ভারতীয় দর্শন হল আধ্যাত্মবাদী দর্শন। ভারতীয় দর্শনে আস্তিক ও নাস্তিক মিলিয়ে মোট নয়টি সম্প্রদায় রয়েছে। এই নয়টি সম্প্রদায় হল – চার্বাক , বৌদ্ধ, জৈন , ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, মীমাংসা ও বেদান্ত ।
এই নয়টি দর্শন সম্প্রদায়ের মধ্যে চার্বাক দর্শন একমাত্র জড়বাদী দর্শন। আধ্যাত্মবাদের ঘোরতর বিরোধীতার মধ্য দিয়েই চার্বাক দর্শনের সৃষ্টি হয়েছে । আধ্যাত্মবাদের মূল বক্তব্য হল জড় জগৎ অতিরিক্তভাবে আত্মা আছে। কিন্তু চার্বাকরা জড় অতিরিক্তভাবে আত্মা স্বীকার করেন না।
চার্বাক দর্শন | চার্বাক দর্শন বড় প্রশ্ন উত্তর
চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা :
চার্বাক দর্শনের কোন আকার গ্রন্থ পাওয়া যায়নি । তাই চার্বাক দর্শনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাকে তা নিয়ে দর্শনিক মহলে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন যে, চার্বাক নামে এক ঋষি চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা । তাঁর নাম অনুসারে চার্বাক দর্শনের নাম হয়েছে।
আবার অনেকে বলেন যে চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন দেবগুরু বৃহস্পতি । চারু শব্দের আর্থ হল বৃহস্পতি এবং বাক্ হল কথা । তাই চারু বাক্ অর্থাৎ বৃহস্পতির কথাই হল চার্বাক দর্শন । এই মতবাদটি প্রমাণের অভাবে বিতর্কিত রয়ে গিয়েছে।
চার্বাক শব্দের অর্থ :
‘ চার্বাক ’ – শব্দটির বিভিন্ন অর্থ আছে-
১. ‘ চার্বাক ’ নামটি এসেছে ‘চারু বাক্‘ থেকে। ‘চারু’ অর্থে শ্রুতিমধুর , ‘বাক্’ অর্থে ‘কথা’। ‘চারুবাক্’ কথার মানে হল , ‘শ্রুতিমধুর’ বা ‘ মনোরম কথা ‘ ।
এই দর্শনের কথা হল – কামের (ইন্দ্রিয় – সুখ) চারিতার্থই মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য বা পরমপুরুষার্থ। সাধারণ লোকের কাছে এ – সব কথা শ্রুতিমধুর বা চারুবাক্ বলে এই দর্শনের নাম ‘চার্বাক’ হয়েছে।
২. অনেকে আবার মনে করেন, ‘চর্ব‘ ঋতু থেকে ‘চার্বাক’ নামের উৎপত্তি হয়েছে। ‘চর্ব’- ধাতুর অর্থ হল ‘খাওয়া – দাওয়া করা বা চর্বণ করা ।’ এই দর্শন খাওয়া – দাওয়াকে , ইন্দ্রিয় – সুখকে, জীবনের পরম পুরুষার্থ বা কাম্যবস্তুরূপে মনে করে বলে এর নামকরণ ‘চার্বাক’ হয়েছে । চার্বাকের একটি নীতিবাক্য হল যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেং ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিরেৎ ।
চার্বাক দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়
প্রশ্নঃ চার্বাক দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায় গুলি আলোচনা করো ।
উত্তর- চার্বাক দর্শনের উৎস যাই হোক না কেন এ হল সাধারণ লোকের বা জনসাধারনের দর্শন। সাধারণ লোক প্রত্যক্ষ লব্ধ জ্ঞানকেই সর্বাধিক মূল্য দেয়, দৈহিক সুখ ভোগকেই জীবনের পরম লক্ষ্য বলে মনে করেন। চার্বাক দর্শনে সাধারণ লোকের শ্রুতিমধুর কথা বলা হয় বলে এই দর্শনকে লোকায়ত দর্শন বলা হয়। চার্বাক দর্শনে ৩টি সম্প্রদায় আছে। যথা –
১. বৈতন্ডিক চার্বাক সম্প্রদায়।
২. ধূর্ত চার্বাক সম্প্রদায়।
৩. সুশিক্ষিত চার্বাক সম্প্রদায় ।
বৈতন্ডিক চার্বাক সম্প্রদায়
এই সম্প্রদায় ভুক্ত চার্বাকদের গঠন মূলক কোনো কাজ নেই এরা কেবল বিতন্ডা করেন। এদের নিজ্বস্ব কোনো মতামত নেই। এরা অপ্রত্যক্ষের বিষয়, ঈশ্বর , পরলোক প্রভৃতিকে যেমন অস্বীকার করেন, তেমনই প্রত্যক্ষের প্রামান্য অস্বীকার করেন। এরা সবকিছুতেই সংশয় প্রকাশ করেন। অনেকে বলেন এরা আসলে আদি চার্বাক।
ধূর্ত চার্বাক সম্প্রদায়
এই সম্প্রদায়ভুক্ত চার্বাকদের মত প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ, অনুমান প্রমাণ নয়, জড়বস্তুই পরম সত্য, ইন্দিয় সুখই একমাত্র কাম্য। এরা ঈশ্বর , পুনজন্ম, পরলোক মানেন না।
দৈহিক সুখ তা ক্ষণিক হলেও স্বর্গসুখের সমান, কন্টকাদি ব্যাথাজনিত দুঃখই নরক। এরা উচ্ছেদবাদী দেহাত্মবাদী ইত্যাদি নামেও পরিচিত। চার্বাক দর্শনের এই ধূত সম্প্রদায় সর্বজন পরিচিত ও বহুনিন্দিত।
সুশিক্ষিত চার্বাক
এই সম্প্রদায় প্রয়োজন বোধ অনুমানকে প্রমাণ রূপে স্বীকার করেন এদের কেউ দেহের পরিবর্তে ইন্দ্রিয়কে ,কেউ মনকে, কেউ আকার ও প্রাণকে আত্মা বলেছেন।
এরা মানসিক সুখকে দৈহিক সুখের উপড়ে এবং গোষ্ঠী সুখকে আত্ম সুখের উপড়ে স্থান দিয়েছেন। দক্ষিনারঞ্জন শাস্ত্রী ‘চার্বাক দর্শন’ গ্রন্থে সুশিক্ষিত চার্বাক সম্প্রদায়কে কিছুটা আধ্যাত্মবাদের লক্ষ্যণ যুক্ত বলেছেন।
আরো পড়ুন –
চার্বাক নীতি তত্ত্ব -সুখবাদ কী?
চার্বাক জ্ঞানতত্ত্ব (Epistemilogy) |
চার্বাক দর্শন প্রশ্ন উত্তর 1st semester
চার্বাক জ্ঞানতত্ত্বের প্রধান আলচ্য বিষয় গুলি হল-
১. প্রত্যক্ষ একমাত্র প্রমাণ।
২. অনুমান প্রমাণ নয়।
৩. শব্দ প্রমাণ নয়।
৪. বেদবাক্য প্রমাণ নয়।
প্রত্যক্ষ একমাত্র প্রমাণ
প্রশ্নঃ ‘প্রত্যক্ষ একমাত্র প্রমাণ’ – উক্তিটির ব্যাখ্যা করো। এই মতবাদটি কী গ্রহণযোগ্য?
উত্তর – চার্বাকদের দার্শনিক চিন্তা তাদের জ্ঞানতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। চার্বাক মতে, জ্ঞানের একমাত্র উৎস হল প্রত্যক্ষ। ‘প্রত্যক্ষমেকৈবম্ প্রমানম্’ অর্থাৎ প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। প্রত্যক্ষে যা পাওয়া যায় তাই স্বীকৃত, আর যা প্রত্যক্ষে পাওয়া যায় না তা অস্বীকৃত বা অযৌক্তিক। প্রত্যক্ষের সংজ্ঞায় চার্বাকগন বলেছেন – ‘প্রত্যক্ষ হল সম্যক্ অপরোক্ষ অনুভব। ’ এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে প্রত্যক্ষের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায়।
প্রথমত, চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ হল অনুভব। অনুভব কথাটির অর্থ হল ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা। অনুভবকেদুভাবে ভাগ করা হয়
১. চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক – এই ৫ টি বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বাইরের জগতের অনুভব হয়। এমন অনুভবকে বলে বাহ্য প্রত্যক্ষ।
২. মন নামক অন্ত ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অন্ত জগতের সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ প্রভৃতি মানসিক অবস্থার অনুভব, একে বলে মানস প্রত্যক্ষ।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যক্ষ হল অপরোক্ষ অনুভব। যে অনুভব সরাসরি লাভ করা যায়। যে অনুভব পূর্বে অর্জিত কোনো অনুভবের ওপর নির্ভর করেনা তা হল অপরোক্ষ অনুভব।
অর্থাৎ পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয় এবং মনের সাহায্যে সরাসরি যে জ্ঞান লাভ করা যায় তা হল অপরোক্ষ অনুভব। যেমন – একটি বৃক্ষ দেখে বৃক্ষের যে জ্ঞান । যে জ্ঞান অন্য নির্ভর নয়, তাই হল অপরোক্ষ অনুভব।
তৃতীয়ত, প্রত্যক্ষ হল সম্যক্ অনুভব। সম্যক অনুভব হল এমন জ্ঞান যা সংশয় ও বিপর্যয়শূন্য। অনিশ্চিত জ্ঞান হল সংশয়। যেমন – ওই বস্তুটি স্থানু অথবা পুরুষ। মিথ্যা জ্ঞানকে বলে বিপর্যয়। যেমন – আকাশে দুটি চাঁদের জ্ঞান অর্থাৎ প্রত্যক্ষ হল সম্যক সংশয় ও বিপর্যয়শূন্য অনুভব।
সুতরাং চার্বাক মতে পঞ্চইন্দ্রিয় এবং মনের সাহায্যে পাওয়া সঠিক ও সোজাসুজির অভিজ্ঞতার না হল প্রত্যক্ষ।
কিন্তু প্রশ্ন হল প্রত্যক্ষ যদি সর্বদা সম্যক্ অপরোক্ষ অনুভব হয় তাহলে আমাদের ভ্রান্ত প্রত্যক্ষ কীভাবে সম্ভব? রজ্জুতে আমরা সর্প দেখি কেন ? মরুভূমিতে মরীচিকা দেখি কেন?
চার্বাকদের মতে, ভ্রান্ত প্রত্যক্ষ প্রত্যক্ষের প্রামান্যকে বাধিত করতে পারেনা। ইন্দ্রিয়ের দোষ, আলোর অভাব ইত্যাদি কারণে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষ হয়। তাছাড়া ভ্রম প্রত্যক্ষকে প্রকৃত অর্থে প্রত্যক্ষ বলা যায় না। কারণ বিষয়ের সাথে ইন্দ্রিয়ের সরাসরি সংযোগ না হলে প্রত্যক্ষ হয় না।
ভ্রম প্রত্যক্ষে প্রত্যক্ষের বিষয় অনুপস্থিত থাকে। এখানে যা নেই তা আছে বলে মনে করার ফলে ভ্রান্তি হয়। যেমন – রজ্জুর্তে সর্প ভ্রম এক্ষেত্রে কল্পনার আরোপই ভ্রম হয়েছে। বিশুদ্ধ প্রত্যক্ষ কখনই ভুল হয় না।
সমালোচনা-
প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। চার্বাকদের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে নানাবিদ আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। আপত্তি গুলি হল –
১. চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ জ্ঞান যথার্থ। কারণ প্রত্যক্ষ জ্ঞান স্বনির্ভর এবং অপরোক্ষ। জৈনরা অভিযোগ করেছেন চার্বাকদের এই যুক্তিতে প্রত্যক্ষ জ্ঞানকেও অযথার্থ বলতে হয়। কেননা প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও অপরোক্ষ। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ইন্দ্রিয় নির্ভর।
তাই পরোক্ষ, অনুমানকে প্রত্যক্ষ নির্ভর হওয়ার জন্য যদি অযথার্থ বলা হয়। তাহলে ইন্দ্রিয় নির্ভর হওয়ার জন্য প্রত্যক্ষকেও অযথার্থ বলতে হবে।
২. চার্বাকগণ বলেন যে, যা প্রত্যক্ষে নেই তার অস্তিত্ব নেই। এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে নৈয়ায়িকগণ বলেন যে, চার্বাক মতাবলম্বি কোন ব্যক্তি যদি তাঁর স্ত্রী পুত্রকে গৃহে রেখে অন্য কোন স্থানে যান তাহলে প্রত্যক্ষের অভাবে গৃহ এবং স্ত্রী পুত্রকেও অস্বীকার করতে হবে।
৩. চার্বাক মতে, অনুমান, শব্দ প্রভৃতি প্রমাণ নয়। কেননা অনুমান, শব্দ অনেক সময় ভ্রান্ত জ্ঞান দেয়। একই যুক্তিতে প্রত্যক্ষকেও প্রমাণ রূপে গ্রহণ করা যায় না। কেননা প্রত্যক্ষ জ্ঞানও অনেক সময় ভ্রান্ত হয়। রজ্জুতে সর্প ভ্রম হয়, যুক্তিতে রজত ভ্রম হয়।
৪. পরিশেষে ‘প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ’ চার্বাকদের এই মত মানলে আমাদের দৈনন্দিক জীবনযাত্রা অসম্ভব হয়ে পড়ে। দৈনন্দিক জীবনে ধূমদেখে বহ্নির অনুমান না করলে চলেনা। লোকযাত্রা নির্বাহের জন্য তাই প্রত্যক্ষের অতিরিক্ত অনুমানকেও প্রমানরূপে স্বীকার করতে হয়।
সম্ভবত এ কারণে সুশিক্ষিত চার্বাকগন দৈনন্দিক জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য লোকসিদ্ধ অনুমানকে প্রমানরূপে স্বীকার করেছেন। অবশ্য অলৌকিক বিষয় যথা – ঈশ্বর, আত্মা, পরলোক ইত্যাদি বিষয়ক অনুমানকেও স্বীকার করেননি।
প্রশ্নঃ ‘ প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান ‘ – এর পিছনে চার্বাকদের যুক্তিগুলি সমালোচনা সহ আলোচনা করো।
উত্তর – চার্বাকদের দার্শনিক চিন্তা তাদের জ্ঞানতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। চার্বাক মতে, জ্ঞানের একমাত্র উৎস হল প্রত্যক্ষ । ‘ প্রত্যক্ষমেকৈবম্ প্রমানম্ ‘ অর্থাৎ প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান । চার্বাকদের মতে, প্রত্যক্ষে যা পাওয়া যায় তাই স্বীকৃত , আর যা প্রত্যক্ষে পাওয়া যায় না তা অস্বীকৃত বা অযৌক্তিক।
এই প্রসঙ্গে চার্বাকদের যুক্তিগুলি নিন্মে আলোচনা করা হল –
প্রথমত, প্রত্যক্ষ হল বস্তুর অস্তিসূচক। যে বস্তুর প্রকৃত প্রত্যক্ষ সম্ভব তাই শুধু অস্তিত্বশীল বা ‘ সৎ ‘ হতে পারে। বৃক্ষকে প্রত্যক্ষ করা যায় তাই বৃক্ষ অস্তিত্বশীল ।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যক্ষ হল স্পষ্ট। এখানে সোজাসুজি ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগ হয় এবং তার ফলে বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান জন্মায়। তাই প্রত্যক্ষ জ্ঞান স্পষ্ট । এই স্পষ্টতা অন্য কোন প্রমানে থাকে না।
তৃতীয়ত, প্রত্যক্ষ জ্ঞান অভ্রান্ত । প্রত্যক্ষের মাধ্যমে পাওয়া জ্ঞান জ্ঞাতাকে বিভ্রান্ত করেনা। কেননা প্রত্যক্ষের মধ্যে সংশয় ও বিপর্যয় থাকেনা।
চতুর্থত, প্রত্যক্ষ প্রমান হল সকল প্রমানের মূল প্রমান। প্রত্যক্ষকে ভিত্তি করে অনুমান, উপমান, শব্দ প্রভৃতি অন্যান্য প্রমান গুলি গঠিত হয়েছে। যেমন –
ক. অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই কোন কিছু প্রত্যক্ষ করে অজ্ঞাত কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি। তাই চার্বাকগন বলেন অনুমানের মূলে আছে প্রত্যক্ষ।
আবার অনুমান প্রমান ব্যাপ্তিজ্ঞান নির্ভর । এইরূপ ব্যাপ্তি জ্ঞান হতে গেলে হেতু ও সাধ্যের নিয়ত সহচার্যকে প্রত্যক্ষ করতে হবে। সুতরাং বলা যায় অনুমান প্রমান প্রত্যক্ষ নির্ভর।
খ. উপমান প্রমান সাদৃশ্য জ্ঞান নির্ভর। যেমন – ‘গবয়’ নামক প্রানী হল গরু নামক প্রানীর সাদৃশ্য। এইরূপ জ্ঞান প্রত্যক্ষ নির্ভর।
গ. শব্দ বা আপ্তবাক্য হল নির্ভর যোগ্য ব্যক্তির বিবৃতি। বিবৃতি মানেই কোন না কোন বিষয়ের বিবৃতি এবং ওই বিষয়ের প্রত্যক্ষ লব্ধ বিবৃতি। কাজেই শব্দ প্রমানের মূল আছে প্রত্যক্ষ।
এইভাবে চার্বাক দার্শনিকগন উপমান , অনুমান, শব্দ প্রভৃতি সকল প্রমানের ভিত্তি যে প্রত্যক্ষ তা প্রতিপাদন করে প্রত্যক্ষকেই একমাত্র প্রমান বলেছেন।
অনুমান প্রমাণ নয়ঃ
প্রশ্নঃ ‘অনুমান প্রমাণ নয়’ – চার্বাকগণ কীভাবে এই মত প্রতিষ্ঠা করেছেন ?
উত্তর- চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। অনুমান ও শব্দ প্রমাণ নয়। অনুমান হল প্রত্যক্ষলব্ধ বিষয় থেকে ব্যাপ্তিজ্ঞানের ভিত্তিতে অপ্রত্যক্ষগোচর নতুন বিষয়ের জ্ঞানে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া। অনুমান প্রমাণের বিরুদ্ধে চার্বাকগনের আপত্তিগুলি হল।–
প্রথমত, চার্বাক মতে, অনুমানকে প্রমাণরূপে গ্রহণ করা চলে না। কেননা , অনুমান যথার্থ জ্ঞান দিতে পারে না, অনুমানলব্ধ জ্ঞান সম্ভাব্য মাত্র। তবে আকস্মিক ভাবে কোনো কোনো সময়ে অনুমান সত্য হয়। সুতরাং অনুমান সঠিকভাবে সংশয়শূন্য প্রকৃত জ্ঞান নয়।
দ্বিতীয়ত, অনুমানকে দুইভাগে ভাগ করা যায়, যথা অবরোহ ও আরোহ। চার্বাকগণ এই দুই প্রকার অনুমানকে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন অবরোহ অনুমান ‘চক্রাব দোষে দুষ্ট।’ কেননা, অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটিকে পূর্ব থেকে আশ্রয়বাক্যে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, অথচ আশ্রয়বাক্যের যথার্থতা প্রমাণিত হয়নি।
আবার আরোহ অনুমান সর্বদাই সম্ভাবতার স্তরে থেকে যায়। কারণ আরোহ অনুমানে কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে সামান্য সংশ্লেষক সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়। ফলে বিপরীত দৃষ্টান্ত আছে কিনা তা বিচার করা হয় না। তাই আরোহ অনুমান যথার্থ জ্ঞান দিতে পারে না।
তৃতীয়ত, অনুমান ব্যাপ্তিজ্ঞান নির্ভর। চার্বাক মতে, ব্যাপ্তি জ্ঞান নির্ভরযোগ্য নয়।
ক. ব্যাপ্তি হল হেতু ও সাধ্যের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্বন্ধ। কিন্তু চার্বাক মতে, হেতু ও সাধ্যের (ধূম ও বহ্নি) একই সাথে উপস্থিত প্রত্যক্ষ করা গেলেও তাদের মধ্যে গুণগত সম্পর্ক প্রত্যক্ষ করা যায় না।
খ. চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষের ভিত্তিতে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ধূম ও বহ্নির নিয়ত অব্যাভিচারী সম্বন্ধ বর্তমানে কোন নির্দিষ্ট স্থানে প্রত্যক্ষ করা গেলেও অতীত ও ভবিষ্যতে এবং ভিন্নদেশে তাদের সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করা যায় না। ফলে অতীত ও ভবিষ্যতে হেতু ও সাধ্যের মধ্যে এমন সম্বন্ধ ছিল বা থাকবে এমন দাবি করা যায় না।
গ. চার্বাক মতে, ব্যাপ্তি সম্বন্ধ অনুমানের সাহায্যে জানা যায় না, কেননা তাহলে সেই অনুমান যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধের উপর নির্ভর সেই ব্যাপ্তি সম্বন্ধকে অন্য অনুমানের সাহায্যে জানতে হবে এবং তাকে জানার জন্য আরেকটি অনুমানের সাহায্যের প্রয়োজন এভাবে অনবস্থা দোষ দেখা যায়।
ঘ. আবার ব্যাপ্তি সম্বন্ধ জ্ঞান কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে না। কারণ বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা অনুমান নির্ভর। আর অনুমান সর্বদা সম্ভাব্য মাত্র।
ঙ. কেউ বলেন বহ্নি ধূমের কারণ হওয়ার কার্য- কারণ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে ব্যাক্তি প্রতিষ্টা করা যায়। কিন্তু চার্বাক মতে, কার্য-কারণ সম্বন্ধ অনিবার্য সম্বন্ধ ।আর এই অনিবার্যতাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
সমালোচনাঃ
ভারতীয় অন্যান্য দর্শন সম্প্রদায় বিশেষ করে জৈন দর্শন অনুমান প্রামন বিরোধী চার্বাকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
১. কয়েকটি ক্ষেত্রে অনুমানকে ভ্রান্ত হতে দেখে চার্বাকদেরা সিদ্ধান্ত করে অনুমান প্রমাণ হতে পারে না। চার্বাকরা এই সিদ্ধান্ত অনুমানের সাহায্যেই করেছেন। তাই অনুমান প্রমাণ খন্ডন পরিবর্তে তারা অনুমানকে প্রমাণ রূপে প্রতিষ্টা করছেন।
২. স্বর্গ, পরলোক, জন্মান্তর প্রভৃতি অলৌকিক বিষয়ের অস্তিত্ব চার্বাকেরা অনুমানের সাহায্যে অস্বীকার করেছেন।
৩. অনুমান লব্ধ জ্ঞান পরোক্ষ হওয়ার জন্য চার্বাকেরা তাকে সংশয় করেছেন। জৈনদের আপত্তি হল অনুমান প্রত্যক্ষ জ্ঞান নির্ভর হওয়ার যদি প্রমাণ না হয়। তাহলে প্রত্যক্ষ ও প্রমাণ নয়। কারণ প্রত্যক্ষ ইন্দিয় নির্ভর।
৪. চার্বাকেরা বলেন সকল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ জ্ঞান নিশ্চিত। কিন্তু সবক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ জ্ঞান নিশ্চিত বললে ভ্রান্তি প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ ভ্রান্তি জ্ঞানে নিশ্চিত জ্ঞান হয় না।
শব্দ প্রমাণ নয়ঃ
প্রশ্নঃ শব্দ প্রমানের বিরুদ্ধে চার্বাকদের আপত্তি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর- “ আপ্তোপ্রদেশঃ শব্দ “ – অর্থাৎ আপ্তব্যক্তির উপদেশ বা বাক্য হল প্রমাণ । যিনি সত্যকে জানেন এবং সত্য বলেন তিনি হলেন আপ্ত , আর তার বাক্যই হল শব্দ প্রমাণ । যিনি সত্যকে জানেন, অথচ অপর ব্যক্তিকে প্রতারনা করার জন্য মিথ্যা বলেন তিনি আপ্ত নন। ন্যায় , সাংখ্য, মীমাংসা, যোগ ও বেদান্ত দর্শনে আপ্তব্যক্তির উপদেশকে শব্দ প্রমাণ বলে স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু চার্বাক গণ শব্দকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেননি। শব্দ প্রমান খন্ডনে চার্বাকদের যুক্তি গুলি হল –
(i) কোনো ব্যক্তি আপ্ত কিনা তা জানতে গেলে সেই ব্যক্তির আচার –আচরণের মাধ্যমে অনুমান করে জানতে হয়। ব্যক্তির আপ্তত্ব প্রত্যক্ষের বিষয় নয়, অনুমানের বিষয় কিন্তু চার্বাকগণ অনুমানকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেন না।
(ii) আপ্ত ব্যক্তির আপ্ত বাক্য অনুমান প্রমাণ নির্ভর , আপ্ত ব্যক্তি যখন বলেন , যেখানে ধূম সেখানে বহ্নি, তখন তাকে অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ আপ্ত ব্যক্তি ত্রৈকালিক ধূম ও বহ্নিকে প্রত্যক্ষ করতে পারেন না । তাই চার্বাক মতে যা অনুমান নির্ভর তা প্রমাণ নয়।
(iii) আপ্ত ব্যক্তি যখন অতীন্দ্রিয় বিষয় ( ঈশ্বর, আত্মা , স্বর্গ ) ইত্যাদি সম্পর্কে বলেন , তখন তাকে অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয় কিন্তু চার্বাক মতে অনুমান প্রমান নয়।
(iv) দেশ ও কাল ভেদে শব্দ অনেকার্থক হয়। তাই আপ্ত ব্যক্তি যে বাক্য বলেন তা অনেকার্থক দোষে দুষ্ট কাজেই শব্দ প্রমান নয়।
(v) বৈশেষিকগণ বলেন যে , শব্দের এক বিশেষ অর্থবোধক শক্তি আছে , যার জন্যই শব্দের অর্থ বোধ হয়। কিন্তু শব্দের অর্থবোধক শক্তিকে প্রত্যক্ষের মাধ্যমে জানা যায় না , তা হল অনুমান সাপেক্ষ। চার্বাক মতে যা অনুমান নির্ভর তা প্রমাণ নয় ।
বেদবাক্য প্রমাণ নয়
প্রশ্নঃ চার্বাকগণ বেদকে প্রমান রূপে স্বীকার করেননি কেন ?
উত্তর- সমগ্র ভারতীয় আস্তিক দর্শন সম্প্রদায় বেদকে প্রমাণ রূপে স্বীকৃতি দিয়েছেন । চরমপন্থি নাস্তিক সম্প্রদায় চার্বাক গণ বেদ বাক্যকে প্রমাণ রূপে অস্বীকার করেছেন । বেদ বাক্যের বিরুদ্ধে চার্বাকদের যুক্তিগুলি হল –
প্রথমত – বেদ অপৌরুষের নয় অর্থাৎ বেদকে পুরুষ সৃষ্ট বলা হয়েছে । মহর্ষি কনাদ তার “ বৈশেষিক সূত্রে “ সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মাকে বেদের শ্রষ্ঠা বলেছেন । চার্বাক মতে শ্রষ্ঠা কখন দোষে মুক্ত হতে পারেন না। তাই তার সৃষ্টি বেদ ও দোষমুক্ত হতে পারে। কাজেই বেদ প্রমাণ নয়।
দ্বিতীয়ত – বেদ বাক্যের মধ্যে অসংগঠিত পূর্ন পরস্পর বিরোধী ও অর্থহীন বাক্য আছে। আবার অশ্বমেধ যজ্ঞের অনেক মন্ত্র রুচি সম্পন্ন নয় । সুতরাং বেদকে অভ্রান্ত বলে স্বীকার করা যায় না।
তৃতীয়ত – চার্বাক গণ মনে করেন ধূর্ত ও ভন্ড ব্রাহ্মনগণ অজ্ঞ সাধারন মানুষকে প্রতারিত করে নিজেদের জীবিকা অর্জনের উদ্দেশ্যে বেদ সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ বেদ নির্দেশিত কর্মের দ্বারা ব্রাহ্মনেরাই লাভবান হয়, জন সাধারনের কোনো লাভ হয় না । তাই বেদ বাক্য চার্বাকদের কাছে প্রমাণ সিদ্ধ নয়।
আরো পড়ুন –
১. ভারতীয় দর্শন | Indian Philosophy |দর্শন শব্দের অর্থ
চার্বাক অধীবিদ্যা (Metaphisic)
চার্বাক দর্শন প্রশ্ন উত্তর 1st semester /চার্বাক দর্শন প্রশ্ন উত্তর class 11
চার্বাক অধীবিদ্যার আলচ্য বিষয় গুলি হল-
১.স্বভাববাদ ও যদৃচ্ছাবাদ
২.চার্বাক মতে আত্মা
৩. ভূতচৈতন্যবাদ
জগতের উৎপত্তি বিষয়ে চার্বাক অতিমত :
চার্বাক মতে, ক্ষিতি , অপ, তেজঃ ও মরুৎ এই চারটি প্রত্যক্ষগম্য স্থূল ভূতই সৎ। আকাশকে চার্বাকেরা ভূত বলে স্বীকার করেন না, কারন তা প্রত্যক্ষ গ্রাহ্য নয়। এই চর্তুভূতের স্থুল, প্রত্যক্ষযোগ্য পরমানু সমূহের মিশ্রণ থেকেই সব জাগতিক বস্তুর উৎপত্তি হয়। এই মতবাদ জড়বাদ নামে পরিচিত-“স্বভাবঃ জগতঃ কারণম্। ”
অর্থাৎ স্বভাব নিয়মই জগৎ বৈচিত্র্যের একমাত্র নিয়ামক। স্বভাবই জগতের হেতু বা কারণ এছাড়া অন্য কোন কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল এই স্বভাব নিয়ম বলতে কী বোঝ ? চার্বাকগন এর উত্তরে বলেন, পদার্থ সমূহের প্রতিনিয়ত যে শক্তির প্রকাশ তাই ‘স্বভাব’।
এই স্বভাব নিয়মেই চর্তুভূতের স্থূল পরমানু থেকে বৈচিত্রময় জগৎ বা আত্মার উৎপত্তি হয়। মৃৎ পদার্থের স্বভাবের জন্য মৃত্তিকা থেকে ঘট উৎপন্ন হয়। সুতরাং চার্বাকগন জগতের উৎপত্তির ব্যাপারে ঈশ্বরকে কল্পনা না করে জগতের উৎপত্তিকে স্বাভাবিক রূপেই গ্রহণ করেছে। তাই জগতের ব্যাখ্যায় চার্বাক অভিমত ‘স্বভাববাদ’ নামে পরিচিত।
চার্বাক স্বভাববাদ ও যদৃচ্ছাবাদ ব্যাখ্যা করো।
স্বভাববাদ :
কার্যকারণ তত্ত্ব অনুযায়ী জগতের কোন কিছু আকস্মিকভাবে ঘটে না, সবই পূর্ব নির্ধারিত কারণের দ্বারা ঘটে। এটা হল কার্যকারণবাদীদের মত। কিন্তু চার্বাকগন এই মতবাদের পরিবর্তে স্বভাব নিয়মের উল্লেখ করেছেন। বস্তুর প্রতিনিয়ত শক্তিবোই চার্বাকগন “স্বভাব নিয়ম” বলেছেন। এই স্বভাব নিয়মের শক্তিই হল সৃষ্টির কামনা।
চর্তুভূতের স্বভাব অনুযায়ী তারা পরস্পর মিলিত হয়ে কখনও জড়দেহে চৈতন্যর সৃষ্টি করে। আবার জড়ভূতের স্বভাব নিয়মেই ভূত সমূহ বিচ্ছেদ হয়। সুতরাং সৃষ্টি , স্থিতি ও লয় হলো জড়বস্তুর স্বভাব ।
এখন প্রশ্ন হল স্বভাব নিয়মের কারণ কী ? –এর উত্তরে চার্বাকগন বলেন, সব কার্যেরই যে কারণ থাকবে এমন নয়। বস্তুর স্বভাব নিয়মেই বস্তু পরিবর্তিত হয়, স্বভাব নিয়মেই প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে। আগুন যে উষ্ণ , জল যে শীতল , এখানে মিষ্টি , নিমপাতা যে তিক্ত , কাঁটা যে তীক্ষ্ণ এসবের কোন কারণ নেই , সবই স্বভাব নিয়মে ঘটে। স্বভাবই স্বভাবের কারণ। সুতরাং জগত বৈচিত্র্যের মূলে হল –“স্বভাবঃ জগতঃ কারণম্।”
সমালোচনা :
১. প্রত্যক্ষই যদি একমাত্র প্রমান হয় তাহলে জড় চর্তুভূজ প্রত্যক্ষ করা গেলেও স্বভাব নিয়মকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। তাহলে স্বভাবের ব্যাখ্যা কী হবে ?
২. নিয়ম নিজে সৃষ্টি বা ধ্বংসের কারণ হতে পারে না। কেউ নিয়ম প্রয়োগ করে কোন কিছুকে ধ্বংশ করে। সুতরাং স্বভাব নিয়মকে স্বীকার করার অর্থই হলো স্বভাব অতিরিক্ত স্বভাব কর্তাকে স্বীকার করা।
৩. ব্যাহ্যিক ও নৈতিক জগৎ কার্যকারণ নিয়মে চলছে। প্রশ্ন ওঠে এক্ষেত্রে স্বভাবের কোন মূল্য আছে কী?
যদৃচ্ছাবাদ :
চার্বাক স্বভাববাদের দুটি প্রকার নরমপন্থী ও চরমপন্থী। চরমপন্থী মতবাদকে যদৃচ্ছাবাদ বলা হয়। যদৃচ্ছাবাদ অনুসারে জগতের সৃষ্টি যদৃচ্ছক , আকস্মিক , ও অহেতুক । জড় চর্তুভূত নিজেদের খেয়ালখুশী মতো মিলিত হয়ে জড়বস্তু ও জীববস্তু ও জীবদেহ সৃষ্টি করে। আবার উদ্দেশ্যহীন ভাবে ভূতসমূহের মধ্যে বিচ্ছেদের ফলে সৃষ্টি ধ্বংস হয়। সুতরাং সৃষ্টি বা ধ্বংস হল আকস্মিক।
যদৃচ্ছাবাদী চার্বাকেরা কার্যকারনকে সর্বৈব অস্বীকার করেন। এবং স্বভাব নিয়মকেও অস্বীকার করেন। যখন তাদের প্রশ্ন করা হয় – ঘট থেকে মৃত্তিকা উৎপন্ন হয়, সুতা থেকে হয়না কেন? এর উত্তরে যদৃচ্ছাবাদীরা বলবেন, এটি একটি আকস্মিক ব্যাপারে। কেননা, আজ মৃত্তিকা থেকে ঘট উৎপন্ন হচ্ছে বলে ভবিষ্যতেও হবে – এর নিশ্চয়তা কোথায়? ভবিষ্যৎ কী প্রত্যক্ষ করা যায়?
সমালোচনা :
১. আকস্মিকতা দিয়ে জগতের বৈচিত্রময় সুশৃঙ্খল ও সুসামঞ্জস্যপূর্ন জগতের ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। আকস্মিকতা দ্বারা জগতের ব্যাখ্যা করতে গেলে একের পর এক আকস্মিকতা স্বীকার করতে হয়, ফলে অনাবস্থা দোষ ঘটে।
২. হাইট্রোজেনের দুটি কনা, অক্সিজেনের একটি কনা মিলিত হয়ে জল উৎপন্ন হয় একে আকস্মিকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, কেননা বিশেষ চাপ ও তাপ না থাকলে জল তৈরি হয় না। আর আকস্মিকতা মানেই হল যুক্তিহীনতা। যা যুক্তিহীন তা দার্শনিক মতবাদ হতে পারে না।
চার্বাক স্বীকৃত চারটি মহাভূত কী কী ?
চার্বাকেরা প্রত্যক্ষে প্রমাণবাদী । তাদের মতে প্রত্যক্ষ গ্রাহ্য স্থূল চর্তুভূত দিয়ে এই জগৎ ও জীবন গড়ে উঠেছে। চর্তুভূত চারটি হল – (i) ক্ষিতি (পৃথিবী), (ii) অপ্ (জল) (iii) তেজঃ (অগ্নি) ও (iv) মরুৎ (বায়ু)। ভারতীয় দর্শনে ব্যোম্ (আকাশ) সুক্ষ পরমানু, তাই প্রত্যক্ষের বিষয় হয় না। তাই চার্বাকেরা আকাশকে তত্ত্ব বলে স্বীকার করেননি।
চার্বাককে জড়বাদী দর্শন বলা হয় কেন ? চার্বাক জড়বাদ খন্ডন করো।
চার্বাক জ্ঞানতত্ত্বের যৌক্তিক পরিণতি হল চার্বাক অধিবিদ্যা। অধিবিদ্যক আলোচনায় চার্বাকগন আধ্যাত্মবাদ খন্ডন করে জড় বা প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রথমত :
চার্বাক ছাড়া ভারতীয় অন্যান্য দর্শনে – ক্ষিতি, অপ্, তেজঃ, মরুৎ , ও ব্যোম – এই পঞ্চমহাভূত স্বীকার করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম চারটি স্থূল পরমাণু , কারণ আমাদের ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষে এদের পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যোয় বা আকাশ অনুমান সিদ্ধ। তাই চার্বাকগন আকাশকে জগতের তত্ত্ব বলে স্বীকার করেনা। চার্বাক মতে, চর্তুভূতের স্থূল অনু থাকলেও পরমাণু নেই, কারণ পরমাণু প্রত্যক্ষযোগ্য নয়। সুতরাং চর্তুভূতের স্থূল অনু দিয়ে জগতের যাবতীয় বস্তুর উৎপত্তি হয়েছে। এই চারটি স্থূল অনু নিত্য, অবিনশ্বর, এদের রূপান্তর আছে বিন্যাশ নেই।
দ্বিতীয়ত :
চার্বাক মতে, চর্তুভূতের বিন্যাসে জড়বস্তু ও জড়দেহে চৈতন্য বা আত্মার আর্বিভাব হয়। এর চর্তুভূতের বিচ্ছেদে জড়বস্তু ও জড়দেহে আত্মার বিনাশ ঘটে। সুতরাং আত্মা জড়দেহ ছাড়া এর কিছুই নয়। ভূত সমূহের বিচ্ছেদেই আত্মার মুক্তি ঘটে।
তৃতীয়ত :
জড় উপাদান থেকে কোন কিছু সৃষ্টি হতে গেলে একজন চেতন কর্তা স্বীকার করতে হয়। জগতের সবকিছুই কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ঘটে। কিন্তু চার্বাকগন জগৎ সৃষ্টির ব্যাখ্যায় কোন উদ্দেশ্যকারী বা পরিকল্পনাকারীকে স্বীকার না করে ‘স্বভাববাদ’ ও ‘যদৃচ্ছাবাদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বভাববাদ অনুসারে চর্তুভূত তাদের স্বভাব বশে মিলিত হয়ে কখন জগতের সৃষ্টি ও কখনও প্রলয় ঘটায়। এর যদৃচ্ছাবাদীদের মতে, স্বভাব নয় আকস্মিক তাই হল জগৎ সৃষ্টির কারণ।
চার্বাকদের এমন, মতবাদই ‘জড়বাদ’ বা ‘ভূতচর্তুষ্ঠয়বাদ’ নামে পরিচিত। তাই চার্বাকদের জড়বাদী বলা হয়।
সমালোচনা :
চার্বাক জড়বাদ নিম্নলিখিত কারণে গ্রহণ যোগ্য নয় –
প্রথমত :
চর্তুভূত থেকে উৎপন্ন জগতের সবই জড় ও জড়ধর্মী চার্বাকদের এমন বক্তব্য গ্রহণ যোগ্য নয়। কারণ জড় ও জড় ধর্মীয় মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। জড়শক্তি নিজ শক্তিতে চালিত হতে পারেনা, কিন্তু জীব (জড়ধর্মী) নিজ শক্তিতে চালিত হতে পারে । সুতরাং জীবকে জড় অতিরিক্তভাবে স্বীকার করতে হবে।
দ্বিতীয়ত :
চার্বাকেরা চৈতন্যকে দেহের গুণ বলেছে। কাজেই অচেতন দেহ থাকতে পারে না। কিন্তু মৃত অবস্থায় দেহ থাকলেও চেতনা থাকেনা । এর অনেক সময় জীবিত অবস্থাতেও চেতনা থাকে না।
তৃতীয়ত :
চার্বাক দেহাত্মবাদ স্বীকার করলে স্মৃতি ও প্রত্যভিজ্ঞার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
চর্তুথত :
জীবদেহের বৈচিত্রের ব্যাখ্যা চর্তুভূতের বিন্যাস বৈচিত্রের দ্বারা সম্ভব। কিন্তু, জীবন বৈচিত্রের ব্যাখ্যা কী হবে ? –এর উত্তর চার্বাক জড়বাদে নেই।
পরিশেষে বলা যায়, চার্বাক জড়বাদের এমন অসঙ্গতি থাকার সত্ত্বেও ভারতীয় দর্শনে গঠনমূলক অবদান রয়েছে। কারণ চার্বাক মত খন্ডন করতে গিয়েই অনেক দর্শন সম্প্রদায়ের মত বাস্তবমুখী হয়ে ওঠে। এখানেই চার্বাক জড়বাদের সার্থকতা।
চার্বাক মতে আত্মা
বৌদ্ধ ছাড়া সব আধ্যাত্মবাদী ভারতীয় দর্শনে আত্মাকে নিত্য, শাশ্বত সত্ত্বা বলা হয়েছে । চার্বাকরা এই মতবাদের বিরোধিতা করেছেন। চার্বাক মতে , ‘চৈতন্য বিশিষ্ট দেহ এব আত্মা’। অর্থাৎ চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই হল আত্মা। চৈতন্য দেহেরই গুন। দেহ- ক্ষিতি, অপ ,তেজঃ ও মরুৎ এই উপাদান দ্বারা গঠিত। চর্তুভূত তাদের স্বভাব বশত বা যচচ্ছ মিলিত হয়। এই সংমিশ্রনে যখন দেহের উৎপত্তি হয় তখনই চৈতন্যের আর্বিভাব ঘটে।
প্রশ্ন হতে পারে, চর্তুভূতের কোন উপাদানেরই পৃথকভাবে চৈতন্য থাকে না। তারা জড় বা অচেতন । তাহলে চর্তুভূত থেকে কীভাবে চৈতন্যের উৎপত্তি হয়? চার্বাকগন এর উত্তরে বলেন যে, পান,চুন,খয়ের এদের কোনটিতেই পৃথকভাবে লাল রঙ নেই।
কিন্তু এদের একত্রে চর্বন করলে লাল রঙের আভা দেখা দেয়। সুরা উৎপাদক বস্তু,যেমন চাল,গুড় ইত্যাদিতে মাদক শক্তি নেই , কিন্তু একত্রে সংমিশ্রন করলে মাদকতার সৃষ্টি হয়। তেমনি ভূতচতুষ্টয়ে পৃথকভাবে চৈতন্য না থাকলেও এদের সংমিশ্রনে যে দেহ তাতে চৈতন্যরূপ গুণের আর্বিভাব হয়। এই মতবাদই ‘দেহাত্মবাদ’ বা ‘ভূচৈতন্যবাদ’ নামে পরিচিত।
চার্বাক দর্শন সম্মত ভূতচৈতন্যবাদ বিচার সহ আলোচনা করো
প্রথমত- চার্বাক মতে, দেহ অতিরিক্ত আত্মা কোন স্থলেই প্রত্যক্ষ করা যায় না। চৈতন্য দেহের উপর নির্ভরশীল । যেখানে চৈতন্য দেখা যায় সেখানেই তা দেহের অন্তর্গত । যেখানে দেহ নেই সেখানে আত্মাও নেই । এইভাবে অম্বয়-ব্যতিরেকির সাহায্যে বোঝা যায় যে চৈতন্য দেহের ধর্ম। মৃত্যুকালে দেহের বিনাশের সাথে সাথে চৈতন্যের বিনাশ ঘটে।একটি প্রদীপের আলো ততক্ষণই থাকে যতক্ষণ অগ্নি থাকে অগ্নি না থাকলে আলো থাকে না । সুতরাং চৈতন্য দেহেরই গুন।
দ্বিতীয়ত- চার্বাক মতে দেহ ও আত্মা পৃথক নয়। তাঁরা বলেন, ‘আমি স্থূল’, ‘আমি কৃষ্ণ’, ‘আমি সুস্থ’- এরূপ প্রত্যক্ষ উপলব্ধি হয়। আমি বা আত্মা দেহ ভিন্ন হলে এসব উক্তির কোনো অর্থই হয় না ,কারন দেহই স্থূল , দেহই কৃষ্ণবর্ন । অর্থাৎ আমি বলতে দেহ, দেহ অতিরিক্ত আত্মা নয়। তাই চার্বাকগনের অভিমত হল –“দেহাতিরিক্ত আত্মানি প্রমানাভাবাৎ”
ধূত চার্বাকগন স্থূল দেহকেই আত্মার সঙ্গে অভিন্ন মনে করতেন। কিন্তু চার্বাকদের অপর সম্প্রদায়, সুশিক্ষিত চার্বাকগন ইন্দ্রিয়, মন ও প্রাণকে আত্মা বলে স্বীকার করে আধ্যাত্মবাদের দিকে কিছুটা অগ্রসর হয়েছেন।
তৃতীয়ত- দেহ পুষ্ট হলে চৈতন্য বা আত্মাও পুষ্ট হয়। পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করলে দেহের পুষ্টির সাথে সাথে চৈতন্যের ও পরিপুষ্টি হয়। সুতরাং চৈতন্য দেহ অতিরিক্ত সত্তা নয়।
চতুর্থত- দেহ অসুস্থ হলে মানসিক শক্তি বা চৈতন্য বিশেষ ভাবে হ্রাস পায় । আবার বার্ধক্যে দেহ ক্ষীন হলে বুদ্ধির দুর্বলতা প্রকাশ পায়। অতএব দেহই আত্মা।
সমালোচনা-
ভারতীয় দর্শনে চার্বাক দেহাত্মবাদ তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছে। তাঁরা নানা যুক্তি দিয়ে এই মতবাদ খণ্ডন করে দেহঅতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন।
প্রথমতঃ- চৈতন্যর আধার রূপে আত্মার অস্তিত্ব অবশ্যই স্বীকার্য । দেহ যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ চৈতন্যও থাকে একথা স্বীকার করতে হয়। কিন্তু এরূপ দেখা যায় যে , প্রাণহীন দেহে চৈতন্য থাকে না । সুষুপ্তিকালে দেহ থকলেও চৈতন্য থাকে না। যেমন কোন ব্যক্তির স্বপ্নকালীন অবস্থা থেকে উত্থিত হলে স্বপ্নকালীন চেতনা থাকলেও স্বপ্নে দৃষ্ট দেহ থাকে না।
দ্বিতীয়ত- চার্বাক দেহাত্মবাদ ব্যখ্যা করলে স্মৃতি ও প্রত্যভিজ্ঞা প্রভৃতি ব্যখ্যা করা যায় না। দেহ আত্না হলে বাল্যকালের স্মৃতি যৌবনে স্মরণ হবে না । কারন বাল্যকালের শরীর যৌবনে থাকে না। কিন্তু সকলে বাল্যকালের স্মৃতি যৌবনে স্মরণ করতে পারে। শরীর কর্তা হলে এরূপ স্মরণ সম্ভব হতো না। সুতরাং দেহ অতিরিক্ত নিত্যআত্মা অবশ্য স্বীকার্য।
পূর্বদৃষ্ট পদার্থের পুনরায় প্রত্যক্ষগোচর হলে পূর্বের সংস্কার দ্বারা যে জ্ঞান হয়, তা হল প্রত্যভিজ্ঞা । প্রত্যভিজ্ঞার জন্য স্মরণ প্রয়োজন । সুতরাং দেহঅতিরিক্ত আত্মা স্বীকার না করলে প্রত্যভিজ্ঞা ব্যখ্যা করা যায় না ।
তৃতীয়ত– নৈয়ায়িকগন বলেন, শরীরের চক্ষুরাদি প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ের কর্তা হতে পারে না। কেননা শরীরের চৈতন্য নেই । শরীর অচেতন তাই অচেতন কর্তা হতে পারে না। সুতরাং দেহঅতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্ব অবশ্য স্বীকার্য।
চতুর্থত- চার্বাক দেহাত্মবাদ স্বীকার করলে কর্মবাদ ব্যখ্যা করা যায় না। কর্মবাদ অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষতার কৃতকর্মের শুভ-অশুভ ফল ভোগ ক্রবে। কিন্তু দেহই আত্মা হলে কর্মবাদ সিদ্ধ হতে পারে না, কারন দেহ ক্ষনে ক্ষনে পরিবর্তনশীল । সুতরাং দেহঅতিরিক্ত আত্মা অবশ্য স্বীকার্য।
পঞ্চমত- শঙ্করাচার্যের মতে দেহ , উৎপন্ন হয় , বিনষ্ট হয়, অল্পকাল বর্তমান থাকে ,পরিণাম প্রাপ্ত হয়। সুতরাং জড় দেহ কখনই চৈতন্য স্বরূপ আত্মা হতে পারে না । আর যারা ‘আমি ’বলতে দেহকে মনে করে তারা অজ্ঞান , জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে ‘আমি’ হল নিত্য শুদ্ধ চৈতন্য বা আত্মা।
প্রশ্ন-উত্তরঃ
১. চার্বাক মতে আত্মা কী ?
উত্তর : চার্বাক দেহাতিরিক্ত নিতা আত্মা স্বীকার করে না। চার্বাক মতে চৈতনাবিশিষ্ট দেহই আত্মা। চারটি মহাভূতের বিশেষ মিশ্রণে জড়দেহ ও চৈতনোর আবির্ভাব ঘটে। চৈতনাবিশিষ্ট দেহের অতিরিক্ত নিত্য আত্মার কোনো অস্তিত্ব নেই।
২ . চার্বাক দর্শনকে সুখবাদী দর্শন বলা হয় কেন ?
উত্তর চার্বাক মতে কাম বা ইন্দ্রিয় সুখ ভোগই পরম পুরুষার্থ। কাম বা ইন্দ্রিয় সুখই মানুষের কাজের ভালোমন্দ বিচারের মাপকাঠি। তাই যে কাজ কাম চরিতার্থ করতে সাহায্য করে তা – ই ভালো এবং যা করে না তা- ই মন্দ। সুতরাং , চার্বাক মতে ইন্দ্রিয় সুখই পরম কল্যাণ। তাই চার্বাকদের সুখবাদী বলা হয়।
৩. চার্বাকদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
উত্তর : কেউ কেউ ঋষি বৃহস্পতিকে , আবার কেউ বা চার্বাক মুনিকে দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলেন। তবে চার্বাকদর্শনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা আজও অজ্ঞাত।
৪. চার্বাকদর্শনকে লোকায়ত দর্শন বলা হয় কেন ?
উত্তর : চার্বাকদর্শনকে লোকায়ত দর্শন নামেও অভিহিত করা হয়, কারণ চার্বাকদর্শনে সাধারণ মানুষের , সাধারণ লোকের চিন্তার প্রতিফলিত লক্ষ করা যায়। সাধারণ মানুষের চিন্তা , কামনা – বাসনাকে ভিত্তি করে চার্বাকদর্শন গড়ে উঠেছে বলে চার্বাকদর্শনকে লোকায়ত বলা হয়।
৫.আত্মা সম্পর্কে চার্বাক দর্শনের মত টির নাম কি?
উত্তর : চার্বাক মতে , ‘চৈতন্য বিশিষ্ট দেহ এব আত্মা’। অর্থাৎ চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই হল আত্মা। আত্মা সম্পর্কে চার্বাক দর্শনের মত টি ‘দেহাত্মবাদ’ বা ‘ভূচৈতন্যবাদ’ নামে পরিচিত।
৬. চার্বাক দর্শনের অপর নাম কি?
উত্তর : চার্বাক মতে জড় বস্তুই একমাত্র সৎ । এই দিক থেকে চার্বাক দর্শনের অপর নাম হওয়া দরকার জড়বাদ।
৭. চার্বাকদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
উত্তর : কেউ কেউ ঋষি বৃহস্পতিকে , আবার কেউ বা চার্বাক মুনিকে দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলেন। তবে চার্বাকদর্শনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা আজও অজ্ঞাত।
৮. চার্বাক স্বীকৃত প্রমাণের সংখ্যা কত?
উত্তর : চার্বাক দর্শনে একটি মাত্র প্রমাণ স্বীকার করা হয় তা হল প্রত্যক্ষ ।
৯. চার্বাক দর্শন’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ভারতীয় দর্শনের একটি চরম প্রন্থী নাস্তিক সম্প্রয়দায় হল চার্বাক দর্শন । এরা জড় বস্তু ছাড়া আর কোন কিছুকে সত্য বলে মনে করে না । এদের কাছে প্রত্যক্ষ একমাত্র প্রমাণ ।
Thanks For Reading: চার্বাক দর্শন | Charvak Dorshon