শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা

প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে  BA Education  এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা BA Education honours /   BA Education Generalএর যেসব ছাত্র ছাত্রী  BA Education Semester-2  তে Psychological Foundation Of Education CC-2 Notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন।  Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।

 

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা ।
শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা ।

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো

মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্কে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা প্রয়োজন মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার প্রকৃত অর্থ। মনোবিজ্ঞান হল আচরণের বিজ্ঞান অর্থাৎ ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে মানসিক ক্রিয়া গতি প্রকৃতি ও সূত্র নির্ধারণ করে মনোবিজ্ঞান। আর শিক্ষা হল মানুষকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি জ্ঞাপনে সহায়তা করা। সুতরাং আচরণের প্রয়োগমূলক দিক হল শিক্ষার বিষয় বস্তু।

সুতরাং মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিকট ও গভীর, বলা চলে যে একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ। শিক্ষণ হল অভ্যাসের মাধ্যমে প্রাণীর আচরণের পরিবর্তন । এক জন শিক্ষকের যদি কোন শিক্ষার্থীকে বিশেষ আচরণ শেখাতে গিয়ে আচরণটির প্রকৃতি ও স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞান  থাকে তাহলে তিনি খুব স্বল্পতম প্রচেষ্টায় সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন এবং শিক্ষক – শিক্ষার্থীর মধ্যে উভয়েরই লক্ষ্য সিদ্ধ হবে।

একজন শিক্ষার্থীকে কি ভাবে শেখালে সে সহজে শিখতে পারবে তা মনোবিদ্যার জ্ঞান সহজ করে দিতে পারে। এই বিচারে মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নিন্মে শিক্ষা ও মনোবিদ্যার সম্পর্কের দিকগুলি আলোচনা করা হল-

 

(i) শিক্ষার লক্ষ্য ও মনোবিজ্ঞান 

অ্যাডমস্‌ এর কথায় – “ The teacher teaches John Latin”  এই বাক্যটি থেকে শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক ভালোভাবে বোঝা যায়। শিক্ষককে যেমন শিক্ষার বিষয়টি জানতে হবে তেমনই যাকে শিক্ষা দেওয়া হবে তাকেও জানাতে হবে। শিক্ষার্থী জানাতে হলে  শিক্ষকের প্রয়োজন মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান।শিক্ষক যদি শিশুদের মানসিক দিকে নজর না দেয় তাহলে শিক্ষার লক্ষ্য যথার্থ ভাবে পূরন হবে না। তাই শিক্ষার লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য  মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন।

(ii) শিক্ষার পাঠক্রম ও মনোবিজ্ঞান 

শিক্ষার লক্ষ্য নির্দিষ্ট হওয়ার পরবর্তী স্তর হল পাঠক্রম নির্ধারণ করা। আধুনিক শিক্ষার পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের উপযোগী। শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশ বলতে বোঝায় দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষভিক ,বৌদ্ধিক প্রভূতি সমস্ত দিকের বিকাশ। এর জন্য পাঠ্যক্রমের মধ্যে বহুমুখীতা থাকা দরকার।  শিক্ষা ক্ষেত্রে পাঠক্রমের এই বহুমুখীতা মনোবিজ্ঞানের ধারণার উপর নির্ভর করে।

(iii) শিক্ষার পদ্ধতি ও মনোবিজ্ঞান 

বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি হল শিশুকেন্দ্রিক। এই পদ্ধতিগুলি মনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। এই পদ্ধতি গুলি হল প্রজেক্ট প্রদ্ধতি,  সমস্যা সমাধান প্রদ্ধতি, প্রোগ্রাম শিক্ষণ পদ্ধিত, আবিষ্কার প্রদ্ধতি ইত্যাদি। এই আধুনিক প্রদ্ধতি গুলি প্রয়োগ করতে গেলে মনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। এই প্রদ্ধতি গুলি প্রয়োগ করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে পারলে শিক্ষার্থীদের সমস্ত ইন্দ্রিয় গুলিকে সক্রিয় করে তোলার মাধ্মে শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে।

(iv) শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের গবেষণা 

শিক্ষাকে বিজ্ঞান ভিত্তিক করার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের গবেষণার বিশেষ অবদান দেখা যায়। মনোযোগ ,স্মৃতি, শিখন, প্রেষণা ও সাধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি মানসিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের গবেষণার প্রভাব আছে।

(v) বিদ্যালয় পরিচালনা ও মনোবিজ্ঞান 

শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সুষ্টভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করা। বিদ্যাল্যকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গেলে শিক্ষক তথা শিক্ষাকর্মীদের মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের কার্যাবলী নির্ধারণ করা, সময় তালিকা প্রস্তুত করা, শৃঙ্খলা , শিক্ষক ও ছাত্রদের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

(vi) ব্যক্তিসত্তার বিকাশ ও মনোবিদ্যা

মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে প্রমাণীত হয়েছে যে, একটি শিশুর ব্যক্তি সত্তার বিকাশকে সার্থক করে তুলতে হলে শিশুর জীবন বিকাশের প্রতিটি ধারা ও গতি প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী । এই শিক্ষা অমরা মনোবিদ্যা থেকে পেয়ে থাকি।

(vii) অপসংস্কৃতি দূরীকরণ ও মনোবিদ্যা

জীবনে শিক্ষা পর্ব হল এমন একটি অধ্যায় যেখানে বিভিন্ন প্রকারে ভালো দিকের সাথে সাথে অপসংস্কৃতি এসে হাজির হয়।  জৈবিক পরিবর্তনের ফল স্বরূপ  দেহমনেও  বিভিন্ন পরিবর্তন এসে হাজির হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজে ও বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য শিক্ষকদের মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন।

 উপসংহার

পরিশেষ বলা যায় শিক্ষা হল এক শক্তি এবং মনোবিঞ্জান হল ব্যক্তির হাত পা যার সাহায্য ছাড়া কোন ব্যক্তির অগ্রগতি সম্ভব নয়। এই জন্য শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকের উপর মনোবিদ্যার  প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে। এপ্রসঙ্গে পেস্তালাৎসি বলেছেন– “I want to psychologize Education.”

 

Thanks for Readingশিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো।


আরো পড়ুন


প্রশ্ন উত্তর

১. শিক্ষা বিজ্ঞান  বলতে কি বোঝ ?

উত্তর যে বিজ্ঞানের সাহায্যে  শিক্ষার নীতি ও প্রকৃতি গুলিকে ব্যাখ্যা করা  হয় শিক্ষা কি তা  বুঝতে সাহায্য করে ,  তাকেই  শিক্ষা বিজ্ঞান  বলে ।

২ আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞানের জনক কাকে বলে ?

উত্তর  রুশো কে “আধুনিক শিক্ষার জনক” বলা হয় । 

৩. মনোবিজ্ঞান বলতে কী বোঝো ?

উত্তর যে বিজ্ঞানের মাধ্যমে  বিভিন্ন প্রাণীর মানসিক  আচরণ ও কর্ম প্রক্রিয়া  নিয়ে  আলোচনা করা হয় । তাকেই  মনোবিজ্ঞান  বলে  ।

৪. আধুনিক মনোবিদ্যার জনক কে ?

উত্তর আধুনিক মনোবিদ্যার জনক হলেন  ডাঃ সিগমুন্ড ফ্রয়েড ।

৫. “ The teacher teaches John Latin”  উক্তিটি কার ?

উত্তর জন অ্যাডামস- এর  উক্তি  ।


 

Leave a comment