দর্শন আলোচনার আজকের পর্বের পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা আলোচনা করতে চলেছি । সেটি হল-হিউমের সতত সংযোগবাদ তত্ত্ব সমালোচনাসহ | BA Philosophy SEM 1-এর দর্শন শাস্ত্রের সমস্ত Topic আলোচনা করা হবে। আশা রাখি ,আমাদের এই উপস্থাপনা দর্শন শাস্ত্রের সকল ছাত্রছাত্রীদের উপকারে আসবে ।
হিউমের সতত সংযোগবাদ তত্ত্ব সমালোচনা সহ |
Regularity Theory of Hume’s with Criticism:
হিউমের সতত সংযোগবাদ তত্ত্বঃ
সতত সংযোগতত্ত্ব কার্য কারণ বিষয়ে হিউমের এমন একটি মতবাদ যেখানে প্রচার করা হয় যে, কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমরা যখন দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে একটি কারণ এবং অপরটিকে কার্য বলি। তখন আসলে আমরা সতত সংযোগ বা বারবার সংগঠন লক্ষ করি। বারবার এক সঙ্গে ঘটেছে এমন দুটি ঘটনার মধ্যে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে , এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলে।
বলাবাহুল্য অন্যান্য দার্শনিকদের সাথে হিউম এই বিষয়ে একমত যে প্রতিটি ঘটনার কারণ আছে, কোনো ঘটনা অকারণে ঘটে না। জগতে আকস্মিক কোনো স্থান নেই , কিন্তু হিউমের নিজস্ব মত হল কারণের কোনো শক্তি নয়, কারণ ও কার্যের মধ্যে বস্তুত কোনো আবার সম্পর্ক নেই, সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, কার্য কারণ সম্বন্ধ বিষয়ক হিউমের মত ,প্রচলিত লৌকিক মতবাদ ও বুদ্ধিবাদীদের মতের সম্পূর্ন বিরোধী।
সতত সংযোগ তত্ত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হিউমযুক্তি দিয়ে লৌকিক মত ও বুদ্ধিবাদী মত খন্ডন করেছেন। হিউমের মতে শক্তির ধারণাও যথার্থ। অতএব কারণ কোনো শক্তি নয়। আগুনের উপস্থিতি ও দহনের মধ্যে কার্য কারণ সম্পর্ক আছে। হিউমের মতে আগুন তার অন্তঃর্নিহিত শক্তি দ্বারা দহন ক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এমনটা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না।
হিউম স্বীকার করেন যে , ব্যতিক্রমহীন ভাবে আমরা সকল ক্ষেত্রে অগ্নিকে দহন করতে দেখি। কিন্তু তার মতে, অগ্নি দহন করে – এই বাক্যের বিরোধী বাক্য স্ববিরোধী নয় , অর্থাৎ আগুন ভবিষ্যৎ দহন করবে না এমনটি চিন্তা করার মধ্যে কোনো বিরোধীতা নেই। এইভাবে তিনি প্রমাণ করেন যে কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক কোনো সম্পর্ক নেই।
আমরা জল পানকে তৃষ্ণা নিবারণের কারণ বলে থাকি, কেননা অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে , জল পান করলে আমাদের তৃষ্ণা মেটে, কিন্তু হিউম বলেছেন আমরা এমনটি কল্পনা করতে পারি , জল পান করা হল তৃষ্ণা মিটলো না। এইরূপ কল্পনার মধ্যে কোনো যৌতিক অসম্ভবতা নেই। যদি থাকতো তাহলে অনিবার্য সম্পর্কে আবদ্ধ হত এবং এদের বিপরীত চিন্তার ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতা দেখা দিত।
হিউম এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন যে, পরবর্তীকালে যাদের মধ্যে কার্য কারণ সম্বন্ধ আবিষ্কৃত হয়েছে, এমন দুটি বস্তু যদি কোনো ব্যক্তির কাছে অপরিচিত হয় তাহলে সেই ব্যক্তি যতই বুদ্ধিমান হোক না কেন, বস্তু দুটির কোনো একটিকে প্রত্যক্ষ করে তার কারণ বা কার্য সম্পর্কে কিছু নির্দেশ করতে পারে না।
কার্য যদি কারণ প্রযুক্ত হয় তাহলে আরোহ যুক্তি বিজ্ঞানে আমরা কোনো কোনো যুক্তির আশ্রয় বাক্য থেকে তার সিদ্ধান্ত কী হবে তা অনুমান করতে পারি, তেমনি অভিজ্ঞতায় নিরপেক্ষ ভাবে আমরা কারণ থেকে কার্যকে অনুমান করতে পারতাম ,তাহলে আগুন দহনে করে এই ঘটনাটি অভিজ্ঞতা পূর্ব হত।
কার্য কারণের মধ্যে আমাদের অনিবার্য সম্পর্ক অস্বীকার করে হিউম দেখাবার চেষ্টা করেছেন, যে কার্য কারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় সতত সংযোগের দ্বারা দুটি ঘটনাকে একসাথে বারবার ঘটতে দেখে আমরা তাদের মধ্যে কার্য কারণ সম্পর্ক স্থাপন করি। পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলি। এই রকমভাবে ব্যতিক্রমহীন দুটি ঘটনার নিয়ত প্রত্যক্ষ করে আমরা ঘটনা দুটির মধ্যে কারণ ও কার্য সম্পর্ক স্থাপন করি।
হিউম কথিত সতত সংযোগ কথাটির তাৎপর্য অনুধাবন করতে গিয়ে বলা হয় ধূম ও বহ্নির মধ্যে কার্য কারণ সম্পর্ক যখন স্থাপন করি এবং কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ ধূমের সাথে যখন আমরা একটি বিশেষ বহ্নির সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করি, তখন আমরা প্রত্যক্ষ করি না যে বারবার এই বিশেষ ধূম ও বহ্নির সংযোগ হচ্ছে, অর্থাৎ তাদের মধ্যে কার্য ও কারণ সম্বন্ধ রয়েছে।
সমালোচনাঃ
বিশেষভাবে পর্যালোচনা করলে হিউমের মতবাদের কতকগুলি ত্রুটি লক্ষ করা যায়। –
প্রথমতঃ
তিনি বলেন কারণ নামক ঘটনা ও কার্য নামক ঘটনাকে এক সাথে ঘটতে দেখে আমরা সংস্কার বশত আমরা আশা করি যে, কারণ ঘটলে কার্য ঘটবে কিন্তু এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে কারণ থাকলেও কার্য ঘটেনি।
দ্বিতীয়তঃ
সতত সংযোগে কার্য কারণ সম্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই।
তৃতীয়তঃ
সতত সংযোগের এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে কার্য কারণ সম্বন্ধ নেই। যানবাহন নিয়ন্ত্রনের জন্য লাল ও সবুজ আলোর মধ্যে নিয়ত সম্বন্ধ লক্ষ করা গেলেও তাদের মধ্যে কার্য কারণ সম্বন্ধ আছে এমনটা বলা যায় না।
চতুর্থতঃ
তাছাড়া কার্য কারণ সম্বন্ধের এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যেখানে নিয়ত সংযোগের অভাব রয়েছে। যেমন অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণের ফলে পেটের অসুখ হলেও তা নিয়মিত নয়।
উপসংহারঃ
দার্শনিক মিল, হিউমের মতের সমালোচনা করে বলেন মাত্র নিয়ত পূর্বগামী ঘটনাই যদি কারণ পদবাচ্য হত তাহলে দিনকে রাত্রি / রাত্রিকে দিনের কারণ বলা হত, কিন্তু এই দুটি ঘটনা পৃথিবীর আহ্নিকগতির ফলাফল। তাই সর্বশেষে বলা যায়, কার্য ও কারণ স্বতন্ত্র দুটি ঘটনা, সতত সংযোগ ভিন্ন এদের মধ্যে অন্য কোনো সম্বন্ধ নেই।
Thanks For Reading: হিউমের সতত সংযোগবাদ তত্ত্ব সমালোচনাসহ |
আরো পড়ুনঃ
- দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ
- বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীল গুলি কি কি ।
- চরম স্বচ্ছলতার কি নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে|
- দ্রব্য কি ? দ্রব্য সম্পর্কে বুদ্ধিবাদীদের অভিমত |
- উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ |
- কার্যকারণ সম্পর্কে প্রসক্তি তত্ত্ব সমালোচনা সহ ।
- -“Tabula Rasa” বা “অলিখিত কাগজ” কথার তাৎপর্য লেখ |
- অধিবিদ্যা কী | অধিবিদ্যার প্রকৃতি আলোচনা করো
প্রশ্ন উত্তরঃ
১. কার্য ও কারণ বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ দুটি ঘটনাকে একসাথে বারবার ঘটতে দেখে আমরা তাদের মধ্যে কার্য কারণ সম্পর্ক স্থাপন করি। পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলি।