প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে BA Education / Class 11 Education এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব । Class 11 Education/ BA Education honours/ BA Education General এর যেসব ছাত্র ছাত্রী, যারা BA Education Semester-1 এর notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী রয়েছ তাদের উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব | Importance of co-curricular activities in education
শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশে সহায়তা করে বলে তার শিক্ষাগত গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষাগত গুরুত্বগুলি হল –
১) স্বাভাবিক প্রবণতার বিকাশঃ
বিদ্যালয়ের পাঠ্যভিত্তিক বিকাশ সমূহ জীবনের যে প্রাথমিক চাহিদা ও প্রবণতাগুলিকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী তার বৈচিত্র্যের দরুন সেইসব চাহিদা ও প্রবণতাগুলিকে পরিতৃপ্ত করতে পারে , এবং শিক্ষাকে শিশুর চাহিদা ও প্রবণতা ভিত্তিক করে গড়ে তুলতে পারে।বিবেকানন্দের মতে – “শিক্ষা হল মানুষের মধ্যে অবস্থিত সম্পূনতার প্রকাশ মাত্র” ।
২) গণতান্ত্রিক বোধের বিকাশঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যেমন – সহযোগীতা , একতা, সহানুভূতিশীলতা ইত্যাদি শিশুদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
৩) দৈহিক বিকাশঃ
শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দৈহিক অনুশীলন, খেলাধুলো, সমাজসেবামূলক কাজ, যেমন- স্কাউট, ব্রতচারী, NCC প্রশিক্ষণ, NSS-এর মাধ্যমে দৈহিক বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীরা সুস্থ সবল বলিষ্ঠ চেহারার অধিকারী হয়ে ওঠে ।
৪) মানসিক বিকাশঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশে সহায়তা করে । বিতর্ক, আলোচনা, সেমিনার, ম্যাগাজিন প্রকাশনার মাধ্যমে মানসিক বিকাশ ঘটে। এই ধরনের কার্যাবলি মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতা ঘটায়।
৫) আত্মসচেতনতাঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীতে শিক্ষার্থীরা যখন অংশগ্রহণ করে, তখন তাদের উপর শিক্ষকের নিয়ন্ত্রন কম থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে , অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা আত্মসচেতন হয়ে ওঠে।
৬) উদ্দীপনামূলক ক্রিয়াশীলতাঃ
বিদ্যালয়ের গতানুগতিক শিক্ষাব্যবথার বিপরীতে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি দ্বারা নানা সৃজনমূলক , ও বিনোদনমূলক কার্যাবলির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে একঘেয়েমিতা দূর হয় । শিক্ষাব্যবস্থার বৈচিত্র্যের কারনে নতুন কিছু শেখার আশায় তারা আরও আগ্রহী, প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
শিশুদের কাছে বিদ্যালয় হল বন্দিশালার মতো এই ধারনা দূরীভূত হয় । এক্ষেত্রে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি তাদের মধ্যে এই একঘেয়েমিতা দূর করে এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে তারা উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। এই ধরনের কাজের মাধ্যমে তারা যেমন আনন্দ পায়, তেমনি বিদ্যালয়ের প্রতিও আকৃষ্ট হয়।
৭) কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
সাধারণ পাঠ্যক্রমের দরুন শিক্ষার্থীরা একঘেয়েমি হয়ে ওঠে। ফলে কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পায়। কিন্তু সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীর দ্বারা নানা কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে শিক্ষার্থী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে , ফলে কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
৮) সামাজিক বিকাশঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে নানা প্রকার সমাজসেবামূলক ও সৃজনমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশ ঘটে । নানারকম সামাজিক সমস্যা ও তার সমাধানের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা অবগত হয়। ফলে ভবিষ্যতে তারাই সামাজিক উন্নতির পথ নির্দেশক হয়ে ওঠে ।
৯) শৃঙ্খলার বিকাশঃ
একজন শিক্ষার্থীর অন্যতম গুণ হল – সুশৃঙ্খল, বা শৃঙ্খলপরায়নতা । যে কোন কাজের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতায় হল অন্যতম এক বৈশিষ্ট । বিদ্যালয়ের সঠিক নিয়মানুবর্তিতা শৃঙ্খলার একটি বড়ো সমস্যা ।সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিশুরা শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে ওঠে।খেলাধুলার, আলোচনাসভা , বিতর্কসভার ,মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলপরায়ন,ও ধৈর্যশীল হয়ে ওঠে । শিক্ষার্থীর মধ্যে খেলোয়াড়োচিত মনোভাব জেগে ওঠে, নেতৃত্বদানের দক্ষতা তৈরি হয়।এই গুণ মানুষের জীবনকে উন্নত করে।
১০) চরিত্র গঠনঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি, শিক্ষার্থীর দৈহিক মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । শিক্ষার্থীর দৈহিক মানসিক বিকাশই চরিত্র গঠনের অন্যতম একক। সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির দ্বারা তা আরও অধিক পরিপূর্ণতা লাভ করে ।
দৈহিক অনুশীলন, খেলাধুলো , বিতর্ক, আলোচনা, সঙ্গীত, NCC প্রশিক্ষণ, ব্রতচারী শিক্ষার্থীদের একে অপরের প্রতি সহানুভুতিশীল, কর্তব্যপরায়ন করে তোলে যা চরিত্রের এক একটি নির্দেশক । তেমনি এই ধরনের কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সমাজসেবামূলক মনোভাব জাগায়, যার মাধ্যমে চরিত্র গঠন হয় । যা আধুনিক শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য।
১১) নির্দেশনাঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলি ভবিষ্যৎ নির্দেশনার প্রথমিক ধাপ। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সঙ্গীত, সাহিত্য, কলা, নৃত্য ইত্যাদি বিষয়ে যদি শিক্ষার্থীর গুনাবলি থেকে থাকে , তা সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে ফুটে ওঠে ।সে ক্ষেত্রে শিশু যেমন নিজেকে আবিষ্কার করে ,তেমনই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে তেমনি নিজের ক্ষমতা ও আগ্রহগুলি সম্পর্কে সচেতন হয়ে থাকে যার উপর তার ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নির্ভর করে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর শিক্ষামূলক সম্ভাবনা ও শিল্পী সত্তার সম্পর্কে জানতে পেরে তার জন্য শিক্ষামূলক এবং বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দান করতে পারেন।
১২) শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্কঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীতে শিক্ষক শিক্ষার্থী সহজে অংশগ্রহণ করতে পারে বলে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
উপসংহারঃ
সুতরাং , উপরিউক্ত আলোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যলাভে সহায়তা করে। তাই তা শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এইজন্য সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীকে বর্তমানে শিক্ষার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
Thanks for Reading–শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব ।
আরো পড়ুন
- মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
- প্রকল্প প্রদ্ধতি কাকে বলে ও ধাপ গুলি কি কি
- শিশুর বিকাশে পরিবেশ বংশগতির প্রভাব আলোচনা
- সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার পার্থক্য
- শিক্ষা শব্দের অর্থ | শিক্ষার কার্যাবলী আলোচনা
- পাঠক্রম কী | পাঠক্রমের নির্ধারক গুলি কি কি
- সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর প্রকারভেদ
- ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তত্ত্ব
- শিক্ষা মনোবিজ্ঞান কেন একটি পৃথক শাখা বলা হয়
- মনোবিজ্ঞানকে আচরণ বিজ্ঞান বলা হয় কেন
- মনোযোগ কাকে বলে মনোযোগের শর্তগুলি লেখ
প্রশ্ন উত্তর
১। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর দুটি গুরুত্ব লেখ ।
উত্তরঃ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর দুটি গুরুত্ব হল -i)সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী তার বৈচিত্র্যের দরুন তাদের চাহিদা ও প্রবণতাগুলিকে পরিতৃপ্ত করতে পারে ।
ii)সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে ।
২। সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য কি ?
উত্তরঃ সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য হল – i)শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশসাধন ।
ii) শ্রেনীকক্ষে পুঁথিগত পঠন -পাঠন ছাড়াও বিভিন্ন পরিকল্পিত কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করা ।
৩। সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের অর্থ কী ?
উত্তরঃ শ্রেনীকক্ষে পুঁথিগত পঠন -পাঠন ছাড়াও , অন্য যেসব পরিকল্পিত কর্মসূচী রয়েছে, সেই গুলিকে বলা হয় সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী। যেমন – বৃক্ষরোপণ, স্বাধীনতা দিবস পালন, খেলাধূলা , অভিনয়, শরীরচর্চা ইত্যাদি।
৪। শিক্ষাদানে পাঠ্যক্রম কার্যক্রম কেন ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যলাভে সহায়তা করে,শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয়, সহজবোধ্য করে তোলে । তাই তা শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তরঃ বর্তমানে শিক্ষার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়-সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীকে। যেমন- -বৃক্ষরোপণ, স্বাধীনতা দিবস পালন, খেলাধূলা , অভিনয়, শরীরচর্চা , গান, নৃত্য ।