শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান

রামমোহন রায় একজন সমাজ সংস্কারক। সামাজিক কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন । ভারতে সামাজিক ও শিক্ষাগত সংস্কার প্রচারের জন্য তিনি কয়েকটি সভা ও সমিতির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রামমোহন রায়কে  ভারতীয় শিক্ষার প্রথম পথিকৃৎ বলা হয় । আজ আমাদের আলোচনায় ভারতের শিক্ষা ক্ষেত্রে মহান মনিষী রামমোহন রায়ের অবদান সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব।

যা Class 11 Education/ B.A Education Honours/ B.A Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছ তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Education -এর প্রয়োজনীয় সব Notes তোমরা এই পেজে পাবে ।

আমরা সহজ ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বরূপ বিষয়গুলি উপস্থাপন করে থাকি । যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক হবে ,বলেই আশা রাখি । আলোচনার এই পর্বের আলোচ্য বিষয়ঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো | 

শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা |
শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা |

 

শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো |   

শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদানঃ   

ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের জন্য রাজা রামমোহন -এর নাম ভারতের ইতিহাসে যেমন বিশেষ ভাবে প্রসিদ্ধ, তেমনই শিক্ষা ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান কম নয়। ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি যে সব বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন সেগুলি সংক্ষেপে বর্ণ্না করা হল –

(i) প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয়ঃ  

হিন্দুদের মধ্যে রাজা রামমোহনই প্রথম বুঝেছিলেন যে ভারতের সত্যিকারের উন্নতি নির্ভর করছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয়ের উপর তিনি পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে যা কিছু মূল্যবান তাক আহরণ করে নিজের দেশের সংস্কৃতির ভান্ডারকে পুষ্ট ও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

(ii) ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য সাহিত্যের শিক্ষাঃ 

তাঁর এই শিক্ষা পরিকল্পনাকে বাস্তবের রূপ দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ রূপে তিনি ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করেন। তিনি প্রাচ্য শিক্ষায় পন্ডিত হয়েও, তিনি বুঝেছিলেন যে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য চর্চা করলে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীর যেমন পরিচয় ঘটে, তেমনই মনে নতুন ধ্যান ধারণা জেগে উঠতে পারে। এই কারণে তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন যে নতুন করে আর যেন প্রাচ্য শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা না হয়।

(iii) দেশীয় সংস্কৃতিকে পাশ্চাত্যে পৌঁছে দেওয়াঃ 

রামমোহন রায় কেবল যে ভারতের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতকে পরিচিত করেছিলেন তা নয়, পাশ্চাত্যের সঙ্গে ভারতকে পরিচিত করার ভূমিকাটিও তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর যুক্তিবাদী চিন্তা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি , ভাষার দক্ষতা, অনাবদ্ধ সাহিত্য সৃষ্টি ভারতবর্ষ সম্পর্কে পাশ্চাত্যের মনোভাবকে পরিবর্তন করেছিল। এই কারণে রামমোহন রায়কে ইংল্যান্ডে প্রথম ভারতীয় সাংস্কৃতিক দূত বলা হয়।

(iv) ভারতীয় ভাষাচর্চা ও উন্নয়নঃ 

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিলেও তিনি ভারতীয় ছাত্রদের জন্য নিজে বাংলা ভাষায় ব্যাকরণ, ভূগোল, জ্যোর্তিবিদ্যা, জ্যামিতি প্রভৃতি বিষয়ে বই লেখেন।

(v) ভারতীয়দের বিজ্ঞানের অবদানঃ

রাজা রামমোহন রায় বুঝেছিলেন যে, ভারতীয়দের উন্নয়নের জন্য সংস্কৃত, আরবি, ফারসি নয়, ইংরেজি ও বিজ্ঞান এই দুইয়ের প্রসার ঘটাতে হবে। এই জন্যই তিনি চেয়েছিলেন যে অবিলম্বে বিদ্যালয় গুলিতে গণিত, দর্শন, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, অস্থিবিদ্যা প্রভৃতি শেখানো হোক।

(vi) স্ত্রী শিক্ষার প্রসারঃ 

মিশনারিরা স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের পথ প্রদর্শক হলেও ভারতবর্ষে স্ত্রী শিক্ষার বিস্তারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে নারীদের শিক্ষা দেওয়া ধর্ম বিরোধী নয়। এ বিষয়ে তাঁর ‘ব্রাহ্মসমাজের’ অবদান অর্নস্বীকার্য।

(vii) হিন্দু কলেজ স্থাপনঃ

ডেভিড হেয়ার যখন হিন্দু কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা  উপস্থাপিত করেছিলেন তখন তিনি উৎসাহের সাথে তাঁর সঙ্গে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু পরে এই কলেজ স্থাপনের ব্যাপারে তিনি যুক্ত থাকতে পারেননি, কারণ গোঁড়া হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী ভারতীয়রা তাঁর যুক্তিবাদী মতবাদকে কটাক্ষ করেছিল।

(viii) ইংরেজি হাইস্কুল স্থাপনঃ

রামমোহন ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্য ১৮২২ খ্রিঃ ‘ইউনিটেরিয়ান অ্যাসোসিয়েসনের পরিচালনায় ইঙ্গো বৈদিক স্কুল‘ নামে একটি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এই বিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষার সঙ্গে বাংলা ভাষায় ইউফ্লিড, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, যন্ত্রবিজ্ঞান প্রভৃতি পাশ্চাত্য বিজ্ঞান পড়ানো হত।

(xi) বাংলা সদ্য সাহিত্যের উন্নয়নঃ

সংস্কৃত নির্ভর বাংলা গদ্যকে বাংলা ভাষায় রচনা করে তিনি বাংলা গদ্যের গুরুত্ব অনেকখানি বৃদ্ধি করেছিলেন। ১৮১৫ খ্রিঃ তিনি তার প্রথম গদ্য গ্রন্থ ‘বেদান্ত গ্রন্থ’ প্রকাশ করেন। ১৮৩৩ খ্রিঃ ‘গোড়ীয় ব্যাকরণ’ নামে ব্যাকরণ বই প্রকাশ করেন।

(x) পত্র পত্রিকার উন্নয়ন সাংবাদিকতার সূচনাঃ 

রামমোহন রায়ের নব – জাগরণ আন্দোলনের প্রথম ও প্রধান হাতিয়ারই ছিল সংবাদ মাধ্যম। ১৮২০ সালে কলকাতা থেকে ‘সংবাদ কৌমুদি’ নামে একটি বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তিনি এর সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া ‘সংবাদ দর্পণ’ নামেও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রচলন করেছিলেন।

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর প্রাণবন্ধ সহজ সরল যুক্তিসিদ্ধ বিজ্ঞান ভিত্তিক মতবাদ বাঙালী তথা ভারতীয়দের মধ্যে এক অসম্ভব চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।


আরো পড়ুনঃ


 প্রশ্নউত্তর  

১. ভারতের রেনেসাঁর জনক বা নবজাগরণের অগ্রদূত কাকে বলা হয় ?

উত্তরঃ ভারতের রেনেসাঁর জনক বা নবজাগরণের অগ্রদূত বলা হয় রাজা রামমোহন রায়কে ।

২. আধুনিক ভারতের জনক কে ?

উত্তরঃ রাজা রামমোহন রায়কে আধুনিক ভারতের জনক বলা হয়  ।


 

Leave a comment