প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে BA Education / Class 11 Education এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি । কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। Class 11 Education/ BA Education honours/ BA Education General এর যেসব ছাত্র ছাত্রী, যারা BA Education Semester-1 এর notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী রয়েছ তাদের উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কি । কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য । Concept and Characteristics of Kindergarten method |
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কিঃ
Concept of Kindergarten method:
আধুনিক মনোবিজ্ঞানসম্মত এইটি গুরুত্বপূর্ন শিক্ষা প্দ্ধতি হল কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাপ্দ্ধতি। এই প্দ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা হলেন জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল। তিনি তার শিক্ষা দর্শনকে প্রত্যক্ষভাবে কার্যাকারী করার জন্য কিন্ডারগার্টেন নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
‘কিন্ডারগার্টেন’ কথার অর্থ হল ‘শিশুরদের বাসগৃহ ’। ফ্রয়েবেল মতে শিশুর আত্মসক্রিয়তাই হল একমাত্র শিক্ষা প্দ্ধতি। শিশু স্বাধীনভাবে নিজে নিজে কাজ করবে এবং তার মাধ্যমে উন্নততর জীবন আদর্শের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই কিন্ডারগার্টেন প্দ্ধতির মূল কথা হল শিশুর স্বাধীন ও সক্রিয়তা। ফ্রয়েবেলের মতে সক্রিয়তা হল শিশুর স্বাভাবিক অভিব্যক্তি। সেই কারণে ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষা প্দ্ধতিতে খেলাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেখেছেন। কারণ খেলাভিত্তিক শিক্ষা শিশুকে আত্মসক্রিয় করে তোলে।
ফ্রয়েবেলের শিক্ষা প্রদ্ধতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল আত্মসক্রিয়তা মাধ্যমে ঈশ্বরকে উপলব্দি করা। এর জন্য তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপরিকল্পনা করে ছিলেন।
কিন্ডারগার্টেন প্দ্ধতি বৈশিষ্ট্যঃ
Characteristics of Kindergarten method:
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্দ্ধতির প্রতিষ্ঠা হলেন জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল। কিন্ডারগার্টেন কথার অর্থ হল শিশু উদ্যান। কিন্ডারগার্টেন প্দ্ধতির স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। সেগুলি হল –
(i)আত্মসক্রিয়তাঃ
আত্মসক্রিয়তা ও খেলার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এই প্দ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাই এই পদ্ধতিতে শিশুরা হল বিদ্যালয় নামক উদ্যানের চারা গাছ , আর শিক্ষক হলেন মালী । তিনি বলেন যে, শিশুর উপর কোন শিক্ষার বোঝা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না । এই উদ্দেশ্য শিশুদের কবিতা, গান ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়।
(ii) ইন্দ্রিয় পরিচালনাঃ
বর্হিজগতের সাথে শিশুর সম্পর্ক স্থাপিত হয় ইন্দ্রিয় সংবেদনের মাধ্যমে। তাই ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষা প্দ্ধতিতে ইন্দ্রিয় পরিচালনার প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর পদ্ধতিতে শিশুর ইন্দ্রিয় পরিমার্জনের জন্য কত গুলো উপহারের ব্যবস্থা করেছেন । যেমন- বিভিন্ন আকার- আকৃতির কাঠের টুকরো , বল , কাঠি সুতো প্রভৃতি । এই খেলনাগুলোর মাধ্যমে শিশু বিচিত্র এই পরিবেশের সঙ্গে সংগতি বিধান করে পারবে, এবং চিরন্তন সত্য ঈশ্বরকে উপলদ্ধি করতে পারবে।
(iii) পরিবেশ অধ্যয়নঃ
কিন্ডারগার্টেন প্দ্ধতিতে পরিবেশ পরিচিতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশর সাথে পরিচিত হওয়ায় এই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্য। রুশোর মতো ফ্রয়েবেলে-ও বিশ্বপ্রকৃতির উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে প্রকৃতি পরিচয়ের মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলেছেন । তিনি বলেছেন – “Nature reveals God to the child “.
(iv) সৃজনমূলক ক্রিয়াকলাপঃ
শিশুরা যাতে তাদের কাজগুলি আগ্রহের সাথে করতে পারে ,তার জন্য এই শিক্ষা প্দ্ধতিতে ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি, রঙ করা,রেখাচিত্র , নাচ, সুরসৃষ্টি ,গান ও ছন্দ মিলিয়ে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।বিশেষত গান বিভিন্ন জটিল কাজকে সহজভাবে ও আগ্রহ সহকারে ও আনন্দের সঙ্গে করতে পারে । তাই ফ্রয়েবেল গানকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে – একটি মায়ের গান , অপরটি খেলার গান । তিনি মোট সাতটি মায়ের গান ও পঞ্চাশটি খেলার গানের কথা বলেছেন ।
(v) উন্মুখ ও আনন্দ লাভঃ
কিন্ডারগার্টেন প্দ্ধতির মূল কথা হল শিশুর আনন্দ লাভ। খেলার সাথে শিক্ষার সার্থক সমন্বয় ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজের ব্যবস্থা করা হয় । যেমন – বিভিন্ন কাগজের কাঠি, কাগজের ফুল তৈরি , কাগজের ইত্যাদি।এর ফলে শিশু আনন্দ উপভোগ করে ও নতুন কিছু শেখার আগ্রহে উন্মুখ হয়ে থাকে।
(vi) ঐক্যবদ্ধ জীবনাদর্শঃ
ফ্রয়েবেল তাঁর এই কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে এক ঐক্যবোধ জীবনাদর্শ ও সুষম ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন , তাই তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি আজও এত জনপ্রিয় ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কিন্ডারগার্টেন প্দ্ধতির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই যে, এই শিক্ষা প্দ্ধতিতে শিশু কখনো নিস্ক্রিয় থাকে না, সক্রিয় ভাবে জীবন বিকাশের বহুমুখী দিকের অংশগ্রহণ করে।
সীমাবদ্ধতাঃ
কিন্ডারগার্টেন প্রবর্তিত ফ্রয়েবেলের শিক্ষা প্দ্ধতিতে অনেক ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা আছে।
প্রথমত,তাঁর মতবাদ পুরোপুরি ভাববাদমূলক হওয়া ফলে এতে শিক্ষার উপযোগিতা, অভিনবত্ব ও সৃজন ক্ষমতার যথার্থ মূল্যায়ন সম্ভব হয় না।
দ্বিতীয়ত, ফ্রয়েবেলের উন্মেষমূলক তত্ত্বের ব্যাখা অনুযায়ী শিশুর বংশধারাই হল সব, পরিবেশের কোন ভূমিকা বা ক্ষমতা নেই। এমন ব্যাখার ফলে শিক্ষার কার্যকারীতা অনেকাংশে অকিঞ্চিৎকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৃতীয়ত,ফ্রয়েবেল তার শিক্ষার বিভিন্ন সংকেত বা প্রতীকের ব্যবহার করেছেন। এর ফলে তাঁর সমগ্র ব্যবস্থাটি দূরবদ্ধ, অলৌকিক ও রহস্যময় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চতুর্থত, সব শেষে বলা যায় ফ্রয়েবেলের শিক্ষাপ্দ্ধতি কেবলমাত্র অল্প বয়স্ক শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য , উচ্চস্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে তার প্দ্ধতির প্রয়োগ প্রযোজ্য নয়।
আরো পড়ুন
- মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
- প্রকল্প প্রদ্ধতি কাকে বলে ও ধাপ গুলি কি কি
- শিশুর বিকাশে পরিবেশ বংশগতির প্রভাব আলোচনা
- সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার পার্থক্য
- শিক্ষা শব্দের অর্থ | শিক্ষার কার্যাবলী আলোচনা
- পাঠক্রম কী | পাঠক্রমের নির্ধারক গুলি কি কি
- সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর প্রকারভেদ
- শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব
- মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।বিশৃঙ্খলার কারণ
- অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা
প্রশ্ন উত্তর
১। কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কী ?
উত্তরঃ ফ্রয়েবেল মতে শিশুর আত্মসক্রিয়তাই হল একমাত্র শিক্ষা প্রদ্ধতি। শিশু স্বাধীনভাবে নিজে নিজে কাজ করবে এবং তার মাধ্যমে উন্নততর জীবন আদর্শের দিকে এগিয়ে যাবে।
২। কিন্ডারগার্টেন শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ কিন্ডারগার্টেন কথার অর্থ হল শিশু উদ্যান।
৩। কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ ।
উত্তরঃ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
ক) শিশুদের কবিতা, গান ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়।
খ) প্রাকৃতিক পরিবেশর সাথে পরিচিত হওয়ায় এই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্য।
গ) এই শিক্ষা প্দ্ধতিতে ছবি আঁকা,নাচ, সুরসৃষ্টি ,গান ও ছন্দ মিলিয়ে কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৪। কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির প্রবর্তক কে ?
উত্তরঃ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির প্রবর্তক-ফ্রেডরিখ ফ্রয়েবেল ।
৫। কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির দুটি সুবিধা লেখ ?
উত্তরঃ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির দুটি সুবিধা –
i)কিন্ডারগার্টেন প্দ্ধতিতে পরিবেশ পরিচিতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ii)এই প্দ্ধতিতে আত্মসক্রিয়তা ও খেলার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া ।
৬। কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির অসুবিধা লেখ ।
উত্তরঃ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির অসুবিধা –
i) ফ্রয়েবেলের শিক্ষা প্দ্ধতিতে শিক্ষার উপযোগিতা, অভিনবত্ব ও সৃজন ক্ষমতার যথার্থ মূল্যায়ন সম্ভব হয় না।
ii)তাঁর সমগ্র ব্যবস্থাটি দূরবদ্ধ, অলৌকিক ও রহস্যময় হয়ে দাঁড়িয়েছে।