পরিবার হল সমাজের ক্ষুদ্রতম একক। একটি শিশুর জীবনে শিক্ষার আলো পরিবার থেকেই হয়। একটি শিশু হাঁটাচলা, অঙ্গসঞ্চালন পরিবারের হাত ধরেই শুরু হয়। কিন্তু পরিবার সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে পরিবারের বিভিন্ন প্রকারভেদ সৃষ্টি হয়।
পরিবারের প্রকারভেদ । পরিবার কত প্রকার
পরিবারের বিভিন্ন প্রকারগুলি হল-
মানব সমাজের একটি শাশ্বত ও ক্ষুদ্রতম সংঘ হলো পরিবার। দেশ, কাল , সামাজিক পরিবেশ ও ঐতিহ্যের পার্থক্যের দরুন পরিবারের আকার ও প্রকৃতি নানারকম হয়। এইসব উপাদানের বিচারে পরিবারের প্রধান কয়েকটি রূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।–
পিতৃ শাসিত ও মাতৃ শাসিত পরিবার
এই ধরনের পরিবার ঠিক করা যায় পারিবারিক কতৃত্ব কার হাতে আছে তা দিয়ে । পরিবারের কতৃত্ব যদি পিতার হাতে থাকে তাহলে এই পরিবারকে পিতৃ শাসিত পরিবার বলতে পারবো ।
অন্যদিকে পরিবারের কতৃত্ব যদি স্ত্রী বা নারীর হাতে থাকে তাহলে সেই পরিবারকে বলা হয় মাতৃশাসিত পরিবার। সাধারণভাবে আধুনিক সমাজে পরিবার গুলি মূলত পিতৃশাসিত । কিন্তু আদিম সমাজে এবং এখনও উত্তরপূর্ব ভারতে কিছু আদিবাসী সমাজে(গাড়ো,ঘাসিয়া) এর মধ্যে মাতৃ শাসিত পরিবার লক্ষ্য করা যায়।
একগামি ও বহুগামি পরিবার
যৌন সম্পর্কের প্রকৃতি অনুযায়ী পরিবারকে একগামি ও বহুগামি এই দুই ভাবে ভাগ করা হয়। একগামি (monogamous) পরিবারে থাকে একজন স্বামী একজন স্ত্রী । সহজ ভাবে বলা যায় একজন পুরুষ একজন নারীকে বিবাহ করে এবং তাকে ভিত্তি করে যে পরিবার গড়ে ওঠে তাকে একগামি পরিবার বলে। এক্ষেত্রে একজন নারীর সঙ্গে একজন পুরুষের যৌন সম্পর্কের স্বাভাবিক অধিকার থাকে ।
অন্যদিকে একজন স্বামী একাধিক পত্নী অথবা একাধিক স্বামী ও একজন পত্নীকে নিয়ে যে পরিবার গড়ে ওঠে তাকে বহুগামি পরিবার বলে। এক্ষত্রে একাধিক নারী পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্কের স্বাভাবিক অধিকার থাকে।
পিতৃ আবাসিক ও মাতৃ আবাসিক পরিবার
বিবাহের পর স্ত্রী যদি তার স্বামীর ঘরে যায় এবং বসবাস করে তাহলে সেই পরিবারের নাম হয় পিতৃ আবাসিক ।এই ধরনের পরিবারে পিতার পরিচয়ে সন্তানের পরিচয় হয় ,তেমনি সন্তান সন্ততি পিত্রালয়ে বসবাস করে।
অপরদিকে বিবাহের পর স্বামী যদি তার স্ত্রী এর মাতৃগৃহে বসবাস করে তাহলে সেই পরিবারের নাম হয় মাতৃআবাসিক ।
মাতৃ বংশানুক্রমিক ও পিতৃ বংশানুক্রমিক পরিবার
বংশানুক্রমের ভিত্তিতে পরিবারকে ২ টি ভাগে ভাগ করা যায় মাতৃ বংশানুক্রমিক ও পিতৃ বংশানুক্রমিক ।
মাতৃকুলের পরিচয়ে যে সন্তান পরিচিত হয় এবং ছেলে মেয়েরা মাতৃকুলের বংশধর রূপে বিবেচিত হয় সেই পরিবারকে বলে মাতৃ বংশানুক্রমিক । এমন পরিবারে কন্যা সন্তান সম্পত্তির অধিকারী হয় অর্থাৎ সম্পত্তির মালিকানা থাকে কন্যা সন্তানের হাতে।
অপরদিকে যেসব সন্তান পিতৃপুরুষের বংশপরিচয়ে পরিচিত হয় তাকে বলে পিতৃ বংশানুক্রমিক পরিবার। এই পরিবারে পুত্র সন্তান সম্পত্তির মালিকানা পায়।
একক ও যৌথ পরিবার
স্বামী স্ত্রী এবং তাদের সন্তান সন্ততি নিয়ে যে পরিবার তা হল একক পরিবার । অপরদিকে মূল পরিবারের সঙ্গে যদি রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে কয়েকটি পরিবার সমষ্টি বদ্ধ হয় তবে তাকে যৌথ পরিবার বলে । যৌথ পরিবারের আকার একক পরিবারের তুলনায় অনেক বেশি । যৌথ পরিবারের একজন সদস্য পুরুষানুক্রমে এই পরিবারে থাকে এবং এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। যৌথ পরিবারে কোন সদস্যের মৃত্যু হলে ধারাবাহিকতার কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনা ।
আধুনিক সমাজের শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিবিদ্যা ও নগরায়নের প্রভাবে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে গিয়ে একক পরিবার গড়ে উঠছে। যৌথ পরিবারে ব্যক্তিগত ও সামাজিক মুল্যবোধ ছিল প্রবল কিন্তু একক পরিবারে তা নেই ।এর ফলে সামাজিক জীবনে জন্ম নিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা যা সামাজিক পরিবেশকে দুষিত করে তুলছে।
Thanks For Reading: পরিবারের প্রকারভেদ । পরিবার কত প্রকার
প্রশ্ন -উত্তর
১.বৈবাহিক সূত্রের ভিত্তিতে পরিবার কত প্রকার
উত্তর –বৈবাহিক সূত্রের ভিত্তিতে পরিবার তিন প্রকার ।যথা-
- বহির্গোত্র পরিবার
- অন্তর্গোত্র পরিবার
- উভয়র্গোত্র পরিবার
২.ভারতে যৌথ পরিবার কি?
উত্তর-মূল পরিবারের সঙ্গে যদি রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে কয়েকটি পরিবার সমষ্টি বদ্ধ হয় তবে তাকে যৌথ পরিবার বলে ।
৩.একক পরিবার কাকে বলে?
উত্তর –স্বামী স্ত্রী এবং তাদের সন্তান সন্ততি নিয়ে যে পরিবার তা হল একক পরিবার ।
আরো পড়ুন –
লক কিভাবে মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্য করেছেন
আকার ও উপাদান সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের বক্তব্য
অ্যারিস্টটলের কার্যকারণ তত্ত্ব
জৈনদের অনেকান্তবাদ সমালোচনা সহ ব্যাখ্যা করো
চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?
ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ
পরিবার কাকে বলে | পরিবারের বৈশিষ্ট্য