শিক্ষাক্ষেত্রে অভ্যাস গঠনের নিয়মাবলী ও গুরুত্ব

প্রিয় পাঠক আজকের পর্বে  BA Education  এর একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন আজকে আলোচনা করতে চলেছি। প্রশ্নটি হল-শিক্ষাক্ষেত্রে অভ্যাস গঠনের নিয়মাবলী ও গুরুত্ব।  BA Education honours /BA Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী BA Education Semester-2 তে Psychological Foundation Of Education CC-2 Notes খুঁজছ তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ন।  Education এর যেসব ছাত্র ছাত্রী রয়েছ তাদের উপকারে এলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অভ্যাস গঠনের নিয়মাবলী ও গুরুত্ব |
শিক্ষাক্ষেত্রে অভ্যাস গঠনের নিয়মাবলী ও গুরুত্ব |

 

শিক্ষাক্ষেত্রে অভ্যাস গঠনের নিয়মাবলী ও গুরুত্ব। Rules and importance of habit formation in education ।

অভ্যাসঃ 

অভ্যাস হল একধরনের অর্জিত কর্ম সম্প্রাদন প্রবণতা,  যার সাহায্যে আমরা স্বতঃসচলভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া করতে পারি। বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীগণ অভ্যাসের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন, যেমন – মনোবিদ থর্ন ডাইক বলেছেন “অভিজ্ঞতার অনুশীলন বা শিখনের ফলে সম্পূর্ন বা আংশিকভাবে আয়ত্তিকৃত বা অর্জিত প্রতিক্রিয়া হল অভ্যাস” । মনোবিদ মাহের মতে – “কোনো একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়াকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যান্ত্রিকভাবে সম্পূর্ন করার কৌশলই হল অভ্যাস।”

অভ্যাস গঠনের নিয়মাবলীঃ

মনোবিদ উইলিয়াম জেমস অভ্যাস গঠনের জন্য কতকগুলি নিয়ম অণুসরণের কথা উল্লেখ করেছেন , এগুলিকে অভ্যাস গঠনের সূত্র বলা হয়। তিনি চারটি নিয়মের কথা উল্লেখ করেছেন।

(i) মানসিক প্রত্যয়ঃ

অভ্যাস গঠন করতে হলে দৃঢ় মানসিক প্রত্যয় একান্ত প্রয়োজন,  যেমন যদি ভোর বেলায় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে চাই, তবে দৃঢ় ভাবে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে আমাকে এই কাজ করতেই হবে। অতএব অভ্যাস গঠনের জন্য মনের দৃঢ়তা বিশেষভাবে প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, কোনো বিষয়ে অভ্যাস গঠনের সময় সেই বিষয়ে অভ্যাস গঠনের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে নিরূপণ গঠন করা দরকার। করণ  যদি উদ্দেশ্য জীবনের সাথে সংগতিপূর্ন না হয়, তাহলে মানসিক দৃঢ়তা সত্ত্বেও অভ্যাস গঠনে অসুবিধা হয়।

(ii) তৎপরতাঃ

কোনো বিষয়ে অভ্যাস গঠন করব এইরূপ মানসিক দৃঢ়তার সাথে মানসিক তৎপরতার প্রয়োজন। অর্থাৎ অভ্যাস গঠন করব এমন স্থির করলে অভ্যাসের অনুশীলন প্রথম সুযোগেই আরম্ভ করতে হবে। যেমন এবার ভালো করে পড়াশোনা করার অভ্যাস গঠন করব কিন্তু আজ থেকে না করে,  পরের মাসের ১লা তারিখ থেকে শুরু করব, এ রকম ভেবে রাখলে অভ্যাস কখনোই গঠিত হবে না । যেদিন প্রতিজ্ঞা করব সেদিন থেকেই অভ্যাস গঠনের তৎপর হতে হবে।

(iii) অণুশীলনঃ

অভ্যাস গঠনের জন্য অনুশীলনের প্রয়োজন হয়। কোনো কাজ কিছু দিন করার পর যদি ত্যাগ করা হয় তবে স্নায়বিক বাধা আবার বেড়ে যায় এবং অভ্যাস গঠন সম্ভব হয় না। তাই যতক্ষণ দৃঢ় ভাবে অভ্যাস গঠন ন হয় ততক্ষণ ব্যতিক্রমহীনভাবে অনুশীলন চালাতে হবে। যেমন ভোর বেলা পড়াশোনার অভ্যাস করতে গিয়ে অজুহাত দেখিয়ে দু- একদিন অনুশীলন বন্ধ করলে অভ্যাস গঠনে ব্যাঘাত ঘটে।

(iv)  পুনরসংযোজনঃ 

অভ্যাস একবার গঠিত হয়ে গেলেও, সেই কাজের অনুশীলন সম্পূর্নভাবে ত্যাগ করা চলে না। যেসব অভ্যাসের দৈনন্দিন জীবনে পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন হয় না ,তাদের সক্রিয় রাখার জন্য মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন।

অভ্যাস গঠনের উপরিউক্ত সূত্রগুলি মেনে চললে অভ্যাস গঠন সহজ হয় ঠিক্‌ ,  কিন্তু তাই বলে অভ্যাস শুধুমাত্র যান্ত্রিক অনুশীলনের ফল নয়। ব্যক্তির প্রেষণা (Motive) অভ্যাস গঠনের পিছনে বিশেষ ভাবে কাজ করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অভ্যাসের গুরুত্বঃ

শিক্ষাক্ষেত্রে অভ্যাসের গুরুত্বগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

(i) শিক্ষার উদ্দেশ্য ও অভ্যাসঃ

শিক্ষার বিভিন্ন উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি উদ্দেশ্যে হল ব্যক্তির অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক উন্নতি সাধন করা। এই উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে ব্যক্তির মধ্যে যথাযথ অভ্যাস গঠন করা দরকার। জেমস্‌ বলেছেন অভ্যাস হল – “Fly wheels of society”। তাই উপযুক্ত অভ্যাস গঠন করা শিক্ষার একটি প্রধান দায়িত্ব।

(ii) শিক্ষা প্রক্রিয়া ও অভ্যাসঃ 

শিক্ষা প্রক্রিয়াকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে হলে অভ্যাসের প্রয়োজন আছে। শিখনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয় হল মনোযোগ অর্থাৎ শিক্ষার্থী যদি পাঠের বিষয়ে মনোনিবেশ করতে না পারে তাহলে পাঠ্য বিষয়ে শিখন সম্ভব হয় না। তাই শিখনের জন্য মনোযোগের অভ্যাস একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া চিরন্তনের অভ্যাসও শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন। অতএব , এককথায় আমরা বুঝতে পারি শিক্ষা পরিকল্পনার মধ্যে যথার্থ অভ্যাস গঠনের সুযোগ থাকা দরকার।

(iii) সামাজিক বিকাশ ও অভ্যাসঃ  

শিক্ষার আরেকটি উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা। এর জন্য সামাজিক অভিযোজনের প্রয়োজন। অভিযোজনের জন্য কতগুলি অভ্যাস গঠন করা প্রয়োজন, যেমন – স্বাস্থ্য , অভ্যাস, প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের প্রতি সৌজন্য প্রকাশের অভ্যাস, সহনশীলতার অভ্যাস ইত্যাদি।

(iv) শিখন বা অভ্যাসঃ 

শিক্ষাক্ষেত্রে শিখন একটি গুরুত্বপূর্ন প্রক্রিয়া। শিখনের ফলে ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন হয়। অভ্যাস গঠন এক ধরনের শিক্ষা।

সুতরাং অভ্যাস গঠন সম্পর্কে আলোচনাকে বাদ দিয়ে শিক্ষা সম্পর্কিত কোনো আলোচনাই সম্পূর্ন হতে পারে না।


আরো পড়ুন 


  প্রশ্ন উত্তর

1. অভ্যাস বলতে কী বোঝায় ?

 উত্তরঃ অভ্যাস হল একধরনের অর্জিত কর্ম সম্প্রাদন প্রবণতা,  যার সাহায্যে আমরা স্বতঃসচলভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া করতে পারি।

2. অভ্যাস গঠনের সূত্রগুলি কি কি ?

 উত্তরঃ অভ্যাস গঠনের  চারটি নিয়মের কথা উল্লেখিত – i) মানসিক প্রত্যয় ii) তৎপরতা  iii)অণুশীলন  iv)পুনরসংযোজন । 

 3. অভ্যাসের দুটি বিশিষ্ট লেখ ।

 উত্তরঃ অভ্যাসের দুটি বিশিষ্ট হল –

i) অভ্যাস মূলক কাজ সম্পাদনের জন্য আমাদের কোনো চিন্তা ভাবনা করতে হয় না।

ii ) নির্ভুল ভাবে কর্ম সম্পাদন করা অভ্যাসের আরও একটি বৈশিষ্ট্য।


 

 

Leave a comment