আজকের পর্বে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরবো পরিবেশ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বাংলা রচনা তা হল-পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা । পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের অবদান- এই রচনাটি যেসব ছাত্রছাত্রীদের কাজে আসবে তা হল –পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা class 10 | পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা class 9.
রচনা পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – এই রচনাটির একটি সংক্ষিপ্ত রূপ –পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা রচনা class 7 | পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা বাংলা রচনা class 8 – এই সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার উপযোগী।
পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা
“এই নদী, এই মাটি বড়ো প্রিয় ছিল
এই মেঘ, এই রৌদ্র,কি বাতাসের উপভোগ
আমরা অনেক দূরে সরে গেছি, কে কোথায় আছি। ”
ভূমিকা :
মানুষ যে পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বাস করে তাকে পরিবেশ বলে। গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, শব্দ ,উত্তাপ , বায়ু , মাটি এবং সর্বপরি মানুষের তৈরি ঘর – বাড়ি, রাস্তা – ঘাট, সব মিলেই পরিবেশ।অচেতন ও চেতন পদার্থ নিয়েই গড়ে ওঠে পরিবেশ। বায়ু, জল , মাটি , উদ্ভিদ , প্রাণী , এগুলি হল পরিবেশের উপাদান । ভগবান আমাদের চারিপাশে সুন্দরের রচনা করেছেন , কারন যেখানে সুন্দর সেখানেই সৃষ্টি । আর সেখানে অসুন্দর সেখানেই ধ্বংস।সৃষ্টিকে বাঁচাতে গেলেও সুন্দরকে রক্ষা করা। তাই সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ ।
পরিবেশ দূষণ :
পরিবেশ যখন নেতিবাচক কারণে প্রভাবিত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখনই তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। আমাদের দুঃখের বিষয় হল এই যে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ পরিবেশের আজ বড়ো অভাব। এই অবস্থান জন্য আমরাই দায়ী । কারণ মানুষ প্রাকৃতিক শক্তির রূপান্তর ঘটিয়েছে কিন্তু একবারও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কথা ভাবেনি, ভাবেনি ভবিষ্যতের প্রজন্মের কথা।
পরিবেশের অবনতির কারণ :
প্রাচীন ভারতবর্ষের দিকে তাকালে আমরা দেখতেই পাই যে , মানুষ পরিবেশকে ব্যবহার করত শুধু নিজের প্রয়োজন চরিতার্থ করতে নয়।মানুষের যেমন নিজস্ব মূল্য আছে , তেমনই মানুষ পরিবেষকেও স্বতঃ মূল্যের নিরিখে দেখত। তাই পরিবেশ অবক্ষয়ের কোন কারন ছিল না। কিন্তু মানুষ যেদিন থেকে পরিবেশের স্বতঃ মূল্যে কেরে নিল সেদিন থেকে পরিবেশের অবনতি শুরু হল। এটা শুধু বর্তমান ভারতবর্ষের চিত্র নয়, সমগ্র পৃথিবীর চিত্র।
মানুষের অস্বাভাবিক জীবন স্থাপনের ফলে পরিবেশের মান ক্রমশ নিম্নগতি সম্পন্ন। অতি যান্ত্রিকতার কারণে পরিবেশের বায়ু , জল , মৃত্তিকা ও শব্দ দূষণের কবলে পড়েছে। এর ফলে আমরা বিভিন্ন শারীরিক ব্যাধির দ্বারা আক্রান্ত , কারণ পরিবেশ এতটাই দূষিত যে আমরা বিশুদ্ধ বাতাস পযর্ন্ত গ্রহণ করতে পারিনা, কারণ বাতাস ও আজ বিশক্ত।
আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় খাদ্য-ও রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যবহারের ফলে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। সুতরাং আজ আমাদের কাছে একটি সম্পূর্ন সুস্থ পরিবেশের অভাব রয়েছে। তাই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়-
“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু,
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু,
সাহসবিস্তৃত বক্ষপট ।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :
“ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ” –
ছাত্র জীবনে অধ্যয়ন তপস্যা হলেও পরিবেশকে বাদ দিয়ে কোন কিছু নয়। পরিবেশের সজীবতার টানেই তো কবি গুরু রবীদ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন গড়ে তুলেছেন। পরিবেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব সমাজের সকল স্তরের মানুষের। তবে ভবিষ্যতের নির্মাতা হিসাবে পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্র সমাজের পরিবেশের প্রতি একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে । ছাত্রছাত্রীরা এই মন্ত্রে দীক্ষিত হোক-
“মাতা ভুমিহ পুত্রুহন পৃথিব্যঃ”– (অথর্ব বেদে, পৃথ্বী সূক্ত)
এর অর্থ হল পরিবেশের ক্ষতি করবেন না, জল ও উদ্ভিদের ক্ষতি করবেন না, পৃথিবী আমার মা, আমি তার সন্তান, জল সতেজ থাকুক, জলের ক্ষতি করবেন না।
ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশের প্রতি যে ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে তা হল-
-
নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলাঃ
সুস্থ পরিবেশের জন্য প্রথমেই চাই নাগরিক সচেতনতা কারণ নাগরিকরা নিজেদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন না হলে পরিবেশকে সুস্থ রাখতে কারা সচেষ্ট হবে ? তবে এ ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ন। “গাছ বাঁচাও, জীবন বাঁচাও”– প্রভৃতি স্লো গানের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারে ছাত্রছাত্রীরা।
-
পরিবেশকে সুন্দর ও পবিত্র রাখাঃ
ছাত্রছাত্রীরা অতি সুন্দর ও পবিত্র। তাই পরিবেশকে সুন্দর ও পবিত্র রাখতে তারা কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা হাতে কলমে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। ছাত্রছাত্রীরা যদি প্রথমেই তার গৃহ – পরিবেশকে, পরে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে এবং আরও পরে গোটা সমাজকে সুন্দর রাখতে অগ্রসর হয় তাহলে তারা একদিন পরিবেশ রক্ষায় দৃষ্টান্ত গড়ে তুলবে।
-
সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ
ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে । তাঁরা বৃক্ষ রােপণের মতো সমাজিক কেজে অংশগ্রহণ করতে পারে। রাস্তের ধরে, বিদ্যালয়ে প্রভুতি জায়গায় বনোসৃজন করতে পারে।
-
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ প্রতিরোধ
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ একপ্রকার জাতীয় দূষণ। সামাজিক অপসংস্কৃতি , বেকারত্ব, কুরুচিকার সিনেমা, আরুচিপূর্ন পত্রিকা, পুস্তক প্রভৃতি যুবক যুবতিদের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে। বর্তমানে একটি শিশু জন্ম গ্রহণ করার সাথে সাথে সে পরিবেশ থেকে বিছিন্ন হয়ে একাকীত্ব ও চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পরছে। আর এ থেকেই জন্ম নিচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক দূষণ। ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য হল নব প্রজন্মকে এই জাতীয় দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা।
উপসংহার :
“যতক্ষন দেহে আছে প্রান,
প্রান পণে পৃথিবীর সবার জঞ্জাল।”-
বিশ্ব পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে আমাদের সুবজায়নের অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে। বছরের বিশেষ বিশেষ তারিখ গুলিতে পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন বার্তা আমরা যদি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে জনগণও আমাদের ডাকে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। তাই করির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ধ্বনিত হোক-
“এ পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযোগ্য
করে যাবো আমি,
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। ”– সুকান্ত ভট্টাচার্য
Thanks For Reading: পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা। —
পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা class 5/6
গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, শব্দ ,উত্তাপ , বায়ু , মাটি এবং সর্বপরি মানুষের তৈরি ঘর – বাড়ি, রাস্তা – ঘাট, সব মিলেই পরিবেশ। পরিবেশ সুস্থ না থাকলে আমরা কখনো সুস্থ থাকতে পারি না। তাই সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ ।
মানুষ নিজের প্রয়োজনে পরিবেশকে ব্যবহার করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। আজথা গাছ কাটছে, মাটিতে মেশাচ্ছে দূষিত জিনিস, জলের অপব্যবহার করছে। পরিবেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব সমাজের সকল স্তরের মানুষের। তবে এ ব্যপারে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ন।ছাত্রছাত্রীরা অতি সুন্দর ও পবিত্র। তাই পরিবেশকে সুন্দর ও পবিত্র রাখতে তারা কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে পারে।তারা হাতে কলমে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।
সুতরাং বিশ্ব পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে ছাত্রছাত্রীদের সুবজায়নের অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে।
আন্যান্য রচনা পড়ুনঃ
১. বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা ৪০০ শব্দের
২. ছাত্র জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা
৩.মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রবন্ধ রচনা
৪. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা