পরিবেশ নীতিবিদ্যা | স্বতঃমূল্য ও পরতমূল্যে

পরিবেশ নীতিবিদ্যা দর্শনশাস্ত্রের নীতিবিদ্যা একটি অন্যতম শাখা।  বর্তমানে  Man And  Nature হল দর্শনশাস্ত্রের SEC Paper ( Skill Enhancement Course) এর অন্তর্গত। প্রিয় শিক্ষার্থীদের SEC Paper এর উপর পাঠ গ্রহণ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হছে , সেই কথা মাথায় রেখে সম্পূর্ন বাংলায় Man And  Nature থেকে প্রতিটা অংশ অলোচনা করা হল। আজকের আলোচনায় পরিবেশ নীতিবিদ্যা থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত স্বতঃমূল্য ও পরতমূল্যের মধ্যে পার্থক্য (Distinguish between Intrinsic value and extrinsic Value Of Nature)।    

পরিবেশ সংক্রান্ত স্বতঃমূল্য ও পরতমূল্যের মধ্যে পার্থক্য
পরিবেশ সংক্রান্ত স্বতঃমূল্য ও পরতমূল্যের মধ্যে পার্থক্য

 

পরিবেশ সংক্রান্ত স্বতঃমূল্য ও পরতমূল্যের মধ্যে পার্থক্য লেখ | Distinguish between Intrinsic value and extrinsic Value Of Nature

পরিবেশনিষ্ট নীতিবিদ্যার প্রধান কাজ হল পরিবেশের সাথে মানুষের সম্পর্কের এক নৈতিক মূল্য নির্ধারন করা। পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান পরস্পর   পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হলেও তারা নিজগুনে মূল্যবান। পরিবেশ সম্পর্কে নৈতিক মূল্য বিষয়ে  দুটি মতবাদ তৈরি হয়েছে একটি হল- স্বতঃমূল্য ও অপরটি হল পরতঃমূল্য। জগতের প্রত্যেকটি বস্তুর যে নিজস্ব মূল্য তা হল স্বতঃমূল্য এবং কনো ব্যক্তি যখন নিজের প্রয়োজনে লাগে বলে কোন বস্তুর উপর মূল্য আরোপ করে তাকে পরতঃমূল্য বলে। অর্থাৎ স্বতঃমূল্যের ধারণাটি পরতঃমূল্য ধারণার একেবারে বিপরীত।

একটি বস্তুর স্বতঃমূল্য আছে- একথার অর্থ হল বস্তুটির যে মূল্য , তা নিজে যে রকম ঠিক তার উপর নির্ভর করে। বস্তুটি দিয়ে কি উদ্দেশ্য স্বাধিত হয় তার উপর নির্ভর করে না বস্তুর স্বতঃমূল্য । বস্তুটি দিয়ে কি কাজ করা যায় , বস্তুটি আমাদের উপকারে আসে কিনা- এইসব প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক ।  এক কথায় অন্যের প্রয়োজন নিরপেক্ষভাবে বস্তুর যে মূল্য তা হল স্বতঃমূল্য।  উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমি সঙ্গীত শুনি ,এর কারণ সঙ্গীত আমার ভালো লাগে , সঙ্গীত দিয়ে কি উদ্দেশ্য সাধিত হয় তা আমার কাছে অপ্রাঙ্গিক। এক্ষেত্রে সঙ্গীত এর যে মূল্য তা স্বতঃমূল্য কারণ সঙ্গীত নিজেই মূল্যবান। এই অর্থে পরিবেশের স্বতঃমূল্য আছে বলার অর্থ হল পরিবেশের মূল্য পরিবেশ নিজেই। পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে আমরা কী পেতে পারি- সেই প্রসঙ্গটি অপ্রাসঙ্গিক কারণ পরিবেশ স্বতঃমূল্যবান। এমনকি যে বিষয়ে স্বতঃমূল্য আছে তাকে যথেচ্ছভাবে কাজে লাগানো আমাদের উচিত নয়।

একটি বস্তুর পরতঃমূল্য আছ- একথার অর্থ হল যে ওই বস্তুটির  সাহায্যে কিছু উদ্দেশ্য গঠিত হয়। অর্থাৎ বস্তুটি দিয়ে কী লাভ হল -সেই বিষয়টি এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় -একটি কলম দিয়ে যদি লেখা সম্ভব হল তাহলে বলে থাকি ওই কলমটি আমাদের কাজে এল। এক্ষেত্রে কলমটির মূল্য হল পরতঃমূল্য যেহেতু কলমটি উদ্দেশ্যসাধন করেছে। আর কলমটি যদি অচল হয়, তাহলে কলমটির পরতঃমূল্য নেই বলতে হবে যেহেতু কলম আমার উদ্দেশ্য সাধন করছে না। একইভাবে পরিবেশের উপাদানগুলি আমাদের উদ্দেশ্যসাধন করে বলে পরিবেশের পরতঃমূল্য আছে। জল ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, জল হল মানুষের জীবনের অপিহার্য্য উপাদান- তাই জলের মূল্য রয়ছে। জল মানুষের উপকারে লাগে বলে জলের মূল্য রয়েছে-  জলের প্রতি এই রূপ মূল্য হল পরতঃমূল্য।

সাধারণ মানুষ পরিবেশকে নিজের  প্রয়োজনে ব্যাবহার করে বলে পরিবেশের প্রতি পরতঃমূল্য আরোপ করে। কিন্তু পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশের প্রতি স্বতঃমূল্য আরোপ করতে হবে। মানুষ যেমন জগতে নিজের  মূল্য স্বীকার করে , তেমনই পরিবেশের নিজস্ব মূল্য আছে – এটা উপলব্ধি করলেই পরিবেশ নির্মল হয়ে উঠবে।


Read More: 

  1. গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দলন

  2. ভারতীয় দর্শনে দর্শন শব্দের অর্থ

 


 

Leave a comment