প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে Class 12 Political Science- এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল- উদারনীতিবাদ কাকে বলে। এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। Class 12 Political Science Notes যারা খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Class 12 Political Science Question Answer এর মধ্যে যে প্রশ্নটি আলোচনা করা হল তা হল- উদারনীতিবাদের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য ।
উদারনীতিবাদ কাকে বলে। এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
উদারনীতিবাদের সংজ্ঞাঃ
বিগত চার শতাব্দী ধরে যে মতাবাদটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে তার নাম উদারনীতিবাদ । উদারনীতিবাদ বলতে এমন একটি মতবাদকে বোঝায় যেখানে সমাজের সকলের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন ধরণের সংস্কার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই মতবাদের প্রতিফলিত হয় ব্যক্তির চিন্তা, বিশ্বাস, মতপ্রকাশ প্রভৃতি। এই ব্যবস্থায় জনসাধারণের স্বাধীনতা ,ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং উদ্যোগে স্বাধীনতা বিদ্যমান থাকে।
এ ব্যাপারে L .T হব হাউসের মতে “আন্ত পরিচালনার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ব্যক্তির সমাজ গঠনের বিশ্বাসই হল উদারনীতিবাদ। ” উদারনীতিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন জন লক, অ্যাডামসস্মিত, জেমস মিল, বেন্থাম, জনস্টুয়াট মিল, হার্বাট স্পেনসার প্রমুখ। এইসব প্রবক্তাগন উদারনীতিবাদে যেসব বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন সেগুলি হল –
উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যঃ
জনগণের মঙ্গল সাধন :
উদারনীতিবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হল জনগণের মঙ্গল চিন্তা করা। উদারনীতিবাদ নিয়ন্ত্রণহীন জনসম্মতির উপর কথা বলে। রাষ্ট্র যদি সার্বভৌম্য ক্ষমতার অধিকারী হয় তথাপি তা ব্যক্তিকে তার বিকাশের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধা দেবে না।
বহু দল ব্যবস্থা :
অধ্যাপক বার্কারের মতে আধুনিক উদারনীতিবাদ একাধিক রাজনৈতিক দলে বিশ্বাসী। কারণ বহু রাজনৈতিক থাকলে সমাজে সমস্যাগুলিকে সহজেই তুলে ধরা যায়। এক দল সরকার থাকে , আরও একদল সরকারের বিরোধিতা করে। এইভাবে সমালোচনা ও পালটা সমালোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সাফল্য মন্ডিত হয়।
ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা :
রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব হল ব্যক্তির অধিকারগুলি সুরক্ষা প্রদান করে। তাই ব্যক্তির কল্যাণ রক্ষার কাজে যদি রাষ্ট্র ও সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে সেই সরকারকে অপসারণ করার দায়িত্ব উদারনীতি জনগণের হাতে অর্পণ করেছে । অর্থাৎ উদারনীতিবাদ জনগণকে প্রতিরোধের অধিকার প্রদান করেছে।
জনকল্যাণ মূলক ব্যবস্থা :
উদারনীতিবাদের একটি অন্যতম নীতি হল জন কল্যাণ মূলক চিন্তার উপর একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাস্তবায়ন ও প্রসার করবে ব্যক্তির মঙ্গল বিধানের জন্য এই ব্যবস্থায় তাই মিশ্র অর্থনীতির ধারণাটি ব্যর্থ হয়েছে।
সার্বিক ভোটাধিকার : –
উদারনীতিবাদ সর্বোজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার স্বীকার করে । এই ভাবে জনগণে সার্বভৌম্যত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতি ,ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই ভোটাধিকার পায়।
নিরপেক্ষ আদালত :
আধুনিক উদারনীতিবাদ আইনের অনুশাসনের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মতবাদ ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নিরপেক্ষ আদালতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতি মানবিক সংগঠন গড়ে তোলে। উদারনীতিবাদী তাত্ত্বিকদের ধারণা হল রাষ্ট্র এমন একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান যার শ্রষ্ঠা হল মানুষ। ঈশ্বর রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেনি । রাষ্ট্র যেহেতু মানুষের সৃষ্টি তাই ব্যক্তির স্বাধীনতাকে বিকশিত করার জন্য পথ দেখাবে।
আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা :
উদারনীতিবাদে আইনের অনুশাসনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আইনের অনুশাসন তিনটি বিষয়ের উপর দন্ডায়মান
a) আইন নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করবে।
b) আইন সকলকে সমান চোখে দেখবে।
c) কেউ আইনের সীমানার বাইরে নয়।
রাষ্ট্রীয় সংস্কার মূলক ব্যবস্থা : –
উদারনীতিবাদীরা মনে করেন ব্যক্তি কল্যাণের দিকে লক্ষ রেখে রাষ্ট্রের সংস্কার সাধন করতে হবে। আইন, সংবিধান, প্রভৃতি সংস্কার সাধনের উপর লক্ষ রাখতে হবে যাতে ব্যক্তির কল্যাণ কর দিকটি গুরুত্ব পায়। এজন্য উদারনীতিবাদ ব্যক্তিকে দিয়েছে নির্বাচন করার ও নির্বাচিত করার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, সংবাদ পত্রে মত প্রকাশের অধিকার প্রভৃতি।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী :
আধুনিক উদারনীতিবাদ ফ্যাসিবাদের তীব্র সমালোচনা করে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উদারনৈতিক রাষ্ট্রগুলি জার্মানির নাতসিবাদ ও ইটালির ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছিল।
সমালোচনা :
উদারনীতিবাদ শুধু মাক্স্বাদীদের দ্বারাই সমালোচিত হয়নি। অন্যান্য রাষ্ট্র বিজ্ঞানীও এই মতবাদের সমালোচনা করেছেন।
প্রথমত : উদারনীতিবাদে অর্থনৈতিক সাম্য উপেক্ষিত হয়েছে। তাই অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন – ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য না থাকলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য অর্থহীন হয়ে পড়ে। ’
দ্বিতীয়ত : উদারনীতিবাদে জনমত সঠিক ভাবে প্রকাশিত হয়নি। অধ্যাপক ল্যাস্কির ভাষায় – ‘যে সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য থাকে না সেই সমাজে সুষ্ঠ জনমত তৈরি হতে পারে না। ’
তৃতীয়ত : মাকস্বাদীদের মতে উদারনীতিবাদে গণভোট, গনউদ্যোগে প্রভৃতির কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই প্রতিনিধি মূলক ব্যবস্থার কোনো মূল্যই থাকে না।
মূল্যায়নঃ
উপরিউক্ত সমালোচনার সত্ত্বেও উদারনীতিবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। উদারনীতিবাদী প্রথম মানবতাবাদী দৃষ্টি ভঙ্গির জন্ম দিয়েছে, সাম্য, মৈত্রী ও ভালোবাসার বাণী প্রচার করেছে। তাই উদারনীতি একটি প্রগতিশীল জীবন দর্শন।
Thanks for Reading- উদারনীতিবাদ কাকে বলে। এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সকল বিষয়ে Online Mock Test |
প্রশ্ন উত্তর:
১. উদারতাবাদের জনক কেয়।
উত্তর- ইংরেজ দার্শনিক জন লকে উদারতাবাদের জনক বলা হয়।
২. উদারনীতিবাদ কি ?
উত্তর- উদারনীতিবাদ বলতে এমন একটি মতবাদকে বোঝায় যেখানে সমাজের সকলের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন ধরণের সংস্কার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
আরো পড়ুন:-
- রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সামাজিক চুক্তি মতবাদ
- আইনের সংজ্ঞা দাও | এর বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী
- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করো।
- চার্বাক দর্শন বড় প্রশ্ন উত্তর
- রাষ্ট্র কাকে বলে | উপাদান গুলো কি কি
- .রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করো
B.A. Major-1 Political Science. NEP. According CBPBU syllabus Question to Answer.