চার্বাক নীতি তত্ত্ব সুখবাদ একাদশ শ্রেণীর দর্শন

আগের অংশে আমরা আলোচনা করেছি চার্বাক  জ্ঞানবিদ্যা ও আধীবিদ্যা, এই অংশে আমরা আলোচনা করবো চার্বাক নীতি তত্ত্ব। ভারতের অন্যান্য দর্শন সম্প্রদায়দের থেকে  চার্বাক নীতি তত্ত্ব কি ভাবে সুখবাদে পরিণত হয়েছে তা এই আলোচনায় তুলে ধরা হল।

একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টার, দর্শনশাস্ত্রের  unit-2: Introduction to Ethics ,Topic D ; চার্বাক সুখবাদ ( Charvak Hedonism).

 WBCHSE Class 11 Philosophy – এর ছাত্রছাত্রীদের একেবারে নুতন সিলেবাস অনুযায়ী চার্বাক সুখবাদ এই অংশে 4 MArks রয়েছে। তাই তমাদের এখান থেকে ২ Marks , 3 marks প্রশ্ন উত্তর তৈরি করতে হবে। এই বিভাজনটি  মাধায় রেখে আজকের আলচনায় আমরা প্রথমে ২ Marks এর প্রশ্ন উত্তর  তার পরে 3 marks প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করবো।

ছাত্রছাত্রীরা মনোযোগের সহিত,  আমাদের এই উপস্থাপনাগুলি লক্ষ্য করলে, আশা করি খুবই উপকৃত হবে ।

সুতরাং একাদশ শ্রেণীর দর্শন দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে, তাদের পরীক্ষার পস্তুতির সহায়তায়,  আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়-একাদশ শ্রেণী দর্শন চার্বাক সুখবাদ ( Charvak Hedonism). 

 

চার্বাক নীতি তত্ত্ব
চার্বাক নীতি তত্ত্ব

চার্বাক সুখবাদ ( Charvak Hedonism)

 

2 Marks প্রশ্ন- উত্তর

. চার্বাক নীতি তত্ত্ব কি নামে পরিচিত? আথবা চার্বাক নীতি তত্ত্বের নাম কি?

উত্তর-  চার্বাক নীতি তত্ত্ব সুখবাদ নামে পরিচিত। কারন চার্বাক মতে দেহ অতিরিক্ত আত্মা  বলে কিছু নেই। দেহের বিনাশে সকল কিছু শেষ হয়ে যায়। তাই যতদিন দেহ আছে ততদিন দেহ  সুই ভোগ করে যায় উচিত। দেহ না থাকলে আর কিছুই থাকে না।

. চার্বাক মতে পুরুষার্থ কয়টি কি কি

উত্তর-  ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থ  চারটি যথা ধর্ম , অর্থ ,কাম ও মোক্ষ। কিন্তু চার্বাকগন চারটি পুরুষার্থের মধ্যে কামকে প্রধান  পুরুষার্থ এবং অর্থকে সহায়ক পুরুষার্থ  বলেছেন।

চার্বাক মোক্ষকে পুরুষার্থরূপে স্বীকার করে না কেন?

উত্তর-   মোক্ষ হল দুঃখের ঐকান্তিক ও আত্যন্তিক নিবৃত্তি। চার্বাক পরলোক, দেহাতিরিক্ত নিত্য আত্মা প্রমাণসিদ্ধ নয় বলে স্বীকার করে না। কারণ এগুলি ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষের বিষয় নয়।  মৃত্যুতে কেবল আত্যন্তিক দুঃখ নিবৃত্তি ঘটে। তাহলে মৃত্যুকে মোক্ষ বলতে হয় কিন্তু মৃত্যু কোনো মানুষ চায় না।

চার্বাক কামকে পরম পুরুষার্থরূপে স্বীকার করে কেন?

উত্তর- চার্বাক দেহাতিরিক্ত নিত্য, শাশ্বত আত্মা স্বীকার করে না। চতুর্ভূত সৃষ্ট দেহই বাস্তব সত্য। মৃত্যুর পর অর্থাৎ দেহের ধবংসের পর মানুষের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। তাই পরজন্মও থাকতে পারে না। বর্তমান জীবনই বাস্তব, দেহ বাস্তব, বর্তমান বাস্তব, ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তাই বর্তমানের দেহসর্বস্ব তীব্রতম ইন্দ্রিয়সুখ সম্ভোগ করাই (কাম) মানুষের চরম লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

৫.  চার্বাক অর্থকে গৌণ পুরুষার্থরূপে স্বীকার করেছে কেন?

উত্তর-   চার্বাক মতে পরম পুরুষার্থ কাম, কিন্তু কাম চরিতার্থ করার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এছাড়া  দেহ রক্ষার জন্য, গৃহ, স্ত্রী-পুত্র পালনের জন্য অর্থ প্রয়োজন। তাই মানুষকে  অর্থ কামনা করতেই হয়, তা না হলে মানুষের ব্যবহারিক জীবন অচল হয়ে পরে। এইজন্য অর্থকে  গৌণ পুরুষার্থ বলা হয়।

৬. চার্বাক নীতিতত্ব মূল কথা  কী?

উত্তর-   চার্বাক মতে দেহসর্বস্ব তীব্রতম বর্তমানের ইন্দ্রিয় সুখই মানুষের চরম কাম্য বিষয়, পরম পুরুষার্থ। তাই যে-কোনো কাজ ইন্দ্রিয় সুখলাভ সহায়ক সেই কাজই ভালো, সেই কাজই করা উচিত এবং যে কাজ সহায়ক নয়, যেই কাজ মন্দ সেই কাজ করা অনুচিত।

৭. কোন্ সুখ কাম্য ও কোন্ সুখ বর্জনীয়-এ বিষয়ে চার্বাকদের যে চারটি নীতি আছে তা কী?

উত্তর-

[1] দুঃখের চেয়ে সুখের পরিমাণ বেশি হলে সেই সুখ কাম্য।

[2] দুঃখের চেয়ে সুখের পরিমাণ কম হলে সেই সুখ বর্জনীয়।

[3] সুখের চেয়ে দুঃখের পরিমাণ বেশি হলে সেই দুঃখ বর্জনীয়।

[4] সুখের চেয়ে দুঃখের পরিমাণ কম হলে সেই দুঃখ গ্রহণীয়।

 

৮. দৈহিক ইন্দ্রিয় সুখ ক্ষণিক তবুও চার্বাক দৈহিক সুখকে পরম কাম্য বা পরম পুরুষার্থ বলেছেন কেন?

উত্তর-   চার্বাক বলেন দৈহিক সুখ ক্ষণিক হলেও সেই ক্ষণিক সুখই পরমার্থ, কেন-না দৈহিক সুখকে মানুষ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগ করতে পারি।  ভবিষ্যতে অলীক কোনো সুখের আশায় বর্তমানের সুখকে পরিত্যাগ করা একেবারে উচিত নয়। দৈহিক সুখ ক্ষণস্থায়ী হলেও তাকে পরিত্যাগ করা উচিত নয়। সুতরাং, বর্তমানের তীব্রতম দৈহিক ইন্দ্রিয় সুখ কামনা করা উচিত।

৯. চার্বাক নীতি তত্ত্বের মূল কথাকে যে শ্লোকে প্রকাশ করা হয়েছে তা লেখো।

উত্তর-

যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ।

ঋণনং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।

১০. চার্বাক নীতিতত্ত্ব কি তুমি সন্তোষজনক মনে কর?

উত্তর-   চার্বাক নীতিতত্ত্ব সম্পূর্ণরূপে স্থূল আত্মসুখবাদ, যা স্বার্থপরতাই নামান্তর। ফলে তা নৈতিক আদর্শ হতে পারে না। তাছাড়া দৈহিক সুখ একমাত্র পরম কাম্য হলে মানুষ পশু থেকে আলাদা বলা যাবে না। মানুষের মন আছে, বুদ্ধি আছে। তাই দেহজ সুখ অপেক্ষা মানুষ প্রেম ভালোবাসা কামনা করে, শাশ্বত সুখ লাভ করতে পারে,  যা চার্বাক নীতিতত্ত্বে নেই।

১১. চার্বাক দর্শনকে সুখবাদী দর্শন বলা হয় কেন?

উত্তর-   চার্বাক মতে কাম বা ইন্দ্রিয় সুখ ভোগই পরম লক্ষ্য বা পরম পুরুষার্থ। কাম বা ইন্দ্রিয় সুখই মানুষের কাজের ভালোমন্দ বিচারের মাপকাঠি। তাই যে কাজ কাম চরিতার্থ করতে সাহায্য করে তা-ই ভালো এবং যা করে না তাই মন্দ। সুতরাং, চার্বাক মতে ইন্দ্রিয় সুখই পরম কল্যাণ। তাই চার্বাকদের সুখবাদী বলা হয়।

১২.  চার্বাক নীতিতত্ত্ব কোন্ শ্রেণির সুখের প্রচার করে?
উত্তর-  চার্বাক নীতিতত্ত্ব স্থূল অসংযত আত্মসুখবাদের (Gross egoistic hedonism) প্রচারক। অবশ্য সুশিক্ষিত চার্বাকরা বলেন স্থূল অসংযত ইন্দ্রিয়সুখ কখনও সভ্য মানুষের পুরুষার্থ হতে পারে না। কারণ অসংযত আত্মসুখ কাম্য হলে সমাজব্যবস্থা ব্যাহত হবে। কেবলমাত্র ধূর্ত চার্বাকরা অসংযত আত্মসুখবাদ প্রচার করে।

১৩.  চার্বাকগণ কি সুখের গুণগত পার্থক্য স্বীকার করেছেন?
উত্তর- না, তাঁরা কেবল সুখের পরিমাণগত পার্থক্যের কথা বলেছেন। এদের কাছে মানসিক সুখ ও দৈহিক সুখ একই প্রকারের। দুটি সুখের মধ্যে কেবল পরিমাণের পার্থক্য থাকতে পারে।

১৪.  চার্বাক মতে মানসিক সুখ অপেক্ষা দৈহিক সুখ অধিকতর কাম্য কেন?
উত্তর- চার্বাকমতে দৈহিক সুখের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব মানসিক সুখ অপেক্ষা বেশি বলে দৈহিক সুখ অধিকতর কাম্য। যথাসম্ভব দুঃখ পরিহার করে নিজের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ ইন্দ্রিয় সুখলাভ করা মানব জীবনের লক্ষ্য।

১৫. চার্বাক নীতিতত্ত্ব অনুসারে ভালো কাজ ও মন্দ কাজের মানদণ্ড কী?
উত্তর- যে কাজের ফলে দুঃখের তুলনায় সুখ বেশি পাওয়া যায় সেই কাজ ভালো কাজ, অপরদিকে যে কাজের ফলে সুখের তুলনায় দুঃখ বেশি পাওয়া যায় সেই কাজ মন্দ কাজ।



3 Marks প্রশ্ন-উত্তর

১. চার্বাক সুখবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

চার্বাক নীতিবিদ্যা জড়বাদ বা সুখবাদ নামে পরিচিত। চার্বাক মতে দেহ অতিরিক্ত আত্মা নেই, দেহই আত্মা । ধর্ম, অর্থ , মোক্ষ ও কাম এই চারটি পুরুষার্থের মধ্যে চার্বাকগন কামকেই পরমপুরুষার্থ বলেছেন ।

ধর্ম, অর্থ , মোক্ষ ও কাম এই চারটি চতুবর্গ পুরুষার্থ নামে পরিচিত ।এই চারটি পুরুষার্থের মধ্যে চার্বাকরা কামকেই পরমপুরুষার্থ বলেছেন । তবে কাম বা সুখ লাভের সহায়ক হিসেবে অর্থকেও গৌণ রূপে গণ্য করা হয়েছে । ‘অঙ্গনলিঙ্গনজন্য সুখমেব পুমর্থ।’– অর্থাৎ অঙ্গন আলিঙ্গনের দ্বারা যে দেহ সুখ উৎপন্ন হয় , তাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য । তাই চার্বাক দার্শনিকদের hedonist বলা হয়।

চার্বাক মতে , মৃত্যুর মাধ্যমে দেহের পরিসমাপ্তি ঘটে । তাই চার্বাকগন বলেন , ‘যাবৎ জিবেৎ সুখং জিবেৎ ঋনং কৃত্বা ঘৃতং পীবেৎ-’অর্থাৎ যতদিন বাঁচ সুখে বাঁচ এবং ঋণ করেও ঘি খাও।‘পিব, খাদ চ’- অর্থাৎ খাও দাও , দেহ সুখ ভোগ কর । এটাই জীবনের পরম পুরুষার্থ ।

মোক্ষবাদীরা বলেন দেহসুখ সম্ভব হলেও তা ক্ষনিক । কিন্তু চার্বাকগন বলেন ক্ষনিক হলেও তা একেবারে শুন্য নয় ।‘Rather a Peigon today than a peacock tomorrow ’ “A pure shell is better than a doubtful golden coin.” ‘দেহসুখ সম্ভোগ’,বা ‘ইন্দ্রিয়সুখ সম্ভোগ’ কিন্তু ‘আত্মসুখ ন সম্ভোগ।’

দেহাত্মবাদী চার্বাকদের নৈতিক আলোচনা ভোগবাদে পরিণত হয়েছে । ভোগবাদী চার্বাকেরা বলেন দেহ অতিরিক্ত স্বতন্ত্ররূপে আত্মা বলে কিছু নেই। তাই আত্মার সম্পর্কিত যুক্তি প্রলাপমাত্র। ইহলোক সর্বস্ব চার্বাকদের মতে মোক্ষ মস্তকহীন মানুষের শিরপীরার মতো উপহাস্যের বস্তু । চার্বাক মতে জড়বস্তুর সংমিশ্রনে তৈরি দেহ সুখ দুঃখ মিশ্রিত। দেহ থকলে সুখ থাকবে এবং দেহ গেলে সুখ দুঃখের অবসান ঘটবে । তাই মানুষের নৈতিক কর্তব্য হল দুঃখকে সর্বান্তকরনে কমিয়ে দৈহিক সুখ ভোগ করা।

২. চার্বাক সুখবাদকে অসংযত আত্মসুখবাদ বলা হয় কেন?

চার্বাক সুখবাদ একপ্রকার অসংযত আত্মসুখবাদ (Gross Egoistic Hedonism)। গ্রিক দার্শনিক Aristippus এই মতবাদের প্রচারক। Cyrene-এর নামানুসারে মতবাদটি Cyrenaicism নামে পরিচিত। Aristippus বলেন, মানুষের নিজের সুখ তার কাছে একমাত্র কাম্যবস্তু। সুখভোগ করাই মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। দুটি সুখের মধ্যে কোন গুণগত পার্থক্য নেই, আছে কেবল পরিমাণগত পার্থক্য। কবিতা পাঠের সুখ অপেক্ষা পানভোজনের সুখের তীব্রতা বেশি, তাই অধিকতর কাম্য। Aristippus বলেন, সুখ যদি কাম্য হয় তবে সেই সুখ অবশ্যই ব্যক্তিগত ইন্দ্রিয়সুখ হবে।

চার্বাকগণ  গ্রিক দার্শনিক Aristippus আদর্শ প্রচার করে  বলেন অতীত ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কেবল বর্তমানই আমাদের হাতে। সেই বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তকে তীব্র সুখ দিয়ে আমরা যেন ভরে তুলতে পারি। ভবিষ্যতের অলীক সুখ  অপেক্ষা আজকের  সামান্যতম সুখ অধীক কাম্য। তাই  যতদিন মানুষ বাঁচবে ততদিন মানুষের উচিত সুখ অন্বেষণ করা। যতদিন বাঁচবে সুখে বাঁচবে, ঋণ করেও ঘি খাবে।  ভবিষ্যতের কথা না ভেবে যতটা সম্ভব দুঃখ পরিহার করে, বর্তমান জীবনকে উপভোগ করতে হবে, ইন্দ্রিয়গুলিকে পরিতৃপ্ত করতে

ভবিষ্যৎ প্রত্যক্ষগোচর নয়, তাই ভবিষ্যৎ সুখলাভের আশায় বর্তমান সুখ থেকে বিরত থাকা উচিৎ নয়। এইভাবে চার্বাক নীতিবিদ্যা দৈহিক সুখবাদে পরিণত হয়েছে , যে সুখবাদ অসংযত আত্মসুখবাদ নামে পরিচিত।


৬ Marks প্রশ্ন- উত্তর

১. চার্বাক সুখবাদ সমালোচনাসহ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

 চার্বাক নীতিবিদ্যা জড়বাদ বা সুখবাদ নামে পরিচিত। চার্বাক মতে দেহ অতিরিক্ত আত্মা নেই, দেহই আত্মা । ধর্ম, অর্থ , মোক্ষ ও কাম এই চারটি পুরুষার্থের মধ্যে চার্বাকগন কামকেই পরমপুরুষার্থ বলেছেন ।

ধর্ম, অর্থ , মোক্ষ ও কাম এই চারটি চতুবর্গ পুরুষার্থ নামে পরিচিত ।এই চারটি পুরুষার্থের মধ্যে চার্বাকরা কামকেই পরমপুরুষার্থ বলেছেন । তবে কাম বা সুখ লাভের সহায়ক হিসেবে অর্থকেও গৌণ রূপে গণ্য করা হয়েছে । ‘অঙ্গনলিঙ্গনজন্য সুখমেব পুমর্থ।’– অর্থাৎ অঙ্গন আলিঙ্গনের দ্বারা যে দেহ সুখ উৎপন্ন হয় , তাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য । তাই চার্বাক দার্শনিকদের hedonist বলা হয়।

চার্বাক মতে , মৃত্যুর মাধ্যমে দেহের পরিসমাপ্তি ঘটে । তাই চার্বাকগন বলেন , ‘যাবৎ জিবেৎ সুখং জিবেৎ ঋনং কৃত্বা ঘৃতং পীবেৎ-’অর্থাৎ যতদিন বাঁচ সুখে বাঁচ এবং ঋণ করেও ঘি খাও।‘পিব, খাদ চ’- অর্থাৎ খাও দাও , দেহ সুখ ভোগ কর । এটাই জীবনের পরম পুরুষার্থ ।

মোক্ষবাদীরা বলেন দেহসুখ সম্ভব হলেও তা ক্ষনিক । কিন্তু চার্বাকগন বলেন ক্ষনিক হলেও তা একেবারে শুন্য নয় ।‘Rather a Peigon today than a peacock tomorrow ’ “A pure shell is better than a doubtful golden coin.” ‘দেহসুখ সম্ভোগ’,বা ‘ইন্দ্রিয়সুখ সম্ভোগ’ কিন্তু ‘আত্মসুখ ন সম্ভোগ।’

দেহাত্মবাদী চার্বাকদের নৈতিক আলোচনা ভোগবাদে পরিণত হয়েছে । ভোগবাদী চার্বাকেরা বলেন দেহ অতিরিক্ত স্বতন্ত্ররূপে আত্মা বলে কিছু নেই। তাই আত্মার সম্পর্কিত যুক্তি প্রলাপমাত্র। ইহলোক সর্বস্ব চার্বাকদের মতে মোক্ষ মস্তকহীন মানুষের শিরপীরার মতো উপহাস্যের বস্তু । চার্বাক মতে জড়বস্তুর সংমিশ্রনে তৈরি দেহ সুখ দুঃখ মিশ্রিত। দেহ থকলে সুখ থাকবে এবং দেহ গেলে সুখ দুঃখের অবসান ঘটবে । তাই মানুষের নৈতিক কর্তব্য হল দুঃখকে সর্বান্তকরনে কমিয়ে দৈহিক সুখ ভোগ করা।

দেহ সুখ-দুঃখ মিশ্রিত । তাই বলে দৈহিক সুখ উপেক্ষা করা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয় “ Give up eating fish because there are bones.”-মূর্খ ব্যক্তিরাই মাছে কাঁটা আছে বলে মাছ  খাওয়া ত্যাগ করে, কিন্তু বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা অতি সহজে কাঁটা বেছে সার অংশটুকু ভক্ষন করেন। অর্থাৎ দেহ থাকলেই সুখ-দুঃখ থাকবে । তাই চার্বাক মতে মানুষের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ সর্বত্রভাবে দুঃখ কমিয়ে সুখ ভোগ করা।

মোক্ষবাদীরা বলেন , সুখভোগ ক্ষনিকের জন্য। চার্বাকেরা মোক্ষবাদীদের এই মন্তব্য স্বীকার করে বলেন ক্ষনিক হলেও একেবারে মূল্যহীন নয়, মিথ্যা নয়। সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত, রংধনু ক্ষনিক হলেও এদের অস্তিত্ব অস্বীকারযোগ্য নয় অর্থাৎ দৈহিক সুখ সম্ভব, কিন্তু আত্মসুখ সম্ভব নয় ,কারন দেহ অতিরিক্ত আত্মা বলে কিছু নেই।

ভবিষ্যৎ প্রত্যক্ষগোচর নয়, তাই ভবিষ্যৎ সুখলাভের আশায় বর্তমান সুখ থেকে বিরত থাকা উচিৎ নয়। এইভাবে চার্বাক নীতিবিদ্যা দৈহিক সুখবাদে পরিণত হয়েছে।

সমালোচনা

চার্বাকদের এইপ্রকার অসংযত দেহগত সুখকেই  মানবজীবনে পরম পুরুষার্থ বলা যায় না। দেহজ সুখ কামনা ইতর প্রানীদের থাকে।মানুষের পরম পুরুষার্থ যদি দেহজ সুখ হয় তাহলে ইতর প্রাণীদের সাথে মানুষের কোন পার্থক্য থাকে না।

মানুষ কেবল দৈহিক সুখে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না , মানুষ হল অসীমের পিয়াসী। জীবনের একটি সময়ের পর কামিনী কাঞ্চনের সুখ কমে যায়। তখন মানুষ তার কর্ম ও জ্ঞানকে ভালবাসে। তাই দেহসুখ মানুষের পরম পুরুষার্থ হতে পারে না । তাই পরবর্তীকালে সুশিক্ষিত চার্বাকগন উপনিষদের ভাবধারায় প্রভাবিত হয়েছিলেন।

অসংখ্য ধন্যবাদ চার্বাক নীতিবিদ্যা অংশটি পড়ার জন্য।


আরো পড়ুন 


 

Leave a comment