বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল কি কি ও তার মূল্য

বৌদ্ধ ধর্মে চতুর্থ আর্যসত্যে গৌতম বুদ্ধ পঞ্চশীলের উল্লেখ পূর্বক তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ ও মূল্যের কথা বলেছেন। আমরা আজকের আলোচনা পর্বে প্রথমে আলোচনা করব বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল গুলি কি কি এবং তার পরে দেখব পঞ্চশীলের মূল্য কি।

বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল কি কি
বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল কি কি

 

বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল কি কি | Panchsheel Of Dudhist Philosophy

 

বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল কি

‘শীল’ কথার অপর নাম হল ‘বিরতি’। শীল কথার অর্থ হল সৎ-আচরণ অর্থাৎ দেহের সৎ-আচরণ ও মনের সৎ-সংকল্প। ‘শীল’ কথাটির মধ্যে নিহিত রয়েছে  –

1) সঠিক ও যথার্থ ইচ্ছা বা নির্বাচন, যার পরিভাষিক নাম হল চেতনা।

2) কায়, মন ও বাক্যে  পাপ থেকে বিরত থাকো।

3) মানষিক সংযম বা সংবর।

4) মানষিক অবস্থা।

মানুষের জীবনে ঐক্য বা সংহতি ও শান্তির জন্য গৌতম বুদ্ধ কতকগুলি বিশেষ আচরণবিধী অনুসরণ বা পালনের কথা বলেছিলেন। এই বিধিগুলি ব্রত বা শপতের আকারে ঘটিত হয়েছিল।  এই বিধিগুলি বৌদ্ধদের কাছে পঞ্চশীল নামে পরিচিত। বুদ্ধদেব তার অর্যাসত্য চতুষ্টয়ের চতুর্থ আর্যসত্যে অর্থাৎ দুঃখ নিরোধ মার্গে পঞ্চশীলের উল্লেখ করেছেন। অষ্টাঙ্গিক মার্গের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ এই পাঁচটি মার্গকে একত্রে বলা হয় পঞ্চশীল।

বাংলা ‘শীল’ শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বভাব, চরিত্র, নিয়ম, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, আদর্শ জীবনগঠনের উপায়,ও অন্যের প্রতি সৎ ব্যবহার । প্রকৃতপক্ষে, চরিত্রগঠনের নিয়মাবলীকে ‘শীল’ বলা হয়। জ্ঞানী ব্যক্তিরা শীলে প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ তারা জীবনে শীলকে প্রতিষ্ঠা করে ও জীবনে তার প্রয়োগ গটায়।  যে ব্যক্তি  শীলে প্রতিষ্ঠিত তাদেরকে শীলবান বলা হয়। সুতরাং শীল হল শৃঙ্খলাপূর্ণ সৎ জীবনযাপনের জন্য কিছু পালনীয় নীতিমালা।

বুদ্ধদেব বর্নিত পঞ্চশিল গুলি হল 

i) আমি নিজে এই শপথ গ্রহণ করছি যে, জীবন্ত কোনো প্রানীকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকব।

ii) আমি নিজে এই শপথ গ্রহণ করছি য্‌ কোনো বিষয়, যা আমাকে দেওয়া হয়নি তা থেকে নিজেকে বিরত রাখব।

iii) আমি নিজে এই শপথ করছি যে, নিজের ইন্দ্রিয় শক্তি চারিতার্থ করার জন্য কোনো মন্দ আচরণ থেকে বিরত থাকব।

iv) আমি নিজেকে মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার শপথ করছি।

v) আমি নিজেকে মদ্যপান বা নেশাদ্রব্য , ঔষধ পান এবং যে সব বিষয় বিভ্রান্তি ও অমনোযোগীতার সৃষ্টি করে তার থেকে আমি নিজেকে বিরত রাখার শপথ করছি।

যে সকল সংসারী মানুষ আরও উচ্চপর্যায়ে উন্নীত হতে চায় তাদের জন্য বুদ্ধদেব আরও তিনটি শীল পালনের কথা বলেছেন –

i) আত্ম সংযম অভ্যাসের জন্য অসময়ে খাদ্য গ্রহণ করবে না।

ii) উত্তেজক আনন্দ যথা নাচ, গান, ইত্যাদি থেকে এবং বিলাসীতা থেকে যথা স্বর্ন, অলংকার, শয্যা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে।

iii) দুর্জনের সেবা না করে, সজ্জনের সেবা করিবে এবং কুজ্জ ব্যক্তিদের পূজা করবে।

 

উপরিউক্ত শীল গুলি একমাত্র সংসারী মানুষের পালনীয়। মটবাসী সন্ন্যাসীদের জন্য বুদ্ধদেব আরও দুটি কঠোর শীলের উল্লেখ করেছেন-

i) আরামপদ নরম শয্যা পরিহার করে কঠিন কাঠের আসনে শয়ন করতে হবে।

ii) সংসারী ভোগ বিলাস বর্জন করে দীন দরিদ্রের সঙ্গে নিরাম্বর জীবন যাপন করতে হবে।

বৌদ্ধ নীতি শাস্ত্রে অসংখ্য শীলের উল্লেখ থাকলেও প্রথোমক্ত পাঁচটি শীলকে পঞ্চশীল নামে অভিহিত করা হয়।

পঞ্চশীলনের মূল লক্ষ্য

বৌদ্ধ নীতি শাস্ত্রে শীল হল সৎ চরিত্র গঠনের পথ বা মার্গ। মানুষের মনে আহোরহ কলুষ ভাবের সঞ্চার হয়। মনকে কলুষ মুক্ত করার জন্যই একান্ত ভাবে শীল পালনীয়। বুদ্ধ দেব প্রবর্তিত পঞ্চশীলনের মূল লক্ষ্য হল মানব জীবনকে মৈত্রী ভাবনায়, প্রেম ভালোবাসায় প্রসারিত করে নিজচিত্তকে বিশ্বময় পরিব্যপ্ত করে মুক্তি লাভ করা। গৌতম বুদ্ধের একান্ত অনুরাগী রবীন্দ্রনাথ বৌদ্ধ ধর্মের শীলের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং বিশেষ করে পঞ্চশীলের লক্ষ্য প্রসঙ্গে বলেছেন – “শীল গ্রহণ করাই মুক্তি পথের পাথেয় গ্রহণ করা।”

এই শীল অনুশীলনের দ্বারা মানুষের চরিত্র গড়ে ওঠে, অন্তর ও বাহ্যিক আচরণ শুদ্ধ হয় তাই বৌদ্ধ নীতি শাস্ত্রে শীল সাধনার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

Thanks for Reading:- বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল কি কি।


Read More:


 

Leave a comment