ন্যায় দর্শনে ছয় প্রকার লৌকিক সন্নিকর্ষ স্বীকার করা হয় । আমরা এই পর্বে প্রথমে আলোচনা করবো ন্যায় মতে ‘সন্নিকর্ষ’ কী এবং তার পরে আলোচনা করবো ন্যায় মতে লৌকিক সন্নিকর্ষ কয় প্রকার ও কি কি ? 2024-25 শিক্ষা বর্ষে (semester) একাদশ শ্রনীর দর্শনের ছাত্র ছাত্রীদের উপযুক্ত ভাবে লেখা হয়েছে এই অংশটি। এখান থেকে ন্যায় দর্শন বড় প্রশ্ন উত্তর লিখতে পারবে।
ন্যায় মতে লৌকিক সন্নিকর্ষ
‘সন্নিকর্ষ’ পদটির অর্থ হল সম্বন্ধ। তবে যে কোন সম্বন্ধকেই সন্নিকর্ষ বলা যাবে না। ইন্দ্রিয়ের সাথে তার গ্রাহ্য বিষয়ের সম্বন্ধকেই সন্নিকর্ষ বলা হয়। ন্যায় মতে, সন্নিকর্ষ দু-প্রকার লৌকিক সন্নিকর্ষ ও অলৌকিক সন্নিকর্ষ। ইন্দ্রিয়ের সামনে বিষয় উপস্থিত থাকলে, তার সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের যে সন্নিকর্ষ হয়, তাই হল লৌকিক সন্নিকর্ষ।
ন্যায় দর্শনে ছয় প্রকার লৌকিক সন্নিকর্ষের উল্লেখ করা হয়েছে। যথা –
সংযোগ সন্নিকর্ষ
দ্রব্যের সাথে দ্রব্যের সন্নিকর্ষ হল সংযোগ সন্নিকর্ষ,যদি তাদের মধ্যে অবয় – অবয়বীভাব না থাকে। ঘট দ্রব্য , চক্ষু ও দ্রব্য। ঘট যেমন অসংখ্য পরমাণু সংযোগ, চক্ষুরিন্দ্রিয় ও তেমনি অসংখ্য তেজঃ কনিকা সংযোগ। সুতরাং ঘট প্রত্যক্ষে ঘট ও চক্ষুর মধ্যে যে সম্বন্ধ তা সংযোগ সন্নিকর্ষ। মনের সাথে আত্ম দ্রব্যের প্রত্যক্ষ সংযোগ সন্নিকর্ষ হয়। কারণ মনদ্রব্য, আত্মা ও দ্রব্য।
সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ
দ্রব্যগত গুণ, জাতি ও কর্মের প্রত্যক্ষে সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ স্বীকার করা হয়। চক্ষুর দ্বারা ঘটের রূপ (গুণ) প্রত্যক্ষে সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ হয়। এক্ষেত্রে চক্ষুর সঙ্গে রূপের (গুণ) সম্বন্ধ সাক্ষাৎ নয়, পরম্পরাগত। প্রথমে চক্ষুর সঙ্গে ঘটের সংযোগ সম্বন্ধ হয় এবং ঐ ঘট রূপ (গুণ) সমবায় সম্বন্ধে আশ্রিত থাকে। কাজেই চক্ষুর সঙ্গে রূপের পরম্পরাগত সন্নিকর্ষ হল সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ। একই ভাবে ঘ্রান ও রসনার দ্বারা গন্ধ ও রসের প্রত্যক্ষে সংযুক্ত সমবায় সন্নিকর্ষ হয়।
সংযুক্ত সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ
দ্রব্যগত, গুনগত, কর্মগত জাতির প্রত্যক্ষে সংযুক্ত সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ হয়। যেমন – একটি লাল গোলাপের লাল রঙে যে লালত্ব জাতি আছে তার প্রত্যক্ষে সংযুক্ত সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ হয়। কারণ এক্ষেত্রে প্রথমে চক্ষুর সঙ্গে গোলাপের সংযোগ হয়, যে গোলাপে লাল রং সমবায় সম্বন্ধ থাকে এবং ঐ লাল রঙে লালত্ব জাতি সমবেত থাকে। এই ভাবেই চক্ষুরিন্দ্রিয়ের দ্বারা লাল গোলাপের লালত্ব জাতির প্রত্যক্ষ সংযুক্ত সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষের দ্বারা হয়।
Watch Video Class
সমবায় সন্নিকর্ষ
নৈয়ায়িকগণ আকাশ নামক অতীন্দ্রিয় দ্রব্যের শব্দ নামক গুণের প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করার জন্য সমবায় সন্নিকর্ষ স্বীকার করেছেন। শব্দের প্রত্যক্ষ হয় শ্রবনেন্দ্রিয়ের দ্বারা । ন্যায় মতে, শ্রবনেন্দ্রিয় আকাশ স্বরূপ। অর্থাৎ কর্নবিবরাচ্ছিন্ন আকাশই হল শ্রবনেন্দ্রিয়। আকাশ হল দ্রব্য, এবং শব্দ হল গুণ। শব্দ (গুণ) আকাশে (দ্রব্যে) সমবায় সম্বন্ধে থাকে। সুতরাং আকাশ স্বরূপ শ্রবনেন্দ্রিয়ের সাথে শব্দের সমবায় সন্নিকর্ষ হয়।
সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ
শব্দ গুনে অবস্থিত শব্দত্ব নামক জাতির প্রত্যক্ষে সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষ স্বীকার করা হয়েছে। শব্দত্ব জাতি সমবেত থাকে শব্দে এবং ঐ শব্দ আবার কর্নবিবরাচ্ছিন্ন আকাশে সমবায় সম্বন্ধে থাকে। এইভাবে শব্দত্ব জাতির প্রত্যক্ষ সমবেত সমবায় সন্নিকর্ষের দ্বারা হয়।
বিশেষ্য বিশেষনভাব সন্নিকর্ষ
নৈয়ায়িকগণ অভাবের প্রত্যক্ষ ও সমবায়ের প্রত্যক্ষে বিশেষ্য বিশেষনভাব সন্নিকর্ষ স্বীকার করেছেন। অভাবের প্রত্যক্ষে সন্নিকর্ষ বিশেষ্যভাব সন্নিকর্ষ ও বিশেষণভাব সন্নিকর্ষ হতে পারে। কারণ অভাব তার অধিষ্টানে কখনও বিশেষ্যরূপে, আবার কখনও বিশেষণরূপে থাকতে পারে। যেমন – ‘ঘটাভাব বিশিষ্ট ভূতল’ এখানে এখানে ভূতল বিশেষ্য, ঘটাভাব বিশেষণ। তার ফলে ঘটাভাবের সঙ্গে চক্ষুর সংযুক্ত বিশেষণতা সন্নিকর্ষ হয়। কিন্তু ‘ভূতলে ঘটাভাব’ এখানে ভূতল বিশেষণ, ঘটাভাব বিশেষ্য। তার ফলে ঘটাভাবের সঙ্গে চক্ষুরিন্দ্রিয়ের সংযুক্ত বিশেষ্যতা সন্নিকর্ষ হয়।
Thanks For Reading: ন্যায় মতে লৌকিক সন্নিকর্ষ কয় প্রকার ও কি কি?
– প্রশ্ন উত্তর-
১. ন্যায় দর্শনের অপর নাম কি?
উত্তর- ন্যায় দর্শনের অপর নাম হল প্রমাণশস্ত্র।
২. ন্যায় দর্শনে কয়টি প্রমাণ আছে?
উত্তর-ন্যায় দর্শনে ছয়টি প্রমাণ আছে যথা প্রত্যক্ষ , অনুমান , উপমানা, ও শব্দ।
৩. ন্যায় দর্শনের উদ্দেশ্য কি?
উত্তর- ন্যায় দর্শনের হল প্রমাণশস্ত্র । প্রমাণশস্ত্রের দ্বারা সকল শস্ত্রকের আলোকিত করা হল ন্যায় দর্শনের উদ্দেশ্য। বলা যায় প্রমাণশস্ত্রের দ্বারা জগতের মূল তত্ত্ব আত্মাকে প্রমাণ করা।
আরো পড়ুন –
জৈনদের অনেকান্তবাদ সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো
চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?
ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ