বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করো

দর্শন আলোচনার আজকের পর্বের পাশ্চাত্য নীতিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা আলোচনা করতে চলেছি । সেটি হল-বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করো BA Philosophy SEM 1-এর  দর্শন শাস্ত্রের সমস্ত Topic আলোচনা করা হবে। আশা রাখি ,আমাদের এই উপস্থাপনা দর্শন শাস্ত্রের সকল ছাত্রছাত্রীদের উপকারে আসবে ।

বাচনিক জ্ঞানের শর্ত গুলি আলোচনা করো |
বাচনিক জ্ঞানের শর্ত গুলি আলোচনা করো |

 

বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করা হল |

Discussed The Condition of Propositional Knowledge |

বাচনিক জ্ঞানের শর্তসমূহঃ   

জ্ঞান একটি পরিচিতি, সচেতন, বা কোনো কিছু সম্পর্কে বোঝা, যা অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও আবিষ্কারের মাধ্যমে অর্জিত হয়। দর্শনশাস্ত্রে জ্ঞান অধ্যায়ন হল জ্ঞানতত্ত্ব। দর্শনশাস্ত্রের জ্ঞান বাচনিক আকারে প্রকাশিত হয়।

সুতরাং জ্ঞানতত্ত্বের মুখ্য প্রশ্ন হল বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি কী কী ? বা প্রশ্নটিকে আমরা এভাবেও উত্থাপন করতে পারি যে, বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক ও পর্যাপ্ত শর্তগুলো কী কী ? বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি নির্নয় করা অতি জটিল ব্যাপার। তবে অধ্যাপক John Hospers কে অনুসরণ করে বাচনিক জ্ঞানের তিনটি শর্ত আলোচনা করা হল –

প্রথম শর্ত : জ্ঞান বচনটিকে সত্য হতে হবেঃ

কোন ব্যাপার বা বচনকে “জানি” বলার অর্থ হল, বচনটির সত্য হতে হবে। যদি কোন বচন মিথ্যা হয়, তাহলে কেউ দাবি করতে পারবে না যে বচনটিকে সে জানে। কোন বচনকে কেউ জানে অথচ বচনটি মিথ্যা এমন উক্তি হল স্ববিরোধী। যেমন – যখন কেউ বলে যে, “আজ স্কুল বন্ধ আছে” তখন তার থেকে এটা প্রতিপন্ন হয় যে, “আজ স্কুল বন্ধ আছে” -বচনটি সত্য।

কিন্তু যদি ‘আজ স্কুল বন্ধ আছে’ -বচনটি মিথ্যা হয় তাহলে আমরা বলতে পারি যে, সে আদেও জানে না যে স্কুল বন্ধ আছে কিনা। কোন বচন সত্য না হলে সেহেতু জানি বলে দাবি করা যায় না সেহেতু বিষয় গত সত্যতাকে জ্ঞানের জানার আবশ্যিক শর্ত বলা হয়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সত্যতার নিরিখে ‘জানা’ ক্রিয়াপদটিকে ‘মনে করা’, ‘বিশ্বাস করা,’ ’আশা করা’ ইত্যাদি মানসিক অবস্থার সাথে অভিন্ন মনে করলে চলবে না ।

প্রশ্ন হতে পারে যে, ‘জানা’ – ও একটি মানসিক অবস্থা ? ‘জানা’ মানসিক অবস্থা হলে জ্ঞেয় বিষয়ের সাথে সত্যতা জড়িত থাকে। আর ‘মনে করা’ ইত্যাদি মানসিক  অবস্থার সাথে জ্ঞেয় বিষয়ের সত্যতা জড়িত থাকে না। অর্থাৎ ‘মনে করা’ ‘বিশ্বাস করা’ ক্রিয়াপদযুক্ত বচনগুলি মিথ্যা হতে পারে।

সত্যতার শর্তটি জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত হলেও পর্যাপ্ত শর্ত নয়। কারণ জগতে এমন অনেক সত্য বচন আছে যা আমরা জানি না। চাঁদে এমন অনেক সত্য ঘটনা আছে যা বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না , জানার জন্য গবেষণা চলছে। সুতরাং কোন বচন সত্য হলেই জ্ঞান পদবাচ্য হবে না। তাই জ্ঞানের দ্বিতীয় শর্তের প্রসঙ্গ চলে আছে।

দ্বিতীয় শর্ত : বচনটির সত্যতায় বিশ্বাসঃ

যদি কোন বচনকে কেউ জানি বলে দাবি করে, তাহলে বচনটি কেবলমাত্র সত্য হলেই হবেনা, বচনটির সত্যতায় বিশ্বাস থাকতে হবে, অর্থাৎ যে বিষয়কে আমরা সত্য বলে জানি তাতে আমাদের বিশ্বাস থাকতে হবে। আমরা যা বিশ্বাস করি না তাকে জানি বলে দাবি করতে পারিনা। যেমন – কেউ যদি বলে, আমি জানি যে , “গতকাল রাম এসেছিল” কিন্তু বিশ্বাস করে না যে, গতকাল রাম এসেছিল – এমন বললে ব্যক্তব্যটি স্ববিরোধী হয়ে যায়। এ থেকে সকলেই সহজে বুঝতে পারে যে, সে এই ব্যাপারটি জানে যে, গতকাল রাম এসেছিল কিনা। তাই কোন বচনের সত্যতায় বিশ্বাস না থাকলে তা জ্ঞান পদবাচ্য হতে পারে না। সুতরাং সত্যতায় বিশ্বাস জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত।

বিশ্বাস জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত হলেও পর্যাপ্ত শর্ত নয় কারণ জগতে এখন অনেক বিষয় আছে। যাকে বিশ্বাস করলেও মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষার শেষ বিশ্বাস করল যে, সে পরীক্ষায় প্রথম হবে, কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখে যে তৃতীয় হয়েছে তাহলে তার বিশ্বাসটা মিথ্যা হেতু জ্ঞান হল না।

এখন প্রশ্ন হল সত্যতা ও বিশ্বাস এই দুটি শর্ত কী জ্ঞানের পর্যাপ্ত শর্ত হতে পারে, এই উত্তরে বলা যায়, সত্যতা ও বিশ্বাস জ্ঞানের পর্যাপ্ত শর্ত নয়। ধরা যাক , কেউ বিশ্বাস করল যে, তার টিউমার হয়েছে। এবার এক্সরে করে দেখা গেল যে তার সত্যই টিউমার হয়েছে । এক্ষেত্রে কখনোই বলা যায় না যে ব্যক্তিটি যখন বিশ্বাস করতো যে তার টিউমার আছে সত্যই সে জানতো যে তার টিউমার হয়েছে। কারণ বিশ্বাস  অবস্থাটি ছিল নিছক কল্পনামাত্র। তাই বিশ্বাস করলেই সত্য দাবি করা যায়। তাই প্রশ্ন হল আমরা কখন জানাব যে বিশ্বাসটি সত্যে পরিণত হল। এই প্রসঙ্গেই জ্ঞানের তৃতীয় শর্তটি চলে আসে।

 

তৃতীয় শর্ত: বিশ্বাসের সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণঃ 

যদি কোনো বচনকে কেউ বিশ্বাস করে এবং বিশ্বাসটিকে সত্য বলে দাবি করে তাহলে বলা যাবে না, যে বিষয়টিকে সে জানে বা বিষয়টি সম্পর্কে তার জ্ঞান হয়েছে। বিষয়টির সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য ও যুক্তি প্রমাণ যদি দেখানো যায় তাহলে কেউ দাবি করতে পারে যে সে বিষয়টিকে জানে।

আবহাওয়া দপ্তর থেকে যখন ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়, তখন কী আমরা বলতে পারি যে, আবহাওয়াবিদরা জানতেন যে ঝড় হবে। কারণ তাদের বিশ্বাসের সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। তবে এই শর্তটি জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত হলেও পর্যাপ্ত শর্ত নয়। কারণ জ্ঞানের পক্ষে কোন বিষয়ের পর্যাপ্ত তথ্য প্রমান দেওয়া সম্ভব নয়।

যে পরিণাম তথ্য কোনো বিষয়কে জানার পক্ষে যথেষ্ঠ তাকে পর্যন্ত সাক্ষ্য প্রমাণ বললে চক্রার দোষ ঘটে। কারণ যে তথ্য প্রমাণ দিয়ে কোনো বিষয় জানা ইচ্ছে সেই বিষয়গুলিকে অন্য কোনো তথ্য দিয়ে প্রমাণ করা দরকার হয়ে পড়ে। তাছাড়া কোনো বিষয়ের যদি পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ দেওয়া যেত তাহলে জীবনের শেষ প্রান্তে কোনো বিষয় মিথ্যা প্রমাণিত হত না।

Thanks For Reading: বাচনিক জ্ঞানের শর্তগুলি আলোচনা করো |


আরো পড়ুনঃ


প্রশ্ন উত্তরঃ

১. জ্ঞানতত্ত্ব কি ?

উত্তরঃ জ্ঞান একটি পরিচিত, সচেতন, বা কিছু সম্পর্কে বোঝা, যা অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও আবিষ্কারের মাধ্যমে অর্জিত হয়। দর্শনশাস্ত্রে জ্ঞান অধ্যায়ন হল জ্ঞানতত্ত্ব।

২. বাচনিক জ্ঞান কাকে বলে ? 

উত্তরঃ দর্শনশাস্ত্রের জ্ঞান বাচনিক আকারে প্রকাশিত হয়। বাচনিক জ্ঞান বলতে বোঝায় , বচনে সকল তথ্যকে সত্য বলে জানা ।

৩. বাচনিক জ্ঞানের শর্ত গুলি কী কী ?

উত্তরঃ  বাচনিক জ্ঞানের শর্ত গুলি -i) বচনের সত্যতা  ii) বচনটির সত্যতায় বিশ্বাস  iii) বিশ্বাসের সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ |

৪. বাচনিক জ্ঞানের প্রথম শর্ত কোনটি ?

উত্তরঃ বাচনিক জ্ঞানের প্রথম শর্তটি হল – বচনের সত্যতা ,  কোন ব্যাপার বা বচনকে “জানি” বলার অর্থ হল, বচনটির সত্য হতে হবে।

৫. বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত কোনটি ? 

উত্তরঃ সত্যতায় বিশ্বাস বাচনিক জ্ঞানের আবশ্যিক শর্ত।


 

Leave a comment