একাদশ শ্রেণী দর্শন | যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি

একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টারের দর্শনশাস্ত্রের  unit-1এর  অন্তর্ভুক্ত  বিষয় – যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ ও আরোহ ( The Nature of logic-Deductive and inductive ) . আজ আলোচনার এই পর্বে , যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর আলোচনা করতে চলেছি ।

পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এই Topic টি  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এই Topic টি থেকে  ছাত্রছাত্রীদের  Total 4 marks-এর উত্তর লিখতে হবে । WBCHSE Class 11 Philosophy- এর ছাত্রছাত্রীদের একেবারে নুতন সিলেবাস অনুযায়ী , The Nature Of Logic Short-Question , আমাদের  আজকের উপস্থাপনা । আশা করি , ছাত্রছাত্রীরা খুব উপকৃত হবে।

সুতরাং একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়-একাদশ শ্রেণী দর্শন | যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর ।  

একাদশ শ্রেণী দর্শন যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর ।  
একাদশ শ্রেণী দর্শন যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর ।

   একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার | দর্শনশাস্ত্র    

যুক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতি- অবরোহ ও আরোহ |

  • সংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তরঃ  

১. ‘Logic’ বা যুক্তি বিজ্ঞান ‘তর্কবিদ্যা’ বলতে কী বোঝ ?

Ans: ভাষার প্রকাশিত চিন্তার বিজ্ঞানকে ‘Logic’ বা ‘তর্কবিদ্যা’ বা ‘যুক্তিবিজ্ঞান’ বলে। ইংরেজি ‘Logic’ শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘Logos’ থেকে। Logos শব্দটির দুটি অর্থ – চিন্তা বা ভাষা। ‘চিন্তা’ এবং ‘ভাষা’ এই শব্দ দুটিকে বোঝাবার জন্য একই শব্দ Logos ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে চিন্তা বলতে অনুমানিক চিন্তা বুঝতে হবে। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে তর্কবিদ্যার যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়, তা হল “তর্কবিদ্যা ভাষায় ব্যক্ত চিন্তাসম্বন্ধীয় বিজ্ঞান।”

২. ‘Argumentযুক্তি কাকে বলে ?

Ans: অনুমানের ভাষায় প্রকাশিত রূপকে যুক্তি বলে। অন্য ভাষায় বলা যায় যুক্তি হল এমন কতকগুলি বাক্য সমষ্টি যে বাক্য সমষ্টির অন্তর্গত একটি বাক্য সত্য বলে দাবি করা যায়। কারণ বাক্যসমষ্টির অন্তর্গত অপর বাক্যগুলি সত্য।

৩. অনুমান কাকে বলে ?

Ans: অনুমান একটি মানসিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা জাগতিক সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হই। যেমন –  দূরে ধোঁয়া দেখে আমরা আগুনের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করি, যদিও সেই আগুন আমরা প্রত্যক্ষভাবে দেখছি না। এখানে অনুমানের মাধ্যমে আগুনের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান সম্ভবপর হয়েছে।

৪. যুক্তির কয়টি অংশ ও কী কী ?

Ans: যুক্তির দুটি অংশ ১. আশ্রয়বাক্য এবং ২. সিদ্ধান্তবাক্য ।

৫. যুক্তি কয়প্রকার ও কী কী ?

Ans: যুক্তি দুই প্রকার অবরোহ যুক্তি (Deductive Argument) এবং আরোহ যুক্তি (Inductive Argument)।

৬. আশ্রয়বাক্য বা যুক্তিবাক্য (Premises) কাকে বলে ?

Ans: যুক্তির অন্তর্গত যে বচন বা বাক্যে বা বাক্যগুলির দ্বারা সিদ্ধান্তের সত্যতা প্রমাণ করা হয় সেই সব বাক্য বা বচন গুলিকে  আশ্রয়বাক্য বলে।

৭. অবরোহ যুক্তি বলতে কী বোঝ?

Ans: যে যুক্তিতে এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি  অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং যার সিদ্ধান্তটি কখনোই আশ্রয়বাক্যের তুলনায় বেশি ব্যাপক হয় না, তাকে অবরোহ যুক্তি বলে।

যেমন –   A  সকল মানুষ হয় মরণশীল।

A  রাম হয় মানুষ।

অথএব,  A  রাম হয় মরণশীল।

৮. আরোহ যুক্তি (Deductive Argument) কাকে বলে ?

Ans: যে যুক্তিতে সিদ্ধান্ত একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে আনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না, সিদ্ধান্তটি আশ্রয় বাক্য থেকে সর্বদা ব্যাপক হয়, তাকে আরোহ যুক্তি বলে।

যেমন – রাম হয় মরণশীল।

যাদব হয় মরণশীল।

মাধব হয় মরণশীল।

কেশব হয় মরণশীল।

অতএব, সকল মানুষ হয় মরণশীল।

৯. অবরোহ ও আরোহ যুক্তির মূল পার্থক্য কী ?

Ans: ১. অবরোহ ও আরোহ যুক্তির মূল পার্থক্য হল অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত আশ্রয় বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়, কিন্তু আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্য ভাবে নিঃসৃত হয় না।

২. অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়। কিন্তু আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত সম্ভব্য হয়।

১০. যুক্তির আকার বলতে কী বোঝো ?

Ans: যুক্তির আকার বলতে যে কাঠামোয় বা ছাঁচে কোনো একটি যুক্তি গঠিত বা প্রকাশিত হয় সেই কাঠামোকে বোঝায়। সংক্ষেপে একাধিক বচন গ্রাহকের প্রতীকী কাঠামোকে যুক্তির আকার বলে।

যেমন –  সকল M হয় P ।

সকল S হয় M ।

অতএব, সকল S হয় P ।

এখানে M -এর জায়গায় ‘মানুষ’, P -এর জায়গায় ‘মরণশীল’ এবং S -এর জায়গায় ‘দার্শনিক’ বসালে নীচের যুক্তিটি পাওয়া যায়।

সকল মানুষ হয় মরণশীল।

সকল দার্শনিক হয় মানুষ।

অতএব,  সকল দার্শনিক হয় মরণশীল।

১১. যুক্তির উপাদান (Matter of Argument) কাকে বলে ?

Ans:    যে কাঠামো বা ভঙ্গিতে বা শৈলীতে যুক্তির আলোচ্য বিষয় বা যুক্তির উপাদান বিন্যস্ত হয় বা প্রকাশিত হয়, তাকে যুক্তির আকার বলে। অর্থাৎ যুক্তির অন্তর্গত বচনগুলি যে ভঙ্গিটি হল যুক্তির আকার।

 ১২. যুক্তির আকার ও উপাদানের মধ্যে পার্থক্য কী ?

Ans:  যুক্তির উপাদান (পদ বা বচন ) যে ভঙ্গিতে বা কাঠামোতে প্রকাশিত হয় তা হল যুক্তির আকার আর যুক্তির আকারে যে প্রকাশিত হয় তা হল যুক্তির উপাদান।

১৩. গ্রাহক কাকে বলে ?

Ans:  যে প্রতীক চিহ্নের স্থানে আমরা যে কোনো পদ বা বচন বসাতে পারি তাকে গ্রাহক বলে। যেমন – p, q, r, s ইত্যাদি গ্রাহক।

১৪. গ্রাহক কয়প্রকার ও কী কী ?

Ans: গ্রাহক প্রধানত চার প্রকার – পদগ্রাহক, বচনগ্রাহক, ব্যক্তিগ্রাহক, ও বিধেয় গ্রাহক।

১৫. পদ গ্রাহক (Term variable) কাকে বলে ? 

Ans:  যুক্তিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বচনের পরিবর্তে যে বর্ণ প্রতীক ব্যবহৃত হয়, তাকে বচন গ্রাহক বলে। যেমন – p, q, r, s ইত্যাদি। ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’ – এখানে মানুষের স্থানে p এবং মরণশীল -এর স্থানে q বসালে p, q কে পদ গ্রাহক বলে।

১৬. বচন গ্রাহক কাকে বলে ?

Ans:  যে প্রতীক চিহ্নের স্থানে আমরা যেকোনো পদ বা বচন বসাতে পারি তাকে বচন গ্রাহক বলে।

যেমন –  যদি রাম আসে, তবে আমি যাব।

         রাম আসে।

       \ আমি যাব।

       যদি X তবে Y ,

       অতএব  X,\ Y,

১৭. ধ্রুবক কাকে বলে ?

Ans:  যুক্তির আকারকে নির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য যেসব প্রতীককে অপরিবর্তিত রাখতে হয়, তাদের বলা হয় ধ্রুবক

১৮. নিবেশন (substitution) বলতে কী বোঝ ?

Ans: কোন কথার পরিবর্তে অন্যকোন কথা বসানই হল নিবেশন। যেমন – p⊃ q এর পরবর্তিএ a⊃ b বসানো মানেই নিবেশন করা হয়।

১৯. নিবেশন দৃষ্টান্ত (substitution instance) বলতে কী বোঝ ?

Ans:  কোন গ্রাহক প্রতিকের পরিবর্তে যদি কোন পদ বা বাক্য বসানো হয় তাহলে তাকে ঐ গ্রাহক প্রতীকের নিকোন দৃষ্টান্ত বলে।

যেমন – p⊃ q (গ্রাহক)

a⊃ b (নিবেশন দৃষ্টান্ত)

 ২০. সত্যতা (Truth) বলতে কী বোঝ ?

Ans: সত্যতা হল বচনের নিজস্ব ধর্ম কারণ, যেসব বাক্য সত্য বা মিথ্যা হতে পারে তাদেরই বচন বলে। যেমন – ‘ঘাস হয় সবুজ’ – এই বাক্যটি বাস্তব সম্মত বলে বাক্যটি সত্য। আবার ‘কুকুর হয় বিড়াল’ – এই বাক্যটি বাস্তব সম্মত নয় বলে বাক্যটি মিথ্যা।

২১. আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত সর্বদাই সম্ভাব্য হয় কেন ?

Ans:  আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যের তুলনায় ব্যাপক হয় বলে আরোহ মুক্তির সিদ্ধান্ত সর্বদাই সম্ভাব্য হয়।

২২. বৈধ (valid) বলতে কী বোঝ ?

Ans:  যে বাক্যের নিষেধ স্ববিরোধী সেই বাক্য বৈধ।

যেমন – p v ~ p →  ~ (p v ~ p) → p . ~ p ।

২৩. বস্তুগত সত্যতা (Material Truth) বলতে কী বোঝ ?

Ans:  চিন্তনীয় বিষয়ের সাথে বাস্তব জগতের সঙ্গতি থাকলে সেই বিষয়টি বস্তুগত দিক থেকে সত্য হয়। যেমন – ‘ ঘাস হয় সবুজ ’।

২৪. আকারগত সত্যতা (Formal Truth) কাকে বলে ? 

Ans:  কোন বিষয় চিন্তা করতে গেলে যদি আমাদের চিন্তার মধ্যে অসঙ্গতি বা স্ববিরোধিতা না দেখা দেয় তাহলে সেই চিন্তনীয় বিষয়ের আকারগত সত্যতা আছে এমন বলতে হবে। যেমন – আকাশকুসুম, পুষ্পবৃষ্টি ইত্যাদি।

২৫. অবরোহ যুক্তিকে আকারগত যুক্তিবিজ্ঞান (Formal Logic) বলা হয় কেন ?

Ans: অবরোহ যুক্তিকে আকারগত যুক্তিবিজ্ঞান বলে কারণ, এই যুক্তিতে যুক্তির বিষয়ের বাস্তবতা বিচার না করে যুক্তির আকারগত দিকের প্রাধান্য দেওয়া হয়।

২৬. অবরোহ যুক্তির প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ ?

Ans: অবরোহ যুক্তির প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্যঃ-  ১. অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।

২. অবরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি কখনই আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হতে পারে না।

২৭. আরোহ যুক্তির প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ ?

Ans: আরোহ যুক্তির প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল-  ১. আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সব সময়ই একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে গৃহীত হয়।

২. আরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র আকারগত সত্যতার দিকেই লক্ষ রাখি না, বস্তুগত সত্যতার দিকেও লক্ষ রাখা হয়।

 ২৮. যুক্তির বৈধতা বলতে কী বোঝ ?

Ans:   কোনো যুক্তি যদি সেই যুক্তির নির্দিষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন না করে, তাহলে যুক্তিটি বৈধ হয়। বৈধ যুক্তির ক্ষেত্রে দুটি বিষয় ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। –

(ক) যুক্তির বৈধতা নির্ভর করে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হচ্ছে কিনা তার উপর। আশ্রয়বাক্য সত্য বলে ধরে নিলে সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করা যায় না। ভিন্ন ভাষায় বলা যায়, বৈধ যুক্তির আশ্রয়বাক্য সত্য এবং সিদ্ধান্ত মিথ্যা এমন হতে পারে না।

(খ) বৈধ যুক্তির বৈধতার ভিত্তিই হল প্রসক্তি সম্বন্ধ বা Relation of implication.


 আরো পড়ুনঃ 

 


 

Leave a comment