রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে আলোচনা করো

বাল্মীকি রচিত রামায়ণ বিশ্বের প্রাচীন মহাকাব্যগুলির মধ্যে একটি । রামায়ণে প্রায় ২৪০০০ শ্লোক , এবং সাতটি খণ্ড রয়েছে ।  এই কাব্যের মধ্যে দিয়ে প্রাচীন ভারতের সমাজ ও ধর্মচেতনার নানা দিক ফুটে উঠেছে । এই কাব্যের মূল নায়ক  ছিলেন  রাম ।রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ঠ মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আজকের এই পর্বে আমরা  রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে আলোচনা করব ।

আশা রাখি , আমাদের এই উপস্থাপনা B.A Sanskrit –এর ছাত্রছাত্রীদের এবং WBBSC class -11 এর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে খুবই উপযোগী হতে চলেছে।

রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে আলোচনা করো |
রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে আলোচনা করো |

 

রামায়ণের রচনাকাল সম্বন্ধে আলোচনা করো ।

Discuss the period of composition of Ramayana

“সর্বকাব্যং গন্ধ্যাং” – রামায়ণ আমাদের আদি ও জাতীয় মহাকাব্য।  বাল্মীকির স্বকপোল কল্পিত বলে রামায়ণ আদি কাব্য। বাল্মীকি রচিত আদি মহাকাব্যটির রচনা কাল নির্ণয় করা সহজ নয়। কারণ রামায়ণের যেমন ‘মূল’ অংশ আছে, তেমনি ‘প্রক্ষিপ্ত’ অংশ তাই এই বিষয় নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ঠ মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যে, রামায়ণ প্রথম প্রচারিত হয়েছিল মুখে মুখে। কথক ঠাকুরের মুখ থেকে গ্রামবাসীরা রামচন্দ্রের বীরত্ব ব্যঞ্জক কাহিনী শুনতেন। বৈদিক সাহিত্যের প্রভাব রামায়ণে লক্ষ করা যায়। এটি ছিল রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত অংশের উদ্ভব হয়। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, উপনিষদ যুগের পরেই  রামায়ণের রচনাকাল শুরু হয় , আনুমানিক খ্রীঃ পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী।

পাশ্চাত্য পণ্ডিত ভিন্টার নিৎস (Winternitz) এর মতে রামায়ণ রচিত হয়েছিল বুদ্ধোতর যুগে। কারণ  কতগুলো জাতকের গল্পের সাথে রামায়ণের গল্পের সাদৃশ্য আছে। যেমন –  দশরথ জাতক। কিন্তু এমত স্বীকার করা যায় না। কারণ “যথা হিচৌরঃ স তথা হি বুদ্ধস্ত ত ? নাস্তিক মাত্র বিদ্ধি “ এই বলে তথাগতকে অপমান করা হয়েছে। এ কাজ বাল্মীকি কখনই করতে পারেন না। সুতরাং রামায়ণের যে স্থানে বুদ্ধের উল্লেখ আছে সেগুলি সব প্রক্ষিপ্ত অংশ।

পাশ্চাত্য পণ্ডিত ইয়াকোবি (Jacabi) বলেন যে রামায়ণ বুদ্ধজন্মের আগেই রচিত হয়েছে। কারণ বুদ্ধদেব ধর্ম প্রচার করতেন পালি ভাষায়। রামায়ণ রচিত শুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায়। এটা সকলেই জানে যে, সংস্কৃত ভাষা পালি ভাষার পূর্ববর্তী। সেজন্য নিঃসংশয়ে বলা যায় যে , বুদ্ধের জন্মের অনেক আগেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল – আনুমানিক খ্রীঃপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে।

প্রথমত,

পাশ্চাত্য পণ্ডিত Weber বলেন যে, গ্রীক আক্রমণের পরেই রামায়ণ রচিত হয়েছিল। গ্রীক স্ম্রাট আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন খ্রীঃপূর্ব ৩২৭ অব্দে। তারপর থেকে গ্রীক দেশের প্রভাব ভারতবর্ষে পড়তে থাকে। তাই অনেকে মনে করেন যে , গ্রীক কবি হোমারের হেলেন এবং ট্রয়যুদ্ধ কাহিনীর অনুকরণে রামায়ণ নামক জাতীয় মহাকব্যটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এই মত গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ হোমারের গল্প এবং রামায়ণের গল্পের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই গরমিল দেখা যায়।

দ্বিতীয়ত,

বাল্মিক ভাষ্য বহুক্ষেত্রে পাণিনির ‘অষ্ঠাধয়ী’ ব্যাকরণের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। তাই মনে করা হয় রামায়ণ পাণিনির পূর্বে রচিত।

তৃতীয়ত,

রামায়ণে মিথিলা ও বিশালা নামে দুটি নগরী ছিল। বুদ্ধের সময় ঐ দুটি নগরী মিলিত হয়ে বৈশালী নাম ধারণ করে। রামায়ণে বৈশালীর উল্লখে না থাকায় মনে করা হয় রামায়ণ বুদ্ধের পূর্ববর্তী।

চতুর্থত,

বুদ্ধদেব ধর্ম উপদেশ দিতেন পালি ভাষায়, কিন্তু রামায়ণে পালি ভাষার কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না।

ইয়াকোবিন মতবাদকে স্বীকার করে, Weber রামায়ণের রচনাকাল গুলো প্রতিস্থাপন করেছেন।

এই সমস্ত বিচার বিবেচনা করে আমরা বলতে পরি যে, রামায়ণের আদিস্তর শুরু হয়েছিল খ্রীঃপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে। তারপর কিছু দিন মুখে মুখে প্রাচারিত হওয়ার পর লিখিত রূপ লাভ করে খ্রীঃপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে। তার উপর বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রভাবে চারণ কবিদের সংযোজন পরিমার্জনের মাধ্যমে রামায়ণ বর্তমান আকার ধারণ করে। রামায়ণ রচনার শেষে স্তর হল খ্রীঃপূর্ব প্রথম শতক। এই সময় রামায়ণে শ্লোকের সংখ্যা ছিল ২৪০০০।


প্রশ্ন উত্তরঃ

১. ঋষি বাল্মীকি কবে রামায়ণ রচনা করেছিলেন ?

উত্তরঃ ঋষি বাল্মীকি কবে রামায়ণ রচনা করেছিলেন আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে ।

২. রামায়ণের চরিত্র কয়টি ? রামায়ণের প্রধান চরিত্র কে ?

উত্তরঃ রামায়ণের চরিত্র মোট ৩৬ টি চরিত্র । রামায়ণের প্রধান চরিত্র  রাম ।

 

৩. রামায়ণের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র কে ? 

উত্তরঃ রামায়ণের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র  ইন্দ্রজিৎ/ মেঘনাথ  ।

৪. জনক রাজার কতজন কন্যা ছিল ?

উত্তরঃ জনক রাজার দুইজন কন্যা ছিলেন – সীতা ও ঊর্মিলা।

৫. দশরথের কয়জন রানী  ছিল ?

উত্তরঃ দশরথের তিন রানী ছিল – কৌশল্যা , সুমিত্রা ও কৈকেয়ী ।

৬. ভরতের স্ত্রীর নাম কি ছিল ?

উত্তরঃ ভরতের স্ত্রীর নাম ছিল মান্ডবী ।

৭. রামের কয়জন পুত্র ছিল ?

উত্তরঃ রামের  দুই পুত্র – লব , কুশ ।


আরো পড়ুন – 


 

Leave a comment