গণতন্ত্র কি | প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য

আমরা আজকে এই অংশে দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন উত্তর এর আলোচনা করব। সেটি হল গণতন্ত্র কাকে বলে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য। 

গণতন্ত্র কি | প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য
গণতন্ত্র কি | প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য

গণতন্ত্র কি | প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য

গণতন্ত্র কাকে বলে

‘Demos’ এবং ‘Kratos’ এই দুটি শব্দ থেকে ইংরেজী ‘Democracy’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। গ্রীক শব্দ ‘Demos’ এর অর্থ হল ‘জনগণ’ আর ‘Kratos’ শব্দের অর্থ হল শাসন। সুতরাং Democracy শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল ‘জনগণের শাসন’।

সাধারণভাবে, গণতন্ত্র বলতে এক বিশেষ শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায় । তবে ব্যপকার্থে গণতন্ত্র শাসন ব্যবস্থার নির্দিষ্ট সিমা অতিক্রম করে এক মহৎ আদর্শে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে গণতন্ত্র বলতে এক বিশেষ ধরনের সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও এক বিশেষ অর্থ ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। তবে গণতন্ত্রের অর্থ যাই হোক , সাম্য হল এর মূল ভিত্তি ।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন লেখক ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন । অনেকের মতে গণতান্ত্রিক সরকার হলো জনগণের সরকার। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের মতটি অধিক পরিচিত। তাঁর মতে গণতান্ত্রিক সরকার হচ্ছে-

“Government of the people by the people and for the people.”

অর্থাৎ,গণতান্ত্রিক সরকার হলো ‘জনগণের কল্যানে জনগণের দ্বারা জনগণের শাসন।’

তবে বর্তমানে গণতন্ত্র বলতে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রকে বোঝায়। সমাজতন্ত্রবাদীরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেন। অর্থনৈতিক গণতন্ত্র হল, সমাজ থেকে যাবতীয় অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শোষনের বিলোপ সাধন করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। সেইসব ক্ষেত্রগুলি হল –

উৎপাদন ও বন্টনের ক্ষেত্রে সামাজিক মালিকানা, সর্ব সাধারণের জন্য উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, সকল রকম শোষনের অবসান, শিল্প পরিচালনা শ্রমিকদের অংশ গ্রহণ প্রভৃতি। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে “অর্থনৈতিক গণতন্ত্র ছাড়া রাজনৈতিক গণতন্ত্র অর্থহীন। ”

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য :  

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নে আলোচিত হল-

প্রথমত:

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুসারে, প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র হল প্রকৃত  গণতন্ত্র। কেননা এই গণতন্ত্রে জনগণ সরাসরি পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকে। জনগণের সংখ্যা কম থাকায় এবং তাদের সমস্যা গুলি সহজ সরল হওয়ায় এই প্রকার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার চল থাকে। এই প্রকার গণতন্ত্র আমরা দেখতে পাই। প্রাচীন গ্রিসের ছোটো ছোটো নগর রাষ্ট্রগুলিতে। এথেন্সের প্রত্যেকটি নাগরিক নির্দিষ্ট দিনে একটি জায়গায় মিলিত হতো। তারা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের আইন প্রনয়ন করতো এবং সেই আইন কীভাবে মান্য করতে হবে তাঁর ব্যবস্থা গ্রহন করতো।

অন্যদিকে, পরোক্ষ বা প্রতিনিধিমূলক গণতন্ত্রে জন সাধারণ নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরোক্ষ ভাবে দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে। প্রসঙ্গে জন স্টুয়ার্ড মিল বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা তাদের শাসন কার্য পরিচালনা করে থাকে তাকেই বলা হয় পরোক্ষ গণতন্ত্র। ’

দ্বিতীয়ত :

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণের প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের মুখোমুখি সম্পর্ক থাকে। এরা নিজেরাই শাসনকার্যে অংশ গ্রহণ করে ও পরিচালনা করে।

কিন্তু পরোক্ষ গণতন্ত্রে এই রকম মুখোমুখি সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয়। কারণ এক্ষেত্রে জনসাধারণ প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং সেই প্রতিনিধিরা শাসন কার্যের ভার বহন করে।

তৃতীয়ত :

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণ সরাসরি শাসন কার্যে অংশ গ্রহণ করে বলে প্রত্যেকের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। এবং প্রত্যেকেই রাষ্ট্রীয় কাজে সমান উৎসাহ বোধ করে।

অপরদিকে, পরোক্ষ গণতন্ত্রে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের প্রধান্য রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে না এবং রাষ্ট্রীয় কাজে সব দলের সমান উৎসাহ থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষ গণতন্ত্রে যে প্রতিনিধি পাঠানো হয় সে আদর্শ রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন নাও হতে পারে।

চতুর্থত :

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো উন্নত জ্ঞান সব জনসাধারণের মধ্যে থাকে না। তাই প্লেটো প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে মূর্খ ও অজ্ঞব্যক্তির শাসনতন্ত্র বলেছেন।

অপরদিকে, পরোক্ষ গণতন্ত্রে সরকার যদি জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করে তাহলে জনগণ তাদের আর পুনঃনির্বাচিত না করে অন্য সরকার গঠন করতে চায়।

পঞ্চমত :

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সকলে মিলিত হয়ে আলোচনার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করে।

কিন্তু পরোক্ষ গণতন্ত্রে মুখোমুখি সম্পর্ক না থাকায় ভোট দানের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে শাসনকার্য পরিচালনা করা হয় অর্থাৎ জনগণ সরাসরি শাসনকার্যে অংশ গ্রহণ করতে পারে না।

Thanks For Reading: গণতন্ত্র কি | প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য


প্রশ্ন উত্তর:-

১.গণতন্ত্র শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কি?

উত্তর-‘Demos’ এবং ‘Kratos’ এই দুটি শব্দ থেকে ইংরেজী ‘Democracy’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। গ্রীক শব্দ ‘Demos’ এর অর্থ হল ‘জনগণ’ আর ‘Kratos’ শব্দের অর্থ হল শাসন। সুতরাং Democracy শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল ‘জনগণের শাসন’।

২. আধুনিক গণতন্ত্রের জনক কে?

উত্তর-আধুনিক গণতন্ত্রের জনক হলেন জন লক।

৩. গণতন্ত্রের মুখ্য প্রকারগুলি কি কি?

উত্তর- গণতন্ত্রের মুখ্য প্রকারগুলি হল প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ও পরোক্ষ গণতন্ত্র।


আরো পড়ুনঃ

1.  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করো

২. চার্বাক দর্শন বড় প্রশ্ন উত্তর

৩. আইনের সংজ্ঞা দাও | এর বৈশিষ্ট্য গুলি কী কী

4. রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করো

5. রাষ্ট্র কাকে বলে | উপাদান গুলো কি কি

6.রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সামাজিক চুক্তি মতবাদ

Leave a comment