উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র আলোচনা করো

মাধ্যমিক ইতিহাস –(সিধান্ত ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট ও পরীক্ষা ) তৃতীয় অধ্যায় থেকে আজকের এই পর্বের বিষয়- উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো | যেসব ছাত্র ছাত্রী WBBSE class 10 history notes in Bengali | ইতিহাস class 10 chapter 3 খুঁজে চলেছ তাদের আশা করছি খুবই উপকারে লাগবে।

উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র আলোচনা করো |
উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র আলোচনা করো |

 

  উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের চরিত্র আলোচনা করো |

The character of renaissance of Bengal in the 19th century 

বাংলার নবজাগরণ বলতে কী বোঝোঃ 

উনিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলে বাংলার সমাজ সংস্কৃতি ধর্ম প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে। এর ফলে বাঙালির চিন্তা জগতে এক ব্যাপক পরিবর্তন বা অগ্রগতি দেখা দেয় এই অগ্রগতি উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত

নবজাগরণের ইংরেজী প্রতিশব্দ হল রেনেসাস এই কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল জাগতিক বা নবজাগরণ – এর ফলে বাংলায় মধ্যযুগের অবসান ও আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে। 1813 খ্রিষ্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট চালু হলে নবজাগরণের পূর্ণ অগ্রগতি ঘটে।

 

নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতিঃ 

1) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ 

উনিশ শতকের বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে। এর ফলে কলকাতার মধ্যবিত্ত শ্রেণী পাশ্চাত্যের আধুনিক , সাহিত্য, দর্শন , বিজ্ঞান ও যুক্তি দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হন।

2) হিন্দু সমাজের জাগরণঃ 

বাংলার নবজাগরণ প্রধানত হিন্দু সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রাজা রাধাকান্ত দেব, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার , রাজা  রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর হিন্দু শাস্ত্রকে ভিত্তি করে সমাজ পরিবর্তনের ডাক দেন। হিন্দু শাস্ত্রকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠার জন্য বাংলার নবজাগরণকে  হিন্দু জাগরণও বলা যায়।

3)  ব্রিটিশ নির্ভরতাঃ 

বাংলার নবজাগরণ ছিল অতি মত্রায় ব্রিটিশ নির্ভরশীল অনেকেই মনে করেন ব্রিটিশ শাসনের দ্বারাই ভারতের গৌরবময় ইতিহাস গড়ে উঠেছে।

4)   মধ্যবিত্ত সমাজের প্রাধান্যঃ 

বাংলার নবজাগরণে কলকাতার মধ্যবিত্ত ও ধনী প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ নবজাগরণের থেকে অনেক দূরে ছিল তাই অধ্যাপক অনিল শীল এই জাগরণকে এলিটিস্ট আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন।

5) প্রাণশক্তি অনুপস্থিতঃ 

উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে কোন প্রাণশক্তি ছিল না। তাই অরবিন্দু পোদ্দার একে বিকৃত ও নীরস রেনেসাঁ বলে অভিহিত করেছে।

 

সীমাবদ্ধতাঃ 

বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতির সীমাবদ্ধতাগুলি হল –

প্রথমত , 

বাংলার নবজাগরন প্রধানত ছিল নগর কেন্দ্রিক। প্রধান কলকাতাকে কেন্দ্র করে এই জাগরণ ঘটে ছিল।

দ্বিতীয়ত, 

বাংলার নবজাগরণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষ। কৃষক সমাজ ও মুসলিম সমাজের সাথে বাংলার নবজাগরণের কোন সম্পর্ক ছিল না।

 তৃতীয়ত, 

বাংলার নব জাগরণে ইতালীর নবজাগরণের মতো গতিবেগ উদ্দম ও বহুমুখী সৃজনশীল তা লক্ষ করা যায় না এর ফলে এই আন্দোলন সংকীর্ন গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।

 চতুর্থত, 

ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠি মনে করেন বাংলার নবজাগরণ শুধু মাত্র একটি শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

অধ্যাপক অম্লান দত্ত শোভন সরকার যদুনাথ সরকার বাংলার নবজাগরনের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার সত্ত্বেও একে প্রকৃত জাগরণ বলে অভিহিত করেন।


আরো পড়ুন –

 


প্রশ্ন উত্তর 

১. রেনেসাঁ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কে ?

উত্তরঃ ফরাসি ঐতিহাসিক মিশেলে 1855 খ্রিষ্টাব্দের রেনেসাঁস শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ।

২. রেনেসাঁস কথার আক্ষরিক অর্থ কি ?

উত্তরঃ রেনেসাঁস কথার আক্ষরিক অর্থ হল- জাগতিক বা নবজাগরণ  ।

৩. বাংলার রেনেসাঁস জনক কে ?

উত্তরঃ বাংলার রেনেসাঁস জনক হলেন -রাজা রামমোহন রায় ।

 

৪. উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ উনিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলে বাংলার সমাজ সংস্কৃতি ধর্ম প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে। এর ফলে বাঙালির চিন্তা জগতে এক ব্যাপক পরিবর্তন বা অগ্রগতি দেখা দেয় এই অগ্রগতি উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত।

৫. উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ ?

উত্তরঃ উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের দুটি বৈশিষ্ট্য- (i) উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগরণের প্রভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে।

ii) বাংলার নবজাগরণ ছিল অতিমাত্রায় ব্রিটিশ নির্ভরশীল  ।

৬. বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতির দুটি সীমাবদ্ধতা লেখ |

উত্তরঃ বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতির দুটি সীমাবদ্ধতা – i) বাংলার নবজাগরন প্রধানত ছিল নগর কেন্দ্রিক।

ii) কৃষক সমাজ ও মুসলিম সমাজের সাথে বাংলার নবজাগরণের কোন সম্পর্ক ছিল না।


Leave a comment