একটি গ্রাম্য মেলা বাংলা রচনা

প্রিয় পাঠক আজকের বাংলা রচনা পর্বে যে রচনাটি আমরা উপস্থাপন করতে চলেছি তা হল-একটি গ্রাম্য মেলা বাংলা রচনা । অনুসরণে একটি গ্রাম্য মেলা দেখার অভিজ্ঞতা রচনা। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে দুই ধরনের শিরোনামেই  রচনাটি প্রদান করা হল,  বাংলা রচনা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক , সমস্ত প্রকার রচনা তোমাদের এই পেজে রয়েছে ।

একটি গ্রাম্য মেলা বাংলা রচনা
একটি গ্রাম্য মেলা বাংলা রচনা | 

 

একটি গ্রাম্য মেলা দেখার অভিজ্ঞতা রচনা

ভূমিকাঃ 

‘মেলা’ হল বহু মানুষের মিলনস্থল। মানুষ ধর্ম বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে এক স্থানে একত্রিত হয়। মেলার আক্ষরিক অর্থ মিলন । বহু মানুষের সমাবেশে মেলা চমকপ্রদ হয়ে উঠে , মানুষে মানুষে ভাব বিনিময় ঘটে । প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত, মেলা এক সর্বাজনীন উৎসব । গ্রাম্য মেলা গ্রামীণ জনসাধারণের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক । মেলার মধ্যে ফুটে ওঠে গ্রাম-বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনের পরিচয়।

বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয় যেমন, দেবতার থানে, শীতলাতলায়, দোলতলায়, চড়কের গাজনতলায় মেলা জমে ওঠার খবর আমাদের জানা। ভারতে মেলা এক প্রাচীন অনুষ্ঠান।

মেলার দ্রষ্টব্যঃ 

মেলার আবেদন সার্বজনীন। শিশুদের কলরবে, কিশোর-কিশোরীদের উচ্চকিত হাসিতে বয়স্ক নারীপুরুষের প্রসন্ন চলাফেরায় ভরে যায় মেলাতলা। মেলার সাধারণ দ্রষ্টব্য হল নাগরদোলা, তেলেভাজার দোকান, গজা, জিলিপি, ও বাদামভাজার দোকান, খেলনা ও গৃহস্থালির উপকরণ। গ্রামের মেলার সঙ্গে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। ঠাসাঠাসি ভিড়, অবাক-চোখে তাকিয়ে-থাকা শিশু, চুড়ি-দুলের দোকান ঘিরে থাকা মেয়ের দল সমস্তই মেলার সাধারণ ছবি।

ভাবের আদানপ্রদান মিলনের স্থানঃ   

গ্রাম্য মেলার মূলকথা মানুষে মানুষে অবাধ মিলন। সামাজিকতার সহজ পটভূমিতে হিন্দু-মুসলমান একই সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে ঘোরাফেরা করে বিবিধের মাঝে মহান মিলনের স্বপ্ন এখানে মিথ্যে নয়।

 রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, যেমন আকাশের জলে জলাশয় পূর্ণ করিবার সময় বর্ষাগম,

                   তেমনি বিশেষভাবে পল্লীর হৃদয়কে ভরিয়া দিবার উপযুক্ত অবসর মেলা।

গ্রামীণ মেলায় স্থানীয় লোকশিল্পের প্রদর্শনী অন্যতম দ্রষ্টব্য। স্থানবিশেষে এযুগেও মেলা ‘ভারতের পল্লীর সার্বজনীন উৎসব, তবু আধুনিক প্রসাধনে তার সর্বাঙ্গে এখন চাকচিক্যের লক্ষণ।

প্রাচীন মেলাঃ 

গ্রামের মেলার উপলক্ষ কোথাও ধর্ম, কোথাও বরণীয় মানুষের বাৎসরিক স্মরণ। চড়কের মেলা, রথের মেলা, রাসযাত্রার মেলা ধর্মপালনের সূত্রে আয়োজিত হয়। বৈশাখ ও চৈত্র মাসে বিভিন্ন স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয় । কোচবিহার ও নদিয়ায় রাস যাত্রা উপলক্ষ্যে রাসমেলা । গ্রামে-গঞ্জে দুর্গাপুজো, কালীপুজো উপলক্ষেও মেলা বসে। শিবরাত্রিতে মেলা হয় বহুস্থানে। জলপাইগুড়ির জল্পেশ্বরের মেলা, তারকেশ্বরের গাজনের মেলা, মাহেশের রথের মেলা এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য ।

স্মরণ মেলাঃ 

বিখ্যাত মানুষের স্মরণে বাংলার গ্রামে মেলা বসে। বীরভূমের কেঁদুলিতে কবি জয়দেবের স্মরণে, বর্ধমানের কুলীন গ্রামে হরিদাস ঠাকুরের মেলা বিখ্যাত। কেঁদুলির মেলায় বাউলগানের জমজমাট আসর বসে। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় টুসু পরব উপলক্ষে মেলার আসর বসে । নদিয়ার কদমখালিতে হয় লালন মেলা , যার মাধ্যমে বাংলার অতীত ও ঐতিহ্যের নানান দিক প্রুস্ফুটিত হয় ।

সাংস্কৃতিক মূল্যঃ 

গ্রাম্যমেলায় বাংলার লোকসংস্কৃতির প্রাণ বৈচিত্র্যের এক অভূতপূর্ব প্রকাশ ঘটে , গ্রামের মেলায় যাত্রা , বাউল ফকির মুর্শিদি শিল্পীদের গানের মাধ্যমে । গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত একটি মেলা হল বিষ্ণুপুর মেলা । প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসবকে । উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলন ও ধ্রুপদি নৃত্যের প্রদর্শনী এই মেলার উল্লেখযোগ্য দিক । এই উৎসবকে জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে , এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয় বিষ্ণুপুর মেলা ।

বাণিজ্যিক ভূমিকাঃ 

মেলার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক স্বছলতা ফিরে পায় , ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলে । গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতা যেমন কৃষি ভিত্তিক তেমনই কুঠির শিল্প নির্ভর , বাংলার এক একটি এলাকা বিশেষ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত । যেমন- বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা শিল্প , বাঁকুড়ার মাটির ঘোড়া , কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল , ডেকরা শিল্পে ধাতু দিয়ে তৈরি দেবদেবীর মূর্তি থেকে অংলকার , মেদনীপুরের মাদুর ও বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা শৌখিন দ্রব্য যেকোনো ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক মেলার প্রধান আকর্ষণ , ও চাহিদার উর্দ্ধে থাকে । মেলা যেমন বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের মানুষের এক অন্যতম মিলনস্থান তেমনি বাংলার কারুশিল্প বৈচিত্র্যের মিলনক্ষেত্রে ।

                     প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী। কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ,

                                সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ,

                      সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ’।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  

মেলার আধুনিক চরিত্রঃ  

শহরের প্রভাবে গ্রাম্য মেলার চরিত্র পালটেছে। আলোর রোশনাই, মাইকের চিৎকারের মধ্যে মেলা । নামধারী প্রদর্শনীতে ও বিক্রয়কেন্দ্রে গ্রাম-শহরের রাখিবন্ধন চলেছে। শহুরে মেলায় পাওয়া যায় পিঠেপুলি, আচার-মোরব্বার দোকান। শহরের ছদ্মবেশ ধরেছে বলেই গ্রাম্য মেলায় হাঁড়ি কলসির দোকানের পাশেই দেখা যায় নকল গয়নার দোকান।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামের বিভিন্ন স্থানে এখন কৃষি মেলা, বইমেলা ছাড়াও খাদ্য মেলার আয়োজন করা হয় যেখানে দেশি-বিদেশি নানান রকমের খাদ্যের সমাহার দেখতে পাওয়া যায় ।

মেলার মাঠে এক পয়সায় কেনা তালপাতার বাঁশিটি আজ হারিয়ে গেছে। কমদামের স্টিলের বাসন ও আরও নানা শহুরে টুকিটাকি এখন গ্রামের মেলাতে পয়সা দিলেই মেলে।

উপসংহারঃ 

দেশের প্রান্তবর্তী অধিবাসীরা সারা বছর পরিশ্রমের ফাঁকে চিরায়ত অভ্যাসে কোন এক নির্দিষ্ট দিনক্ষণে মেলার জন্য প্রতীক্ষা করে চেনা মানুষজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ ঘটে, কুশল বিনিময় চলে, সুখ দুঃখের গল্প জমে ওঠে। সঙ্গে থাকে ব্যবহারিক বা শৌখিন জিনিসপত্র কেনার হাতছানি ব্রত-পার্বণের মতো গ্রামের মেলাও তাই জীবনের মাটিতে শিকড় নামিয়ে দিয়েছে।

Thanks For Reading : একটি গ্রাম্য মেলা দেখার অভিজ্ঞতা রচনা । 

 

অনুরূপ প্রবন্ধঃ

একটি গ্রাম্য মেলা অনুচ্ছেদ । 

মেলার প্রয়োজনীয়তা ।

পল্লীজীবনে মেলার ভূমিকা । 

একটি গ্রাম্য মেলা দিনলিপি । 

 


আরো পড়ুনঃ   


 

Leave a comment