দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ

দর্শন আলোচনার আজকের পর্বের পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা আলোচনা করতে চলেছি । সেটি হল-দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ আলোচনা কর। আশা রাখি ,আমাদের এই উপস্থাপনা দর্শন শাস্ত্রের সকল ছাত্রছাত্রীদের উপকারে আসবে ।

দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ আলোচনা কর।
দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ আলোচনা কর।

 

দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ | Empiricists’ doctrine of substance |

আধুনিক দর্শনে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকদের মধ্যে লক, বার্কলে ও হিউমের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। তাই দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ বলতে এই তিনজনের মতবাদকে বোঝায়।

দ্রব্য সম্পর্কে লকের  অভিমতঃ 

দ্রব্য সম্পর্কে লক লৌকিক মত অবলম্বন করে বলেছেন দ্রব্য হল গুনের আধার / আশ্রয়। তিনি অভিজ্ঞতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দ্রব্যের ব্যাখা করেছেন। তার মতে অভিজ্ঞতায় জ্ঞান লাভের একমাত্র উৎস। লকের মতে আমরা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা দিয়ে দ্রব্যের গুণ গুলিকে প্রত্যক্ষ করি। অভিজ্ঞতা আবার দুই প্রকারের – (i) বাহ্য প্রত্যক্ষ (ii) অন্তঃপ্রত্যক্ষ। 

বাহ্য প্রত্যক্ষের সাহায্যে আমরা বস্তুর রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন গুণের সম্পর্কে ধারণা হয়। অন্তঃপ্রত্যক্ষে সুখ, দুঃখ, ভয় ইত্যাদি মানসিক অবস্থার ধারণার হয়। লকের মতে বাহ্য / অন্তঃপ্রত্যক্ষে যে গুণগুলি ধারণা আমাদের হয় সেগুলি শূন্যে থাকতে পারে না।

গুণগুলি অবশ্যই আধার / অধিষ্ঠানে থাকবে। এই আধার / অধিষ্ঠানই হল দ্রব্য। লকের মতে দ্রব্য হল গুণের আধার / আশ্রয় যা অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয়। আমরা বাহ্য ও অন্তঃ প্রত্যক্ষের মাধ্যমে গুণগুলিকে জানতে পারলেও তাদের আশ্রয়কে জানতে পারি না। তাই লক বলেছেন দ্রব্য হল তাই যাকে আমি জানিনা।

লক তিন প্রকার দ্রব্যের উল্লেখ করেছেন। যথা – জড় দ্রব্য, চেতন দ্রব্য / আত্মা ও ঈশ্বর দ্রব্য। বাহ্য প্রত্যক্ষে পাওয়া রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি গুণগুলি থাকে । জড়দ্রব্য সুখ, দুঃখ, ভয় ইত্যাদি অন্তঃদর্শনে পাওয়া গুণগুলি  আশ্রয় করে থাকে যেখানে তা হল চেতন দ্রব্য। আমাদের এখন কতকগুলি গুণ ও ক্রিয়া আছে । (যথা –  স্বর্গতা , সর্বশক্তিমত্তা) যা আশ্রয় করে থাকে ঈশ্বরের দ্রব্যে।

দ্রব্য সম্পর্কে বার্কলের অভিমতঃ  

অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক বার্কলে জড় দ্রব্যের অভিমত অস্বীকার করেছেন। তার মতে দ্রব্য হল গুণের অধি আশ্রয়, তার মতে ইন্দ্রিয় অনুভবে কেবল মাত্র গুণগুলিকে পাওয়া যায়। তাই দ্রব্য বিশেষ বিশেষ গুণগুচ্ছ ছাড়া আর কিছুই নয়।

এখন প্রশ্ন হল, বার্কলে কীভাবে জড় দ্রব্যের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। বার্কলের মতে অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ নির্ভর অর্থাৎ যা আছে বলা হয় তাকে প্রত্যক্ষ করা যায়। যাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না , তাকে আছে বলা যায় না। বাহ্য জগতে কেবল গুণের প্রত্যক্ষ হয়, তাই গুণের অস্তিত্ব আছে কিন্তু, জড় দ্রব্য প্রত্যক্ষের বিষয় নয়, তাই জড় দ্রব্যের অস্তিত্ব নেই , তাই বার্কলের সিদ্ধান্ত হল দ্রব্য বলতে গুণ সমষ্টি ছাড়া তার কিছুই নয়।

বার্কলে জড় দ্রব্যকে অস্বীকার করলেও চেতন / আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। অস্তিত্ব যদি প্রত্যক্ষ নির্ভর হয় , তাহলে প্রত্যক্ষ বার্তারূপে তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বার্কলের মতে আত্মা আবার দুই প্রকার যথা – জীব আত্মা ও পরম আত্মা বা ঈশ্বর। ঈশ্বর আত্মার কাছে যেসব ধারণা দেয় তাই জীব আত্মার কাছে বস্তুরূপে পতিত হয়। তাই বার্কলের মতে দ্রব্য দুই প্রকার। যথা – জীব আত্মা ও পরম আত্মা।

দ্রব্য সম্পর্কে হিউমের অভিমতঃ 

অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক হিউম দ্রব্য সম্পর্কে লক ও বার্কলের অভিমতকে অগ্রাহ্য করে বলেছেন। দ্রব্য বলে বাস্তবে কিছু নেই।

লক ও বার্কলে দুজনেই ঈশ্বরকে দ্রব্য রূপে স্বীকার করেছেন , হিউমের মতে দ্রব্য হল গুণ সমষ্টি। দ্রব্য আমাদের ইন্দ্রিয় অনুভবের বিষয় হতে পারে না, কারণ ইন্দ্রিয় অনুভবের মাধ্যমে আমরা কেবলমাত্র কয়েকগুণ ও শক্তি লাভ করি। এই গুণের সমষ্টিকেই দ্রব্য বলা হয়। এজন্য হিউম বলেছেন দ্রব্যের ধারণা হল “ একটা দ্রবোর্ধ্য উদ্ভট কল্পনা ”।

লক বার্কলে দুজনেই ঈশ্বরকে দ্রব্যরূপে স্বীকার করেছেন , কিন্তু হিউমের অভিমত হল ঈশ্বরের ধারনাটি একটি কল্পনা। ঈশ্বরকে যেমন বাহ্য প্রত্যক্ষে অনুভব করা যায় না  বা  তাঁর মুদ্রণ নেই , তবে তার অস্তিত্ব নেই সুতরাং , ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই তাই ইশ্বর দ্রব্য হতে পারে না। হিউমের মতে গুণগুচ্ছই দ্রব্য।

Thanks For Reading: দ্রব্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবাদীদের মতবাদ ।


আরো পড়ুনঃ


প্রশ্ন উত্তরঃ

১. অভিজ্ঞতাবাদ কাকে বলে ?

উত্তরঃ  অভিজ্ঞতাবাদ হল একটি দার্শনিক তত্ত্ব যে মানব জ্ঞান প্রধানত পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত অভিজ্ঞতা থেকে আসে।

২. তিনজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকের নাম ?

উত্তরঃ  তিনজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকের নাম  হল  জন লক, বার্কলী, হিউম ।

Leave a comment