প্রিয় পাঠক আজকের বাংলা রচনা পর্বে যে রচনাটি আমরা উপস্থাপন করতে চলেছি তা হল-ভগিনী নিবেদিতা প্রবন্ধ রচনা। মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যামিক শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আমাদের আজকের উপস্থাপনা , ভগিনী নিবেদিতা জীবনী। এছাড়াও পঞ্চম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীর রচনা তোমরা পেয়ে যাবে এই পেজে , ভগিনী নিবেদিতা রচনা class 6/7 ।
ভগিনী নিবেদিতা রচনা
ভূমিকা :
শ্রী চরণে নিবেদিত জনমের আগে
ইসবালে শঙ্কিত দেবকৃপা মাগে
মাতা পিতা দুজনার ঈশ্বরের মতি
দুহিতা ও তদ্রুপ দয়াময়ী অতি – অজিত কুমার কর ।
ভারতের মাটিতে মানবতাবাদের সাধনা করেছিলেন রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ তাঁদের ধর্মীয় সাধনার উদার মহিমা বহু বিদেশি মানুষকে এখানে টেনে আনে চুম্বকের আকর্ষণে। নিবেদিতা তাদেরই মধ্যে একজন এবং অন্যতমা। নারীজাতির মধ্যে ভারত প্রত্যক্ষ করেছে মহাশক্তির অস্তিত্ব জেনেছে মা, বোনেদের স্নেহ-মায়া-মমতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে বিপুল শক্তি। নিবেদিতা আমাদের দেশে বিধাতা প্রেরিত এক মহীয়সী, নারী জাতির উন্নয়নে যার অবদান অপরিসীম ।
জন্ম ও বংশ পরিচয় :
নিবেদিতার জন্ম ১৮৬৭ সালের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখে, উত্তর আয়ারল্যান্ডের টাইরন প্রদেশের ডাঙ্গানন শহরে। তাঁর আসল নাম এলিজাবেথ নোবল্। পিতার নাম স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল , একজন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মযাজক। মায়ের নাম মেরী হ্যামিলটন নোবল। মার্গারেটরা ছিলেন দুই বোন, এক ভাই। পিতা এবং পিতামহ দুজনেই মহানুভব ও ধর্মনিষ্ঠ মানুষ। ধর্মানুরক্তি ছিল বংশের ধারায়। পিতামহ আবার ছিলেন আয়ারল্যান্ডের মুক্তিযোদ্ধাদের একজন। জন্মসূত্রে আইরিশ হলেও মার্গারেট কাজ করছেন ভারতে। পরাধীনতার যুগে তিনি ভারতীয়দের যে বিপ্লব চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতেন, সে চেতনা ছিল তাঁর সহজাত।
প্রথম কর্মজীবন :
প্রথমে পিতামহীর মৃত্যু, তার অল্প কিছুদিনের মধ্যে পিতার মৃত্যু মার্গারেটের জীবনে এক গভীর হতাশা বয়ে আনে। তাঁর কিশোরী মনটি সেদিন যেন সীমাহীন শূন্যতার মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছিল। এসময় মায়ের সঙ্গে তাঁরা আশ্রয় নেন মাতামহের বাড়িতে। সেখান থেকেই স্কুল কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন। অতঃপর শিক্ষকতা এবং সমাজসেবা মার্গারেটের জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়াল। এক বিদ্যালয়ে প্রথমে ছিলেন শিক্ষিকা, পরে এক শিশু বিদ্যালয়ে প্রধানা শিক্ষিকা হলেন। প্রকৃতপক্ষে, ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৫ পর্যন্ত সময়কাল মার্গারেট কাটিয়ে দেন শিশুশিক্ষা শিক্ষাজীবন রামকৃষ্ণ সান্নিধ্য সংক্রান্ত গবেষণার কাজে। তাঁর মৌলিক চিন্তা সুধী সমাজকে আকৃষ্ট করে।
স্বামীজী সন্দর্শন ও সান্নিধ্য :
মার্গারেটের জীবনের পরম সন্ধিক্ষণ হল ১৫ নভেম্বর, ১৮৯৫। ঐদিন স্বামিজীর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। বেদান্ত প্রচার করতে এই ভারতীয় সন্ন্যাসী লন্ডনে গিয়েছিলেন। এর কিছুদিন আগে আমেরিকার বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে অভূতপূর্ব আলোড়ন তুলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
মার্গারেট স্বামীজীর বক্তৃতা শুনলেন। এই সময়ে তাঁর মন ছিল অশান্ত। খ্রিস্টীয় ধর্মচিন্তা তাঁর মনের অশান্তি দূর করতে পারেনি। সন্ন্যাসীর বজ্রকণ্ঠে এমনি সময়ে শুনলেন অসাধারণ বক্তৃতা। মনে মনে প্রণাম জানালেন মানুষটিকে। বিবেকানন্দের বিপুল ও বিরাট ব্যক্তিত্বের প্রভাবে মার্গারেট ভারতকে জানলেন এক মানব-তীর্থরূপে।
মার্গারেট ভারতে এলেন ১৮৯৮ সালের জানুয়ারিতে। ঐ বছর ২৫ মার্চ স্বামিজী তাঁকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা দেন। মিস্ মার্গারেটের নতুন নামকরণ হয় ভগিনী নিবেদিতা। জয়পুর তাই নিবেদিতা’ নামটি। স্বামিজী এবং ভারতের পায়ে সত্যই তিনি এক নিবেদিত-আত্মা। স্বামিজী তাঁর শিষ্যাকে ভারতীয় নারীজাতির কল্যাণকর্মে মনেপ্রাণে আত্মনিয়োগ করতে বললেন।
শিক্ষাব্রতিনী :
স্বামীজী বিশ্বাস করতেন, ঘরের মেয়েরা লেখাপড়া না শিখলে দেশ উন্নত হবে না। এজন্য নিবেদিতাকে তিনি স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে মন দিতে বলেন । স্বামিজী ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষার ঘোরতর বিরোধী। ১৮৯৮ সালের নভেম্বর মাসে বাগবাজারের বোসপাড়া লেনে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়’। বাড়িটার নাম রাখা হলো ‘ভগিনী নিবাস’। এই বাড়িতে নিবেদিতা নিজেও থাকতেন। সেই ধর্মান্ধযুগে রক্ষণশীলতার বাধা কাটিয়ে অনেক গৃহবধূ ও বিধবা নারী নিবেদিতার বিদ্যালয়ে লেখাপড়া অথবা হাতের কাজ শিখতে আসতেন।
ভারতপ্রাণা :
নিবেদিতা শুধুমাত্র শিক্ষয়িত্রী ছিলেন না । তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল সুদূর প্রসারিত। কলকাতা শহরে যখন প্লেগ রোগের মহামারী দেখা দিল, রামকৃষ্ণ মিশনের কর্মীদের সঙ্গে নিবেদিতা তখন সেবাকার্য করে বেড়িয়েছেন। নিজের হাতে রাস্তাঘাটের আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন। ভারত দরিদ্রের দেশ, কিন্তু এদেশের সমৃদ্ধ অতীত যুগের কথা অশিক্ষিত অভাজনেরা তেমন করে জানত না। নিবেদিতা নানা আলোচনার মাধ্যমে, গল্পচ্ছলে, লেখার ভিতর দিয়ে সেগুলি প্রচার করলেন। গ্রামীণ ভারত তাঁর চোখে ছিল শান্তির নীড়।
প্রেরণদায়িনী লোকমাতা :
নিবেদিতার লক্ষ্য ছিল ভারতের সর্বাঙ্গীণ অগ্রগতি। বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর সহায়তায় ফ্রান্সের বিশ্ববিজ্ঞান সভায় মর্যাদার আসন লাভ করেন। কলকাতার ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ নিবেদিতার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় স্থাপিত হয়।ভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা-যুদ্ধের প্রস্তুতিকালে নিবেদিতার অদৃশ্য হাতের যোগ ছিল। রাজনীতিতে যোগ দেবার অভিযোগে তাঁকে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ ছাড়তে হয়। কিন্তু এসব কাজকে তিনি নিজে তাঁর গুরুর পর্থনির্দেশ বলে মনে করতেন। স্বামীজীর তিরোধানের পর ‘বিবেকানন্দ সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন নিবেদিতা।
উপসংহার :
নিবেদিতার জীবনের আদর্শ ছিল আমৃত্যু স্বামিজীর মনোগত সদিচ্ছাগুলিকে রূপায়িত করা। ভারত ও ভারতবাসী ছিল তাঁর আপনার জন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেছেন ‘লোকমাতা’। ১৯১১ সালের ১৩ অক্টোবর দার্জিলিং-এ জগদীশচন্দ্রের বাসভবনে নিবেদিতা মহাপ্রায়াণ করেন। জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাবার জন্য ভারতবাসী আবহবানকাল ধরে ভগিনী নিবেদতার পুণ্য নামটি স্মরণ করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই ।
Thanks For Reading : ভগিনী নিবেদিতা প্রবন্ধ রচনা
□ অনুরূপ প্রবন্ধঃ
লোকমাতা নিবেদিতা
ভারতপ্রাণা বিদেশিনী
ভগিনী নিবেদিতা জীবনী
সার্ধ শতবর্ষে ভগিনী নিবেদিতা রচনা
আরো পড়ুনঃ