স্বামী বিবেকানন্দ রচনা | বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় পাঠক আজকের বাংলা রচনা পর্বে যে রচনাটি আমরা উপস্থাপন করতে চলেছি তা হল-স্বামী বিবেকানন্দ রচনা | বাংলা প্রবন্ধ রচনা।  বাংলা রচনা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক , সমস্ত প্রকার রচনা তোমাদের এই পেজে রয়েছে । প্রদত্ত রচনাটি স্বামী বিবেকানন্দ রচনা ক্লাস 6 এবং স্বামী বিবেকানন্দ রচনা class 9  ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।

স্বামী বিবেকানন্দ রচনা
স্বামী বিবেকানন্দ রচনা | 

 

বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ রচনা

“তরুণের জয় তরুণের জয়

জয় পুরোহিত আহিতাগ্নিক, জয় জয় চিন্ময়” – জীবনানন্দ দাশ

সূচনা : 

মানবপ্রেমের সাধক স্বামী বিবেকানন্দের আবির্ভাব না হলে ভারতাত্মার পূর্ণ পরিচয় উদঘাটিত হত না। উনিশের শতকে নবজাগরণের দিনে দেশে পরিবর্তনের হাওয়া, শিক্ষিত বাঙালির মন পূর্ব-পশ্চিমের টানাপোড়েনে ভুগছে , ঠিক তখনি রামকৃষ্ণ-শিষ্য নরেন্দ্রনাথ বীর সন্ন্যাসীর মূর্তিতে দেখা দিলেন  ‘জীবসেবাই শিবসেবার আদর্শে তিনি মনুষ্যত্বের অন্য পরিচয় তুলে ধরলেন।

জন্মপরিচয় :

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে বিবেকানন্দের জন্ম। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘বিলে’, পোশাকি নাম নরেন্দ্রনাথ। বাবা ছিলেন বিখ্যাত এটর্নি বিশ্বনাথ দত্ত, মা ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনি ছিলেন ধর্মপ্রাণা মহিলা ।

বাল্যজীবন শিক্ষা :

ছেলেবেলা থেকেই নরেন্দ্রনাথ ছিলেন দুরন্ত। অদম্য সাহসী এই বালকটির প্রিয় খেলা ছিল ধ্যানাসন। লেখাপড়ায় নরেন ছিলেন খুব মেধাবী। কলকাতার মেট্রোপলিটান স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন বিদ্যাচর্চার পাশাপাশি সংগীতচর্চাতেও তাঁর মনোযোগ ছিল। জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্সসহ বি.এ.পাশ করেন। স্নাতক হবার পর যখন আইন পড়ছেন, তখন বাবা মারা যান।

রামকৃষ্ণ সান্নিধ্য :

নরেনের প্রতিবেশী সুরেন্দ্রনাথ মিত্র ছিলেন দক্ষিণেশ্বরের রামকৃষ্ণ-শিষ্য। একদিন রামকৃষ্ণের উপস্থিতিতে নরেনকে গান করতে হল। গান শুনে মুগ্ধ রামকৃষ্ণদেব নরেনকে দক্ষিণেশ্বরে আমন্ত্রণ করলেন। পিতার মৃত্যুর পর নরেনের সংসারে তখন অভাব, চাকরি নেই। দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর মুর্তি দেখিয়ে নরেনকে মায়ের কাছে টাকা পয়সা চাইতে বললেন রামকৃষ্ণ। তার্কিক যুবক ঠাকুরের কৃপায় মনের মধ্যে দিব্যদৃষ্টি লাভ করলেন। মায়ের কাছে অর্থ-প্রতিপত্তি নয়, ত্যাগ-বৈরাগ্য প্রার্থনা করলেন।

তাই কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন – “সোনার মুকুট ভেঙে

লালাট তোমার কাঁটার মুকুটে রাখিলে সাধক রেঙে

স্বার্থ লালসা পাসরি ধরিলে আত্মহুতির ডালি ,

যজ্ঞের যূপে বুকের রুধির অনিবার দিলে ঢালি

বিভাতি তোমার তাই অটুট রহিল অংশুমালী।”

ভারত পথিক :

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণের পর ২৫ ডিসেম্বর সন্ন্যাস নিলেন নরেন্দ্রনাথ। তাঁর নাম হল বিবেকানন্দ। হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত পায়ে হেঁটে পর্যটন করার সময় হতদরিদ্র ভারতকে দেখলেন পরিব্রাজন বিবেকানন্দ। বুঝলেন, মানুষ ছাড়া ধর্মের কোন বায়বীয় অর্থ নেই।

সকল ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন-

“হে বীর, সাহস অবলম্বন করো ; সদর্পে বলো – আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই ।বলো – মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চন্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই ;তুমিও কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হইয়া সদর্পে ডাকিয়া বলো – ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ।”

বিশ্বধর্ম মহাসভা : 

১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো বিশ্বধর্মসম্মেলনে ভক্তদের অনুরোধে বেদান্ত প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে যোগ দিলেন বিবেকানন্দ। গেরুয়া- পরিহিত পাগড়ি-শোভিত বিবেকানন্দ যখন বিজাতীয় নরনারীকে ‘আমেরিকাবাসী আমার ভাই ও বোনেরা’ বলে সম্বোধন করলেন, তখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। বক্তৃতায় সর্বধর্মের স্বাধীনতা স্বীকার করে নিয়ে সামঞ্জস্য ও শান্তির কথা শোনালেন তিনি।

সংগঠক ও আলোচক : 

শ্রীরামকৃষ্ণের ধর্মীয় উপদেশের বাস্তব রূপায়ণ যে মানবসেবায়, এই দিকটিকে গুরুত্ব দেবার জন্য ১৮৯৭ সালে গঙ্গার পশ্চিম তীরে হাওড়া জেলার বেলুড়ে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন ভারতে এবং বিদেশের নানাস্থানে মিশনের কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বেলুড় মঠ রামকৃষ্ণ মিশনের মূল কার্যালয়। বাংলা চলিত গদ্যে লেখা তাঁর যুক্তিনিষ্ঠ রচনার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘বর্তমান ভারত’, ‘পরিব্রাজক’ ইত্যাদি গ্রন্থে ১৯০২ সালের ৪ ই জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে এই ক্রান্তদর্শী মহাপুরুষের মৃত্যু হয় ।

 উপসংহার : 

আধুনিক ভারতের প্রগতিশীল চিন্তার ধারক ও বাহক বিবেকানন্দ। তিনি একাধারে নবযুগের ‘বিবেক’ ও মানবকল্যাণের আনন্দ। যুবকরাই ছিল তাঁর ‘মনের মানুষ’। তিনি তাঁর জাতির প্রত্যেকটি লোকের জন একটি মন্ত্রই রেখে গিয়েছেন- ‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্নিবোধত।’

Thanks For Reading : স্বামী বিবেকানন্দ রচনা ।

 

□ অনুরূপ প্রবন্ধঃ

একজন মহাপুরুষ

বীর সন্ন্যসী বিবেকানন্দ

স্বামী বিবেকানন্দ জীবনী


আরো পড়ুনঃ   


 

Leave a comment