সংস্কৃত গল্পসাহিত্যে পঞ্চতন্ত্রের স্থান আলোচনা

সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি গল্পগ্রন্থ হল ‘পঞ্চতন্ত্র’ পণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা-এর রচয়িতা। এই গ্রন্থে নানান উপদেশ বাণী  তুলে ধারা হয়েছে । সংস্কৃতগল্প সাহিত্যে এর অবদান অপরিসীম ।  আজ এই পর্বে আমরা সংস্কৃত গল্পসাহিত্যে পঞ্চতন্ত্রের স্থান আলোচনা  করতে চলেছি ।

আশা রাখি , আমাদের এই উপস্থাপনা B.A Sanskrit –এর ছাত্রছাত্রীদের এবং WBBSC class -11 এর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে খুবই উপযোগী হতে চলেছে।

সংস্কৃত গল্পসাহিত্যে পঞ্চতন্ত্রের স্থান আলোচনা করো |
সংস্কৃত গল্পসাহিত্যে পঞ্চতন্ত্রের স্থান আলোচনা করো |

সংস্কৃতগল্প সাহিত্যে পঞ্চতন্ত্রের স্থান আলোচনা করো | Discuss the place of Panchatantra in Sanskrit literature |  

সংস্কৃতগল্প সাহিত্যে পঞ্চতন্ত্রের স্থানঃ

‘পঞ্চতন্ত্র’ হল গল্পসাহিত্যে ইতিহাসে সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি গল্প গ্রন্থ। পণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা এটি রচনা করেন। পশুপাখির কাহিনী অবলম্বনে পঞ্চতন্ত্র এখনও জনগণের কাছে সমাদৃত। কিথ মনে করেন, মূল গ্রন্থটি সম্ভবত খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে রচিত। অপরদিকে অনেকে মনে করেন পঞ্চতন্ত্রের রচনাকাল খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে।

পাঁচটি ‘তন্ত্র’ রচিত বলে এই গ্রন্থের নাম পঞ্চতন্ত্র পাঁচটি তন্ত্র হল – (১) মিত্রভেদ্‌ , (২) মিত্রপ্রাপ্তি , (৩) কাকোলূকীয়, (৪) লব্ধপ্রনাশ ও (৫) অপরীক্ষিত কারক।

“সকলার্থশাস্ত্রসারং জগাতি সমালোক্য বিষ্ণুশর্মেদম্‌।  

তস্ত্রৈঃ পঞ্চভিরেতচ্চকার সুমনোহরং শাস্ত্রম।।”  

এদের প্রত্যেকটি এক-একটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ খন্ড হলেও মূল কাঠামোর মধ্যে এগুলো একটি অবিচ্ছিন্ন রূপলাভ করেছে।

‘মিত্রভেদ ’ নাম বা তন্ত্রে ২২ টি গল্প আছে। মূল চরিত্র হল দমনক ও করটক নামে দুই শৃগাল, পিঙ্গলক নামে সিংহ এবং সঞ্চীবক নামে একটি ষাঁড় । কীভাবে সিংহ ও বিশভের মধ্যে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়, দুই শৃগালের দূর্ভিসন্ধিতে সঞ্চীবকের প্রাণ নষ্ট হল, পশুরাজ কীভাবে মন্ত্রীপদ লাভ করল, তা এই গল্পের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এছাড়া বানর, কাঁকড়া, বক, শশক , সিংহ প্রভৃতিকে নিয়ে অনেক উপদেশমূলক গল্প গ্রন্থটির কলেবর বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।

দ্বিতীয় তন্ত্রটির নাম ‘মিত্রপ্রাপ্তি’ এতে আছে ৬ টি গল্প। গ্রন্থটির বিষয়বস্তু হল – অপরিচিত প্রাণীদের মধ্যে কীভাবে বন্ধুত্ব লাভ হয় তা দেখানো।

তৃতীয় তন্ত্রটি হল  ‘কাকোকূলীয়’ বা ‘সন্ধি – বিগ্রহ’। এই তন্ত্রটির বিষয়বস্তু হল – কাক ও পেঁচাদের মধ্যে বৈরিতাবশবতঃ  আত্মরক্ষার জন্য কাকের পরামর্শ। এখানে নীতিশাস্ত্রের ষড়গুণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এতে মোট চারটি গল্প আছে।

চতুর্থ তন্ত্রটির নাম হল ‘লব্ধপ্রণাশ’ এতে ১৬ টি গল্প আছে। এখানে দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে লব্ধবস্তু বোকামির জন্য প্রাণ নষ্ঠ হয়। যেমন – বানর ও মকর কথা, গল্পটির উল্লেখ করা যায়।

পঞ্চম তন্ত্রটির নাম হল – ‘অপরীক্ষিতকারক’ এতে ১১৫ টি ছোট ছোট গল্প আছে। এই গ্রন্থে দেখানো হয়েছে যে, সঠিকভাবে পরীক্ষা না করে কাজ করলে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। ‘চার মূর্খ পণ্ডিতের কথা ‘ – একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

পঞ্চতন্ত্রের ভাষা সরল ও মার্জিত। এতে দীর্ঘ বর্ণণা ও ভাব প্রবণতার ঘনঘটা নেই। এই গল্পগুলো চিত্তাকর্ষক এবং সুকুমার মতি বালক বালিকাদের নীতি শিক্ষার পক্ষে বিশেষ উপযোগী। পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা প্রসূত, রাজনীতি সম্মত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।

পশুপক্ষী ও জন্তু জানোয়ারকে দিয়ে লেখক কথা বলিয়েছেন। নীতি গর্ভ শ্লোক গুলোকে যে প্রাঞ্জল ও সুচারু ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন তা সত্যই প্রশংসাস্থানীয়। গল্পের উদ্দেশ্য যে  মনোরঞ্জন ও নীতিশিক্ষা তা সার্থকরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে। সর্বোপরি বলা প্রয়োজনীয় যে ,পঞ্চতন্ত্র নীতিশিক্ষা অপূর্ব প্রয়াস, বিশেষ করে পশুপক্ষীর মধ্য দিয়ে যে নীতিশিক্ষায় প্রয়াস তা লেখকের এক অনবদ্ধ সৃষ্টি।


প্রশ্ন উত্তরঃ

১. পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থের রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থের রচয়িতা বিষ্ণু শর্মা ।

২. পঞ্চতন্ত্র কি ধরনের গ্রন্থ ?

উত্তরঃ  পঞ্চতন্ত্র সাধারণত একটি নীতিশাস্ত্র ।

৩.  পঞ্চতন্ত্র কোন ভাষায় লেখা ?

উত্তরঃ  ‘পঞ্চতন্ত্র’ হল গল্প সাহিত্যের  ইতিহাসে সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি গল্প গ্রন্থ।

৪. কোন যুগে পঞ্চতন্ত্র রচিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ  পঞ্চতন্ত্র মূল গ্রন্থটি সম্ভবত খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে রচিত।

৫. পঞ্চতন্ত্রে কয়টি তন্ত্র আছে ?

উত্তরঃ  পঞ্চতন্ত্রে  পাঁচটি তন্ত্র আছে ।

৬. পঞ্চতন্ত্রের পাঁচটি তন্ত্রের নাম কি ?

উত্তরঃ  পঞ্চতন্ত্র পাঁচটি তন্ত্র হল – ১) মিত্রভেদ্‌ , ২) মিত্রপ্রাপ্তি , ৩) কাকোলূকীয়, ৪) লব্ধপ্রনাশ ও ৫) অপরীক্ষিতকারক।


আরো পড়ুন – 


 

Leave a comment