হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো

আধুনিক ভারতের সরকারিভাবে প্রথম শিক্ষা কমিশন, যা হান্টার কমিশন(Hunter Commission)। B.A Education-এর আজকের পর্বে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি ।

Class 11 Education/  B.A Education Honours/ B.A Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছ তাদের জন্য  এই পোস্টগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন।Education -এর প্রয়োজনীয় সব Notes তোমরা এই পেজে পাবে ।

ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো | আমরা সহজ ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বরূপ বিষয় গুলি উপস্থাপন করে থাকি । যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক হবে ,বলেই আশা রাখি ।

আলোচনার এই পর্বের আলোচ্য বিষয়ঃ প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো | 

হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো |
হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো |

 

প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো |

হান্টার কমিশনঃ  

ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে ভারতবর্ষে  দেশীয় শিক্ষা প্রসারে সরকারের অবহেলা প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের সাহায্যের অভাব, গ্র্যান্ড–ইন –এডের ক্রিয়াশীলতার অভাব ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয় সচেতনতা বোধ জাগ্রত করে। এইরূপ অবস্থায় 1882 খ্রীঃ একটি কমিশন গঠন হয়। এটি ভারতবর্ষের প্রথম শিক্ষা কমিশন স্যার উইলিয়াম হান্টার এই কমিশনের সভাপাতিত্ব করেছিলেন বলে তাঁর নাম অনুসারে এই কমিশন হান্টার কমিশন নামে পরিচিত।

হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি  হলঃ  

হান্টার কমিশন শিক্ষার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যে ঐতিহাসিক বিবরণ পেশ করেছিলেন, সেই বিবরণ থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলি হল –

(i) নীতি ও পন্থাঃ

কমিশন দুটি পন্থার নির্দেশ করেছে (ক) গ্রান্ড – ইন – এড প্রথার উন্নততর ব্যবস্থা করতে হবে। (খ) সরকারী কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ আর অগ্রসর হবে না।

(ii) প্রাথমিক শিক্ষাঃ

হান্টার কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব উপলদ্ধি করে বলেন যে কোনো জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের প্রতি সবথেকে বেশি মনোযোগ দেওয়া কর্তব্য। এই উদ্দেশ্যে কমিশন আর্থিক সুব্যবস্থা পাঠ্যক্রম নির্ধারন শিক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ে সুপারিশ করেন। কয়েকটি সুপারিশ হল –

(ক) প্রাথমিক শিক্ষা হবে সম্পূর্ন আত্মকেন্দ্রিক।

(খ) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে।

(গ) জাতি – ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে দেশীয় বিদ্যালয় গুলি সকলের জন্য মুক্ত হবে।

(ঘ) পাঠ্যক্রম হবে স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী।

(ঙ) দেশীয় গণিত, হিসাব নিকাশ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(চ) প্রাথমিক শিক্ষার এক তৃতীয়াংশের ব্যয় ভার সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।

(iii) মাধ্যমিক শিক্ষাঃ

হান্টার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে থেকে সরকারি প্রচেষ্টা ক্রমে ক্রমে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে গ্রান্ড – ইন – এড এর প্রথার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সহায়তায় মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারের জন্য সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত। তবে যে সব জেলায় বেসরকারি প্রচেষ্টায় আদর্শ মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না, সেখানে সরকারি উদ্যোগে একটি রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

হান্টার কমিশন মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্যক্রমকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করার সুপারিশ করেছিলেন, যেমন –  (ক) ‘A’ কোর্শ এন্ট্রন্স পরীক্ষায় পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য এবং (খ) ‘B’ কোর্শ বানিজ্যিক, ব্যবহারিক ও সাহিত্য বর্হিভূত বিষয়গুলি শিক্ষার জন্য।

(iv) উচ্চ শিক্ষাঃ

হান্টার কমিশন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছিলেন।  তবে যে সমস্ত কলেজের উৎকর্ষের উপর শিক্ষার মান নির্ভর করে, সেই সমস্ত কলেজগুলির পরিচালনার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে থাকবে। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সুষ্টভাবে পাঠের জন্য প্রস্তাবে বলা হয়েছে – (ক) প্রত্যেক কলেজে কিছু সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বিনা বেতনে শিক্ষার আয়োজন করতে হবে। (খ) গরীব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করতে হবে। (গ) ঐচ্ছিক বিষয়গুলির সংখ্যা বাড়াতে হবে।

(v) মুসলিম শিক্ষাঃ

প্রাথমিক থেকে কলেজস্তর পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান ও বিনা বেতনে শিক্ষা সুযোগ এবং মুসলিম অঞ্চলে মুসলিম নরম্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং মুসলিম পরিদর্শক নিয়োগ করতে হবে।

(vi) নারী শিক্ষাঃ

নারী শিক্ষা প্রসঙ্গে কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ গুলি হল – (ক) বিদ্যালয় ফ্রি নূন্যতম হবে। (খ) শিক্ষিকাদের পুরষ্কার সুলভ অনুদান দিতে হবে। (গ) শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষনের জন্য নরম্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা। (ঘ) মহিলা পরিদর্শকের আয়োজন করা।

(vii) বয়স প্রশিক্ষণঃ 

নিরক্ষর বয়স্কদের শিক্ষার জন্য কমিশন নৈশ্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে।

(viii) ধর্মীয় শিক্ষাঃ

কমিশন শিক্ষা ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দেন। নীতি শিক্ষার জন্য পাঠ্য পুস্তক রচনার ও সুপারিশ হয়।


আরো পড়ুনঃ


প্রশ্ন উত্তরঃ  

১. হান্টার কমিশন কে কবে গঠন করেন ? 

উত্তরঃ স্যার উইলিয়াম হান্টার 1882 খ্রীঃ হান্টার কমিশন গঠন হয়।

২. হান্টার কমিশন কেন গঠিত হয় ?

উত্তরঃ  ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে ভারতবর্ষে  দেশীয় শিক্ষা প্রসারে সরকারের অবহেলা প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের সাহায্যের অভাব, গ্র্যান্ড– ইন – এডের ক্রিয়াশীলতার অভাব ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয় সচেতনতা বোধ জাগ্রত করে। এইরূপ অবস্থায় 1882 খ্রীঃ একটি কমিশন গঠন হয়।

৩. হান্টার কমিশনের সভাপতি কে ছিলেন ?

উত্তরঃ হান্টার কমিশনের সভাপতি ছিলেন-স্যার উইলিয়াম হান্টার । তাঁর নাম অনুসারে এই কমিশন হান্টার কমিশন নামে পরিচিত।

৪. হান্টার কমিশন সুপারিশগুলি কি কি ?

উত্তরঃ  হান্টার কমিশন সুপারিশগুলি হল-

(ক) প্রাথমিক শিক্ষা হবে সম্পূর্ন আত্মকেন্দ্রিক।

(খ) মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দিতে হবে।

(গ) জাতি – ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে দেশীয় বিদ্যালয় গুলি সকলের জন্য মুক্ত হবে।

(ঘ) পাঠ্যক্রম হবে স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী।


 

Leave a comment