তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্নউত্তর

একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা নতুন সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার । দ্বিতীয় সেমিস্টারের যে দুটি গল্প রয়েছে সেখান থেকে তোমাদের 5 নম্বরের একটি রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর লিখতে  হবে ।

আজ  WBCHSE Class 11-এর যে গল্পটি নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চলেছি তা হলঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র-তেলেনাপোতা আবিষ্কার ।এই  গল্পটি থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নউত্তর আলোচনা করবো । আমরা সহজ ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বরূপ বিষয়গুলি উপস্থাপন করে থাকি । যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক হবে ,বলেই আশা রাখি ।

আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়ঃএকাদশ শ্রেণী | তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্নউত্তর |

পরবর্তীতে একাদশ শ্রেণীর আরও অন্যান্য বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব NOTES পেতে darsanshika.com পেজটিতে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে ।

তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্নউত্তর |
তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্নউত্তর |

 

Contents hide
2 প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার

একাদশ শ্রেণী | দ্বিতীয় সেমিস্টার

প্রেমেন্দ্র মিত্রের  তেলেনাপোতা আবিষ্কার

  • তেলেনাপোতা আবিষ্কার রচনাধর্মী প্রশ্নউত্তরঃ

১. তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ কী ? একে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলেছেন কেন ? 

অথবা 

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে “আবিষ্কার” শব্দ বন্ধের তাৎপর্য ?

উত্তরঃ গল্পকার প্রেমন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি একটি অসামান্য রচনা। কাজকর্মে মানুষের ভিড়ে হাঁফিয়ে ওঠার পর দু – দিনের ছুটি পাওয়া গেলে মাছ ধরার জন্য তেলেনাপোতা যেতে হবে। বাংলার ম্যালেরিয়াগ্রস্ত তেলেনাপোতা গ্রামে দুইজন বন্ধুকে নিয়ে কথক মাছ ধরতে যান। এখানে এসে বক্তা যামিনী নামে এক – সরল স্বভাবের নারীর সাক্ষাৎ পান। তেলেনাপোতা যেন এক আশ্চর্য সরোবর। সরল স্বভাবের যামিনী যেন এক মৎস্যকন্যা।

তেলেনাপোতা শহুরে অভিযাত্রী যেন মৎস্যশিকারী। তার বড়শিতে হৃদয়বিদ্ধ করার জন্য মৎস্যকন্যারূপী যামিনী ব্যগ্র। ঘরে তার বৃদ্ধা,ভীষন অসুস্থ, দৃষ্টিশক্তিহীন মা ছিলেন। নিরঞ্জন নামের এক যুবক যামিনীকে বিবাহের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করেছে। অবস্থার দুর্বিপাকে গল্পকথক গ্রামে মাছ ধরার সূত্রে যামিনীর সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারেন এবং বন্ধু মণির সঙ্গে যামিনীর অসুস্থ মায়ের কাছে গিয়ে নিরঞ্জনের অভিনয় করে মৃতুপথযাত্রীকে কথা দেন যামিনীকে বিবাহ করার।

বক্তা মধ্যবিত্তসুল্ভ মানসিকতায় যামিনীকে বিবাহের কথা বলে শহরে ফিরে আসেন এবং শহরে এসে মধ্যবিত্তসুল্ভ স্বার্থপর মানসিকতায় আবদ্ধ হয়ে যান। তেলেনাপোতা গ্রামের অভাবনীয় অভিজ্ঞতা একটা অলীক স্বপ্নের স্মৃতি হয়ে কথকের চিত্তে জেগে থাকে মাত্র। এর জন্য তার চিত্ত সামান্য কাতর হয় না কিংবা অনুশোচনার দহন দেখা যায় না।  কথকের কাছে এই কথা দেওয়া এবং বিস্মৃতি হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা।

কল্লোলযুগের অন্যতম বা স্বনামধর্মী সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ একটি মানুষের ভ্রমণ বৃত্তান্ত মূলক গল্প। উত্তমপুরুষ রীতিতে ও ভাববাচ্যে রচিত এই গল্পে আবিষ্কার শব্দটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

যা কিছু ছিল তা খুঁজে বের করাকে বলে ‘Discovery’ বা আবিষ্কার, তেমনি যা বাস্তবে নেই তাকে খুঁজে বের করাকেও বলে আবিষ্কার, ইংরাজীতে ‘Invention’ । তেলেনাপোতা বলে সত্যিই কিছু নেই। বাংলাদেশের সব গ্রামেই তেলেনাপোতার মতো প্রতিহীন, স্তব্ধ, দারিদ্রতার মোড়কে মোরা। আর সেখানে শত শত যামিনীরা বুকে ভালোবাসা নিয়ে, চোখে অনন্ত দিশা নিয়ে বেঁচে থাকে।

সেদিক থেকে বিচার করতে গেলে গল্পের নায়কের রোমান্টিক দৃষ্টিতে তেলেনাপোতা আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি অন্যভাবে ভাবি গল্পের নায় ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়ে দুর্বল মুহুর্তে মনে করছেন তেলেনাপোতা বুঝি তার কোনো এক অবাস্তব কুয়াশার একটা ঝলক মাত্র। সেদিক থেকে বিচার করতে গেলে তেলেনাপোতা আবিষ্কার এক অনাবিষ্কৃত জায়গা।

যা আবিষ্কার হয়েও হারিয়ে গেলে বিস্মৃতির অতল গভীরে। সেদিক থেকে এটিকে বলা যেতে পারে Invention। তাই আমরা যেকোনো দিক থেকে যদি বিচার করি ‘আবিষ্কার’ শব্দটি কিন্তু এই গল্পের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী কাজেই গল্পের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামকরণ যথার্থ ও সার্থক।

 


 

২. “কে নিরঞ্জন এলি ?” নিরঞ্জন কে ? কোন পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ ছোটোগল্পে ‘নিরঞ্জন’ চরিত্রটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তেলেনাপোতায় গল্পকথকের বন্ধু মণিদার যে আত্মীয়গৃহে গল্পকথকেরা আশ্রয় নেন, সেই বৃদ্ধা আত্মীয়ার দূরসম্পর্কের বোনপোর নাম নিরঞ্জন। নিরঞ্জনের সঙ্গে ছেলেবেলায় বৃদ্ধা তার কন্যা যামিনীর বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করেছিলেন।

তেলেনাপোতা গল্পকথকের জীবনের এক অবিস্মরনীয় অভিজ্ঞতা। সেখানে মাছ ধরার আকর্ষণে সবন্ধু যান তিনি পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে নিষ্কল হওয়ার পর মণিদার আত্মীয়কন্যা যামিনী তাদের মধ্যাহ্নভোজ পরিবেশনকালে তার মধ্যে অসহায় অস্থিরতা দেখা যায়।

যখন তারা খাওয়া শেষ হবার পর বিশ্রাম করতে যাওয়ার কথা ভাবছে, তখন যামিনী মণিদাকে ডাকে। মণিদা ও যামিনীর কথোপকথনে এক অদ্ভুত করুণ আখ্যান ফুটে ওঠে। পানরসিক বন্ধুটির কাছ থেকে যামিনী ও তার মায়ের পরিচয় জেনে যায় গল্পকথক। যামিনীর মা বর্তমানে বৃদ্ধা, দৃষ্টিহীন এবং পঙ্গু। নিরঞ্জন বলে এক দূরসম্পর্কের বোনপোর সঙ্গে তিনি যামিনীর বিয়ে ঠিক করেন।

বছর চারেক আগেও সে এসে বৃদ্ধাকে বলে যায়, বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে যামিনীকে সে বিয়ে করবে। প্রতিশ্রুতি পেয়ে বৃদ্ধা অজগর পুরীর ভিতর বসে সে আশাতেই দিন গোনেন । কিন্তু বাস্তব হল ছেলেটি মিথ্যাবাদী, ধাপ্পাবাজ। সে বিদেশেই যায়নি কখনও এবং বর্তমানে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছে। কিন্তু বৃদ্ধা সে কথা জানেন না, বলারও কেউ নেই বললেই তার মৃত্যু অনিবার্য। সে পাপের ভাগী কেউ হতে চায় না। তাই অন্যান্যরা তাকে ক্রমাগত মিথ্যা বলে।

ম্যালেরিয়ার নিঃস্ব ও নির্বংশ হওয়ার মতো মুখোমুখি অবস্থায় চরম দারিদ্র্য, অসহায়তা, নিরঞ্জন নামে জনৈক যুবকের কথার খেলাপের ফলে যামিনীর বিয়ে না হওয়া প্রভৃতি নায়ককে আরও বেশি মমত্ব পরায়ণ ও সংবেদনশীল করে তোলে। যে জন্য যামিনীর মায়ের কাছে পানরসিক বন্ধুটির সঙ্গে গল্পকথক হাজির হয়। যামিনীর উপস্থিতিতে গল্পকথক যামিনীর অন্ধ ও শক্তিহীন বৃদ্ধা মায়ের কাছে নিজেকে নিরঞ্জন পরিচয় দিয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফেলে। এই ভাবাবেগে ক্ষণিক হলেও তার চরিত্রের মহত্ত্ব গল্পকথকের অনেক বড়ো হৃদয়ের মানুষ প্রতিপন্ন করে।


 

৩. “মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্যি নেই” একথা কার, কেন মনে  হবে ? এই মনে হওয়ার কারণ কী ? 

কল্লোলযুগের অন্যতম বা স্বনামধর্মী সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক ছোটোগল্প থেকে সংকলিত তেলেনাপোতা আবিষ্কারের নায়ক, শহুরে মানুষটির কথা উদ্ধৃত উক্তির মধ্যে বলা হয়েছে।

গল্পকথক দুই বন্ধুসহ একরাতের জন্য তেলেনাপোতা নামক এক গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে গ্রামের মেয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। ফিরে এসে বেশ কয়েকদিন পর পারিপার্শ্বিক এবং মানসিক স্বপ্রতিবন্ধকতা দূর করে পুনরায় তেলেনাপোতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।

তারপরই তেলেনাপোতার মশা বাহিত ম্যালেরিয়ায় প্রচন্ডভাবে আক্রান্ত হয়ে অনেকদিন ভুগছে। বহুদিনবাদে দীর্ঘ রোগভোগের পর সেরে উঠে অতি দুর্বল দেহ নিয়ে কাঁপা পায়ে বাড়ির বাইরে আলো বাতাসে যখন কথক এসে বসলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, ইতিমধ্যেই তার নিজের অজান্তে দেহ ও মনের অনেক ধোয়া মোছা হয়েছে। তেলেনাপোতার স্মৃতি তার কাছে খুবই ঝাপসা। অস্ত যাওয়া তারার মতো অস্তিত্বহীন। ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন যেমন স্মৃতিতে ঝাপসা হয়ে লোপ পেতে চলে অনেকটা সেরকম।

তেলেনাপোতার ঘটনা তার স্মৃতিতে আর বেঁচে নেই বললেই চলে। তেলেনাপোতা ফিরে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘আমার কথার নড়চড় হবে না, ’ তা ‘কথার কথা’ -র মতো অর্থহীন হয়ে গেছে। ‘আপনার ছিপটিপ যে পড়ে রইল,’ তার জবাবে বলেছিল, ‘থাক না এবারে পারিনি বলে, তেলেনাপোতার মাছ কি বার বার ফাঁকি দিতে পারবে’ ? – তাও বুঝি তার মিথ্যাভাষনে পরিণত হয়েছে। আসলে ‘তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি ছিল’ তা আর তার মনে হয় না। তেলেনাপোতার বাস্তব অস্তিত্বের স্মৃতি তার স্মৃতিপটে যেন মোছা – স্লেট।


 

 ৪. ‘আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃতি হবেন না’ – কোনটি আপনার আসল উদ্দেশ্য ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি সেই উদ্দেশ্য সাধনে কী করলেন ?

কল্লোলযুগের অন্যতম বা স্বনামধর্মী সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘কুড়িয়ে ছড়িয়ে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্রের উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ গল্পকথক তেলেনাপোতা নামক একটি নগণ্য গ্রামে দুই বন্ধুরা সঙ্গে বেড়াতে গেছেন। বেড়ানো উপলক্ষ্য হলেও তাঁর ‘আসল উদ্দেশ্য’ বা মূল লক্ষ্য হল গ্রামের পুকুরে নিজ হাতে মৎস্যশিকার।

‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ এর নায়ক তেলেনাপোতা আসার আসল উদ্দেশ্যের কথা ভুলে যায়নি। সেই আসল উদ্দেশ্য অর্থাৎ মাছ ধরার লোভনীয় কাজটি করার জন্য উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে একসময় মাছ ধরার যাবতীয় উপকরণ নিয়ে পুকুরঘাটে যান। বড়শিতে টোপ লাগিয়ে তা জলে নামিয়ে দেয়। বেলা বাড়ে। নায়ক আনমনা হয়ে পড়ে। পুকুরের পানা ঢেউয়ে সরিয়ে একটি মেয়ে কলশিতে জল ভরে। তার চোখে কৌতূহল, গতিবিধি সলজ্জ আরষ্টতাহীন। সে সোজাসুজি নায়ককে দেখে, ফাতনা লক্ষ করে, মুখ ফিরিয়ে জলভরা কলশি কোমরে তুলে নেয়।

মেয়েটির চেহারায় দারিদ্রের ছাপ। ক্ষীন দীর্ঘ অপুষ্ট শরীর। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে তার শরীর কৈশোর পার হয়ে যৌবনে পা রাখতে পারেনি। কলশি নিয়ে যাওয়ার সময় ফিরে তাকিয়ে যে হঠাৎ বলে যে, নায়ক ছিপে টান দিচ্ছে না কেন। তার কন্ঠ শান্ত, মধুর ও গম্ভীর। নারী কণ্ঠের আকস্মিক চমকে বিহ্বল নায়ল ছিপে টান দিতে ভুলে যায়। ডুবে যাওয়া ফাতনা ভেসে উঠলে নায়ক দেখে বড়শিতে টোপ নেই। অর্থাৎ মাছ টোপ গিলে চলে গেছে। নায়ক লক্ষ করে মেয়েটির শান্ত করুন মুখে দীপ্ত হাসির আভাস। এরপরে পুকুরঘাটের নির্জনতা আর ভঙ্গ না হলেও মৎস্য শিকারি মৎস্য শিকারে ব্যর্থ হয়। এইভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ‘আসল উদ্দেশ্য’ সাধনের আয়োজন বিফলে গেছে।


 

৫. “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পে তেলেনাপোতা গ্রাম যাত্রাপথের বর্ণনা দাও ? 

প্রমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে মহানগরী কলকাতা থেকে অজানা, অনাবিষ্কৃত তেলেনাপোতায় যাত্রাপথের এক অভিনব বর্ণনা বর্ণিত হয়েছে। কলকাতা থেকে ত্রিশ মাইল দূরে তেলেনাপোতা। ভিড়ে ঠাসা ভাসে করে কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে তেলেনাপোতার উদ্দেশ্য যাত্রা করেন গল্পের নায়ক ও তার দুই বন্ধু। ভাদ্রের গরমে, ঘামে, ধুলোয়, চটচটে শরীরে ঘণ্টা দুই পর। তারা বড়ো রাস্তায় নেমে পড়ে।

সূর্য তখন অস্তা চলগামী। চারিদিকে ঘনায়মান অন্ধকার বাস থেকে নেমে একটি জলাশয়ের পাশে অপেক্ষা করতে করতে তিনজন প্রায় অর্ধৈয় হয়ে ওঠার আগেই জঙ্গলের ভিতর থেকে একটি অতি ক্ষুদ্রাকৃতির গোরুরগাড়ি বেরিয়ে আসে তাদের নেওয়ার জন্য। গোরুর গাড়ি দইয়ের ভিতর তিনসঙ্গী কোন মতে মাথা গুঁজে ধীর মন্থর গতিতে এগিয়ে চলে গভীর অরণ্য ভেদ করে। গোরুর গাড়ির গাড়োয়ান মাঝে মাঝে বাঘ তাড়ানোর জন্য ক্যানেস্তারা বাজাবে। ইতিমধ্যে বেশ বড়ো একটি মাঠ অতিক্রম করে যাবে তিনসঙ্গীর গোরুরগাড়ি।

ছাইয়ের মধ্যে বসেই কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের আলোয় গল্পকথক দেখতে পাবেন পথের দুপাশের আবছা আলোয় প্রাচীন অট্টালিকা, ভগ্ন মন্দিরের ভগ্নাবশেষ, মহাকালের সাক্ষ্য এবং ক্ষত চিহ্ন নিয়ে তারা যেন দাঁড়িয়ে আছে। দু- তিনবার বাঁক ঘুরে গোরুর গাড়ি এক জায়গায় এসে থামবে। রাত তখন বেশ এগিয়ে পুকুরের পানা পচা কটু গন্ধ যেন তাদের অভ্যর্থনা জানাবে নতুন তিন আগন্তুককে। রাত্রিবাসের আয়োজন করে দেওয়া হবে বিশাল আয়তনের এক ভগ্ন অট্টালিকায়। এই অট্টালিকা তেলেনাপোতায় অবস্থিত।


 একাদশ শ্রেণীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ  বিষয় আরো পড়ুনঃ


 

Leave a comment