পাশ্চাত্য দর্শন প্রধানত তিনটি শাখায় বিভিক্ত যথা- ১. অধিবিদ্যা ২. জ্ঞানবিদ্যা ও ৩. নন্দনবিদ্যা। দর্শন আলোচনার এই পর্বের বিষয় হল-কার্যকারণ সম্পর্কে প্রশক্তি তত্ত্ব ও তাঁর সমালোচনা | এটি পাশ্চাত্য দর্শন শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
কার্যকারণ সম্পর্কে প্রসক্তি তত্ত্ব ও তার সমালোচনা |
entailment theory of causality with Criticism
প্রসক্তি তত্ত্ব বা সম্বন্ধ কিঃ
প্রশক্তি একপ্রকার যৌক্তিক সম্বন্ধ। একটি বৈধ অবরোহ যুক্তির আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্ত বাক্যের মধ্যে যে আবশ্যিক সম্বন্ধ থাকে তাকে প্রসক্তি সম্বন্ধ বলে। যেমন –
সকল মানুষ হয় মরণশীল।
রাম হয় মানুষ
রাম হয় মরণশীল ।
উপরিউক্ত যুক্তিটি একটি বৈধ আরোহী যুক্তী। এর আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্ত বাক্যের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ রয়েছে কারণ সিদ্ধান্তটি আশ্রয় বাক্য থেকে অনিবার্য ভাবে এসেছে। এবং হেতু বাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্ত মিথ্যা হতে পারে না।
বুদ্ধিবাদী দার্শনিক গুণ যুক্তি বিজ্ঞানের প্রসক্তি সম্বন্ধকে স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন ,যুক্তিবাক্যের প্রসক্তি সম্বন্ধের মতো প্রকৃতির রাজ্যে দুটি ঘটনার মধ্যে এই রকম সম্বন্ধ থাকে।
অর্থাৎ, কার্যকারণের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ থাকে। এই মতবাদের প্রবক্তারা হলেন বুদ্ধিবাদী দার্শনিক ফ্রেড্, ডেকার্ত, ব্লানসর্ড ইউয়িং প্রমুখও দার্শনিকগন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক জন লকও কারণ ও কার্যের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধকে সমর্থন করেছেন।
বুদ্ধিবাদী দার্শনিকজ্ঞান বিজ্ঞানের মতবাদকে অনুসরণ করে বলেছেন, কারণ হল একশক্তি, কার্য হল তার উৎপন্ন ফল। যেমন – জন পান করলে তৃষ্ণা নিবারণ হয়। এখানে জলপান হল কারণ এবং তৃষ্ণা নিবারণ হল কার্য।
জল পান করা ও তৃষ্ণা নিবারন এর মধ্যে আবশ্যিক ও অনিবার্য সম্পর্ক রয়েছে। জলের মধ্যে এমন শক্তি আছে যা কার্য উৎপন্ন করে। এই জন্য বুদ্ধিবাদী দার্শনিকগন বলেছেন কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক সম্বন্ধ রয়েছে।
প্রসক্তি তত্ত্বের সম্বন্ধ সমর্থনে ইউয়িং প্রদত্ত যুক্তিঃ
প্রথম যুক্তিঃ
আবরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা যেমন হেতু বাক্যে সিদ্ধান্তকে সঠিক ভাবে অনুমান করতে পারি, তেমনি কারণ থেকে কার্য কেউ অনুমান করতে পারি। কারণকে যে বাক্যে বর্ণনা করা হয়, সেই বাক্যটি হেতু বাক্যের মতো কাজ করে, আর কার্যকে যে বাক্যের বর্ণনা করা হয় সেটি সিদ্ধান্ত বাক্য।
কাজেই হেতু বাক্য ও সিদ্ধান্ত – এর মধ্যে যে আবশ্যিক সম্বন্ধ থাকে , কার্য ও কারণের মধ্যে সেই একই সম্বন্ধ থাকে। ইউয়িং বলেছেন তবে কারণ ও কার্যের মধ্যে এই আবশ্যিক সম্বন্ধ না থাকত তাহলে কারণ ও কার্যকে কখনোই অনুমান করা যেত না।
দ্বিতীয় যুক্তিঃ
কারণ ও কার্যের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই, আছে কেবল দুটি ঘটনার সততা সংযোগ , – একথা বললে কার্য ও কারণের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ হল কার্যের হেতু, আর কারণ যদি কার্যের হেতু হয় তাহলে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে কারণ ও কার্যের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ আছে।
বুদ্ধিবাদীরা কারণ ও কার্যের সম্বন্ধ প্রসক্তি সম্বন্ধ না বলে প্রসক্তি সদৃশ সম্বন্ধ বলেছেন কারণ যুক্তিবিজ্ঞানে হেতুবাক্য সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধের ক্ষেত্রে কোনো কালিক ব্যবধান থাকে না । কিন্তু কার্য কারণের মধ্যে কালিক ব্যবধান থাকে। যেহেতু কারণ কার্যের পূর্বগামী হয়।
সমালোচনাঃ
প্রথমতঃ
মনো জগতে দেখা যায় কারণ ও কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে একথা ঠিক যে, হাততোলার ইচ্ছা হলে সর্বদা হাত ওঠে না। তাই ইচ্ছা এখানে হাত ওঠার আবশ্যিক শর্ত। আবশ্যিক কার্য রূপে যখন কার্যকে ঘটায় তখন কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক সম্বন্ধ স্বীকার করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ
হিউমের মতে কারণ ও কার্যের আবশ্যিক সম্বন্ধের জ্ঞান অভিজ্ঞতা লব্ধ নয় কিন্তু বিরোধীরা বলেন। অভিজ্ঞতাই একমাত্র পথ নয়, বুদ্ধি ও জ্ঞানের মাধ্যম তাই দার্শনিক কান্ট বলেছেন – “ অভিজ্ঞতার কার্য ও কারণের ধারণা আসে না, পূর্ব থেকে মনে কার্য কারণের ধারণা আছে বলেই অভিজ্ঞতা হয়। ”
আরো পড়ুনঃ
- স্বতঃমূল্য সম্পর্কে G.E MOORE-এর তত্ত্ব
- পরিবেশ নীতিবিদ্যা | স্বতঃমূল্য ও পরতমূল্যে
- অধিবিদ্যা কী | অধিবিদ্যার প্রকৃতি আলোচনা করো
- আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি উক্তিটি ব্যাখ্যা করো
- ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ
- বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল গুলি কি কি ।
- চরম স্বচ্ছলতার কি নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে|
- দ্রব্য কি ? দ্রব্য সম্পর্কে বুদ্ধিবাদীদের অভিমত |
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. প্রসক্তি সম্বন্ধ কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রশক্তি একপ্রকার যৌক্তিক সম্বন্ধ। একটি বৈধ অবরোহ যুক্তির আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্ত বাক্যের মধ্যে যে আবশ্যিক সম্বন্ধ থাকে তাকে প্রশক্তি সম্বন্ধ বলে।
২. প্রসক্তি তত্ত্বের প্রবক্তা কে ?
উত্তরঃ প্রসক্তি তত্ত্বের প্রবক্তা ইউয়িং।