একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী ও দায়িত্ব

প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে  BA Education / Educationএর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী/একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।  BA Education honours/   BA Education General এর যেসব ছাত্র ছাত্রী, যারা BA education notes খুঁজছ, তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।

 

একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী ও দায়িত্ব
একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী ও দায়িত্ব

 

একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী/একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।Qualities and responsibilities of an ideal teacher

 

আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী:

আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী – অ্যারিস্টটল বলেছেন – “ শিক্ষকেরা , যারা শিশুদের প্রকৃত শিক্ষা দেন , তারা শিশুদের পিতামাতার থেকে বেশী সম্মানীয় , কারণ , পিতামাতারা শিশুদের কেবল জীবন দেন, কিন্তু প্রতিটি শিক্ষার্থীর সুস্থ ও সভ্য জীবন বিকাশে সাহায্য করেন শিক্ষক সমাজ “। তাই শিক্ষার অন্যতম উপাদান হিসাবে একজন আদর্শ শিক্ষকের কতকগুলি গুণাবলী থাকার দরকার । বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের আলোচনার পরিপেক্ষিতে আদর্শ শিক্ষকের গুনাবলীকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে আলোচনা করা হল। সেগুলি হল–

(i) ব্যক্তিগত গুণাবলী :

শিক্ষকের যেসব ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য সুশিক্ষার সহায়ক সেগুলিকে ব্যক্তিগত গুণাবলী বলে। বিভিন্ন ব্যক্তিগত গুণাবলী গুলি হল –

প্রথমত ,একজন আদর্শ শিক্ষক আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন। আদর্শ ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে উত্তম শরীর, ন্যায়পরায়নতা , সততা , স্বার্থশূন্যতা ইত্যাদি উপর।

দ্বিতীয়ত ,আদর্শ শিক্ষকের তীব্র বুদ্ধি ও বিচার শৈলী থাকা প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, জ্ঞানের জন্য তীব্র অনুরাগ থাকবে। অর্থাৎ নতুন নতুন জ্ঞান আহরণে শিক্ষকের মন সতেজ ও সজীব হয়ে থাকবে।

চতুর্থত ,সুশিক্ষকের রাষ্টের সেবার জন্য তীব্র আকাঙ্খা থাকা প্রয়োজন।

পঞ্চমত , সুশিক্ষকের দায়িত্ব বোধ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন দায়িত্বশীল শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের মনে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে পারে।

ষষ্ঠত , সুশিক্ষক হবেন প্রগতিশীল চিন্তার, ধারক, বাহক ও রক্ষক ।

সপ্তমত , সুশিক্ষকের একটি মূল্যবান গুন হল উন্নত জীবন দর্শন।

অষ্টমত , সুশিক্ষকের স্বাধীন নিরপেক্ষ চিন্তার ক্ষমতা থাকতে হবে।

নবমত , বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সুশিক্ষক সকল প্রকার ব্যক্তিগত প্রভেদের ঊর্ধ্বে থাকবেন।

দশমত , সুশিক্ষক পরিস্থিতির চাপে কখনও অবদমিত হবেন না ।

(ii) বস্তুগত বা পেক্ষাগত গুনাবলী :

প্রথমত , শিক্ষানীয় বিষয়ে পর্যাপ্ত কাল সুশিক্ষকের একটি অপরিহার্য গুন। তবে কেবল শিক্ষনীয় বিষয়ে জ্ঞান থাকলেই চলবে না, জ্ঞানের সকল শাখায় কমবেশী জ্ঞান থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত , শিক্ষনের আধুনিক আবিষ্কৃত বিভিন্ন প্রদ্ধতির সঙ্গে সুশিক্ষক ঘনিষ্টভাবে পরিচিত থাকবেন।

তৃতীয়ত, বিভিন্ন ধরণের সহপাঠ্যক্রমিক কাজ কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, তাদের কীভাবে শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা যায়, সে সম্পর্কে সুশিক্ষকের ধারণা থাকা একান্ত কর্তব্য।

চতুর্থত , সুশিক্ষকের মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা দরকার।

(iii)  আচরণমূলক গুনাবলী

প্রথমত , সুশিক্ষক পক্ষপাতহীনতার উর্ধ্বে থাকে সকল শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার করে।

দ্বিতীয়ত , সুশিক্ষক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ভদ্র ব্যবহার, সংবেদনশীল মনোভাব পোষণ করবেন।

তৃতীয়ত, শিক্ষনপ্রিয়তা সুশিক্ষকের একটি বড় গুণ। অর্থাৎ শিক্ষকতার জন্য আগ্রহ না থাকলে সুশিক্ষক হওয়া যায় না।

সুশিক্ষকের দায়িত্ব বা কার্যাবলী 

বর্তমান শিশুকেন্দ্রীক শিক্ষায় শিক্ষকের কাজ কেবল শ্রেনী কক্ষের বা পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর কাজ শিক্ষার্থীর জীবনের সকল ক্ষেত্রে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে একজন আদর্শ শিক্ষক কী কী দায়িত্ব পালন করবেন, তার বিবরণ নিন্মে দেওয়া হল।

(i) অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করা 

বর্তমান শিক্ষায় শিক্ষক শিক্ষার্থীকে দান করবেন না, বাস্তব অভিজ্ঞাতার মাধ্যমে কীভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হয়, সেই কৌশল অর্জনে সাহায্যে করবেন।

(ii) সর্বাঙ্গীন বিকাশ

শিক্ষার্থীর দৈহিক , মানসিক, বৌদ্ধিক , প্রক্ষোভিক , অনুভূতি ইত্যাদি সকল দিকে যাতে বিকাশ ঘটে তার জন্য শিক্ষককে প্রচেষ্টা করতে হবে।

(iii) শিক্ষার পরিকল্পনা রচনা 

আধুনিক সুশিক্ষককে দক্ষ পরিকল্পক হতে হবে। পাঠ্যক্রমকে এমনভাবে পরিকল্পিত করতে হবে, যাতে তা শিক্ষার্থীর জীবন যাত্রার সকল অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

(iv) পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন

শিক্ষক , বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীকে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করবেন। কারণ, শিক্ষক যদি অভিভাবকদের আস্থাভাজন না হন, তবে তিনি কখনই সুশিক্ষক হতে পারবে না।

(v) জীবন দর্শনে গঠন 

সুশিক্ষকই প্রত্যক্ষ প্রভাবের দ্বারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধীরে ধীরে নৈতিক আদর্শ সংগঠনের মাধ্যমে জীবন দর্শন গঠন করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন জীবনের উপর জীবনের প্রত্যক্ষ প্রভাব।

(vi) গনতান্ত্রিক আদর্শ শিক্ষাদান

গণতান্ত্রিক কার্যাবলীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাস্তব পরিচিতি ঘটান এবং শাসন তন্ত্রের দায়িত্ব যাতে যথাযথ ভাবে পালন করতে পারে তার জন্য শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা সুশিক্ষকের গুরুত্ব দায়িত্ব।

(vii) শিক্ষালয়ের পুনবিন্যাস 

শিক্ষালয় হল সমাজের প্রতিরূপ। তাই সমাজ জীবনের সমস্ত অঙ্গীকেই শিক্ষালয়ের মধ্যে থাকবে। সুতরাং শিক্ষকের দায়িত্ব হবে শিক্ষালয়কে সেইরূপে সাজানো ।

(viii) আধুনিক শিক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব 

বৃত্তিমূলক শিক্ষা , বিদ্যালয়ের সংগঠনমূলক কাজ, বিজ্ঞান সম্মত প্রদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ বা মূল্যায়নের দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষককেই।

উপসংহার

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষার আধুনিক ধারা প্রবর্তনে শিক্ষকের দায়িত্ব কমেনি , বরং অনেক গুণ বেড়ে গেছে। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাছে সমস্ত সমাজই তার কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাঁর জীবনের প্রভাব দিয়েই শিক্ষার্থীর জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করবেন।

Thanks for Readingএকজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী ও দায়িত্ব


প্রশ্ন উত্তর

১. একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব কি ?

উত্তর-শিক্ষার্থীর দৈহিক , মানসিক, বৌদ্ধিক , প্রক্ষোভিক , অনুভূতি ইত্যাদি সকল দিকে যাতে বিকাশ ঘটে তার জন্য  প্রচেষ্টা করা ।

২.একজন শিক্ষকের  বৈশিষ্ট্য কি ?

উত্তর-   একজন শিক্ষক সব সময় ধৈর্যশীল , উৎসর্গীকৃত, এবং অপর কে সাহায্য করে।

৩.আদর্শ শিক্ষক হওয়ার উপায় কি ?

উত্তর-একজন ভালো শিক্ষক হতে হলে শিক্ষার্থীর প্রতি বিশুদ্ধ ভালোবাসা ও যত্ন থাকা আবশ্যক ।

.একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ কি?

উত্তর-একজন আদর্শ শিক্ষকের কাছে সমস্ত সমাজই তার কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।তাঁর জীবনের প্রভাব দিয়েই শিক্ষার্থীর জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করেন।


আরো পড়ুন:


 

Leave a comment