শ্রী রামকৃষ্ণের অন্যতম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ । বিবেকানন্দ ছিলেন একাধারে দার্শনিক,একাধারে লেখক , ও সঙ্গীতজ্ঞ । তিনি প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে চরিত্র গঠনের কথা বলেছেন । তাঁর বক্তব্য ও বানীগুলি যুব সমাজকে নানাভাবে উদবুদ্ধ করে।
আজকের আমাদের আলোচনায় এই মহান মনিষীর শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। যা Class 11 Education/ B.A Education Honours/ B.A Education General এর যেসব ছাত্রছাত্রী রয়েছ তাদের জন্য এই পোস্টগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Education -এর প্রয়োজনীয় সব Notes তোমরা এই পেজে পাবে ।
আমরা সহজ ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বরূপ বিষয়গুলি উপস্থাপন করে থাকি । যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক হবে ,বলেই আশা রাখি । আলোচনার এই পর্বের আলোচ্য বিষয়ঃ স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো |
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো |
Discuss the educational philosophy of Swami Vivekananda |
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা বা শিক্ষা দর্শনঃ
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা দর্শন তাঁর জীবন দর্শনকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বিবেকানন্দ গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে ছিলেন। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিলেন এবং ‘মানুষ তৈরীর শিক্ষার’ (Man – making Education) কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ শিক্ষা কতকগুলি তথ্যের সমষ্টি নয়, প্রকৃত শিক্ষা হল – তাই যা ব্যক্তিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে এই পরিপ্রেক্ষিতে বিবেকানন্দ শিক্ষার একটি ব্যবহারিক ধারণা তুলে ধরেছিলেন তা হল – “আমরা সেই শিক্ষা চাই যা চরিত্র গঠন করে, মনের শক্তি বৃদ্ধি করে, বুদ্ধির প্রসারতা ঘটায় এবং যার দ্বারা একজন তাঁর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
শিক্ষার লক্ষ্য প্রসঙ্গে বিবেকানন্দঃ
স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষার লক্ষ্য প্রসঙ্গে যে সব সুচিন্তিত অভিমত গড়ে তুলেছিলেন তা হল – (ক) চরিত্র গঠনের জন্য শিক্ষা, (খ) জীবনের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ থাকবে। (গ) আধ্যাত্মিক জীবন বিকাশের জন্য শিক্ষা, (ঘ) আত্মত্যাগের মর্ম উপলব্ধি জন্য শিক্ষা, (ঙ) শিক্ষা হবে আধ্যাত্মিক কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষ।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক প্রসঙ্গে বিবেকানন্দঃ
বিবেকানন্দের মতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে প্রাচীন ভারতের গুরু শিষ্যের সম্পর্কের ন্যায় আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ। এই উদ্দেশ্যে তিনি আবাসিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুত্থানের কথা বলেন। বিবেকানন্দের ভাষায় – “My idea of education is Gurugriha Vasa” তাঁর মতে শিক্ষক হবেন জ্ঞানী, ত্যাগী, পাপ রহিত। শিক্ষার্থী হবেন সৎ, পবিত্র, জ্ঞান লাভের অনুরাগী গুরুভক্তি ও স্বাধীন চিন্তা করা দুই হবে শিক্ষার্থীর কর্তব্য।
গণশিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দঃ
গণশিক্ষার মধ্যে দিয়েই গণ জীবনকে জগাতে হবে। গণ শিক্ষা ছাড়া দেশের আর্থ সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই বিবেকানন্দ সমাজের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ঘরে শিক্ষাকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় বিবেকানন্দ একজন অন্যতম জাতীয়বাদী নেতা।
নারী শিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দঃ
বিবেকানন্দের মতে নারী শিক্ষা অবহেলিত হলে সমাজ কখনো প্রকৃত অর্থে অগ্রসর হতে পারে না। কোনো সমাজের অগ্রগতির জন্য, নারীদের স্বাধীন মতামতের উপযুক্ত বিকাশের জন্য দরকার নারী শিক্ষার প্রসার কেননা শিক্ষিতা সুমাতারাই গড়ে তুলতে পারেন ভবিষ্যতের সুনাগরিক।
শিক্ষা মাধ্যম প্রসঙ্গে বিবেকানন্দঃ
শিক্ষার মাধ্যমের ক্ষেত্রে বিবেকানন্দ মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দেন। কারণ তিনি মনে করেন, শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে দেশভক্তি এবং জাতীয়তাবাদের দৃঢ় অনুভূতি গড়ে তুলতে হবে।
মূল্যায়নঃ
বিবেকানন্দের শিক্ষা চিন্তায় যে সব দিকগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল তা হল আত্ম জ্ঞান, আত্মপ্রত্যয়, মনোসংযোগ , চরিত্র গঠনের শিক্ষা, নৈতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা ইত্যাদি তাছাড়া বিবেকানন্দ -এর শিক্ষা চিন্তায় জাতীয় কারণ সম্বন্ধে স্পষ্ট অভিমত পাওয়া যায়। তাই বিবেকানন্দ শিক্ষা চিন্তা জাতীয় আদর্শের পথ প্রদর্শক রূপে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আরো পড়ুনঃ
- শিক্ষাকে সামাজিক প্রক্রিয়া বলা হয় কেন |B.A Education
- বুনিয়াদি শিক্ষার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো |B.A Education
- নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো | B.A Education
- উডের ডেসপ্যাচ কি | এর সুপারিশগুলি কি কি ও এর গুরুত্ব আলোচনা করো | B.A Education
- প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে হান্টার কমিশনের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো | B.A Education
- সার্জেন্ট কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ গুলি আলোচনা করো । B.A Education
- স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ গুলি অলোচনা করো। B.A Education