মাধ্যমিক ইতিহাস –(সিধান্ত ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট ও পরীক্ষা ) তৃতীয় অধ্যায় থেকে আজকের এই পর্বের বিষয়-সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও প্রকৃতি আলোচনা করো| যেসব ছাত্র ছাত্রী WBBSE class 10 history notes in Bengali | ইতিহাস class 10 chapter 3 খুঁজে চলেছ তাদের আশা করছি খুবই উপকারে লাগবে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও প্রকৃতি আলোচনা করো |
The causes and nature of Santhal rebellion |
সাঁওতাল বিদ্রোহ কাকে বলেঃ
সাঁওতাল উপজাতি, ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি অংশ। ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে সাঁওতালদের উপর ইংরেজ কর্মচারী, দেশীয় জামিদার ও মহাজনদের শোষণ ও অত্যাচার শুরু হয়। এদের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা যে বিদ্রোহ শুরু করে তা সাঁওতাল বিদ্রোহ (1855 – 1856) খ্রিঃ নামে পরিচিত ।
সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণঃ
এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণগুলি হল –
(1) মহাজনদের শোষণঃ
সাঁওতালরা নগদ অর্থে রাজস্ব পরিশোধের জন্য বহিরাগত মহাজনদের কাছ থেকে ঋন নিতে বাধ্য হত। মহাজনরা এই ঋনের অর্থের উপর চড়া সুদ চাপিয়ে সাঁওতালদের সর্বশান্ত করে দিত।
(2) রাজস্ব আদায়ঃ
সাঁওতালরা বাংলা , বিহার, সিমান্ত অঞ্চলের রাজমহল পাহাড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসবাস করত। এবং প্রচন্ড পরিশ্রম করে তারা এই অঞ্চলটিকে চাষের উপযোগী করে তোলে। অঞ্চলটির নাম ‘ দামিন – ই – কোহ ’ কিন্তু ইংরেজরা এই জমির উপর রাজস্ব আরোপ করলে সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু করে।
(3) রেলপথ নির্মানঃ
ছোটনাগপুরের রাজমহল অঞ্চলে রেলপথ নির্মান শুরু হলে, অনেক সাঁওতাল শ্রমিক কাজে নিযুক্ত হয়। সাঁওতালদের মজুরি কম দেওয়া হত এবং তাদের ওপর চলত অকথ্য অত্যাচার এর থেকে মুক্তি পেতে তারা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।
(4) নীলচাষঃ
নীলকর সাহেবদের চাপে সাঁওতাল কৃষকরা খাদ্যশষ্যের পরিবর্তে নীল চাষ করতে বাধ্য হয়, এবং সহ্য করতে নীলকরদের জোরজুলুম ও নির্যাতন।
(5) ধর্মান্তকরণঃ
খ্রিস্টান মীশনারীরা সাঁওতালদের এলাকায় খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচার শুরু করে এবং জোড় করে তাদের খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে থাকেন।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতিঃ
1855 থেকে 1856 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল দরিদ্রদের আপোষহীন এক সংগ্রাম। তবে এই বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
(1) কৃষক বিদ্রোহঃ
সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল মূলত কৃষক বিদ্রোহ। জমিদার, মহাজন, ও ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সাঁওতাল কৃষকেরা বিদ্রোহ করেছিল।
(2) আদিবাসী বিদ্রোহঃ
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রাণ শক্তি ছিল বিহারের ছোটনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসী সাঁওতালদের বিদ্রোহ।
(3) গন বিদ্রোহঃ
এই বিদ্রোহে সাঁওতাল উপজাতির কৃষক ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন পেশার নিম্ন বর্গীয় মানুষ যেমন -কামার, কুমোর, তাঁতি প্রভৃতি মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল বলে । এই বিদ্রোহ গণবিদ্রোহ হয়ে উঠেছিল। অধ্যাপক নরহরি করিরাজ বলেছেন- ” সাঁওতাল বিদ্রোহ আপোষহীন গণসংগ্রামের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত”।
(4) ধর্ম নিরপেক্ষ বিদ্রোহঃ
কেউ কেউ সাঁওতাল বিদ্রোহে ধর্মের প্রভাব দেখতে পেলেও এই বিদ্রোহ প্রকৃতি পক্ষে ধর্ম কেন্দ্রিক ছিল না। তারা ঈশ্বরকে গুরুত্ব দেননি।
(5) স্বাধীনতা সংগ্রামঃ
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন যে 1857 খ্রীঃ মহাবিদ্রোহকে স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করা হলে, সাঁওতাল বিদ্রোহকেও স্বাধীনতা সংগ্রামের মর্যদা দেওয়া উচিৎ।
আরো পড়ুন –
- দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর |
- মাধ্যমিক ভূগোল ম্যাপ পয়েন্টিং |
- দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় MCQ |
- ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে কি ছিল | মাধ্যমিক ইতিহাস |
- উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো |
- নীল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা করো |
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. সাঁওতাল বিদ্রোহ কত সালে হয়েছিল ?
উত্তরঃ 1855 থেকে 1856 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল ।
২. সাঁওতাল বিদ্রোহ কোথায় শুরু হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলার থেকে শুরু হয় সাঁওতাল বিদ্রোহ ।
৩. সাঁওতাল বিদ্রোহ দুজন নেতার নাম লেখ ।
উত্তরঃ সিধু ও কানহু নামে দুই মুরমু ভাই ছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম দুই নেতা । এছাড়াও তাদের সাথে ছিল চাঁদ ও ভৈরব ।
৪. ইতিহাসে হুল শব্দের অর্থ কি ?
উত্তরঃ ইতিহাস হুল শব্দের অর্থ হল বিদ্রোহ ।
৫.সাঁওতাল বিদ্রোহ কেন হয়েছিল ?
উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল- (i)ইংরেজ কর্মচারী, দেশীয় জামিদার ও মহাজনদের শোষণ ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে শুরু হয় বিদ্রোহ।
(ii) সাঁওতালদের এলাকায় খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচার শুরু করে এবং জোড় করে তাদের খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে থাকেন।
ধর্মান্তকরণের প্রতিবাদে বিদ্রোহ হয়েছিল।
৬. সাঁওতালদের বাসভূমি কি নামে পরিচিত ?
উত্তরঃ সাঁওতালদের বাসভূমি ‘ দামিন- ই – কোহ ’ নামে পরিচিত ।
৭. দামিন ই কোহ কথার অর্থ কি ?
উত্তরঃ দামিন ই কোহ কথার অর্থ পাহাড়ের পান্তদেশ ।