পাশ্চাত্য দর্শন প্রধানত তিনটি শাখায় বিভিক্ত যথা- ১. অধিবিদ্যা ২. জ্ঞানবিদ্যা ও ৩. নন্দনবিদ্যা। দর্শন আলোচনার এই পর্বের বিষয় হল-অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতা বিষয়ে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের মতবাদ।
অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতা বিষয়ে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের মতবাদ | Logical positivists doctrine of the possibility of metaphysics |
সূচনাঃ
প্লেটো, অ্যারিস্টটল প্রমুখ প্রাচীন দার্শনিকগন, এমনকি আধুনিক যুগের দেকার্ত , স্পিনোজা ও লাইবোনিজ প্রমুখ দার্শনিকগন ও অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে কোন সংশয় প্রকাশ করেননি। কিন্তু আধুনিক যুগের অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ও যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী দার্শনিকগণ অধিবিদ্যা সম্ভাব্যতা বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
প্রথম মতবাদঃ
দর্শন এবং অধিবিদ্যা এক ও অভিন্ন। প্লেটো(Plato) , অ্যারিস্টটল(Aristotle), হেগেল(Georg Wilhelm Friedrich Hegel), ব্রাড্লে(F. H. Bradley), স্যামুয়েল আলেকজান্ডার(Samuel Alexander) প্রমুখ দার্শনিকগন এই অভিমত সমর্থন করেন। গ্রীক দার্শনিক প্লোটোর মতে, দর্শন ও অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
তিনি দুটি পৃথক জগতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। একটি হল দৃশ্যমান জগৎ এবং অপরটি হল অতীন্দ্রিয় জগৎ। তাঁর মতে, শাশ্বত ধারণাগুলি (eternal ideas) নিয়ে যে অতীন্দ্রিয় জগৎ গড়ে উঠেছে, তার ধারক বা বাহক হলেন ঈশ্বর। এই অতীন্দ্রিয় জগৎ- ই সত্য এবং এই দৃশ্যমান জগৎ হল অতীন্দ্রিয় জগতের অনুলিপি (image) বা অনুকরণ (imitation)। কাজেই দৃশ্যমান জগৎ সত্য নয়, এ জগৎ হল অনিত্য ও পরিবর্তনশীল।
অপরদিকে, কেবলমাত্র অতীন্দ্রিয় জগৎ সত্য ও নিত্য। অধিবিদ্যা এই অতীন্দ্রিয় জগৎ নিয়ে আলোচনা করে। কাজেই দর্শন ও অধিবিদ্যার আলোচনা মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অনুরূপভাবে অ্যারিস্টটল বলেন, দর্শন হল এমন এক বিজ্ঞান, যা সত্তার স্বরূপ নির্ণয় করে এবং এই স্বরূপের অঙ্গীভূত যেসব বৈশিষ্ট্য,তার অনুসন্ধান করে। সুতরাং, দর্শন ও অধিবিদ্যা উদ্দেশ্য মূলত এক ও অভিন্ন।
যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের মতবাদঃ
বর্তমান যুগে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী নামে এক দার্শনিক সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে। এঁদের মধ্যে এ.জে.এয়ার, কারনার্প প্রমুখ দার্শনিকদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য। এই দার্শনিকগণ বিশ্বাস করেন যে, শাস্ত্র হিসাবে অধিবিদ্যা অসম্ভব। এরা ভাষা বিশ্লেষণ ও অর্থের যাচাইকরণ পদ্ধতির দ্বারা অধিবিদ্যার অসম্ভব্যতা প্রমাণ করেছেন।
যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের মূল বক্তব্য হল – অধিবিদ্যার বাক্যগুলি অর্থহীন। যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের মতে, যেসব বাক্য বিশ্লেষক নয় এবং অভিজ্ঞতায় যাচাই যোগ্য নয়, সেই সব বাক্য অর্থহীন। অর্থাৎ কোনো বাক্যকে অর্থপূর্ন হতে হলে, সেই বাক্যকে বিশ্লেষক এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা যাচাই যোগ্য হতে হবে।
কিন্তু অধিবিদ্যায় বাক্যগুলি বিশ্লেষক নয়, আবার অভিজ্ঞতার দ্বারা যাচাই যোগ্য নয়, সেজন্য অধিবিদ্যার বাক্যগুলি অর্থহীন। অধিবিদ্যা থেকে একটি বাক্য নিয়ে বিষয়টি আলোচনা করা যাক। যেমন – ‘আত্মা অবিনশ্বর’ – এই অধিবিদ্যাক বাক্যটি দুটি কারণে অর্থহীন। বাক্যটি বিশ্লেষক নয়, দুই- বাক্যটির সত্যতা অভিজ্ঞতার দ্বারা যাচাই যোগ্য নয়।
এইভাবে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা বলেন অধিবিদ্যার বাক্যগুলির অর্থহীন প্রলাপ মাত্র। সুতরাং অধিবিদ্যা সম্ভব নয়।
Thanks For Reading: অধিবিদ্যা কি সম্ভব যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী মতবাদ |
আরো পড়ুনঃ
- আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি উক্তিটি ব্যাখ্যা করো
- অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব
- জৈনদের অনেকান্তবাদ সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো
- চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?
- ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ
- অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতা হিউম ও কান্টের মতবাদ
- পরিবেশ সংরক্ষণে স্বতঃ মূল্যের গুরুত্ব লেখ
- স্বতঃমূল্য সম্পর্কে G.E MOORE-এর তত্ত্ব
- পরিবেশ নীতিবিদ্যা | স্বতঃমূল্য ও পরতমূল্যে
- অধিবিদ্যা কী | অধিবিদ্যার প্রকৃতি আলোচনা করো
প্রশ্ন উত্তরঃ
1. অধিবিদ্যা কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে শাস্ত্র জগৎ ও জীবনের দৃশ্যমান পরিবর্তনশীলতাকে অতিক্রম করে এক অতীন্দ্রিয় শাশ্বত সত্ত্বা বা তত্ত্বের অস্তিত্ব বা স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করে এবং এই বিষয়ে বুদ্ধিগ্রাহ্য একটি ধারণা গঠনের চেষ্টা করে, তাকে তত্ত্ববিদ্যা বা অধিবিদ্যা বলে।
2. অধিবিদ্যার জনক কে ?
উত্তরঃ অধিবিদ্যার জনক হলেন – অ্যারিস্টটল।
3. যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী কাদের বলে ?
উত্তরঃ যে সব দার্শনিকগণ বিশ্বাস করেন যে, শাস্ত্র হিসাবে অধিবিদ্যা অসম্ভব। এরা ভাষা বিশ্লেষণ ও অর্থের যাচাইকরণ পদ্ধতির দ্বারা অধিবিদ্যার অসম্ভব্যতা প্রমাণ করেছেন।সেই সব দার্শনিকগণ যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদী নামে পরিচিত।
4. দুজন যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীর নাম কর।
উত্তরঃ দুজন যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীর নাম – এ.জে.এয়ার, কারনার্প প্রমুখ ।