মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের লেখা মহাভারত, দ্বিতীয় জাতীয় মহাকাব্য । বলা হয় যে- মহাভারত কথাটির অর্থ ভরত বংশের মহান উপাখ্যান । এই মহাভারতের মূল বিষয়বস্তু কৌরব ও পাণ্ডবদের বিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঘটনাবলি। মহাভারতের বিশালতা বোঝাতে বাংলায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে – “যা নেই ভারতে , তা নেই মহাভারতে ” অর্থাৎ যা মহাভারতের গল্পে পাওয়া যায় না , তা পুরো সংসারে কোথাও পাওয়া যাবে না ।
মহাভারত রচনা সঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা নির্ণয় করা সহজ সাধ্যব্যাপার নয় । মহাভারতের রচনাকাল সম্বন্ধে নানা মত পার্থক্য রয়েছে । আজ এই পর্বে আমরা মহাভারতের রচনাকাল সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি ।
মহাভারতের রচনাকাল সম্পর্কে আলোচনা করো |
Discuss the period of writing of Mahabharata |
মহাভারত হল দ্বিতীয় জাতীয় মহাকাব্য। এর রচয়িতা হলেন মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীন গ্রন্থগুলির কাল নির্ণয়ের মতো মহাভারতেরও রচনা কাল নির্ণয় করা খুব সহজ সাধ্যব্যাপার নয়। তার প্রধান কারণ হল এই এতগুলো শ্লোক একসঙ্গে একজনের দ্বারা লিখিত হয়েছে কিনা তা বিচার করা দরকার।
পাশ্চাত্য পণ্ডিত ভিন্টার নিৎস বলেন যে, এই সমগ্র মহাভারত একজনের লেখা কখনই হতে পারে না এবং একজনের জীবদ্দশাতেও সম্ভব নয়। এ বিষয়ে গ্রন্থের মধ্যে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। সমস্ত পূর্বের ভাষা, রচনাশৈলী , এবং বক্তব্য বিষয় এক নয়। ম্যানডোনাল, ওয়েবার এবং অধ্যাপক ভিন্টার নিৎস গবেষণা করে তিনটি স্তর বা পর্যায় নির্ণয় করেছেন। এই তিনটি স্তর হল –
(i) প্রথম স্তর বা সৌত রচনা (জয়):
এই পর্যায়ে কেবল কুরু পান্ডবদের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাজাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধবিগ্রহের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, এটি মূল মহাভারত এবং জয় নামে পরিচিত। এই স্তরে শ্লোক সংখ্যা ৮ , ৮০০ । মহাভারতে আদি পূর্বে বলা হয়েছে – “অষ্টেী শ্লোক সহস্রাণি অষ্টেী শ্লোক শতানি চ। ” এই স্তরের রচনাকাল হল – অনুমানিক ৭০০ থেকে ৫০০ খ্রীঃপূর্বে।
(ii) দ্বিতীয় স্তর বা ব্রাক্ষন্য রচনা (ভারত সংহিতা):
এই স্তরে দেবগণের কাহিনী , সৃষ্টি , স্থিতি – লয়ের নানা গল্প , রাজনীতি , ধর্মনীতি বিষয়ক উপাখ্যান , আখ্যান যেমন – দুষ্মন্ত – শকুন্তলার উপাখ্যান, নল, দময়ন্তী, সমুদ্র মন্থনের উপাখ্যান প্রভৃতি। এই স্তরে শ্লোক সংখ্যা ২৪০০০। এই স্তরের নাম ‘ভারত সংহিতা’। মহাভারতের আদিপর্বে বলা হয়েছে “ চর্তুবিংশতি সাহস্রী চক্রে ভারতসংহিতায়তাম্ ” রচনাকাল আনুমানিক ৫০০ থেকে ২০০ খ্রীঃ পূর্ব।
(iii) তৃতীয় স্তর বা শ্রমনগণের রচনা (মহাভারত):
তৃতীয় স্তরের রচনা ভিক্ষু বা শ্রমনগণের রচনা। এই স্তরে আরো কাহিনী, দার্শনিক তত্ত্ব, ধর্ম ও নীতি উপদেশের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে, মহাভারত আঠারোটি পর্বে এক লক্ষ শ্লোকের সম্মনিত বিশাল গ্রন্থে পরিণত হয়েছে । তাই মহাভারতে বলা হয়েছে “একং শতসহস্রঞ্চ মানুষেষু প্রতিষ্ঠিতম ” রচনাকাল আনুমানিক ২০০ থেকে ৩৫০ খ্রীঃপূর্বে।
এই তিনটি স্তর ঠিক কোন সময়ে রচিত হয়েছিল তা নির্ণয় করা কঠিন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ খ্রীঃপূর্ব ৩১৩৫ অব্দে হয়েছিল। অতএব মহাভারতের রচনাকাল এই সময়ের কিছু পরে হতে পারে।
ডিও ক্রিসোস্টোম (Dio Chrysostom) বলেন, ১ লক্ষ শ্লোক সম্বন্ধিত মহাভারত প্রথম শতকে দক্ষিন ভারতে দেখা যায়। কালিদাস পূর্বযুগের বৌদ্ধ কবি অশ্বঘোষ মহাভারতে উল্লেখ করেছেন। কবি নাট্যকার ভাস মহাভারত অবলম্বনে অনেকগুলি নাট্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। আবার খ্রীষ্ট্রপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে বিভিন্ন শিলালিপিতে মহাভারতের শ্লোক লিখিত আছে – “শত সাহস্রাং সংহিতায়াং বেদ ব্যাসেনোক্তম। ”
সুতরাং বলা যায় যে, মহাভারত রচনা শুরু হয়েছিল খ্রীঃপূর্ব ষষ্ঠ শতকে এবং শেষ হয়েছে খ্রীঃপূর্ব চতুর্থ শতকে।
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. মহাভারত রচয়িতা কে ?
উত্তরঃ মহাভারত রচয়িতা হলেন, মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। তিনি ভাস নামেও পরিচিত ।
২. মহাভারতের প্রথম বাংলা অনুবাদক কে ?
উত্তরঃ মহাভারতের সর্বপ্রথম বাংলা অনুবাদ করেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর।
৩. মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে ?
উত্তরঃ মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক হলেন- কাশীরাম দাস ।
৪. কবীন্দ্র পরমেশ্বর রচিত মহাভারতের নাম কি ?
উত্তরঃ কবীন্দ্র পরমেশ্বর রচিত মহাভারতের নাম পরাগলী মহাভারত ।
৫. মহাভারতে কটি পর্ব রয়েছে ?
উত্তরঃ মহাভারতে মোট ১৮ টি পর্ব রয়েছে ।
আরো পড়ুন –
- ভারতীয় সমাজ ও সাহিত্যে রামায়ণের প্রভাব আলোচনা করো । B.A Sanskrit |
- অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পরিবারের ভূমিকা । B.A Education
- শিক্ষাক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর গুরুত্ব | B.A Education
- রাষ্ট্র কাকে বলে | উপাদান গুলো কি কি |B.A Sociology
- রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সামাজিক চুক্তি মতবাদ |B.A Sociology |