বাল্মীকি রচিত রামায়ণ বিশ্বের প্রাচীন মহাকাব্যগুলির মধ্যে একটি । রামায়ণে প্রায় ২৪০০০ শ্লোক , এবং সাতটি খণ্ড রয়েছে । এই কাব্যের মধ্যে দিয়ে প্রাচীন ভারতের সমাজ ও ধর্মচেতনার নানা দিক ফুটে উঠেছে । এই কাব্যের মূল নায়ক ছিলেন রাম । “রামের” চরিত্রের মধ্যে দিয়ে একজন আদর্শ রাজার চরিত্র বিকশিত হয়েছে, যা সমাজের একটি আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছে । আজ ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যে রামায়ণের প্রভাব আলোচনা করা হল ।
আশা রাখি , আমাদের এই উপস্থাপনা B.A Sanskrit –এর ছাত্রছাত্রীদের এবং WBBSC class -11 এর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে খুবই উপযোগী হতে চলেছে।
ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যে রামায়ণের প্রভাব আলোচনা করো |
“ কামার্থগুণসংযুক্তং ধর্মার্থগুণবিস্তরম্।
সমুদ্রমিব রত্নাঢ্যং সর্বশ্রুতিমনোহরম্ ।।“
আদি কবির আদি কাব্য রামায়ণ একাধাচর ধর্মশাস্ত্র ও মহাকাব্য। ধর্ম , অর্থ, মোক্ষ ও কামের এই চর্তুবিদ পুরুষ অর্থের রত্মময় আধার। সমুদ্রের মত উহা গভীর ও শ্রুতি মনোহর। ‘ রামায়ণ ’ আদি কবির এমনই এক সাহিত্যিক মহাকাব্য (epic of growth) যা শতাব্দীর পর শতাব্দী শাশ্বত মহিমায় চির অনুপ্রাণিত।
ভারতীয় সমাজ ও ধর্মীয় জীবনে রামায়নণের প্রভাবঃ
(i) সমাজ জীবনে প্রভাবঃ
বাল্মীকি তাঁর অনন্য সাধারণ প্রতিভাবলে রামসীতার, মাহাত্ম্য, ভাবের গভীরতম এবং ভাষায় প্রাঞ্জালতায় এমনই হৃদয়গ্রামী করে তুলেছিলেন যে, ভারতের অকাল বৃদ্ধবনিতা তার দ্বারা চির অনুপ্রাণিত। শ্রীরামচন্দ্রের অসাধারণ পিতৃভক্তি, ভরত ও লক্ষণের অতুলনীয় ভ্রাতৃ ভক্তি ও সীতার অনুপম প্রতীব্রতা জনমানসকে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। ত্যাগের মহিমায় এরা সকলেই স্বমহিমায় ভাস্কর।
ক্ষমা , ত্যাগ ও দৃপ্ত পুরুষের জ্বলন্ত বিগ্রহ রামচন্দ্র। সতীকূল শিরমণি সীতা আবার সতীকূলের রত্ম স্বরুপা। হনুমানের অটল প্রভু ভক্তির জন্য তিনি মন্দিরে মন্দিরে পূজিতা। রামায়ণ যাতনা যুদুকে আশ্রয় করে, তার থেকে বেশি রাম – সীতার দাম্পত্য প্রেমকে উজ্বল করে দেখিয়েছে। ভারতীয় গ্রাহস্থ্য জীবন, যে কত উচ্চস্থানে ছিল তা এই মহাকাব্য প্রমাণ করে।
(ii) ধর্মীয় জীবনে প্রভাবঃ
ভারতীয় ধর্মীয় জীবনেও রামায়নের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ভারতীয় নরনারী পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে রাম, সীতা ও প্রভু ভক্ত হনুমানের জপ করে। জাতির জনক মহাত্মাগান্ধির প্রার্থনা সভায় রাম – সীতার জয়গান গাইতেন – “ রঘুপতি রাঘব রাজা রাম / পতিত পাবন সীতা রাম।
” ভারতবাসী আজও রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন যে রাজ্যে কল্যাণ, আনন্দ হিল্লোলিত হয়, বসুধারা শস্যশ্যামলা হয়। আজও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বিজয়া দশমীতে ‘ দশেরা ’ উৎসব পালিত হয়। রামনবমী অনুষ্ঠানটিও সমাজে বিশেষ ভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমরা যে শারদোৎসব পালন করি সেটি হল প্রকৃত পক্ষে রামের অকালবোধন।
সাহিত্যের উপর রামায়ণের প্রভাবঃ
(i) সংস্কৃত সাহিত্যঃ
ভাষের ‘প্রতিমা ’, ‘অভিষেক নাটক, মহাকবি কালিদাসের ‘রঘুবংশ’, ভবভূতির ‘মহাবীর চরিত এবং ‘উত্তমরামচরিত’ ভট্টির ‘রাবণবধ ’ বা ‘ ভট্টিকাব্য,’ কুমার দাসের ‘জানকীহরণ,’ ক্ষেমন্দ্রর ‘রামায়ণমঞ্জরী’ রাজশেখরের ‘বল রামায়ণ’। জয়দেবের ‘প্রসন্নরাঘব’ এই সুবিশাল সাহিত্যস্মৃতির উপাদান রামায়ণ থকেই সংগৃহিত।
এছাড়া ‘আধ্যাত্ম রামায়ণ,’ ‘ অদূত রামায়ণ ‘ যোগ বিশিষ্ট রামায়ণ, এবং আধুনিক কালের শ্রীজীব ন্যায়তীর্থের কাব্য ও নাটক , শ্রীনিত্যানন্দ স্মৃতি তীর্থের নাটকে রামায়নের প্রভাব লক্ষণীয়।
(ii) প্রাদেশিক সাহিত্যঃ
প্রাদেশিক সাহিত্যেও রামায়নের প্রভাব লক্ষ করা যায় যেমন কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’ হিন্দিতে তুলসী দাসের ‘রামচরিত মানস’ নেপালিতে ভানুতত্তের ‘নেপালি রামায়ণ’, অসমীয়া ভাষায় মাধব মন্ডলীর রামায়ণ, তামিল ভাষায় ‘কম্ব রামায়ণ’ প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য।
(iii) আধুনিক বাংলা সাহিত্যঃ
বাংলাভাষায় প্রথম রামায়ণ রচিত হয় সম্ভবত পঞ্চাদশ শতাব্দীতে সেটি হল কৃত্তিবাস ওঝা রচিত ‘রামায়ণ পাঁচালী’। এছাড়া দূজর্য় রচিত ‘অদভুত রামায়ণ’, রাম ঠাকুরের রচিত রামায়ণ প্রভৃতি উল্লেখ্য। মনমোহন বসুর ‘রামাভিষেক’ গিরীশচন্দ্রের ‘ সীতাহরন’, ‘রাবণবধ’ ‘লক্ষণ বর্জন’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘পাষাণী’ সীতা প্রভৃতি নাটকে রামায়নের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
মূল্যায়নঃ
ভারতীয় সমাজ, সাহিত্য, দর্শন ও ধর্মে রাসায়নের গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। রামায়নের সুমধুর সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথের মনকে কতখানি প্রভাবিত করেছিল তা তার পুরস্কার কবিতায় আমরা দেখতে পাই – আজিও সেনীত মহাসঙ্গীতে বাজে মানবের কানে। রামায়নের বালকান্ডে উল্লেখিত য্ক্ষার আর্শীবাদ বাণী যথার্থই সার্থক হয়েছে –
“যাবৎ স্থাস্যন্তি গিরয়ঃ সরিতশ্চ মহীতলে।
তাবদ্ রামায়ণকথা লোকেষু প্রচরিষ্যটি।।”
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. বাংলায় রামায়ণ রচনা করেন কে ?
৩. রামায়ণের কয়টি কান্ড ও কি কি ?
উত্তরঃ রামায়ণের মোট ৭ টি কান্ড/ খণ্ড রয়েছে । যথা- আদিকাণ্ড , অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড।
৪. সীতার অপর নাম কি ?
উত্তরঃ সীতা জনক কন্যা বলে তাঁর অপর নাম, জানকী। এছাড়াও রামের স্ত্রী হওয়ায় তাঁর আরেক নাম রমা ।
৫. সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ কে লিখেছিলেন ?
আরো পড়ুন –
- প্রকল্প প্রদ্ধতি কাকে বলে ও ধাপ গুলি কি কি | B.A Education
- শিশুর বিকাশে পরিবেশ বংশগতির প্রভাব আলোচনা | B.A Education
- সংকীর্ণ ও ব্যাপক অর্থে শিক্ষার পার্থক্য । B.A Education
- বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করো | B.A philosophy
- হিউমের সতত সংযোগবাদ তত্ত্ব সমালোচনাসহ | B.A philosophy