প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে BA Education / Class 11 Education এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল- অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা। Class 11 Education/ BA Education honours/ BA Education General এর যেসব ছাত্র ছাত্রী, যারা BA Education Semester-1 এর notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী রয়েছ তাদের উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা | The role of the family as a medium of informal education |
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলেঃ
অনিয়ন্ত্রিত বা প্রথাবর্জিত (informal) এবং প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা (Nonformal) প্রায় একই অর্থে ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়।
যে শিক্ষা ব্যবস্থার কোন বাহ্যিক নিয়ন্ত্রন থাকে না , যার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম ও প্দ্ধতি থাকে না, যেখানে শিশু নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরিবেশ থেকে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মূল ভিত্তি হল পর্যবেক্ষন, অনুশীলন ও অনুকরণ।
অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যমগুলো হল – (i) পরিবার (ii) সামাজিক সংস্থা iii) গণমাধ্যম (iv) অর্থনৈতিক উৎপাদন কেন্দ্র ইত্যাদি।
পরিবারের ভূমিকাঃ
পরিবার বলতে বোঝায় যেখানে শিশুর আত্মীয়স্বজনকে কেন্দ্র করে একটি পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, যেখানে তার জীবনের শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে, যার মাধ্যমে শিশু প্রথম সমাজকে চিনতে শেখে এবং তার শারীরিক, প্রক্ষোভিক মানসিক ও সামাজিক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলোর বিকাশ ঘটে, অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে শিশু শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক কার্যাবলীগুলো হল –
(i) প্রাথমিক আচরণের শিক্ষাঃ
পরিবার শিশুকে বেঁচে থাকার প্রাথমিক আচরণগুলো মাধ্যমে, আবার কখনো কখনো সরাসরি শিক্ষাদান বা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে। শিশু প্রাথমিক আচরণগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়। এখানে জোড় করে শিশুর ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় না, তাই তা অনিয়ন্ত্রিত।
ii) ভাষাগত শিক্ষাঃ
শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য ভাষাগত শিক্ষা অন্যতম। গৃহে শিশু বিভিন্ন শব্দ শুনে তা অনুকরন করে শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার শেখে, এবং পরবর্তীতে এই শব্দ ও বাক্যের প্রয়োগ করেই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে।সুতরাং শিশুর ভাষা গত জ্ঞান অর্জনে পরিবারের ভূমিকা অন্যতম ।
(iii) সামাজিক আচরণের শিক্ষাঃ
শিশু আচার আচরণ নিয়ে পৃথিবীতে আসে না, পরিবার শিশুকে সর্বপ্রথম সমাজের আচার আচরণ সম্পর্কে পরিচিত করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে করতে শিশু সমাজের ভালোমন্দ অনুভব করে। পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক আচরণ ,ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের আচার- আচরণের উপর ভিত্তি করেই শিশুর সামাজিক আচরণ গড়ে ওঠে ।
(iv) সুঅভ্যাস গঠনে শিক্ষাঃ
পরিবার শিশুকে বিভিন্ন সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে শেখায়, দৈনন্দিন জৈবিক কাজগুলো যেমন – খাদ্যগ্রহণ, নিদ্রা যাওয়া, মলমূত্র ত্যাগ করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ব্যবহারিক জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখা ইত্যাদির অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এই সুঅভ্যাসগুলো শিশুর চারিত্রিক বিকাশের প্রাথমিক ভিত্তি।
(v) প্রক্ষোভিক বিকাশঃ
পরিবারের মধ্যেই প্রথম শিশুর মৌলিক প্রকৃতির প্রক্ষোভের প্রকাশ ঘটে। পরিবারের সদস্যদের থেকেই শিশু সংযত প্রক্ষোভিক আচরণ প্রকাশ করতে শেখে, যা তাকে সমাজে উন্নত করে তোলে।
(vi) জ্ঞানর্জনের শিক্ষাঃ
পরিবার এমন একটি অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে শিশু প্রথম জ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়। পরিবারের সদস্যগণ যত বেশি দায়িত্ব নিয়ে শিশুকে জ্ঞানবিকাশের পথে সহযোগিতা করবে, অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা যতবেশী ধনাত্মক হবে ,তত বেশী শিশুর জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে।
(vii) মনোবৈজ্ঞানিক চাহিদাঃ
শিশুর কতকগুলো প্রধান প্রধান মনোবৈজ্ঞানিক চাহিদা , স্বঅধীকারের চাহিদা প্রভৃতি ,তৃপ্ত করার দায়িত্ব বহুলাংশে পরিবারের। আর এর মাধ্যমে শিশুর মানসিক তৃপ্তি ও আত্মবিশ্বাস জন্মায়।
(viii) শিশুর নৈতিক জীবন বিকাশঃ
পরিবার থেকেই শিশু নৈতিক জীবনধারার জ্ঞান আহরণ করে। শিশু প্রথম পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংস্পর্শে এসে ন্যায় নীতি ও নৈতিক জ্ঞান লাভ করে।
(viii) ধর্মীয় শিক্ষাঃ
পরিবারের মধ্যেই শিশুর ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটে। সে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। শিশু তার নিজের অজান্তেই পরিবারের আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করে থাকে।
(ix) ঐতিহ্য সংরক্ষণে শিক্ষাঃ
প্রতিটি সমাজ তার ঐতিহ্যের সংরক্ষণের মাধ্যম, আর এই ঐতিহ্যকে বংশপরম্পরায় সঞ্চালিত করার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব পালন করে পরিবার। পরিবার যদি শিশুকে তার সমাজের ঐতিহ্য সম্পর্কে পরিচিত না করে তাহলে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশু তার সমাজ সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায়।
(x) বৃত্তিমূলক শিক্ষাঃ
শিশুকে শিক্ষা দেওয়ায় পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আহও বহু পরিবারে , পরিবার ভিত্তিক বৃত্তি অনুসরণের প্রথা প্রচলিত আছে, তবে তা বহু ক্ষেত্রে বিলুপ্ত। আজও কিছু পরিবারের ছেলেরা বাবার বৃত্তি ও মেয়েরা মায়ের বৃত্তি গ্রহণ করে জীবিকানির্বাহ করে।
xi) পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনঃ
শিশু পরিবারের সঙ্গে অভিযোজনের ফলে যে শিক্ষা অর্জন করে, তা তাকে ভবিষ্যৎ জীবনে বৃহত্তর সমাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে ।
xii) অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দানঃ
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা শিশুর বিকাশের একটি মূল উপাদান, যা শিশুর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে , বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশু বৃত্তি গ্রহন ও বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে পিতা – মাতার কাছ থেকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করে ।
উপসং হার
সুতরাং, সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে এটাই বলা যায় যে, অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারই শিশুকে প্রথম জীবন বিকাশের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের শিক্ষাগত দিকের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন –“The Permanent Significance of home is not in the narrowness of its enclosure, but in an eternal moral idea” পারিবারিক পরিবেশ মানুষের একান্ত আপন পরিবেশ এবং সেই কারণে তা শিশুকে সহজভাবে বিকশিত হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন
- মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
- প্রকল্প প্রদ্ধতি কাকে বলে ও ধাপ গুলি কি কি
- শিশুর বিকাশে পরিবেশ বংশগতির প্রভাব আলোচনা
- সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার পার্থক্য
- শিক্ষা শব্দের অর্থ | শিক্ষার কার্যাবলী আলোচনা
- পাঠক্রম কী | পাঠক্রমের নির্ধারক গুলি কি কি
- সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর প্রকারভেদ
- শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব
- মুক্ত শৃঙ্খলা বলতে কী বোঝ।বিশৃঙ্খলার কারণ
প্রশ্ন উত্তর
১।অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে শিক্ষা ব্যবস্থার কোন বাহ্যিক নিয়ন্ত্রন থাকে না , যার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম ও প্দ্ধতি থাকে না, যেখানে শিশু নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরিবেশ থেকে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা বলে।
২। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ?
উত্তরঃ অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি হল – ক) এই শিক্ষা ব্যবস্থার কোন বাহ্যিক নিয়ন্ত্রন থাকে না ,।
খ) এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মধ্যে কোন নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম ও প্দ্ধতি থাকে না।
৩। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সুবিধা গুলি লেখ ।
উত্তরঃ অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সুবিধা হল -এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশু নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরিবেশ থেকে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
৪। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম গুলি কি কি ?
উত্তরঃ অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হল- (i) পরিবার iii) গণমাধ্যম ।
৫। অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পরিবারের ভূমিকা লেখ ।
উত্তরঃ পরিবার এমন একটি অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে শিশু প্রথম জ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়। পরিবারের সদস্যগণ যত বেশি দায়িত্ব নিয়ে শিশুকে জ্ঞানবিকাশের পথে সহযোগিতা করবে , তত বেশী শিশুর জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে শিশু পরিণত বুদ্ধি সম্পন্ন হবে ।