প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে Political Science- এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কাকে বলে –এটা আলোচনা করার পরে যে বিষয়টি আলোচনা করা হল –ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় কাম্য নয় । Class 12 Political Science Notes যারা খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। তাছাড়া বিএ ক্লাসের রাষ্ট্রবিঞ্জানের ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নোটস এর উপযোগী করে লেখা হয়েছে।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো | ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় কাম্য নয়
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝোঃ
সরকারের তিনটি বিভাগ যথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। সরকারে এই তিনটি বিভাগ ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে । আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করে, শাসন বিভাগ আইন মেনে শাসন পরিচালনা করে এবং বিচার বিভাগ আইন অমান্য কারীদের বিচার করে থাকে। সরকারের এই তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণনীতি বলে। অর্থাৎ স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল সরকারের এই তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবেনা।
ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতি আজকের নতুন কোন বিষয় নয়, এই ধারণা প্রাচীন রাষ্ট্রবিঞ্জানীদের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছিল। যেমন অ্যারিস্টটল , সিসেরা প্রমুখ রাষ্ট্র চিন্তাবিদদের চিন্তা ভাবনায় ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতির উল্লেখ পাওয়া যায়। তাছাড়া মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগেও এর সমর্থন পাওয়া যায়।
আধুনিক কালে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতি মূল প্রবক্তা হলেন ফরাসি দার্শনিক মন্তেস্কু। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Spirit of Laws”-তে সর্ব প্রথম ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতির আধুনিক ব্যাখ্যা দেন। মন্তেস্কুর মতে ,সরকারের তিনটি বিভাগের পৃথক পৃথক কাজ থাকা উচিৎ। তা না হলে সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে। তাই সরকারের প্রত্যেক বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করা দরকার। তা না হলে ব্যক্তির স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকবে না।
ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় কাম্য নয়
যেসমস্ত কারণে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ বাস্তবে সম্ভব নয় বলে মনে হয় সেগুলি হল–
প্রথমতঃ
ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ বাস্তবে সম্ভব নয়। কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের তিনটি বিভাগকে কখনোই সম্পূর্ণ ভাবে পৃথক করা যায় না। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় এক জন ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সাথে যুক্ত থাকে।
দ্বিতীয়তঃ
ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবে প্রয়োগ অসম্ভব। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমূহের শাসন ব্যবস্থা আলোচনা করলে দেখা যায় যে সরকারের তিনটি বিভাগ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করে। শাসন বিভাগ বিচার সংক্রান্ত কাজ, বিচার বিভাগ শাসন সংক্রান্ত কাজ এবং আইন বিভাগ শাসন সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যেমন – মার্কিন রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের প্রধান হলেও বিচারপতিদের তিনি নিয়োগ করেন। বিচারপতিরা আবার প্রয়োজন মনে করলে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশ বাতিল করে দিতে পারেন।
তৃতীয়তঃ
জৈবিক মতবাদের সমর্থকেরা ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে সরকারকে একটি জীবদেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। জীবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি পরস্পর স্বতন্ত্রভাবে যেমন কাজ করতে পারে না, তেমনি সরকারের বিভাগগুলি স্বতন্ত্রভাবে সাফল্যের সাথে কাজ করতে পারে না। একটি বিভাগকে আপর বিভাগের উপর নির্ভর করতে হয়।
চতুর্থতঃ
সমাজতন্ত্রবাদীরা ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতির প্রতি আস্তাশীল নয়। তাদের মতে প্রতিটি সরকারই একটি বিশেষ শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করে। তাই বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে স্বতন্ত্রীকরণ অর্থহীন। কারণ সরকারের প্রতিটি বিভাগই একক ভাবে প্রভুক্তকারী শ্রেনী স্বার্থে কাজ করে।
পঞ্চমতঃ
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে স্বাধীনতার রক্ষা কবচ বলে স্বীকার করে নিতে অনেকে সম্মত নয়। কারণ আইন বিভাগ যদি স্বৈরাচারী হয় তবে তার দ্বারা প্রণীত স্বৈরাচারী আইন সমূহকে কার্যকর করতে শাসন বিভাগ যেমন বাধ্য থাকে, তেমনি সেই সব আইন অনুসারে বিচার কার্য সম্পাদন করতে বিচার বিভাগ-ত্ত বাধ্য। সুতরাং , স্বতন্ত্রীকরণ কখনোই ব্যাক্তি স্বাধীনতার রক্ষা কবচ হতে পারে না। তাছাড়া কোন বিভাগকে এক চেটিয়া ক্ষমতা দিলে সে যে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে।
ষষ্ঠতঃ
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণনীতি অনুসারে সরকারের তিনটি বিভাগ সমক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমূহে সাধারণত আইন বিভাগই অপর দুটি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করে।
সপ্তমতঃ
অনেক সমাচলচক মনে করে যে , সরকারের ক্ষমতার বণ্টন করা ঠিক নয়, বরং প্রতিটা বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই হল শ্রেয়। এ প্রসঙ্গে ল্যাস্কি বলেছেন “শাসন ক্ষমতার তিনটি বিভাগের স্বতন্ত্রীকরণ পরস্পরের মধ্যে সংঘাত আনবে, ফলে শাসনকর্যে বিভ্রান্তি ঘটবে। “
উপসংহারঃ
সুতরাং ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে যেহেতু বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব নয় বলে সমালোচকরা মনে করেছেন তাই এটি নীতি হিসাবে বা তত্ত্ব হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে পূর্ণ অর্থে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ কাম্য বলে বিবেচিত না হলেও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজন। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব মুক্ত করতে না পারলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কখনোই সাফল্য মন্ডিত হয়ে উঠতে পারে না।
Thanks for Reading- ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো।
প্রশ্ন উত্তর
১. ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ বলতে কি বোঝ ?
উত্তর – সরকারের তিনটি বিভাগ যথা আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। সরকারের এই তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণনীতি বলে।
২. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা কি ?
উত্তর – স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল সরকারের এই তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবেনা।
৩. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল প্রবক্তা কে ?
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি শর্ত কি কিক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতি মূল প্রবক্তা হলেন , ফরাসি দার্শনিক মন্তেস্কু।
৪. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি শর্ত কি কি ?
উত্তর – ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি শর্ত -i) স্বতন্ত্র আইনবিভাগ, ii)স্বতন্ত্র শাসনবিভাগ, iii)স্বতন্ত্র বিচারবিভাগ ।
৫. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কোন দেশে আছে ?
উত্তর – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি আছে ।
৬. “The spirit of laws” গ্রন্থটি কার লেখা ?
উত্তর –“The spirit of laws” গ্রন্থটি মন্তেস্কুর লেখা ।
আরো পড়ুনঃ
- রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সামাজিক চুক্তি মতবাদ
- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করো।
- চার্বাক দর্শন বড় প্রশ্ন উত্তর
- রাষ্ট্র কাকে বলে | উপাদান গুলো কি কি
- রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করো
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতির পার্থক্য
- মার্কস এর রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব
- আইনের সংজ্ঞা দাও | এর বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী
- এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি