ | শিক্ষার কার্যাবলী আলোচনা
- শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো
- শিখন কী | শিখনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
- স্মৃতি কী।স্মৃতির উপাদানগুলি ব্যাখা করো।
প্রশ্ন উত্তর
১. ব্যক্তিত্ব কী/ ব্যক্তিত্ব বলতে কি বোঝায় ?
উত্তরঃ ব্যক্তির আচার আচরণের ধরণ বা ভঙ্গি তার মনোভাব, দৈহিক ও মানসিক স্বার্থ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য নিয়েই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব।
২. ব্যক্তিত্ব কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তরঃ ব্যক্তিত্ব সাধারণত দুই প্রকার – ক) অন্তরমুখী ব্যক্তিত্ব খ) বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব ।
৩. ব্যক্তিত্বের উপাদান তত্ত্ব এর প্রবক্তা কে ?
উত্তরঃ ব্যক্তিত্বের উপাদান তত্ত্ব এর প্রবক্তা সিগমুন্ড ফ্রয়েড ।
৪. ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ ।
উত্তরঃ ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্যগুলি- বহির্মুখীতা, স্নায়বিকতা , অভিজ্ঞতার জন্য উন্মুক্ততা, সম্মতি এবং বিবেক।
৫. ফ্রয়েডের মতে মনের স্তর গুলি কি কি ?
উত্তরঃ মানুষের মনের ব্যাপ্তিকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন।-i) চেতন স্তর, ii) প্রাক্ চেতন স্তর এবং iii) অবচেতন স্তর।