শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১ খ্রিঃ) একজন অন্যতম  শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক । বহুমুখী প্রতিভার জন্য ১৮৩৯ সালে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সমাজ সংস্কারে তিনি নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন । নারীর শিক্ষার জন্য তিনি প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন ।

সুতরাং আজ এই পর্বে-শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান কি ছিল তা আলোচনা করব । সমাজ সংস্কারে ও নারী সমাজের উন্নতির জন্য তিনি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা আলোচনা করব ।

যা Class 11 Education/ B.A Education Honours/ B.A Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছ তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Education -এর প্রয়োজনীয় সব Notes তোমরা এই পেজে পাবে ।

আলোচনার এই পর্বের আলোচ্য বিষয়ঃ শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো |

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো |
শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো |

 

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো |  

Vidyasagar’s contribution to education and social reform |

ভারতের ইতিহাসে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা তথা ভারতবর্ষে যে নবজাগরণ ঘটেছিল, তাতে যে সব মনিষী অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁর মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্যতম। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটানোর কাজে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মধ্যে সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষা সংস্কারক এই দুই অবদান নিম্নে আলোচনা করা হল –

সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদানঃ 

সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের সবথেকে বড়ো অবদান হল বিধবা বিবাহ প্রবর্তন। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টার ফলে ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়। বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও কৌলিন্য প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি বহু বিবাহ বন্ধ করার জন্য সেই সময়কার গর্ভনর জেনারেলের কাছে আবেদন জানান।

যদিও ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহ শুরু হওয়ার ফলে বহুবিবাহ প্রথাটি আইন করে বন্ধ করা যায়নি। কিন্তু বহুবিবাহের কুফল সম্পর্কে জনমত গড়ে তুলতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন।

বিদ্যাসাগর আরও একটি সামাজিক সংস্কার প্রচেষ্টা হল স্ত্রী শিক্ষার ব্যাপক প্রচার যদিও মিশনারিরা ও বেথুন সাহেব প্রথম এদেশে স্ত্রী শিক্ষার প্রবর্তন করেন, তথাপি বিদ্যাসাগরের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা স্ত্রী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারকে সম্ভব করে তুলেছিল।

শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদানঃ

বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষা সংস্কারক। শিক্ষা সংস্কারকে কেন্দ্র করে বিদ্যাসাগর যে সব মৌলিক শিক্ষা ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন সেগুলি হল মাতৃভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি সাধন, সংস্কৃতি ও ইংরেজি দুই ভাষার উপর গুরুত্ব দেওয়া, উপযুক্ত পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষক তৈরি করা ইত্যাদি। বিদ্যাসাগরের শিক্ষা সংস্কারক কাজ গুলি হল-

(i) প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারঃ

বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তৎকালীন বড়োলাট লর্ড ডালহৌসির কাছে যে সব সুপারিশগুলি করেছিলেন তার মূল কথা হল –(ক) গণ শিক্ষার প্রসার, (খ) উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণ, (গ) শিক্ষক শিক্ষণের ব্যবস্থা করা, এর জন্য নরম্যাল স্কুল স্থাপনের কথা বলা হয়, (ঘ) মডেল স্কুল স্থাপন, যে স্কুলে ইতিহাস, ভূগোল, পাটিগণিত, জ্যামিতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, শরীরতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় পড়ানো হবে।

(ii) গণশিক্ষার প্রসারঃ 

তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, এর জন্য তিনি ‘তত্ত্ববোধনী’, ‘সর্বশুভকরী’, ‘সোমপ্রকাশ’ প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন।

(iii)  স্ত্রী শিক্ষার প্রসারঃ

বিদ্যাসাগর স্ত্রী শিক্ষার প্রসারের জন্য বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে বিশেষ উদ্দ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৮৫৮ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় প্রায় ৩৮ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই সমস্ত বিদ্যালয়ের আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য নারী শিক্ষা ভান্ডার গঠন করেছিলেন।

(iv) উচ্চ শিক্ষার প্রসারঃ

উচ্চ শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য, তাঁর প্রচেষ্টায় ‘মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন’ নামক বিদ্যালয়টি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সেখানে B.A, M.A, ও আইনশাস্ত্র পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।

উপসংহারঃ 

পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষা চিন্তায় বিদ্যাসাগর ছিলেন প্রয়োগবাদী, যে কোনো সমস্যা সমাধানে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বৈজ্ঞানিক। নারী জাতির কাছে তিনি হলেন পিতাস্বরূপ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ যথার্থই তাকে বাঙালির প্রথম শিক্ষাগুরু রূপে অভিহিত করেছেন।


আরো পড়ুনঃ


প্রশ্নউত্তরঃ

১. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখ ? 

 উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম – (i) বেতাল পঞ্চবিংশতি , (ii) শকুন্তলা ।

২. আধুনিক বাংলা গদ্যের অগ্রদূত কে ?

 উত্তরঃ আধুনিক বাংলা গদ্যের অগ্রদূত  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ।

৩. সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল ?

 উত্তরঃ সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের  ভূমিকা –

(i) বিধবা বিবাহ প্রবর্তন। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টার ফলে ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়।

(ii) বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও কৌলিন্য প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

(iii) সামাজিক সংস্কার প্রচেষ্টা হল স্ত্রী শিক্ষার ব্যাপক প্রচার যদিও মিশনারিরা ও বেথুন সাহেব প্রথম এদেশে স্ত্রী শিক্ষার প্রবর্তন করেন ।

৪. শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা কি ছিল ?

 উত্তরঃ  শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা –

(i) বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ঘটান ।
(ii)  গণ শিক্ষার প্রসার  অন্যতম ভূমিকা গ্রহণ করেন ।
(iii) বিদ্যাসাগর স্ত্রী শিক্ষার প্রসারের জন্য বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে বিশেষ উদ্দ্যোগ নিয়েছিলেন।
(iv) উচ্চ শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।

 

Leave a comment