পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা | একাদশ শ্রেণি দর্শন

wb ক্লাস 11 সেমিস্টার 2 দর্শন সিলেবাস 2024-25 অনুযায়ী দর্শন শাস্ত্রের Unit – 2: Introduction to Ethics -এর Topic No : 2 পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা (Western Ethics), নৈতিক প্রত্যয়সমূহ,  নৈতিক তত্ত্ব  (Theories of Ethics) এই বিষয় গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।

আলোচনার এই পর্বে  একাদশ শ্রেণি দর্শন ২য় সেমিস্টার -এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব । এই অংশটি থেকে তোমাদের total 4 marks এর প্রশ্ন আসবে।

পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যার মধ্যে যে দুটি অংশ রয়েছে সেগুলি হল – a.) নৈতিক প্রত্যয় সমূহঃ-  নৈতিক, অনৈতিক , নীতি বহির্ভূত, উদ্দেশ্য  ও অভিপ্রায় , ঠিক ও  ভুল , ভালো ও মন্দ, ন্যায়বিচার (Ethical concepts: moral, immoral, nonmoral; motive and intention; right and wrong; good and bad; justice).  

b.) নৈতিক তত্ত্ব সমূহ  (Theories of Ethics): Teleological and deontological Theories. 

WBCHSE XI 2nd Semester সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই Topic থেকে কিছু সংক্ষিপ্ত ও ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করেছি । একাদশ শ্রেণি দর্শন পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা suggestion স্বরূপ এই প্রশ্ন গুলো তোমরা ভালোভাবে প্রস্তুত করলেই ,পরীক্ষায় নিশ্চয় সফল হবে ।

পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা একাদশ শ্রেণি দর্শন
পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা একাদশ শ্রেণি দর্শন

 

পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা | একাদশ শ্রেণি দর্শন ২য় সেমিস্টার

 

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর 2 Marks- এর

 

১. Ethics শব্দটি কীভাবে উদ্ভূত হয়েছে ?

উত্তরঃ Ethics শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Ethica’ থেকে এসেছে। ‘Ethica’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ethos’ থেকে এসেছে। ‘ethos’ শব্দের অর্থ হল সামাজিক প্রথা, অভ্যাস, আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি ইত্যাদি। কাজেই ‘Ethics’ বলতে মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান বোঝায়।

 

২. নীতিবিদ্যার সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ  নীতিবিদ্যা হল আচরণের ঔচিত্য বা ভালোত্ব্য সম্পর্কিত আলোচনা। নীতিবিদ্যা মানব আচরণ নিয়ে আলোচনা করে, মানুষ্যত্বর প্রানীর নয়। কারণ মানুষই একমাত্র বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে স্বেচ্ছাকৃত কর্ম করতে পারে। কিন্তু মনুষ্যত্তর প্রাণীরা বিচার বুদ্ধির পরিবর্তে জৈবিক প্রবৃতি বসত আচরণ করে উইলিয়াম লিলির মতে, সমাজে বসবাসকারী মানুষের আচরণ সম্পর্কীয় ঔচিত্যমূলক বিজ্ঞানকে নীতিবিদ্যা বলে।

 

৩. Morality শব্দের ল্যাটিন প্রতিশব্দ কী ?

উত্তরঃ  ‘Mores’ এই ল্যাটিন বিশেষণ থেকে Morality শব্দটির উৎপত্তি।Mores শব্দের অর্থ হল আচার আচরণ। তাই Morality বলতে বোঝায় মানুষের আচার আচরণ নিয়ে আলোচনা।

 

৪. নীতিবিদ্যার ব্যবহারিক উপযোগিতা কতটুকু ?

উত্তরঃ  নীতিবিদ্যা মানবজীবনের পরম কল্যাণের স্বরূপ নির্ণয় করে। পরম কল্যাণের আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহারিক জীবনে আমাদের কর্তব্য কী হবে, তা স্থির করতে পারি। নীতি বিদ্যা মানুষের ব্যক্তিগত বিবেকবুদ্ধি জাগ্রত করে তাকে সর্বদা সদাচার করতে সহায়তা করে। তাই  নীতিবিদ্যার ব্যবহারিক উপযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

৫. নীতিবিদ্যা কি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ?

উত্তরঃ  নীতিবিদ্যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নয়, নীতিবিদ্যা হল  আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান। কারণ প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ব্যাবহারিক বা ইন্দ্রিয় জগতের সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু নীতিবিদ্যা বিজ্ঞানের বিশেষ প্রদ্ধতি অনুসরণ করলেও তা মানুষের আচরণের ভালমন্দ, উচিত-অনুচিত নিয়ে আলোচনা করে।

 

৬. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান কী ?

উত্তরঃ  যে বিজ্ঞান আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন করে তাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলে। নীতিবিদ্যা বিজ্ঞানের বিশেষ প্রদ্ধতি অনুসরণ করলেও তা মানুষের আচরণের ভালমন্দ, উচিত-অনুচিত নিয়ে আলোচনা করে। নীতিবিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের একটি শাখা। কারণ এর নির্দিষ্ট বিষয়ব। আছে, পদ্ধতি আছে। এর বিষয় হল মানুষের আচরণ এবং পদ্ধতি হল বিচার-বিশ্লেষণ।

 

৭. বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান ও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানের পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ  ব্যাপক অর্থে বিজ্ঞানকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা- একটি হল বস্তুনিষ্ট বিজ্ঞান বা Positive Science এবং অপরটি হল আর্দশনিষ্ট বিজ্ঞান বা Normative Science এখন বস্তুনিষ্ট বিজ্ঞান বলতে কাকে বোঝায়? যে বিজ্ঞান বস্তুর বা ঘটনার উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ ও যথাযথ প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এবং বর্ণনা করে তাকে বস্তুনিষ্ট বিজ্ঞান বলা হয়। অপরদিকে বিষয়বস্তু যেভাবে প্রতিভাত হয়, তাকে ঠিক সেই ভাবে বর্ণনা করে বলে এই শ্রেণির বিজ্ঞানকে বর্ণনামূলক বিজ্ঞান (Descriptive Science) বলা হয়। পদার্থবিদা, জীববিদ্যা, সমাজবিদ্যা, মনোবিদ্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অর্ন্তভুক্ত।

 

৮. নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় কী ?

উত্তরঃ  নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হল সমাজে বসবাসকারী সুস্থ মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়া বা আচরণ। মানুষের স্বেচ্ছাকৃত কর্ম বা আচরণের নৈতিক বিচার হয়। স্বেচ্ছাকৃত কর্মের তিনটি স্তর আছে যথা -মানষিক, দৈহিক ও বাহ্যস্তর বা ফলাফল। মানুষের দৈহিক স্তর নীতিবিদ্যার বিচারের বিষয় নয়, মানষিক ও ফলাফল নীতিবিদ্যার বিচারের বিষয়বস্তু ।

 

৯. নীতিবিদ্যা কয়প্রকার ?

উত্তরঃ  নীতিবিদ্যা প্রধানত দুপ্রকার-

১. বিশুদ্ধ বা তাত্ত্বিক নীতিবিদ্যা – যেখানে মানুষের করমের বিভিন্ন আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা হয় তা হল বিশুদ্ধ নীতিবিদ্যা।

২. ব্যবহারিক বা ফলিত নীতিবিদ্যা- যে নীতিবিদ্যায় মানুষের আচরণের ব্যাবহারিক গুরুত্ব দেওয়া হয় তাকে ব্যবহারিক নীতিবিদ্যা বলে। ব্যবহারিক নীতিবিদ্যার বিভিন্ন প্রকার আছে। যেমন পরিবেশ নীতিবিদ্যা, প্রাণকেন্দ্রিক নীতিবিদ্যা ইত্যাদি।

 

 ১০. নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ  নীতিবিদ্যা নৈতিক আদর্শের প্রেক্ষিতে মানুষের আচরণের মূল্যায়ন করে বলে নীতিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয়। নীতিবিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের একটি শাখা। কারণ এর নির্দিষ্ট বিষয়ব আছে, পদ্ধতি আছে। এর বিষয় হল মানুষের আচরণ এবং পদ্ধতি হল বিচার-বিশ্লেষণ। নীতিবিজ্ঞান মানুষের আচরণের স্বরূপ, উৎপত্তি অথবা বিকাশ নিয়ে আলোচনা না করে আর্দশের মাপকাঠিতে মানুষের আচরণ ভাল কি মন্দ তাই বিচার করে। আর সেই জন্যই নীতিবিজ্ঞান আর্দশনিষ্ট বিজ্ঞান।

 

১১. উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ  অধ্যাপক বেন্থাম বলেছেন উদ্দেশ্য হল তাই যার জন্য কর্মটি সম্পাদিত হয়। কিন্তু অভিপ্রায় হল যার জন্য এবং যার বাধা সত্ত্বেও কর্মটি সম্পাদিত হয়। উদ্দেশ্যের মধ্যে ব্যক্তিকে কাজে প্রবৃত্ত করার মত উপাদান থাকে কিন্তু প্রতিরোধ মূলক উপাদান থাকে না।কিন্তু অভিপ্রায়ের মধ্যে যেমন কাজে প্রবৃত্তি মূলক উপাদান থাকে তেমনই কর্মটিকে বাধা দেওয়ার উপাদান থাকে। অর্থাৎ উদ্দেশ্যের মধ্যে থাকে লক্ষ্য বস্তু এবং অভিপ্রায়ের মধ্যে থাকে লক্ষ্য লাভের উপায় ও পরিনাম।

 

১২. অভিপ্রায় শব্দের অর্থ কী ?

উত্তরঃ  যে মানসিক স্তরে উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্যসাধনের উপায় এবং উদ্দেশ্যসাধনের সম্ভাব্য পরিণাম সম্পর্কে ধারণা থাকে, তাকে অভিপ্রায় বলে। অভিপ্রায় উদ্দেশ্য অপেক্ষা অধিকতর ব্যাপক মানসিক স্তর। উদ্দেশ্য হল অভিপ্রায়ের একটি উপাদান। কোনো কাজ করতে গেলে শুধুমাত্র কাজের উদ্দেশ্য থাকলেই যথেষ্ট নয় কি উপায় অবলম্বন করে উদ্দেশ্য পুরন করতে হবে এবং ওই উপায় অবলম্বনের ফলে কী পরিনাম ঘটবে তার ধারণা থাকা চাই।

 

 ১৩. অনৈতিক ক্রিয়া কাকে বলে ?

উত্তরঃ  যে ক্রিয়ার উদ্দেশ্য এবং উপায় ব্যক্তির স্বনির্বাচিত নয়, যে ক্রিয়ার পশ্চাতে কর্তার কোন পরিকল্পনা নেই-সেই ক্রিয়াকে ব্যাপক অর্থে অনৈতিক ক্রিয়া বলে। নীতি বর্হিভূত ক্রিয়াকেই বলা হয় অনৈতিক ক্রিয়া। যে সমস্ত কাজের নৈতিক কোন গুণ থাকে না তাকে বলা হয় নীতি বহির্ভূত ক্রিয়া। অর্থাৎ যে কাজকে ভাল মন্দ, উচিত- অনুচিত  ইত্যাদি কিছুই বলা যায় না তাদের নীতি বহির্ভূত ক্রিয়া বলা হয়।

 

১৪. অনৈচ্ছিক বা নীতিবহির্ভূত ক্রিয়াগুলি কী কী ?

উত্তরঃ অনৈচ্ছিক বা নীতিবহির্ভূত ক্রিয়াগুলি হল-

১. স্বতঃসঞ্জাত ক্রিয়া

২. প্রতিবর্ত ক্রিয়া,

৩. সহজাত ক্রিয়া,

৪.  ভাবনাজ ক্রিয়া,

৫. শিশুদের অনুকরণশীল ক্রিয়া,

৬. অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তির ক্রিয়া,

৭. বাধ্যতামূলক ক্রিয়া।

 

১৫. অনৈতিক ও নীতিগর্হিত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী ?

উত্তরঃ অনৈতিক ও নীতিগর্হিত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য হল –

১. অনৈতিক ক্রিয়া অনৈচ্ছিক ক্রিয়া, অপরদিকে নীতিগর্হিত ক্রিয়া ঐচ্ছিক ক্রিয়া, এটি ব্যাপক অর্থে নৈতিক ক্রিয়া।

২. অনৈতিক ক্রিয়ার নৈতিক বিচার হয় না অর্থাৎ ভাল- মন্দ , উচিত-আনুচিত ইত্যাদি বিশেষণ প্রয়োগ কারা যায় না । অপরদিকে নীতিগর্হিত ক্রিয়া হল এমন ক্রিয়া যার নৈতিক বিচার হয় অর্থাৎ ভাল- মন্দ , উচিত-আনুচিত ইত্যাদি বিশেষণ প্রয়োগ কারা যায়।

 

১৬. ব্যাপক অর্থে নৈতিক ক্রিয়ার বিপরীত শব্দ কী ?

উত্তরঃ  ব্যাপক অর্থে ভালো এবং মন্দ উভয় প্রকার ক্রিয়া নৈতিক ক্রিয়া। কাজেই নৈতিক ক্রিয়ার বিপরীত শব্দ হল অনৈতিক ক্রিয়া।

 

১৭. উদ্দেশ্য কাকে বলে ?

উত্তরঃ  উদ্দেশ্য হল এমন একটি মানষিক অবস্থা যা ব্যক্তিকে একটি বিশেষ কাজ করতে বাধ্য করে এবং  এই কারণে কাজের পিছনে একটি মানষিক আবেগ কাজ করে। যেমন- চাকুরি লাভের জন্য যখন কোন ব্যক্তি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তখন চাকুরি লাভ হচ্ছে উদ্দেশ্য।

 

১৮. ঠিক বা যথোচিত (Right) কাজ কী ?

উত্তরঃ  ‘যথোচিত’ শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হল ‘right’। এই ইংরাজী শব্দটি এসেছে একটি গ্রীক শব্দ ‘rectus’ থেকে। ‘rectus’ এর অর্থ হল ‘straight’ বা সোজা। এখানে ‘সোজা’ মানে যা নিয়মকে অনুসরণ করে। এইভাবে ব্যুৎপত্তি বিচার করলে দেখা যায় যে নিয়মানুগ বা বিধিসম্মত কাজই ‘যথোচিত’ (right)।

 

১৯. ভুল বা অনুচিত (wrong) কাজ কী ?

উত্তরঃ  আবার ‘অনুচিত’ শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হল ‘wrong’ যা এসেছে Latin শব্দ ‘wring’ থেকে। ‘wring’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘মোচড়ান’। যা লক্ষাভ্রষ্ট, যা বিধিকে মানে না তাই ‘wrong’ বা অনুচিত। সুতরাং নিয়মবহির্ভূত কাজ মাত্রই অনুচিত। যে কাজ বিধিসম্মত নয় তা অনুচিত।

 

২০. ভাল ও মন্দ বলতে কি বোঝান হয় (Good and Bad) ?

উত্তরঃ  ব্যুপত্তিগতভাবে আমরা হয়ত ভালো-মন্দ শব্দ দুটির অর্থ নির্ণয় করার চেষ্টা করতে পারি। ইংরাজী ‘Good’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হল ভালো। ‘Good’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে জার্মান শব্দ ‘Got’ থেকে। এই জার্মান শব্দটির অর্থ হল যা কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে। আসলে Good’ বা ভালো শব্দটি একটি বস্তু বা ঘটনার প্রতি আমাদের ইতিবাচক বা অনুমোদনমূলক মনোভাবকে বোঝায়। যে কাজ মন্দ তা করা উচিৎ নয়। মন্দ-অর্থে অকল্যাণকে বোঝান হয়। সুতরাং ‘ভালো’ শব্দটি যেমন উপায়কে (means) বোঝায় সেইরকম উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে (end) বোঝায়।

 


 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর 3 ও 4 Marks-এর 

 

১. উদ্দেশ্য কাকে বলে ?

উত্তরঃ  মানুষের স্বেচ্ছাকৃত কর্ম বা আচরণের নৈতিক বিচার হয়। স্বেচ্ছাকৃত কর্মের তিনটি স্তর আছে যথা -মানষিক, দৈহিক ও বাহ্যস্তর বা ফলাফল। মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়ার তিনটি স্তরের মধ্যে মানসিক স্তরই সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে কামনাকে বলা হয় উদ্দেশ্য এবং বিবেচনাকে বলা হয় অভিপ্রায়।

উদ্দেশ্য হল এমন একটি মানষিক অবস্থা যা ব্যক্তিকে একটি বিশেষ কাজ করতে বাধ্য করে এবং  এই কারণে কাজের পিছনে একটি মানষিক আবেগ কাজ করে। যেমন- চাকুরি লাভের জন্য যখন কোন ব্যক্তি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তখন চাকুরি লাভ হচ্ছে উদ্দেশ্য।

নীতিবিদদের প্রদত্ত উদ্দেশের সংজ্ঞা গুলি হল-

 ১. ম্যাকেঞ্জি, গ্রীন, মূরহেড প্রমুখ নীতিবিদদের মতে উদ্দেশ্য হচ্ছে লক্ষ্যবস্তু বা বলা যায় কাম্যবস্তুর ধারণা যা কোন মানুষকে কর্মে প্রবৃত্ত করে। গ্রীন বলেন, যে লক্ষ্যটিকে মানুষ আত্মসচেতনভাবে নিজের কাছে উপস্থাপিত করে এবং যাকে বাস্তবায়িত করার জন্য সে সচেষ্ট হয় সেই লক্ষ্যের ধারণা হচ্ছে উদ্দেশ্য (Motive)।

২.  মিল উদ্দেশ্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন যে সুখ দুঃ যের অনুভূতি আমাদের কর্মে প্রবৃত্ত করায় তাই উদ্দেশ্য (Feeling of pleasure or pain only are motives of action)।

৩. বেস্থাম বলেছেন, সুখ বা দুঃখ যা আমাদের কোন বিশেষ আচরণ করায় সেই অনুভূতি ছাড়া উদ্দেশ্য অন্য কিছু নয়। (A motive is substantially nothing more the pleasure or pain operating in a certain manner.)

৪. হিউম, মিল, বেস্থাম, বেইন প্রমুখদের মতে সুখ-দুঃখের অনুভূতিই হল উদ্দেশ্য যা মানুষকে প্রধাণত কর্মে প্রবৃত্ত করে।

সুতরাং বলা যায় উদ্দেশ্য হল একটি জটিল মানসিক অবস্থা। এতে একদিকে যেমন দুঃখানুভূতি থাকে, অপর দিকে তেমনি বিচারের সাহায্যে নির্ধারিত আকাঙ্খা বস্তুর স্পষ্ট ধারণা এবং তা পাবার জন্য প্রবল আগ্রহ বর্তমান থাকে।

 

 ২. অভিপ্রায় কাকে বলে ?

উত্তরঃ  অভিপ্রায় উদ্দেশ্য অপেক্ষা অধিকতর ব্যাপক মানসিক স্তর। উদ্দেশ্য হল অভিপ্রায়ের একটি উপাদান। কোনো কাজ করতে গেলে শুধুমাত্র কাজের উদ্দেশ্য থাকলেই যথেষ্ট নয় কি উপায় অবলম্বন করে উদ্দেশ্য পুরন করতে হবে এবং ওই উপায় অবলম্বনের ফলে কী পরিনাম ঘটবে তার ধারণা থাকা চাই। তাই  কাম্যবস্তুর ধারণা বা উদ্দেশ্য সাধনের উপায়কে বলা হয় অভিপ্রায়। ফলাফলের চিন্তা বা প্রত্যাশিত পরিণাম, এই সব কিছু মিলিয়ে যে জটিল মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় অভিপ্রায়।

উদ্দেশ্য অভিপ্রায়ে একটা অংশমাত্র। অভিপ্রায় বলতে শুধু কাম্যবস্তুর ধারণাই বোঝায় না, কাম্যবস্তুটি পাবার উপায় এবং তার ফলে যে পরিণামগুলি সেগুলোকেও বোঝায়। অভিপ্রায় হল একার অতীব জটিল মানসিক অবস্থা।

কোনো কাজ করতে গেলে শুধুমাত্র কাজের উদ্দেশ্য থাকলেই যথেষ্ট নয় কি উপায় অবলম্বন করে উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে এবং ওই উপায় অবলম্বনের ফলে কী পরিনাম ঘটবে তার ধারণা থাকা চাই। অর্থাৎ অভিপ্রায়ের মধ্যে উদ্দেশ্য, কাম্যবস্তু, এবং পরিনাম মিশ্রিত হয়ে থাকে। যেমন – ছেলের কল্যাণের জন্য পিতা ছেলেকে শাস্তি দেয় এখানে পিতার উদ্দেশ্য হল ছেলের কল্যাণ করা এবং অভিপ্রায় হল ছেলের কল্যাণ ও শাস্তি দেওয়া।

অভিপ্রায় যেমন বেদনাজনিত দুঃখ অনুভূতি থাকে, থাকে বিচারপূর্বক লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা।  প্রধাণত বলা যেতে পারে যে অভিপ্রায়ের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র প্রকাশ পায়। এমনকি কোন কার্যের ন্যায়-অন্যায় বিচার করতে হলে অভিপ্রায়ই হল প্রধান বিচার্য বিষয়।

অভিপ্রায় (Intention):- কাম্যবস্তুর ধারণা বা লক্ষ্য (উদ্দেশ্য) সাধনের উপায়ে ফলাফলের চিন্তা বা প্রত্যাশিত পরিণাম, এই সব কিছু মিলিয়ে যে জটিল মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় অভিপ্রায়। অভিপ্রায় উদ্দেশ্য অপেক্ষা ব্যাপক। উদ্দেশ্য অভিপ্রায়ের একটা অংশমাত্র। অভিপ্রায় বলতে শুধু কাম্যবস্তুর ধারণাই বোঝায় না, কাম্যবস্তুটি পাবার উপায় এবং তার ফলে যে পরিণামগুলি সেগুলোকেও বোঝায়।

অভিপ্রায় হল একটি অতীব জটিল মানসিক অবস্থা। এতে যেমন বেদনাজনিত দুঃখ অনুভূতি থাকে, থাকে বিচারপূর্বক লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা, আবার এতে থাকে উপায়ের বিচার ও নির্ধারণ তেমনি থাকে আনুষাঙ্গিক ঘটনা চিন্তন এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি। প্রধাণত বলা যেতে পারে যে অভিপ্রায়ের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র প্রকাশ পায়। এমনকি কোন কার্যের ন্যায়-অন্যায় বিচার করতে হলে অভিপ্রায়ই হল প্রধান বিচার্য বিষয়।

 

৩. অভিপ্রায়ের প্রকারভেদ গুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ  ম্যাকেঞ্জি (Mackenzie) পাঁচ প্রকার অভিপ্রায়ের কথা বলেছেন। যথা

১। তাৎক্ষণিক এবং দূরবর্তী অভিপ্রায়: 

কোন ব্যক্তিকে খুন করে পালাতে গিয়ে যদি খুনী নদীতে ঝাঁপ দেন, সেক্ষেত্রে সেই খুনী বক্তিকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে একজন সাধারণ লোকের আসন্ন অভিপ্রায় হচ্ছে ঐ ব্যক্তির জীবনরক্ষা করা। অপরপক্ষে পুলিশের অভিপ্রায় হচ্ছে বিচারের পর তাকে ফাঁসিতে ঝোলান।

২। বাহ্য অভিপ্রায় ও আন্তর অভিপ্রায়:

কোন ব্যক্তি যদি দীর্ঘদিন ধরে কোন রোগে আক্রান্ত হলে তাকে সেবা করা হল  বাহ্য অভিপ্রায়। অপরদিকে ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তির কষ্টের জন্য মানসিক অস্বস্তি দূর করা হল আন্তর অভিপ্রায়।

৩। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অভিপ্রায়:

কোন একজন ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেনের এক বিশিষ্ট যাত্রীকে হত্যা করা হচ্ছে প্রত্যক্ষ অভিপ্রায়। অপরপক্ষে একই সঙ্গে অন্যান্য যাত্রীদের মৃত্যু ঘটানো হচ্ছে, পরোক্ষ অভিপ্রায়।

৪। সচেতন ও অচেতন অভিপ্রায়:-

কোন ব্যক্তির সচেতন অভিপ্রায় হল জনকল্যাণ করা। কিন্তু এর মূলে হল নিজের খ্যাতি বৃদ্ধি করা,  যা হল অচেতন অভিপ্রায়।

৫। আকারগত ও বস্তুগত অভিপ্রায়:

কোন একটি সরকারের পতন ঘটানোর জন্য দুজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বস্তুগত অভিপ্রায় অভিন্ন হলেও তাদের একজনের আকারগত অভিপ্রায় হতে পারে যে সংরক্ষণশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

 


 

ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তরMarks-এর

 

১. নীতিবিদ্যার স্বরূপ লেখো ?

উত্তরঃ  নীতিবিদা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Ethics’ ।  Ethics শব্দটির গ্রীক শব্দ Ethica থেকে এসেছে। Ethica শব্দটির অর্থ হল চরিত্র – যা অভ্যস, আচার ব্যবহার ও রীতি নীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ ভাবে যুক্ত। তাই নীতিবিদ্যা হল মানুষের আচার আচরণের বিজ্ঞান। অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জি বলেছেন ‘Ethics Maybe defined as the study of what is right or good in conduct’ অর্থাৎ নীতিবিদ্যা হল আচরণের ঔচিত্য বা ভালোত্ব্য সম্পর্কিত আলোচনা।

প্রত্যেক বিজ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট প্রকৃতি থাকে প্রকৃতি অনুসারে বিজ্ঞান দুই প্রকার। বস্তুনিষ্ট বিজ্ঞান ও আদর্শ নিষ্ট বিজ্ঞান। যে বিজ্ঞান বস্তু জগৎ – এর ঘটনার বর্ণনা দেয় তাকে বস্তু নিষ্ট বিজ্ঞান বলে আর যে বিজ্ঞান বস্তু জগৎ – এর ঘটনার বর্ণানা দেওয়ার পরিবর্তে কোনো আদর্শ মানদন্ডের দ্বারা তাদের মূল্যায়ন করে তাকে বলা হয় আদর্শ নিষ্ট বিজ্ঞান।

নীতিবিদ্যা একটি বিজ্ঞান কিন্তু তা বস্তু নিষ্ট নয়, আদর্শ নিষ্ট বিজ্ঞান। কারণ নীতিবিদ্যা কখন ও বস্তু জগৎ  -এর ঘটনার বর্ণনা দেয় না, কোন এক আদর্শকে সামনে রেখে ওই সব ঘটনার মূল্য বিচার করে মানব জীবনের তিনটি আদর্শ হল – সত্য , শিব ও সুন্দর। এই তিনটি আদর্শের মধ্যে শিব বা কল্যাণকে মানদন্ড রূপে গ্রহণ করে নীতিবিদ্যা মানুষের স্বেচ্ছাকৃত কর্মের নৈতিক মূল্যায়ন করে। তাই নীতিবিদ্যা একটি আদর্শ নিষ্ট বিজ্ঞান।

নীতিবিদ্যা মানব আচরণ নিয়ে আলোচনা করে, মানুষ্যত্বর প্রানীর নয়। কারণ মানুষই একমাত্র বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে স্বেচ্ছাকৃত কর্ম করতে পারে। কিন্তু মনুষ্যত্তর প্রাণীরা বিচার বুদ্ধির পরিবর্তে জৈবিক প্রবৃতি বসত আচরণ করে।

মানুষের আচরণের ক্ষেত্রে বিচার বুদ্ধির প্রয়োগ থাকে বলে নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণের উপর নৈতিক মানদন্ড প্রয়োগ করে। আচরণের মূল্যায়ন করে। মানুষের আচরণ স্বেচ্ছাকৃত, মানুষ চাইলে সৎ কর্ম করতে পারে আবার অসৎ কর্ম করতে পারে। কিন্তু মনুষ্যত্তর প্রানীর আচরণ মানুষের মতো স্বেচ্ছাকৃত নয়। তাই নীতিবিদ্যা কেবলমাত্র মানুষের স্বেচ্ছাকৃত আচরণের মূল্যায়ন করে।

 

২. নীতিবিদ্যার পরিধি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ  প্রত্যেক বিজ্ঞানের মতো নীতি বিদ্যারও কতকগুলি সুনির্দিষ্ট বিষয় আছে। ওইসব আলোচ্য বিষয়গুলি হল নীতিবিদ্যার পরিধি। নীতিবিদ্যার পরিধির অন্তর্গত বিষয়গুলি হল –

  1. নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় মানুষের আচার আচরণ। আচরণ বলতে মানুষের ঐচ্ছিক ক্রিয়াকে বোঝায়। কারণ ঐচ্ছিক ক্রিয়াকেই একমাত্র নীতিবিদ্যার মানদন্ড দ্বারা বিচার করা যায়।

 

  1. নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণ সংক্রান্ত আদর্শ নিষ্ট বিজ্ঞান। আদর্শ হল যা উচিৎ। মানুষের মিথ্যা কথা বলা উচিৎ কিনা এমন আদর্শ বিচার করাই হল নীতিবিদ্যার কাজ। মানব জীবনের চরম সত্য কী সুখ বা আত্মউপলব্ধি বা অন্যকিছু এই প্রকার তাত্ত্বিক আলোচনা নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।

 

  1. নীতিবিদ্যা নৈতিক ভাবাবেগ ও নৈতিক বিচার শক্তি নিয়ে আলোচনা করে। সৎ কার্য করলে মানুষের মনে সন্তুষ্টি আসে। এবং অসৎ কার্য করলে মানুষের মনে অসনতোষ সৃষ্টি হয়। সৎ ও অসৎ কার্যের প্রতি এই প্রকার মনোভাবই হল নৈতিক ভাবাবেগ। নীতিবিদ্যার এই রূপ নৈতিক ভাবাবেগের সরূপ নির্ণয় যায়।

 

  1. নীতিবিদ্যা যেহেতু মানুষের আচার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে তাই সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির সম্বন্ধ নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক নির্ণয় করতে গিয়ে নীতিবিদ্যা কোন কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে। যেমন অপরাধিকে শাস্তি দেওয়া কি উচিৎ ? প্রাণদন্ড কী সমর্থন যোগ্য।

 

  1. নীতিবিদ্যা বিভিন্ন নৈতিক প্রত্যয়ের যেমন ভালো মন্দ, শুভ – অশুভ, ন্যায় – অন্যায়, উচিৎ – অনুচিত ইত্যাদি নৈতিক বিশেষণের সুস্পষ্ট অর্থ নির্ধারন করে। তাই নীতিবিদ্যার প্রধান কাজ হল নৈতিক প্রত্যয় গুলি অস্পষ্ট অর্থকে সুস্পষ্ট করা।

 

  1. প্রত্যেকটি বিজ্ঞানের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই নীতি বিদ্যার সাথেও মনোবিজ্ঞান অধিবিদ্যা সমাজ বিজ্ঞান ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। ঐচ্ছিক ক্রিয়া, ইচ্ছার স্বাধীনতা, সুখ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মনোবিদ্যা ও নীতিবিদ্যা উভয়ই আলোচনা করে। ব্যক্তি সমাজের সম্বন্ধ, অপরাধ, শাস্ত্রি ইত্যাদি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের বিষয়ও নীতি বিদ্যার অন্তর্ভুক্ত।

 

৩. উদ্দেশ্য কাকে বলে ? অভিপ্রায় কাকে বলে ? এদের মধ্যে নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু কোনটি ?

উত্তরঃ 

উদ্দেশ্যঃ

উদ্দেশ্য হল এমন একটি মানষিক অবস্থা যা ব্যক্তিকে একটি বিশেষ কাজ করতে বাধ্য করে এবং  এই কারণে কাজের পিছনে একটি মানষিক আবেগ কাজ করে।

অভিপ্রায়ঃ

অভিপ্রায় উদ্দেশ্য অপেক্ষা অধিকতর ব্যাপক মানসিক স্তর। উদ্দেশ্য হল অভিপ্রায়ের একটি উপাদান। কোনো কাজ করতে গেলে শুধুমাত্র কাজের উদ্দেশ্য থাকলেই যথেষ্ট নয় কি উপায় অবলম্বন করে উদ্দেশ্য পুরন করতে হবে এবং ওই উপায় অবলম্বনের ফলে কী পরিনাম ঘটবে তার ধারণা থাকা চাই।

নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তুঃ 

মানুষের স্বেচ্ছাকৃত কর্ম বা আচরণের নৈতিক বিচার হয়। স্বেচ্ছাকৃত কর্মের তিনটি স্তর আছে যথা -মানষিক, দৈহিক ও বাহ্যস্তর বা ফলাফল। মানুষের দৈহিক স্তর নীতিবিদ্যার বিচারের বিষয় নয়, মানষিক ও ফলাফল নীতিবিদ্যার বিচারের বিষয়বস্তু । এখন প্রশ্ন হল একটি কাজের বিচার করার সময় আমরা কোন দিকে দৃষ্টি রাখবো- কাজের উদ্দেশ্যের দিকে না অভিপ্রায়ের  দিকে ?  এই প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে নীতিবিদদের মধ্যে মত পার্থক্য আছে।

একদল নীতিবিদগণ মনে করেন উদ্দেশ্যই হল নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু। কান্টের মতে কাজের ফল নয় কাজটি কী উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তাই হল নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু। স্বাজ্ঞাবাদী দার্শনিক মাটিনিউ বলেছেন কেবল উদ্দেশ্য দেখেই কাজের নৈতিক মূল্য বিচার করা যায়। উদ্দেশ্য যদি ভালো হয় তাহলে কাজটি  ভালো হবে, আর উদ্দেশ্য যদি মন্দ হয় তাহলে কাজটিও মন্দ হবে। যেমন একজন সাধু ব্যক্তি যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে তা স্বভাবতই ভালো হবে এবং একজন অসাধু ব্যক্তি যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে সে কাজ মন্দ হতে বাধ্য ।

কাজেই কোনো একটি কাজের উদ্দেশ্য কেমন হবে তার উপর ভিত্তি করে কাজের ফলাফলের প্রকৃতি। উদ্দেশ্যের সঙ্গে ফলাফলের সঙ্গতি না থাকলে সেখানে যে ফলাফলটি উৎপন্ন হয় তা থেকে কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়। অর্থাৎ কেবলমাত্র ফলাফলে বিচারে কাজের নৈতিক বিচার সঙ্গত হবেনা।

এই কারণে কাজের কর্মফল ভালো হলেও যদি উদ্দেশ্য মন্দ হয় তাহলে সেই কাজকে ভালো বলা যায় না। যেমন – একজন ভিখারির প্রতি বিরোক্ত হয়ে তার মাথায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে একটি মুদ্রা ছুড়ে মারা হল কিন্তু মুদ্রার লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে মাটিতে পরে গেল এবং ভিকারিটি মুদ্রাটি কুড়িয়ে নিয়ে খাবার কিনে নিল। এখানে বাহ্যিক ফল ভালো হলেও উদ্দেশ্য মন্দ হওয়ায় কাজটি মন্দ বলে বিবেচিত হবে।

উপরিউক্ত কারণে সজ্ঞাবাদীদের অভিমত গ্রহণ করা যায় না। কেননা তাতে অনেক নীতি বর্হিভূত কাজকে নীতি সম্মত রূপ গ্রহণ করতে হয়। তাই কেবল উদ্দেশ্যকে নৈতিক বিচারে একমাত্র বিষয়বস্তু বলা যাবে না। উদ্দেশ্যের উপায় বা অভিপ্রায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মিল বেন্থাম প্রমূখ উপযোগীতাবাদী দার্শনিকগণ অভিপ্রায়কে নৈতিক বিচারের বিষয়বস্তু বলেছেন।

কোনো কাজের অভিপ্রায় যদি ভালো হয় তবেই কাজটিকে ভালো বলা যায়। তা নাহলে কাজটি মন্দ হয়। যেমন একজন গরীব মানুষ তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য কোনো ধনী ব্যক্তিকে খুন করে তার সম্পত্তি নিয়ে দারিদ্রতার অবসান ঘটাতে পারেন। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি বিচার করে তার কাজকে খারাপ বলা যায় না, কিন্তু তার কাজের ফলাফল সে এরিয়ে যেতে পারে না। ফলাফল মন্দ বলেই তার কাজকে ভালো বলা যাবে না অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও উপায় একত্রে অভিপ্রায় গঠন করে সুতরাং অভিপ্রায়ই হল নৈতিক বিচারের বিষয় বস্তু।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা গেল যে একমাত্র স্বেচ্ছাকৃত, ক্রিয়াই, নীতি সম্মত, এই ক্রিয়াই ন্যায় – অন্যায়, উচিৎ – অনুচিত বলে গণ্য হয়।  কারণ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায়ের দ্বারা চালিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে একজন শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন সচেতন মানুষের দ্বারা এই ক্রিয়া সম্পূর্ন হয়।

 

৪. উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের পার্থক্য লেখ ?

উত্তরঃ  প্রতিটি কাজের পিছনে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় থাকে দৈনন্দিন জীবনে আমরা উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়কে এক অর্থে প্রয়োগ করে থাকি কিন্তু নীতিবিদ্যায় এই দুটি শব্দকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

প্রথমত,

উদ্দেশ্য হল এমন একটি মানষিক অবস্থা যা ব্যক্তিকে একটি বিশেষ কাজ করতে বাধ্য করে এবং  এই কারণে কাজের পিছনে একটি মানষিক আবেগ কাজ করে। অধ্যাপক লিলি বলেছেন উদ্দেশ্য হল একটি সচেতন মানষিক ক্রিয়া, একজন মানুষকে বিশেষ ভাবে কোনো একটি কাজ করতে এগিয়ে দেয়। যেমন- আমর খাবার ইচ্ছা হলে তবেই আমি রেস্তরায় গিয়ে খাবার সন্ধান করি,  খাদ্যের প্রতি এই বাসনাটি হল উদ্দেশ্য।

অপরদিকে অভিপ্রায় উদ্দেশ্য অপেক্ষা অধিকতর ব্যাপক মানসিক স্তর। উদ্দেশ্য হল অভিপ্রায়ের একটি উপাদান। কোনো কাজ করতে গেলে শুধুমাত্র কাজের উদ্দেশ্য থাকলেই যথেষ্ট নয় কি উপায় অবলম্বন করে উদ্দেশ্য পুরন করতে হবে এবং ওই উপায় অবলম্বনের ফলে কী পরিনাম ঘটবে তার ধারণা থাকা চাই। অর্থাৎ অভিপ্রায়ের মধ্যে উদ্দেশ্য, কাম্যবস্তু, এবং পরিনাম মিশ্রিত হয়ে থাকে। যেমন – ছেলের কল্যাণের জন্য পিতা ছেলেকে শাস্তি দেয় এখানে পিতার উদ্দেশ্য হল ছেলের কল্যাণ করা এবং অভিপ্রায় হল ছেলের কল্যাণ ও শাস্তি দেওয়া।

 দ্বিতীয়ত,

অধ্যাপক বেন্থাম বলেছেন উদ্দেশ্য হল তাই যার জন্য কর্মটি সম্পাদিত হয়। কিন্তু অভিপ্রায় হল যার জন্য এবং যার বাধা সত্ত্বেও কর্মটি সম্পাদিত হয়। উদ্দেশ্যের মধ্যে ব্যক্তিকে কাজে প্রবৃত্ত করার মত উপাদান থাকে কিন্তু প্রতিরোধ মূলক উপাদান থাকে না।কিন্তু অভিপ্রায়ের মধ্যে যেমন কাজে প্রবৃত্তি মূলক উপাদান থাকে তেমনই কর্মটিকে বাধা দেওয়ার উপাদান থাকে। অর্থাৎ উদ্দেশ্যের মধ্যে থাকে লক্ষ্য বস্তু এবং অভিপ্রায়ের মধ্যে থাকে লক্ষ্য লাভের উপায় ও পরিনাম।

তৃতীয়ত,

উদ্দেশ্য কর্মকর্তার নিজের মনের অবস্থাটি প্রকাশ করে অর্থাৎ কর্মকর্তা কি মনোভাব নিয়ে কাজটি করছে তার উদ্দেশ্য নির্দেশ করে।

অপরদিকে, অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা এমন অনেক কিছু করার পরিকল্পনা করবে যার প্রতি তার কোনো বাসনা নেই, উদাহরণ সরূপ বলা যায় একজন ব্যক্তির উদ্দেশ্য হল বিদেশ গিয়ে অর্থ উপাজর্ন করা কিন্তু তার অভিপ্রায়ের অন্তর্ভুক্ত হল আরো অনেক কিছু।

চতুর্থত

অধ্যাপক লিলি  বলেছেন-মানুষের অভিপ্রায় হল তার বাইরের জগৎ।

আর উদ্দেশ্য হল কর্ম কর্তার নিজের মনের অবস্থা।

পঞ্চমত

উদ্দেশ্য স্ব-নির্ভর কিন্তু অভিপ্রায় উদ্দেশ্য নির্ভর।

 

৫. নৈতিক ও অনৈতিক ক্রিয়ার মধ্যে তুলনা (Difference between Moral and Non-moral Actions) করো ।

উত্তরঃ 

ভূমিকাঃ

মানুষের ক্রিয়া দুই প্রকার ঐচ্ছিক ক্রিয়া এবং অনৈচ্ছিক ক্রিয়া। ঐচ্ছিক ক্রিয়াকেই একমাত্র ভাল মন্দ আখ্যা দেওয়া যায়। আচরণ বলতে ঐচ্ছিক ক্রিয়াকে বুঝতে হবে। যে ক্রিয়ার উদ্দেশ্য ও উপায় ব্যক্তির স্বনির্বাচিত, সেই ক্রিয়াকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলে। নীতিবিজ্ঞানে নৈতিক ও অনৈতিক শব্দ দুটিকে পরস্পর বিপরীত বলে মনে করা হয়।

প্রথমত,

নৈতিক বলতে শুধুমাত্র যে কাজ ভাল বা যথার্থ সেই কাজকে বোঝায়।আর যে কাজ মন্দ বা অযথার্থ তাকে অনৈতিক কাজ বলা হয়। তবে নীতিবিদ্যায় নৈতিক ও অনৈতিক শব্দ দুটিকে  ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে।

নীতিবিজ্ঞানে নৈতিক ক্রিয়া বলতে সেই কাজকে বোঝানো হয়, যে কাজের নৈতিক গুণ আছে। নৈতিক বিচারের অর্ন্তভুক্ত ক্রিয়াকে নৈতিক ক্রিয়া (moral action) বলা হয়। অর্থাৎ  নৈতিক ক্রিয়া বলতে সেইসব ক্রিয়াগুলিকে বোঝানো হয় সেগুলিকে ভালো বা মন্দ, ন্যায় বা অন্যায় বলা হয়। যেমন-আর্তের সেবা করা, সত্য কথা বলা নৈতিক কাজ।

অপরদিকে যে কাজের নৈতিকগুণ নেই অর্থাৎ যে কাজকে ভালো বা মন্দ, যথার্থ বা অযথার্থ, কোন আখ্যাই দেওয়া যায় না তাই হল অনৈতিক ক্রিয়া। অনৈতিক ক্রিয়া নীতিবিজ্ঞানের বিষয় না হওয়ায় একে নীতি বর্হিভূত ক্রিয়া বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। যেমন- হাঁচি, কাশি ইত্যাদি আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, এইসব ক্রিয়া হল অনৈতিক ক্রিয়া।

দ্বিতীয়ত , 

যে ক্রিয়া ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, উদ্দেশ্য সাধনের উপায় ও ফলাফল সম্বন্ধে আগে থেকে চিন্তাভাবনা করে সম্পাদন করে, সেই ক্রিয়াকে ঐচ্ছিক ক্রিয়া বলে। একমাত্র ঐচ্ছিক ক্রিয়াকেই ভালো মন্দ আখ্যা দেওয়া যায়। সেইজন্য ঐচ্ছিক ক্রিয়াই নীতিবিজ্ঞানে বিচার্য বিষয়। এছাড়া অভ্যাসজাত ক্রিয়াকেও নৈতিক বিচারের অর্ন্তভুক্ত বলে মনে করা হয়। কেননা অভ্যাসজাত ক্রিয়ার মূলে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা থাকে।

তবে সঠিক অর্থে নীতি-গর্হিত কর্মকে অনৈতিক বলা  সঠিক হবে না। কেননা নীতি গর্হিত কর্ম হল মন্দ, অনুচিৎ ইত্যাদি নৈতিক বিশেষণযুক্ত, সহজভাবে বলতে গেলে নীতিসম্মত ও নীতি গর্হিত উভয় প্রকার ক্রিয়াই ব্যাপক অর্থে নৈতিক। নীতি বর্হিভূত ক্রিয়া নৈতিক বিচারের বিষয় নয়। নীতি বর্হিভূত ক্রিয়াকেই বলা হয় অনৈতিক ক্রিয়া।

 

৬. অনৈতিক ক্রিয়া কাকে বলে এবং তার প্রকারভেদ গুলি আলোচনা  করো।

উত্তরঃ  নীতি বর্হিভূত ক্রিয়াকেই বলা হয় অনৈতিক ক্রিয়া। যে সমস্ত কাজের নৈতিক কোন গুণ থাকে না তাকে বলা হয় নীতি বহির্ভূত ক্রিয়া। অর্থাৎ যে কাজকে ভাল মন্দ, উচিত- অনুচিত  ইত্যাদি কিছুই বলা যায় না তাদের নীতি বহির্ভূত ক্রিয়া বলা হয়।

নীতি বহির্ভূত ক্রিয়ার প্রকারভেদ

১. প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Reflex Action):

বাইরের কোন উদ্দীপকের ফলে দেহে যান প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।   যেমন গরম পাত্রে হাত লাগামাত্রই আমা হাত সরিয়ে নিই বা তীব্র আলো চোখে এসে পড়লে তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে নিই।

২) সাহজিক ক্রিয়া(Intuitive Action):

কোন পূর্ব পরিকল্পনা না করে বা ফলের কথা চিন্তা না করে আমাদের সহজ প্রবৃত্তি অনুযায়ী যখন কোন কাজ করা হয় তখন সেত কাজকে বলা হয় সাহজিক ক্রিয়া। যেমন খাদ্য অন্বেষণ করা, বাসা নিমণি, আত্মরক্ষা ইত্যাদি।

৩) অচেতন পদার্থের ক্রিয়া (Actions of inanimate object):

বৃক্ষ লতাদি, অচেতন প্রাণী ও জলবায়ু প্রভৃতি জড় পদার্থ সমূহের চেতনা শক্তি নেই এবং ভাবনা চিন্তা করে কাজ করতে পারে না। এরা প্রকৃতির নিয়মেই কাজ করে থাকে। এই সকল ক্রিয়া অনৈতিক।

৪) অনুকরণশীল ক্রিয়া (Imitative action):

আমরা সাধারণত অপর কোন ব্যক্তির কাজ দেখে সেই কাজ অনুকরণ করতে চাই। এই ধরনের ক্রিয়াকে অনুকরণশীল ক্রিয়া। বলে। যেমন- শিশুরা অন্যদের অনুসরণ করে ক্রিয়া করে।

৫) আকস্মিক ক্রিয়া (Accidental Action):

কোন ব্যক্তির অনিচ্ছা পূর্বক হঠাৎ করে যদি কার্য সম্পাদন হয় তাহলে তাকে আকস্মিক ক্রিয়া বলে। যেমন জল খেতে গিয়ে হাত থেকে পরে গ্লাস ভেঙে যাওয়া।

৬) ভাবজ ক্রিয়া (Idea motor Action):

আমাদের অজ্ঞাতসারে যখন মনের মধ্যে কোন বিশেষ ভাব তীব্র হয়ে ওঠে তখন তার ফলে অনেক সময় আমরা যে ক্রিয়া করি তাকে বলা হয় ভাবজ ক্রিয়া। যেমন কোন সিনেমার আনন্দ দৃশ্য দেখে হেঁসে ওঠা।

সুতরাং বলা যায় এই জাতীয় ক্রিয়াগুলি হল অনৈচ্ছিক এবং অনৈতিক ক্রিয়া। এগুলি হল নীতি বর্হিভূত ক্রিয়া।বৃদ্ধি ও ইচ্ছার স্বাধীন আছে। নীতিশাস্ত্র কর্তব্য, সততা, পাপ, প্রাণ্যর প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করে। নীশিবিদ্যা সমাজের সঙ্গে বাক্তির সমন্ধ নিয়েও আলোচনা করে।

 

৭. ঠিক বা যথোচিত (Right) এবং ভুল বা অনুচিত (wrong) বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ 

ঠিক বা যথোচিত (Right):

‘যথোচিত’ শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হল ‘right’। এই ইংরাজী শব্দটি এসেছে একটি গ্রীক শব্দ ‘rectus’ থেকে। ‘rectus’ এর অর্থ হল ‘straight’ বা সোজা। এখানে ‘সোজা’ মানে যা নিয়মকে অনুসরণ করে। এইভাবে ব্যুৎপত্তি বিচার করলে দেখা যায় যে নিয়মানুগ বা বিধিসম্মত কাজই ‘যথোচিত’ (right)। কখনও কখনও কোন কাজ সম্পকে ‘ঠিক’ (right) শব্দটি ব্যবহার করে বোঝানো হয়ে থাকে যে, কাজটা অবশ্যকরণীয় অর্থাৎ কাজটি করা উচিৎ।

অধ্যাপক লিলি আমাদের সতর্ক করে বলেছেন যে ঠিক বা যথাযথ শব্দের ব্যবহার সবসময় এইরকম ইঙ্গিত দেয় না। যথোচিত আচরণ হল সেই আচরণ, নৈতিক নিয়মের সঙ্গে যার সংগঠিত আছে। এক্ষেত্রে যথোচিত কাজ বলতে এমন কাজকে বোঝায় যা পারিপার্শ্বিক অবস্থার পক্ষে উপযুক্ত। নৈতিক নিয়ম মেনে চলার উদ্দেশ্য হল জীবনের কল্যাণ বা পরমার্থ লাভ করা। সুতরাং যথোচিত বা ন্যায় আচরণ হল সেই আচরণ যা আমাদের পরমার্থ লাভের সহায়ক। তাই বলা যায় যথোচিত কাজ হল কল্যাণ লাভের উপায় স্বরূপ।

ভুল বা অনুচিত (wrong):

আবার ‘অনুচিত’ শব্দটির ইংরাজী প্রতিশব্দ হল ‘wrong’ যা এসেছে Latin শব্দ ‘wring’ থেকে। ‘wring’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘মোচড়ান’। যা লক্ষাভ্রষ্ট, যা বিধিকে মানে না তাই ‘wrong’ বা অনুচিত। সুতরাং নিয়মবহির্ভূত কাজ মাত্রই অনুচিত। যে কাজ বিধিসম্মত নয় তা অনুচিত।

যখন আমরা কোন কাজকে ‘অনুচিত’ বলি তখন আমরা যা বোঝাতে চাই তা হল, কাজটি করার ক্ষেত্রে কোনো নৈতিক নিয়ম অনুসৃত হয়নি। নিয়মবর্হিভূত কাজ মাত্রই অনুচিত। অর্থাৎ অনুচিত বা অন্যায় আচরণ হল সেই আচরণ, যার নৈতিক নিয়মের সঙ্গে কোন সংগতি নেই। অনুচিত বা অন্যায় আচরণ হল সেই আচরণ যা পরমার্থ লাভের পক্ষে অন্তরায় স্বরূপ।

সুতরাং,  যে কাজ নিয়মানুগ বা বিধিসম্মত সেই কাজই যথোচিত। যা নিয়মানুগ নয় বা বিধিসম্মত নয় তাই অনুচিত কাজ। এই দুটি শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে এখানে ‘ঔচিত্য’ বা ‘কর্তব্যের’ প্রতি ইঙ্গিত আছে। যা উচিত, যা কর্তব্য তাই যথোচিত। এর বিপরীত হল অনুচিত।

 

৮. নীতিবিদ্যা কি বিজ্ঞান ?

উত্তরঃ বিজ্ঞান অবশ্যই এক বিশেষ প্রকারের জ্ঞান। বিজ্ঞান সাধারণ জ্ঞান থেকে স্বতন্ত্র। সাধারণ জ্ঞান বলতে বোঝায় সাধারণ মানুষের জ্ঞান। নীতিবিদ্যাকে একটি বিজ্ঞানরূপে স্বীকার করা যেতে পারে। বিজ্ঞান হিসাবে নীতিবিদ্যার কিছু স্বাতন্ত্র্য আছে। আলোচনার পদ্ধতি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ইত্যাদি লক্ষ্য করে নীতিবিদ্যাকে বিজ্ঞান বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগকে অবলম্বন করে এইভাবে নানা বিজ্ঞান গড়ে উঠেছে। জড়জগতের অন্তর্গত বিভিন্ন পদার্থের প্রকৃতি ও তাদের নিয়ন্ত্রক নিয়ম আবিষ্কার করে বিজ্ঞান । উদ্ভিদ বিজ্ঞান উদ্ভিদের শ্রেণী বিভাগ, তার জীবনচক্র এবং বিবর্তন আলোচনা করে।

মনোবিজ্ঞান মানুষের মনোজগতের বিভিন্ন ক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে তার সাধারণ নিয়মাবলী আবিষ্কার করে।ঠিক একই ভাবে নীতিবিদ্যাও মানুষের আচরণ নিয়ে  বিশ্লেষণ করে তার সাধারণ নিয়মাবলী আবিষ্কার করে। তাই নীতিবিদ্যাকেও একটি বিজ্ঞানরূপে স্বীকার করা যেতে পারে। নীতিবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু যদিও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় তবুও এখানে আলোচনার যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত।

 

৯. ভাল ও মন্দ বলতে কি বোঝান হয় (Good and Bad) ? 

উত্তরঃ  সাধারণত নৈতিক বিচারের ক্ষেত্রে আমরা ভাল এবং মন্দ কথাগুলো ব্যবহার করে থাকি। আমরা সেই কাজকেই করা উচিৎ বলে মনে করি যে কাজ ভালো। অপরদিকে যে কাজ করা অনুচিৎ তাকেই ‘মন্দ’ কর্ম বলা হয়। ভালো ও মন্দ এই শব্দ দুটি বহুল প্রচলিত হলেও এদের সঠিক অর্থ নির্ণয় করা সহজ নয়।

ব্যুপত্তিগতভাবে আমরা হয়ত ভালো-মন্দ শব্দ দুটির অর্থ নির্ণয় করার চেষ্টা করতে পারি। ইংরাজী ‘Good’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হল ভালো। ‘Good’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে জার্মান শব্দ ‘Got’ থেকে। এই জার্মান শব্দটির অর্থ হল যা কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে। আসলে Good’ বা ভালো শব্দটি একটি বস্তু বা ঘটনার প্রতি আমাদের ইতিবাচক বা অনুমোদনমূলক মনোভাবকে বোঝায়।

ব্যায়াম করা ভালো কারণ তা সুস্বাস্থ্য লাভের লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের সাহায্য করে। কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায়কেই আমরা ভালো বলি। নীতিবিজ্ঞান মানুষের আচরণ ভাল কি মন্দ বিচার করে অর্থাৎ নৈতিক আর্দশ বা উদ্দেশ্য লাভের জন্য আমাদের আচরণ কার্যকর কিনা নীতিবিজ্ঞান তাই বিচার করে। যে কাজ মন্দ তা করা উচিৎ নয়। মন্দ-অর্থে অকল্যাণকে বোঝান হয়। সুতরাং ‘ভালো’ শব্দটি যেমন উপায়কে (means) বোঝায় সেইরকম উদ্দেশ্য বা লক্ষাকেও (end) বোঝায়।

তবে ভালো-র এই ধারণার মধ্যে আপেক্ষিকতা আছে। আমরা কোন কিছুকে ভালো বলছি শুধু এইজন্য যে তার দ্বারা উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে ‘ভালো’ বলা হয়।

 

১০. নীতিবিজ্ঞান কি আর্দশনিষ্ট বিজ্ঞান (Is ethics a normative science) ? 

উত্তরঃ  নীতিবিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের একটি শাখা। কারণ এর নির্দিষ্ট বিষয়ব। আছে, পদ্ধতি আছে। এর বিষয় হল মানুষের আচরণ এবং পদ্ধতি হল বিচার-বিশ্লেষণ।তবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সঙ্গে নীতি বিজ্ঞানের পার্থক্য আছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বস্তুর্নিরভর বিজ্ঞান , কিন্তু নীতি বিজ্ঞান আর্দশনিষ্ট বিজ্ঞান। নীতিবিজ্ঞান মানুষের আচরণের স্বরূপ, উৎপত্তি অথবা বিকাশ নিয়ে আলোচনা না করে আর্দশের মাপকাঠিতে মানুষের আচরণ ভাল কি মন্দ তাই বিচার করে। আর সেই জন্যই নীতিবিজ্ঞান আর্দশনিষ্ট বিজ্ঞান। সুতরাং বলা যায়, নাকি বিজ্ঞানের বিষবস্তু হল মানুষের আচরণ।

আদর্শের আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে আচরণের মূল্যায়ণ করা নীতিবিজ্ঞানের কাজ। আচরণের প্রকৃতি, উৎপত্তি ও বিকাশ এই শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয় নয়। আচরণ কীররূপ হওয়া উচিৎ, কোন আচরণ পরমার্থ লাভের সহায়ক – তা নির্ণয় করা নীতিবিদ্যার উদ্দেশ্য। নীতিবিদ্যার আর্দশ হল পরম কল্যাণ। এই আলে আচরণের মাধ্যমে কীভাবে লাভ করা যেতে পারে তার পথ নির্দেশ নীতিবিজ্ঞান দেয়। ভাই নীতিবিদ্যা আর্দশনিষ্ট বিজ্ঞান।

 

Thanks For Reading: পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যা | একাদশ শ্রেণি দর্শন |

 


আরোও পড়ুনঃ

 


Leave a comment