আধুনিক ভারতের সরকারিভাবে প্রথম শিক্ষা কমিশন, যা সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো। B.A Education-এর আজকের পর্বে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি ।
Class 11 Education/ B.A Education Honours/ B.A Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছ তাদের জন্য এই পোস্টগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন।Education -এর প্রয়োজনীয় সব Notes তোমরা এই পেজে পাবে ।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো | আমরা সহজ ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বরূপ বিষয় গুলি উপস্থাপন করে থাকি । যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক হবে ,বলেই আশা রাখি । আলোচনার এই পর্বের আলোচ্য বিষয়ঃ সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো ।

শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো |
যুদ্ধ পরবর্তীকালে পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ ১৯৪৪ খ্রীঃ ভারতবর্ষের জাতীয় শিক্ষার একটি পরিকল্পনা তৎকালীন গর্ভনর জেনারেলের নিকট জমা দেয়। স্যার জন সার্জেন্ট ছিলেন তৎকালীন ভারতের সরকারী উপদেষ্টা। শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিকে কেন্দ্র করে যে বিবৃতি সার্জেন্ট পরিকল্পনায় প্রকাশ হয়েছে তা হল –
সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ গুলি হলঃ
(i) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাঃ
রিপোর্ট প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষার সময় সীমাকে ৩ -৬ বছর বয়সের মধ্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে প্রাক্ – প্রাথমিক শিক্ষাকে বুনিয়াদী বা প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সুবিন্যস্ত করতে হবে। এই স্তরের শিক্ষা হবে অবৈতনিক। এই স্তরে শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিশুদের সামাজিক অভিজ্ঞতা প্রদান করা।
(ii) বুনিয়াদী বা প্রাথমিক শিক্ষাঃ
প্রাথমিক শিক্ষা হবে ৬ -১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এবং হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক। এই শিক্ষাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় জুনিয়ার বেসিক (৬- ১১ বছর) এবং সিনিয়র বেসিক ( ১১-১৪ বছর বয়স)। এই স্তরের শিক্ষা স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে হাতের কাজের উপর ভিত্তি করে রচনা করতে হবে।
(iii) উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাঃ
উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজ হল যোগ্য শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগী করে তোলা, শিক্ষার্থীরা যাতে পেশামূলক জীবনে প্রবেশ করতে পারে সেই দিকে সহায়তা করা। এই বিদ্যালয়ের কাজ হবে যারা ক্ষমতাগত দিক থেকে অক্ষম সেইসব শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্দ্ধতিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
উচ্চ বিদ্যালয় দু- ধরনের হবে (ক) অ্যাকাডেমিক ও (খ) টেকনিক্যাল। অ্যাকাডেমিক হাইস্কুল বিজ্ঞান কলা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হবে। অপর দিকে টেকনিক্যাল হাইস্কুলে শিল্প, বাণিজ্য প্রয়োগ মূলক বিজ্ঞান প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হবে।
(iv) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাঃ
সার্জেন্ট রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার যে সুপারিশ করা হয়েছে তা হল।- (ক) গরীব শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। (খ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার নূন্যতম সময়সীমা হবে ৩ বছর। (গ) স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। (ঘ) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্য প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় আনার জন্য একটি সর্বভারতীয় সংস্থা স্থাপন করতে হবে। যেমন – UGC ( University Grants Commission) ।
(v) বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষাঃ
ভারতীয় কলা শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রয়োজন অনুযায়ী সমস্ত কর্মীদের কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়। যেমন – (ক) মুখ্য কার্য নির্বাহক এবং গবেষণাকর্মীক (খ) কনিষ্ঠ কার্য নির্বাহক, ফোরম্যান, শ্রমিক সর্দার। (গ) দক্ষ হস্ত শিল্পী, (ঘ) অদক্ষ শ্রমিক।
(vi) বয়স্ক শিক্ষাঃ
সার্জেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রের প্রতিটি সদস্যকে যোগ্য ও সক্রিয় নাগরিক রূপে গড়ে তোলা। বয়স্ক শিক্ষার অন্তর্গত হবে ১০+ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। বয়স্ক শিক্ষাকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য ছবি, ম্যাজিক লন্টন, রেডিও, চলচিত্ত, লোকনিত্য, সঙ্গিত ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
(vii) শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণঃ
রিপোর্ট বলা হয়েছে জুনিয়র বেসিক স্কুলে প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য সিনিয়র বেসিক স্কুলে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। স্নাতক নয় এমন শিক্ষকরা ২ বছরের প্রশিক্ষণ নেবেন এবং স্নাতক শিক্ষকেরা এক বছরের প্রশিক্ষণ নেবেন।
(viii) বিশেষ শিক্ষাঃ
দৈহিক প্রতিবন্ধী ও মানসিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বিশেষ শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
(ix) এমপ্লয়মেন্ট ব্যুরো স্থাপনঃ
রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে সকল শিক্ষার্থীরা শিক্ষা শেষ করবে তাদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট ব্যুরো স্থাপন করতে হবে।
(x) প্রশাসনঃ
জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে অধিক সমন্বয়ের প্রয়োজন। 1944 সালে সাজেন্ট পরিকল্পনার সুপারিশগুলি গ্রহণ করে স্বাধীন ভারতবর্ষের শিক্ষামূলক বিকাশ ঘটে। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে সাজেন্ট পরিকল্পনা প্রভাব অতি স্পষ্ট এবং এই পরিকল্পনার দৃষ্টিভঙ্গি যে ব্যাপক ছিল তাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. সার্জেন্ট কমিটি কবে গঠিত হয় ?
উত্তরঃ সার্জেন্ট কমিটি 1944 সালে গঠিত হয় ।
২. সার্জেন্ট পরিকল্পনা কী ?
উত্তরঃ যুদ্ধ পরবর্তীকালে পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ ১৯৪৪ খ্রীঃ ভারতবর্ষের জাতীয় শিক্ষার একটি পরিকল্পনা তৎকালীন গর্ভনর জেনারেলের নিকট জমা দেয়। স্যার জন সার্জেন্ট ছিলেন তৎকালীন ভারতের সরকারী উপদেষ্টা।এই পরিকল্পনাকে সার্জেন্ট পরিকল্পনা বলে।
৩. সার্জেন্ট প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলো কি কি ?
উত্তরঃ i) রিপোর্ট প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষার সময় সীমাকে ৩ -৬ বছর বয়সের মধ্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
ii) প্রাথমিক শিক্ষা হবে ৬ -১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এবং হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক।
iii) দৈহিক প্রতিবন্ধী ও মানসিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বিশেষ শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
৪. সার্জেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান কে ছিলেন ?
উত্তরঃ স্যার জন সার্জেন্ট সার্জেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ।
৫. সার্জেন্ট প্ল্যান কে কবে করেছিলেন ?
উত্তরঃ 1944 সালে স্যার জন সার্জেন্ট , সার্জেন্ট কমিটি গঠন করেন ।
আরো পড়ুনঃ
- শিক্ষাকে সামাজিক প্রক্রিয়া বলা হয় কেন |B.A Education
- বুনিয়াদি শিক্ষার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো |B.A Education
- নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো | B.A Education
- উডের ডেসপ্যাচ কি | এর সুপারিশগুলি কি কি ও এর গুরুত্ব আলোচনা করো | B.A Education
- প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো | B.A Education